নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমানিশাত (ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ২)

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৩৪

পর্ব ১


ঔপন্যাসিক মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

"মা বাবার আরামের জন্য দিনরাত কষ্ট করলেও মন সন্তুষ্ট হয়। আমার মা বাবা নেই।" বলে বাবুর বিচলিত হয়। অশ্রু মুছে হাসার চেষ্টা করে নিশাত বললো, "বুঝেছি, আমি আর কাঁদব না।”
মুন্না বুক কাঁপিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, "নিশাতভাই ঘুমাও, সকালে উঠতে হবে।"
"একটু গপসপ করতে পারব?"
"বেশি বকবক করলে ঘুমের বারোটা বাজবে।" বলে মুন্না মাথা নাড়লে নিশাত বললো, "বাবুর ভাই, একটা প্রেমের কবিতা শুনাও।"
"ওকে বলেছিলাম, আমার প্রেমের দিকে আড়চোখে তাকালে আমি তোর চোখ কানা করব। আমার প্রেম আমাকে প্রেমীক বানিয়েছে। আমি ওকে ভুলতে পারি না। প্রেম কখনো অপবিত্র হয় না। প্রেমের কায়া ছায়া নেই। প্রেম অন্তরে থাকে। অমর হতে চেয়ে মানুষ পামর হয়। উঠতে বসতে পাপ করে আমি বিপাকে পড়েছি।" বলে বাবুর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লে মাথা নেড়ে নিশাত বললো, "বোকামির সীমা থাকা ভালো, নইলে হাবায় ডাকবে আউলা। বুঝেশুঝে বোকা হলে বকে হাসে একলা, তাই না মুন্না?"
"নিশাত ভাই, ঘুম আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আমিও নিয়ন্ত্রিত হতে চাই। আমার মাথা ঘুরাচ্ছে না দুনিয়া ঘুরাচ্ছে আমি সিদ্ধান্ত করতে পারছি না।" বলে মুন্না চোখ বুজে হেলতে দুলতে শুরু করলে নিশাত বললো, "কারো প্রেমে মজে মন হয়েছে হাবলা, হাই-আমলার রস গিলে আমি হয়েছি মাতোয়ালা। ঘরে বেড়া দাওয়ার জন্য কিনেছি হোগলা, আমার চাল কানা করার জন্য আকাশ হয়েছে মেঘলা।”
"আমি আর যাব না ওই টোলা।” বলে মুন্না কপট হাসলে ভ্রু দিয়ে ইশারা বাবুর বললো, “এই ছ্যাবলা, বল তো শুনি, পুটির পিঠে ঠুকর মেরে বক কেন ঘটঘট করে হাঁটে?”
"আমি জানি না।" বলে মুন্না মাথা নাড়ে। বুক ভরে শ্বান টেনে নিশাত বললো, "বর্ষাত্যয়ে তোমার লাগি বাসর সাজাব বাগিচায়, প্রেমালপ করার লাগি মুখোমুখি বসব দুজন আকাশ ছায়। বয়সের সাথে বোঝ বেড়ে হয়েছে বিষম দায়, তোমার ঠিকানা অবুঝ মন আজ জানতে চায়।"
মেঝেতে চিৎ হয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে বাবুর বললো, “মনে বড় আশা ছিল বন্দে বাড়ি বানিয়ে দিলে প্রিয়া মোর সংসারী হবে। কয় মাস পর আবার বৈশাখ আসবে, নাজানি কখন নড়বড়ে ঘর ঝড়ে উড়বে।"
মাথা দুলিয়ে নিশাত বললো, "বাস্তবিক চিন্তা করলে এবং বাস্তবে কী হচ্ছে দেখলে বিবেক বোকা হয়ে বলে, আমি আর ভাবতে পারি না। সস্তায় জাতিয় ফল কিনে বস্তাবন্দি করে রাখলে খাস্তা হয়, লাভ অথবা উন্নতি হয় না।”
