নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্যের পথে, সংস্কৃতির রথে

কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

কবিতা এবং সাহিত্যের ছাত্র

কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুদ্রতার বৃহৎ জীবন

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২৭

একটি অনুভূতি জীবনের কেন্দ্রে থাকে; আমরণ সেখানেই তার বাস।
স্রষ্টাই ভালো জানেন, এ বন্ধনের পরিচয়। পূণ্য কিংবা পাপে সব কিছু তো মাপা যায় না। এখানেই যুগে যুগে যুগান্তকারীরা থেকেছেন। দেখেছেন, বিতর্কের উর্ধ্বে রয়েছে প্রশান্তি। সহজ-সরল-সাধারণ মানুষ; সাধারণভাবে সব কিছু গ্রহণ করে। জটিলেরা জটিলতায় জড়িয়ে; নিজের সৃষ্টি করা সমস্যা, সমাধান করে; নিজেকে বুদ্ধির ঢেকি মনে করলেও তারা তা নয়।
বুদ্ধিমানেরা সহজ হয়; খুব সহজ।
ফারুকের জন্ম টাকার সুবিধাহীনতায়। সে ভাত খায়। পেট ভরে। পানি খায়। বস্তির পেছনের পোড়া কাঠ কয়লার মাঠে পেয়েছে কিছু বন্ধু; তাদের সাথে খেলাধুলা করে, সুখ পায়।
বড় হওয়ার দায়িত্ব যখন যৌবনের সামনাসামনি এসে দাড়িয়েছে তখন থেকে যে যার মতো দিন মজুরীর কোনো না কোনো কাজ করে সন্ধ্যায় ফিরে আসে রেল লাইনের মজবুত কঠিনে। তারা হাসে, আড্ডা দেয়, সস্তা কোনো খাবার কিংবা বাদাম খায়।
নজরুলের বড় ভাই হোটেলে থাকে। রুটি বানায়। তাই ও মাঝে মাঝে রুটি আনে, বন্ধুদের খাওয়ায়। শেষ সময়ের বাসি রুটিও ওদের কাছে বেশ ভালোই লাগে।
অভাবের দিনে যখন তারা খাবার পেতনা; সেই সময় এলাকার রাসেল ভাই ওদেরকে মাঝে মাঝে সিঙ্গারা খাওয়াতো। রাসেল ভাইয়ের মা নেই। তার বাবার অনেক টাকা থাকলেও কেন যেন সে কখনও তার প্রকাশ করত না। অপরদিকে সেই রাসেল ভাইয়েরই ছোট ভাই রাশেদের বাবার যেন অনেক টাকা। তাই বুঝি, ওর কাপড় এতো নতুন নতুন হয়। পায়ের জুতাও দুদিন পর পর পরিবর্তন হয়। গার্ল-ফ্রেন্ডও পেয়েছে টাকাওয়ালা। সে দিন মেয়েটি রাশেদকে বাইক গিফ্ট করেছে। ফেসবুকের গ্রুপে গ্রুপে সেই বাইক গিফ্ট দেয়ার সারপ্রাইজ কয়েকদিন বেশ ভালোবাসা কুড়িয়েছে।
কতো ছেলে সেই পোস্টে মন্তব্য করেছে, “ইশ! যদি এমন কোনো গার্লফ্রেন্ড পেতাম!”।
ফারুকেরা ওদের রাসেল ভাইকে জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা ভাই, রাশেদকে দেখলাম ফেসবুকে; ওর গার্লফ্রেন্ড নাকি ওকে বাইক গিফ্ট করেছে?”
রাসেল ভাইয়ের জবাব ছিল, “কোন গার্লফ্রেণ্ড? ওর তো গার্লফ্রেন্ডের হিসাব নেই”।
সবাই কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে গেল। নিরবতা ভেঙ্গে রাসেল ভাই
নিজেই বল্লেন, “শোন, মালিক দেহ দিলেন, অনুভব দিলেন। তার দেয়া সংসারে, সাংসারিক হওয়ার জন্য দিলেন বিবেক। কী নেই তার উপহারে!
