নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহীদ সাবের একজন সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী। ক্ষনজন্মা এই সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী শহীদ সাবের ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ৩১ ডিসেম্বর নিজ কর্মস্থল দৈনিক সংবাদ পত্রিকার কার্যালয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর লাগিয়ে দেওয়া আগুনে পুড়ে হীদ সাবের অঙ্গার হয়ে যান। আজ এই সাংবাদিকের মৃত্যুদিন। মুত্যুদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
১৯৩০ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলার ঈদগাওর সোনাপুকুর গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ সাবের। কক্সবাজার জেলার ঈদগাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র থাকার সময় মাকে ছেড়ে পিতার কাছে সৎমায়ের সংসারে কলকাতায় চলে যান শহীদ সাবের । কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হয়ে বরাবরই ক্লাসের সেকেন্ড বয় হিসেবে পরিচিত পান। সেখানে ছন্দ শিখা নামের হাতে লেখা পত্রিকার মাধ্যমেই তাঁর সাহিত্যজগতে প্রবেশ। ১৯৪৭ সালের দেশভাগে সপরিবারে তাঁরা পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। পরে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন সাবের। কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছেন আজিমপুরের ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুলে।
শহীদ সাবের জেলে যান ১৯৫০ সালে, যখন তিনি সদ্য ম্যাট্রিক পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ছাত্র ফেডারেশনের এক সমাবেশে বক্তৃতারত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন সাবের। সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা না দিয়ে নিরাপত্তা-বন্দী শহীদ সাবেরকে চট্টগ্রাম কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে তাঁকে রাজশাহী জেলে পাঠানো হয়। তারপর বিনা বিচারে চার বছর আটক ছিলেন কারাগারে। সেকালের অসংখ্য রাজবন্দির মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম। জেলখানায় থাকাকালে তাঁর খাতায় কয়েকটি উদ্ধৃতি লিখে রেখেছিলেন। উদ্ধৃতিগুলোর মধ্যে একটি ছিল, 'কর্মই হচ্ছে চিন্তার উদ্দেশ্য। যে চিন্তাকে কর্মের দিকে প্রেরণা দেয় না, সে পণ্ডশ্রম। প্রবঞ্চনা মাত্র। অতএব চিন্তার সেবক যদি আমরা হয়ে থাকি, তবে কর্মেরও সেবক আমাদের হতেই হবে।' উদ্ধৃতিটি লেনিনের লেখা থেকে নেওয়া। বোঝা যায় শহীদ সাবেরের চিন্তাধারাটা কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তিনি কেবল চিন্তা নয়, কর্মের সঙ্গেও যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। চট্টগ্রাম জেলে বসেই বন্দিজীবনের কাহিনি নিয়ে লিখেছিলেন ‘আরেক দুনিয়া থেকে’ নামক রোজনামচা। লেখাটি গোপনে জেল থেকে পাচার হয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত নতুন সাহিত্য-এর চৈত্র ১৩৫৭ সংখ্যায় ছাপা হয়। লেখাটি নিয়ে চারদিকে সাড়া পড়েছিল। দুঃখের বিষয় শহীদ সাবেরের নিজের নামে তা প্রকাশিত হয়নি, লেখক হিসেবে নাম ছাপা হয়েছিল জনৈক জামিল হোসেনের। উভয় বাংলার পাঠক, লেখকের পরিচয় জানতে কৌতূহলী হয়েছিলেন। সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখাটির প্রশংসা করে এবং ওই নতুন লেখককে স্বাগত জানিয়ে পত্রিকার সম্পাদককে চিঠি লিখেছিলেন।
এরপর ১৯৫৫ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে বিএ পাস করলেন। বিএ পাস করে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক সংবাদ-এ। কেন্দ্রীয় ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিএসএস) জন্য পরীক্ষা দিয়ে সে বছরের কৃতকার্যদের ভেতর তাঁর অবস্থান ছিল শীর্ষে; কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দরুন তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সাহিত্যিক হিসেবে অল্প সময়ে অনেক কাজ করেছেন তিনি। ১৯৫৫ সালেই তাঁর ছোটগল্পের চমৎকার একটি সংকলন বের হয় 'এক টুকরো মেঘ' নামে; 'ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান' নাম দিয়ে কিশোরদের জন্য একটি সুখপাঠ্য গ্রল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে; তিনটি বিদেশি রচনার অনুবাদও সম্পন্ন করেছিলেন, পুশকিনের ইস্কাপনের বিবি, গোগলের পাগলের ডায়েরী, এবং 'কালো মেয়ের স্বপ্ন' নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন, গানও