নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাজিবাবা ২ পর্ব

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৫১



গল্পকার মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

আত্মসাধকের সার্থক ভালোবাসার গল্প

"আকাশে বাতাসে নকলের কানাকানি। শূন্য থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত যাওয়া অত্যন্ত কঠিন সাধনা। তা কত কঠিন অন্তঃসারশূন্যরা অনুধাবনও করতে পারবে না। ওরা শুধু বকাবকি করতে পারে, সাধককে নিরুৎসাহিত করতে চায়। নিরুৎসুকরা উৎসাহ শব্দের অর্থ জানে না। জনপ্রিয়তার জন্য মরিয়া হয়ে লাভ নেই। অযুত নিযুত কোটি জন প্রিয় হওয়ার জন্য সব বাজি ধরে সাড়িতে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবিক হতে যথেষ্ট সময় লাগলেও অবশেষে আশ্বস্ত হয়েছি, বিশের বদলে উনিশ হলে প্রিয়জনকে জনগণরা চিঁড়েচ্যাপটা করে।”
"জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনে সত্যি চমৎকৃত হয়েছি, ভয় বিস্ময়ে স্তম্ভিত এবং হতভম্বের মত দৌড়াতে চাই। ওরে বাবা, এ কার পাল্লায় আমি পড়লাম? যার এত প্রভাব, যার এত প্রতিপত্তি তাকে আমি চিনি না।”
"তুমি নিশ্চয় জানো, ধনী হতে হলে হিংস্র হতে হয়। মিথ্যা এবং অত্যাচারে বিবেক বিকৃত হয়। ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে মিথ্যার জোরে সত্যকে হেনস্তা করতে হয়। যাদেরকে আমরা দায়িত্ব দেই ওরা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। দৈনিক পাঁচ বার নামাজ পড়লে আত্মশুদ্ধি হয়। পৃথিবীতে অসংখ্য মুসলমান থাকা সত্ত্বেও মহাসাধক নেতার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।"
"আমার সমস্যা হলো, ভক্তের ভক্তি দেখে আমি গদগদ হই না। প্রতাপশালীদের সাথে থেকে প্রতাপান্বিত হতে চাই না। আমি হলাম বুদ্ধির ঢেঁকি, বুদ্ধিবৃত্তি পছন্দ করি না।"
"আমি বিশ্বাস করি তুমি আধুনিক নারী।”
"হ্যাঁ, এতদিন নিরুদ্বেগ ছিলাম এখন নিরুৎসুক এবং নিরুত্তেজ হয়েছি। এভাবে চললে সত্বর নিরুচ্চার এবং নিরুদ্যম হব।”
"শীতের রাত লম্বা এবং কুঁড়েমি হলো কুঁড়ের স্বভাব, গরমিল এবং গরমাগরমির কারণ বর্ষা মাসেও নদীতে জলাভাবের প্রভাব পড়ে।”
"প্রেম চাও না নারকীয় যন্ত্রণা চাও?" বলে নদী দাঁত কটমট করে। হাসার চেষ্টা করে মাথা নেড়ে হৃদয় বললো, "নরক কখনো প্রেমীকের গন্তব্য হবে না। বিশ্বাসের সাথে আমার হাত ধরো, স্বর্গীয়ে পথে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছব।"
"অনিষ্টকারীরা গোপনে অনিষ্ট করে, তুমিতো প্রকাশ্যে সব নষ্ট করতে চাও।" বলে নদী অপলকদৃষ্টে তাকায়। মাথা নেড়ে হৃদয় বললো, "ভুলে ভরা জীবনে বারবার ভুল করি। মানুষকে সম্মান করা ভুল হলে, আমি আলাভোলা হতে চাই। হে সম্মানী মানুষ, তোমাদেরকে সম্মান করে অপমানিত হলেও আমি আক্ষিপ্ত হব না।"
“বিশ্বাস করো, তোমার সকল কথা আমি বুঝি না।" বলে নদী মাথা নাড়ে। আকাশের দিকে ইশারা করে হৃদয় বললো, "আকাশে জ্বলজ্বল সূর্য এবং শান্ত পরিবেশ এখনো উত্তপ্ত হয়নি, নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারব আজ আমি পয়মন্ত হয়েছি।”
"আমিও আশ্বস্ত হয়েছি, তোমার মনে নিশ্চয় কুমতলব আছে।”
"সাধক হতে হলে সাধনা করতে হয়। সাধুর সাথে আজো দেখা হয়নি। বিভ্রান্তরা বলেছে, সস্মিত মুখাবয়ের স্মৃতি সত্যি কষ্টদায়ক। অবশেষে আমিও বিশ্বাস করেছি, ভালোবাসার বুকে দীর্ঘশ্বাস জন্মে।"
"ওরে বাসরে! অল্প গল্পে এতসব বললে কেমনে?”
"তোমার সাথে কথা বললে সত্যাসত্য জানতে পারি। বাস্তবিক সত্তাকে সবসময় সম্মান করি।"
"‌শরমে নরম হয়ে গরমে লাল হতে চাই না।"
"মনের কথা বলতে চাই।"
"চাইলে নির্ভয়ে বলতে পারবে।"
"বিশ্বাসের সাথে বলতে পারব আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