“হে দেশহিতব্রতী, ব্রত করে বিব্রত হলে বিখ্যাত হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে নাকি?” বলে মুন্না দুহাতে মাথা চুলকায়। বুক ভরে শ্বাস টেনে বাবুর বললো, "ওর বিরহ আজো আমাকে রাত জাগায়, আঁখিজল চুঁইয়ে কানের ভিতর যায়। অন্ধকারে মানুষ হাতড়ে হাঁটে এবং গরিব হলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারায়।”
দুহাত মুখের কাছে নিয়ে আস্তে আস্তে সরিয়ে মুন্না বললো, “আমি মনশ্চক্ষে দেখতে পাচ্ছি, বৃষ্টিপ্রেমী পাখিরা বৃষ্টিজলে গোসল করার জন্য মেঘলা আকাশে উড়ছে। পিঠা খাওয়ার জন্য কাঁঠাল গাছে কুটুমপাখি বসেছে এবং সংসারী হওয়ার জন্য লেবু গাছে টোনা টুনি বাসা বানাচ্ছে।”
“বুঝেছি, যেমন করে হোক এখন ঘুমাতে হবে।" বলে বাবুর কপট হাসে। আর কথা না বলে মেঝেতে বিছানা পেতে তিন জন শোয়ে পড়ে এবং সকালে উঠে রান্নার কাজ সেরে কাপ এবং কেতলি হাতে নিশাত বেরোয়। মুন্নাকে ডেকে বাবুর বললো, “ভায়া, তারপর আমি এখন কী কাজ করব?”
“দয়া করে ভদ্রলোকদের সাথে ভদ্র ব্যবহার করবে, যে যা চাইবে শুধু তা দেবে। টাকার চিন্তা করতে হবে না, যাওয়ার সময় ভদ্রলোকরা বকশিশ দেয়। আমি কী বুঝাতে চেয়েছি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ?” বলে মুন্না চোখের দিকে তাকালে মাথা দুলিয়ে বাবুর বললো, "হ্যাঁ, আমি কাউকে মারধর করব না এবং আমাকে কিলালেও আমি সাহেব সাহেব ডাকব। ঠিকাছে?”
"বাবুর ভাই, বিশ্বাস করো আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে।"
"ভয়ের কারণ নেই, নিশাতের সাথে বাড়ি যেতে চাই। আমি জানি দুহাতে বর্তন ধরে মা উঠানে হাঁটা হাঁটি করেন। পাশের বাড়ির লোকরা ইলিশের ডিম নিয়ে আসলে দরজা না খুলে আপা চিৎকার করে বলেন, আমার ভাই এখন টাকা রুজি করে। নিরালায় একলা বসলে চোখের জলে বাবার বুক ভাসে। মারধর করলেও আমি আর মারামারি করব না।” বলে বাবুর বাজুতে অশ্রু মুছলে একজন হেঁকে বললো, "এই, আমাকে পানি দে।"
আরেকজন বললো, "আমার চা কোথায়? নাস্তার জন্য সারাদিন বসে থাকলে কাজ করব কখন, বউয়ের জন্য শাড়ি কিনব কী দিয়ে?"
"এই তো সাহেব আপনাদের চা পানি।" বলে বাবুর কাজে ব্যস্ত হয়। বিকালবেলা শাইরা পার্কে যেয়ে চানাচুরওয়ালার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, "ঝালমুড়ি আর চানাচুর দাও।”
চানাচুরওয়ালা ঝটপট চানাচুর এবং ঝালমুড়ি বানিয়ে দেয়। টাকা দিয়ে অনতিদূরে যেয়ে বেঞ্চে বসে ঝালমুড়ি খায়। নিশাত তখন কেতলিকে তবলার মত বাজিয়ে গান গেয়ে হাঁটে…

"বঁধু তুমি আছ কত দূর, দূর কত দূর, বঁধু তুমি আছ কত দূর? তোমাকে দেখার লাগি একেলা হেঁটে কত রাত করেছি ভোর, বঁধু তুমি আছ কত দূর? দূর কত দূর, বঁধু তুমি আছ কত দূর?”