আছে তাঁর। তবে গ্রন্থাকারে তা প্রকাশিত হয়নি। বিভিন্ন দৈনিক ও পত্রপত্রিকায় তা ছাপা হয়েছিল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁর কবিতাগুলো বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত সেলিনা হোসেন সম্পাদিত ‘শহীদ সাবের রচনাবলী’তে পুনর্মুদ্রণ হয়। এরমধ্যে ২৫ জানুয়ারি ১৯৫১ সালে ‘শোকার্ত মায়ের প্রতি’ কবিতাটি চট্টগ্রাম জেলে বসে লেখা। বাকী কবিতাগুলো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে লেখা। সাঁওতাল বিদ্রোহের নেত্রী ইলা মিত্রকে নিয়ে লেখা এ কবিতাটির প্রতি পঙ্ক্তিতে রয়েছে জীবনের বারুদ চেতনা। সংগ্রামের ইতিহাস।
১৯৫৮ সালের শেষের দিকে তাঁর মানসিক বিপর্যয় শুরু হয়। নিজের অবস্থানে টিকে থাকতে না পারার যন্ত্রণায় জীবনের প্রতি তীব্র অনীহা কিংবা ঘৃণায় নিজের মধ্যে গুটিয়ে যান শহীদ সাবের। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও আর্থিক অনটনে চিকিৎসার ধারাবাহিকতার অভাবে সেই সুস্থতা বজায় থাকেনি। ক্রমশ আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর জীবন হয়ে পড়ে অসংলগ্ন এবং প্রথাবিরোধী। বংশালের সংবাদ অফিসই হয়ে উঠেছিল সাবেরের একমাত্র আশ্রয়স্থল। দিনময় উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে রাতে ঘুমাতে যেতেন সংবাদ অফিসে। মেঝে, বারান্দা, হাতলবিহীন চেয়ার ছিল তাঁর ঘুমের স্থান। সংবাদ অফিস থেকে তাঁকে প্রতিদিন দুই টাকা দেওয়া হতো। প্রেসক্লাবে খাওয়া ফ্রি। ফ্রি খাওয়ার বেলায়ও ছিলেন অনিয়মিত। সিগারেট, একমাত্র সিগারেট খেতেই সবার কাছে হাত পাততেন নির্দ্বিধায়। জীবনের বোঝা বয়ে বয়ে উদ্ভ্রান্ত জীবনে অভ্যস্ত শহীদ সাবের মূলত বন্ধুদের সাহায্যেই বেঁচে ছিলেন মাত্র। ছিল না বোধ; ছিল না স্বপ্ন পূরণের সামান্য মানসিক শক্তি। কেউ খাওয়ালে খেতেন, নয়তো না খেয়েই থাকতেন। অনাহার ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।
১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দৈনিক সংবাদ অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়; শহীদ সাবের তখন ওই অফিসে ছিলেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। পুরো সংবাদ অফিসের সঙ্গে ছাই-ভস্ম হয়ে যান দৈহিকভাবে বেঁচে থাকা শহীদ সাবের। তাঁর দেহের সৎকার তো দূরের কথা, শনাক্ত পর্যন্ত করা যায়নি। তার সাহিত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭২ সালে (মরণোত্তর) বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেছিলেন শহীদ সাবের।
স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২ টাকা মূল্যের একটি ডাক টিকিট প্রকাশ করে। একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর হামলায় নির্মমভাবে নিহত সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী শহীদ সাবের এর স্মৃতি ধরে রাখতে তার নিজ গ্রাম কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে স্থাপিত করা হয়েছে সাংবাদিক শহীদ সাবের পাঠাগার।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক শহীদ সাবের এর মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। তার অবদানের কথা যেন আমরা না ভুলে যাই সেই প্রত্যাশায়
৩১ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮
কোবিদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে বরাবরের মতো।
একমাত্র আপনি নিয়মিত আমার
লেখার সাথে থাকেন বলে আমি কৃতজ্ঞ।
২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১০
বোকামন বলেছেন: গভীর শ্রদ্ধা .....
৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪০
মুশে হক বলেছেন: শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা। আর জামাত শিবিরের প্রতি ঘৃণা ও অভিসম্পাত। কারণ আজও তারা পাকিস্তানিদের অনুসরণে দেশে ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ করে যাচ্ছে।
৪| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৪১
রুদ্র মানব বলেছেন: এই শহীদ বুদ্ধিজীবির প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা .....
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:২২
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক শহীদ সাবের এর মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। তার অবদানের কথা যেন আমরা না ভুলে যাই সেই প্রত্যাশায়
তার শহীদ আত্মায় আমাদের লাল ছালাম