"প্রাতিস্বিক ধর্ম এবং বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করি না।"
“কিচ্ছু বোঝিনি।"
"ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাই না।"
"গাধার আত্মামর্যাদাবোধ আছে, নেই শুধু আমার। দোয়া করি মুখের হাসি এবং মনের আনন্দ যৌবনের মত চিরস্থায়ী হোক।"
"ভাবুকরা অভাবী হওয়ার দরুন, ভাব ধরে ভণ্ডরা অভাবিত সৌভাগ্যের ভাগীদার হয়েছে এবং বুজরুকের পাল্লায় পড়ে বুড়বুড়ি আজ বুজকুড়ি হয়েছে।"
"আসলে কী হয়েছে, নর মশারা রক্তপান করে না। নারী মশারা কামড়ালে পুরুষরা বিপাকে পড়ে। কানীনরা বাপ ডাকলে পাপ হয়।”
"সবকিছু চক্রে ঘোরে, যে বাতাস বিষাক্ত করে সে আগে মরে। আত্মা ছাড়া অন্য কিছু পৃথিবীর বাইরে যেতে পারে না। এলোপাথাড়ি ঢিল মারলে বল্লার চাকে পড়ে, আনদ্ধ বাজিয়ে দুঃখের বারমাসি অনেকে গায়। ব্যবধানের অভাবে অনন্তের ভাব অসীম হওয়ার দরুন, বারান্তরে বারমুখো ঘরবার করে আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে বারয়িতাকে বারণ করার জন্য বারশিঙ্গা বাজায়।”
"অত্যন্ত মারাত্মক অত্যাধুনিক কবিতার অর্থ বুঝতে না পেরে মাথা ঘোরাচ্ছে, হয়তো ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছি, এতক্ষণ চোখে সরষে ফুল দেখেছিলাম এখন ঘূর্ণমান জ্যোতিষ্ক দেখতে পাচ্ছি।”
“আড়েদিঘে দৌড়াতে না পাড়লেও আড়েহাতে বাঘ ধরা যায়। আঢ্যরা আড্ডা দেয় এবং আঢাকা বিষে মশা বসে নিষ্প্রাণ হয়। আণ্ডীর এবং আতপচালের জন্য আততায়ীরা মরিয়া হয়, আতপস্নানে হাড্ডি শক্ত হলেও চামড়া পুড়ে। কস্তুরিকার জন্য কেউ কোস্তাকুস্তি করতে পারে কস্মিনকালেও ভাবিনি।”
“বোঝেছি, ক্রমান্বয়ে বিষের ক্রিয়া শুরু হয়েছে। কবে মরব জানলে সর্বপ্রথম তোমাকে জানাব।" বলে হৃদয় হাসার চেষ্টা করলে, তার চোখের দিকে তাকিয়ে নদী বললো, "আকাশে লুকিয়েছে আগুন, পাহাড়ে আছে স্ফুলিঙ্গ, বিদ্যুত্স্ফুরণে বাগানে ফুল ফুটবে, ভ্রমরীরা নাচবে মনানন্দে, কলকিতে আছে টিকি, টিকটিকির লেজে সত্যাসত্যের পতাকা, বিবেক বিকৃত হলে মানুষ বিক্রিত হয় জেনে, কাটারি হাতে নিয়ে কাঠুরিয়ার ঠেকেছে আর অতিরিক্ত আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারীর মাথা হেঁট করার জন্য তুমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছ।”
"হেত্বাভাসে আশ্বস্ত হয়েছিলাম হয়তো হেতুশাস্ত্রে পারদর্শী হয়েছি, কিন্তু বাস্তবতা অত্যন্ত তিক্ত এবং আমি একটা নিরেট মূর্খ জানাসত্ত্বেও তোমার প্রিয়জন হওয়ার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করব।" বলে হৃদয় অপলকদৃষ্টে তাকালে, গম্ভীরকণ্ঠে নদী বললো, "তুমি ঋক হতে চাইলে আমি হব ঋক্ষ, তুমি ঋষি হতে চাইলে আমি হব ঋষ্য। তুমি ঋদ্ধ হতে চাইলে আমি হব ঋতি, তুমি ঋভু হতে চাইলে আমি হব ঋগ্বেদী। তুমি হৃদ্য হতে চাইলে আমি হব হৃদ্যা, তুমি ঋতব্রত হলে আমি হব হৃষিত।”
নদীর চোখের দিকে তাকিয় হাসার চেষ্টা করে হৃদয় বললো, "নোঙর করলে ঢেউয়ে নাও দোলে, ভাসতে পারে না। প্রেমের অভাবে হাভাতে হলে, বৈশাখমাসে নদীতে জলকেলি করব। অন্যরা না জানলেও আমি জানি, অসমসাহসীরা নিষিদ্ধ পরিবেশে নিশিযাপন করে এবং পুণ্যস্নানের জন্য অমাবস্যার নিশীথে সাগরে সাঁতরায়।”
"নাইঘরে খাঁই খাঁই করার জন্য নাই-আঁকড়া হয়েছে নাইয়া, নাইট্রোজেনে সুর ভাসিয়ে নাইটিংগেল হতে চাইছে কাঁইয়া।" বলে নদী দ্রুত হেঁটে যেয়ে গাড়িতে উঠে এবং চালক চালাতে শুরু করে। অপলকদৃষ্টে গাড়ির দিকে তাকিয়ে হৃদয় বললো, "হৃদি, আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি হৃষ্টা হতে পারবে না তবে দিনানুদিন হবে রূপসী। অবশেষে আমাকে খুশি করার জন্য হবে তুমি আমার মানসী। তোমাকে ভালোবেসে আমি সকল দোষে হয়েছি দোষী, নির্দোষ হওয়ার জন্য কুষি হাতে হব ঋষি।”