নিশাত থামলে বখাটে ছেলেরা শাইরার সাথে ফাজলামি শুরু করে। তা দেখে নিশাত ঝালমুড়ি কিনে এক মুঠ মুখে পুরে চিবাতে চিবাতে বললো, "ঠাঠার সাথে ঠাট্টা ইয়ার্কি করছেন কেন? উপরে পড়লে নির্ঘাত মরে যাবেন।"
"তুই তোর কাজ কর যেয়ে যা। আরেকটা কথা বললে দেব একটা ঘাড়ে।" এক মস্তান ধমকে বললো।
"ঠিকাছে বড়ভাই আমি চলে যাব, আমাকে মের না। যাওয়ার আগে আবারো বলছি, ঠাঠার সাথে ঠাট্টা ইয়ার্কি করা মোটেই ভালো নয়, এক্কেবারে মাথার মাঝখানে ঠাঠা পড়ে। বাবুর ভাই, ও বাবুর ভাই কোথায় গা ঢাকা দিয়েছ?" হেঁকে বলে নিশাত কেতলিকে তবলার মত বাজিয়ে পা বাড়ায়। ধমকা হাওয়ার মত বাবুর গেলে গনধোলাই শুরু হয়। আছাড় পটকান খেয়ে মস্তানরা দৌড়ে পালায়। বাবুর শার্ট দিয়ে মুখের রক্ত মুছতে মুছতে বললো, "এই নিশাত, ঠাঠার সাথে বদরা ঠাট্টা ইয়ার্কি করে কেন?"
"বড়ভাইদেরকে বারণ নিষেধ করেছিলাম, এমনকী কাকুতি মিনতি করেও বলেছিলাম ঠাঠার সাথে ঠাট্টা ইয়ার্কি করলে এক্কেবারে মাথার মাঝখানে ঠাঠা পড়ে। আমার কথা কেউ শুনে না। আগামীতে আর বারণ নিষেধ করব না।" বলে নিশাত গাল ফুলিয়ে তবলা বাজাতে থাকে। শাইরা থরথর করে কাঁপে। আস্ক্রিমওয়ালা পুলিশকে ফোন করে। পুলিশ যেয়ে শাইরাকে অভয় এবং সান্ত্বনা দিয়ে বাবুর এবং নিশাতকে এক পাশে নিয়ে জেরা করে। নিশাত কাঁধ বাঁকিয়ে বললো, "আমি কিচ্ছু জানি না। মারামারি দেখার জন্য দৌড়ে এসেছিলাম। কয়েকজন মিলে বাবুর ভাইকে মারপিট করেছিল এবং যাওয়ার সময় চানুচুরওয়ালা এবং আস্ক্রিমওয়ালার সবলোট করেছে। আমি এখন যাই? সময়মতো চা নিয়ে না গেলে আমার কাজ যাবে।”
পুলিশরা তাকে যেত দেয়। তবলা বাজিয়ে নিশাত চলে যাচ্ছে দেখে শাইরা ডেকে বললো, "নিশাত দাঁড়াও, তোমার সাথে কথা আছে।”
ডাকে সাড়া না দিয়ে গায়ের জোরে কেতলি বাজিয়ে গান গেয়ে নিশাত চলে যায়। পুলিশরা জেরা করতে চাইলে বাবুর মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি শুরু করে। অপারগ হয়ে পুলিশরা তাকে হাসপাতালে পাঠায়। তাকে দেখার জন্য নিশাত যায় এবং হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আড়মোড়া দিয়ে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বাবুর বললো, "নিখরচা বান্দর নাচ দেখছিলে নাকি?"
"আরে বাবুর ভাই, আমি তখন বিরহের গান বাঁধার ধান্ধায় ছিলাম।"
"একটু সাহয্য করলে হাসপাতালে আসতে হত না।" বলে বাবুর নিশাতের কাঁধে ভর করে হাঁটে। রিকসা থামিয়ে বাবুরকে উঠিয়ে নিশাত বললো, "গান শুনবে?"