আলোর জন্য চোখ, সুরের জন্য কান, স্বাদের জন্য জিহ্বা, বংশ বিস্তারে দিলেন ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গ; তাতে দিলেন আকর্ষণ ও তৃপ্তিযোগ্য রসনা। এখানে সব কিছু নিয়মতান্ত্রিক ভাবে থাকলেই সবার জন্য ভারসাম্য বজায় থাকে। বাইক দিয়ে কি ভালোবাসার বড়ত্ব মাপা যায়? সো-আপ করার নাম ভালোবাসা নয়রে। ভালোবাসা নিরবে, নিভৃতে এসেও স্থির থাকতে পারে জীবনের বাস্তবতায় মিশে। শাজাহান তাজমহল তৈরি করেছে বলেই যে সেই একমাত্র প্রেমিক, এটা বলা যাবে না। এমনও তো হতে পারে, আমাদের ফারুক, নজরুল, সোহরাব ‍কিংবা আমি নিজেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমিক”।
রাসেল ভাই ফারুককে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ”তুই নাকি কাকে পছন্দ করিস, সে কি তোকে বাইক দিবে?”
উত্তরের ভার নজরুল নিয়ে জবাব দিল, “কী যে বলেন ভাই। ও টাকা পাবে কোথায়? বরং ফারুকই মাঝে মাঝে ওর মায়ের ওষুধ কিনে দেয়।”
সবাই এক যোগে হেসে উঠল। ফারুক কিঞ্চিত লজ্জা লজ্জা ভাবে বল্ল, “আসলে ওর কোনো ভাই নেই। খালাম্মা, আমাকে উনার ছেলের চোখেই দেখেন। মনিরার বাবাও কয়েক মাস ধরে রিক্সা চালাতে পারছে না। তাই নানী বল্ল, “মনিরাদের খোজ রাখিস তো, ওর বাপে নাকি এক্সডিডেন্ট করছে”।
রাসেল ভাই সবাইকে থামিয়ে বল্ল, “এই যে দেখ, এই বিষয়টি। আমরা সবাই জানি, ফারুকের বাবা-মা কেউ নেই। ঐ নানীই ওকে ছোট থেকে কোলে-পিঠে মানুষ করছে। ওর মামারাও ওর সম্পর্কে ওর নানীকে কিছু বলে নি কোনদিন। তাহলে বল, কীসের স্বার্থে ঐ বুড়ি মানুষটি, যে কিনা নিজেই ভাত পেত না, নিজের সন্তানকে খাবার দিতে পারত না, সেই রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়েছিল ওকে”।
কয়েকদিন পর, শোনা গেল রাশেদের মাথা কারা যেন ফাটিয়েছে। জানা গেল, দূরের কেউ নয়, ওরা নাকি ওরই বন্ধু যাদের সাথে অলিতে-গলিতে, বিভিন্ন দোকানে ও আড্ডা দিত। রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনে এক সাথে বাইকে চড়ে এদিক-সেদিক টহল দিত। বাড়িতে এসে ফ্রিজ খুলে খাবার খেতো।
যে নারীর রূপ নেই; দেহ নেই। যে পুরুষের টাকা নেই; তাদের বন্ধু অল্প হলেও তারা কখনও বন্ধুর মাথা ফাটাতে পারে না। মাথা ফাটাফাটি আসে তীব্র ঈর্ষা কিংবা হিংসা থেকে। লোভের সম্পর্ক লোভ ডিঙ্গাতে পারে না। ভালো লাগা কিংবা ভালো থাকা লোভ নয়; অযোগ্যের কাছে যোগ্যতাগুলোই লোভ।
ফারুকের জীবনের পরিসর ছোট। বন্ধুদের গোনার দরকার হয় না; তাদের দেখা যায়। সে বিশ্বাস করে, জীবনে প্রিয়দের ভিড় হয় না। তারা যে কজনই হোক না কেন, স্বভাবে মিশে থাকে। তারা দেখলেও সুখ, না দেখলেও সুখ।
প্রিয়দের আবেগ যেভাবেই আসুক; তাতে থাকে টলমল জীবনের অদ্ভুত প্রতিকৃতি।
টাকা না থাকলেও প্রিয়রা প্রিয় থাকে। কুৎসিত হলেও সে প্রিয়। মুর্খ হলেও যদি তাতে জীবন থাকে, তবে সে প্রিয়। প্রিয়দের সামনে অভিনয়ের দরকার হয় না। প্রিয়রা প্রিয়ের সকল দুর্বলতা জেনেও তাকে পাশে রাখে।
---- ক্ষুদ্রতার বৃহৎ জীবন
---- আব্দুল্লাহ আল- মাহমুদ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর লেখা। একদম বাস্তব লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.