হৃদয় যখন ঋষি হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নদী তখন বাসায় পৌঁছে বাড়ির কাজ সেরে বাগানে বসে উপন্যাস পড়ে। পরদিন মারামারি করে হৃদয় হাজতে যায়। বাবা জমানত না দিয়ে তাকে ডেকে দৃঢ়কন্ঠে বললেন, "আমি আর তুলাদান করব না। পারলে বেরিয়ে আয় না পারলে কৃতাপরাধের জন্য হাজতবাস কর।"
হৃদয় কথা না বলে মৃদু হেসে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে পিছু হেঁটে দেয়ালে ঠেকে বললো, "আব্বা, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন।"
বাবা বিস্মিত হলেও কথা না বল বেরিয়ে যান। কয়েক সপ্তা পর বান্ধবীর সাথে কথা বলার ফাঁকে বিদ্রূপহেসে নদী বললো, "Where is mister Rick?"
"শোনেছি মারামারি করে জেলে গিয়েছে।"
"জবর ভালো হয়েছে, অন্তত বাংলা শিখতে পারবে।" বলে নদী ক্লাসে চলে যায় এবং মাসে মাসে ছয় মাস গত হলে নদী চিন্তিত হয়। হৃদয়ের বন্ধুকে ডেকে খবর জানতে চাইলে বন্ধু বিচলিত হয়ে বললো, "তার বাবা ভেবেছিলেন দুয়েকদিন হাজতে থাকলে উড়শের কামড়ে দুরস্ত হবে।"
"তার কী হয়েছে?" বলে নদী জিজ্ঞাসুদৃষ্টে তাকালে, বন্ধু বললো, "হৃদয় নিখোঁজ হয়েছে।"
"ধন্যবাদ।" বলে নদী যখন স্বকর্মে ব্যস্ত হয়, হৃদয় তখন পাপমোচনের জন্য বানাশ্রমে আশ্রয় নেয়।