"এই নিশাত, বাড়ি কবে যাবে?"
"শণ্মাস পর যাব। আমার সাথে যেতে চাও নাকি?"
"কাজ একটা পেয়েছি। বাঁচলে কয়েক লাখ পাব।”
“যে কাজে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই এমন কাজের প্রয়োজন নেই। যা কামাচ্ছি তা আমার জন্য যথেষ্ট। বাঁচলে বারোমাস কাজ করতে পারব, মরলে সবশেষ। আমি আর তোমাকে গান শুনাব না।”
"মা বাবার আদর আশীর্বাদ ভাগাভাগি করলে ঝটপট ভালোমানুষ হব।"
"কথা দিয়ে কী হবে? আবার একলা হব। কোল-আলো-করা ছেলেরা বেশি দিন বাঁচে না।”
"আর মারামারি করব না। আল্লাহর দোহাই, রাগ করিস নারে ভাই। তুই রাগলে আমি হতাশ্বাস হই। আমার কেউ নেই। তুই-ই আমার একমাত্র আপনজন। তুই হাসলে আমি আশ্বস্ত হই।"
"আপার বিয়ের পর দুই ভাই মিলে দোকান খুলে আল্লাহর জয় জিকির শুরু করলে, আপখোরাকির জন্য দুশ্চিন্তা করতে হবে না ইন শা আল্লাহ।”
“এই নিশাত, আরেক কাজ করলে কেমন হয়?"
“যা করার আপার বিয়ের পর করব। অর্থের জন্য এত অধৈর্য হয়েছ কেন, বিয়ে করতে চাও নাকি? বিয়ে করে বউকে কী খাওয়াবে, কার ঘরে রাখবে?” বলে নিশাত হাত এবং মাথা দিয়ে ইশারা করে। কপট হেসে বাবুর বললো, “হুমড়ি খেয়ে পড়ার জন্য উঠতি বয়সে বিয়ে করতে চাই না, শুধু একটা বাসা ভাড়া করতে চাই। কম্পিউটার দেখলে বুকের ভিতর আনচান আনচান করে। একটা কম্পিউটার কিনতে চাই। জানিস, কম্পিউটারের ভিতর বাজনা বানানো যায়, গান গাওয়া যায়। আমি একটা কম্পিউটার কিনতে চাই।"
"ওরে কুঁজা তুমি জীবনেও চিৎ হয়ে ঘুমাতে পারবে না।"
“কম্পিউটার একটা কিনব-ই কিনব।"
"ঠিকাছে, তুমি কম্পিউটার কিনলে আমি দিনরাত গান গাইব।" বলে নিশাত রিকসা থামাতে বলে ভাড়া দিয়ে বাবুরকে ধরে নামে। বাবুর বায়না ধরে বললো, "কবে কিনে দেবে?"
"আপার বিয়ের পর। এখন কোথায় যাবে?"
"খামোখা চিন্তা করছিস কেন? রঈদার ঝুপড়িতে চল। আমার সাথে তোকে দেখলে কোর্ম কালিয়া কিনে খাওয়াবে। চল।”
"রঈদা কে?"

তারপর আর দিয়ে আপনাদেরকে বিরক্ত করব না...

© Mohammed Abdulhaque

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: লিখতে হয় সহজ করে। হুমায়ূন আহমেদের মত সহজ সুন্দর করে। যেন যে কেউ পড়লেই বুঝতে পারে। আপনি কঠিন করে লিখেন। বুঝতে বেগ পেতে হয়। পড়াই ইচ্ছা হারিয়ে যায়।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:২৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: দুঃখিত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.