[ ] শেষ পরীক্ষা দিয়ে নদী অধবা থাকার ব্রত করলে, বৈনাশিক ভালোবাসায় হৃদয় হয় বৈরস্য এবং নদী হয় বৈমানস্য। [ ]

এক দুপুরে বেড়াতে বেরিয়ে পলাশতলে হৃদয়কে দেখে নদী দ্রুত যেয়ে রাগান্বিতকণ্ঠে বললো, "এতদিন কোথায় ছিলে?”
হাসার চেষ্টা করে হৃদয় বললো, "তোমাকে দেখার জন্য এসেছি। আমি জানতাম আজ তুমি পলাশতলে আসবে।"
"নিজের অজান্তে যান্ত্রিক পুতুলের মতন এসেছি।"
"স্বেচ্ছায় সব ত্যাগ করে গৃহত্যাগী হয়েছি। মন্তা হতে চেয়ে জেনেছি, কুমন্ত্রণায় অন্তর আমাকে বিভ্রান্ত করতে চায়। উপবাসে সত্যাসত্য জেনেছি, সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে জীবনীশক্তি। আজ সকালে মৌসুমের অর্থ জেনেছি, দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে প্রবাহিত বায়ুস্রোতে ভেসে বর্ষার আবির্ভাব হয়।" বলে হৃদয় গাছে হেলান দিয়ে বসে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে নদী বললো, "কয়দিন হয় পাতে ভাত পড়েনি?"
"কম হলেও অন্তত দুই তিন দিন হবে।"
"ইয়া আল্লাহ!” বলে নদী দ্রুত যেয়ে ফাস্ট ফুড রেস্তোঁরা থেকে ফ্রাইড চিকেন, চিপস, পিজ্জা এবং পানীয় হাতে ফিরে তার হাতে দিয়ে বিচলিত হয়ে বললো, “এমন হয়েছ কনে, তোমার কী হয়েছে?”
দু হাতে খাবার গ্রহণ করে হাইবেঞ্চে বসে হাত ধোয়ে খেতে শুরু করে হৃদয় বললো, "কাঁসা দিয়ে কুষি বানিয়ে ঋষি হতে চাই। মনকষাকষি করে কোনো লাভ হবে না।"
“বিশ্বাস করো সেদিন তোমার সাথে ফস্টিনস্টি করেছিলাম।"
"তোমার রূপজেল্লার ঝলকে ফসফরাসের মত আমার মনে প্রেমাগুন জ্বলেছিল।"
"মারামারি করেছিলে কেন?"
"ঋষি হওয়ার ব্রত করেছি।"
"ঋষিরা নিষ্পাপ।"
"পাপমোচনের জন্য সাধ্যসাধনা করব।"
"কর্তব্যকর্মে ব্যর্থ হলে নিজের অজান্তে দুর্দশাগ্রস্ত হবে।”
“ধর্মকর্মে ব্রতী হলে আমার মত ব্যর্থরাও সার্থক হয়। আত্মশুদ্ধির জন্য আমাদের জন্ম এবং মৃত্যুর পর আমরা গন্তব্যে প্রত্যাবর্তন করব, তা স্বর্গ অথবা নরক হবে। কৃতকর্মের জন্য আমি অনুতপ্ত। কার্যকলাপে তোমার মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করো।”
“ক্ষমা করলে কী করবে?”
“অনুমতি দিলে আমি তোমাকে সরসী ডাকব।”
“চাইল ডাকতে পারবে। এতদিন কোথায় ছিলে?"

চলবে....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.