নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চরম দারিদ্রের মধ্যে থেকেও সাহিত্য কর্মকেই জীবন ও জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে যিনি বেছে নিয়েছিলেন তিনি হলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের অবচেতন মনে যে নিগুড় রহস্যলীলা প্রচ্ছন্ন থাকে তার নিপুণ বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হয়েছে তাঁর লেখায়। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ’পদ্মা নদীর মাঝি ’। ষাটটি গ্রন্থ ও অসংখ্য অগ্রন্থিত রচনার প্রণেতা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কর্মগুলো হচ্ছে- জননী, দিবারাত্রির কাব্য, পুতুল নাচের ইতিকথা, চিহ্ন, চতুষ্কোণ, জীয়ন্ত, সোনার চেয়ে দামী ইত্যাদি। ১৯০৮ সালের ১৯শে মে এই সাহিত্যিকের জন্ম দিন। জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের শুভেচ্ছ।
জীবনবাদী লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। সাহিত্যই ছিল তাঁর উপার্জনের একমাত্র উপায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভারে নুইয়ে পড়া মানিক পাঠককে তার অভিজ্ঞতার ভাগ দেয়ার জন্যই লেখা শুরু করেন। তার রচনার মূল বিষ্যবস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেনিসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তার রচনায় ফুটে উঠেছে। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে মাত্র আটাশ বছরের সাহিত্যজীবনে রচনা করেন বিয়ালি্লশটি উপন্যাস ও দুই শতাধিক ছোটগল্প। তাঁর রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসীমামী, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়।বাঙলা ছাড়াও তার রচনাসমূহ বিদেশী বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে (১৩১৫ বঙ্গাব্দের ৬ জ্যৈষ্ঠ) বর্তমান ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা নীরদাসুন্দরী দেবী। জন্মপত্রিকায় তাঁর নাম রাখা হয়েছিল অধরচন্দ্র। তার পিতার দেয়া নাম ছিল প্রবোধকুমার আর ডাকনাম মানিক। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তদনীন্তন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্টার। পিতার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন অতিবাহিত হয়েছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে। তার মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা। পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের কারণে ঐ সকল মানুষের জীবনচিত্র সম্পর্কে বেশ ভালো ধারনা ছিল মানিকের। তাই ঐ অঞ্চলের সাধারন মানুষের জীবন চিত্রকে তার সাহিত্যে অপূর্ব দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। পদ্মার তীরবর্তি জেলেপাড়ার প্টভূমিতে রচনা করেন পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসটি।
১৯২৬ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় এবং ১৯২৮ সালে বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশন থেকে আই.এস.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। তবে পড়া লেখা শেষ না করেই সাহিত্য রচনাকেই তিনি তার মূল পেশা হিসেবে বেছে নেন। সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশের ফলে তার একাডেমিক পড়াশুনার ব্যপক ক্ষতি হয় শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে। বিচিত্রায় তাঁর প্রথম গল্প অতসী মামী প্রকাশের সাথে সাথেই গল্পটি পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। তখন থেকেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামটি পরিচিত হয়ে ওঠে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে। এরপর থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা পাঠাতে থাকেন মানিক। এরপর কিছুদিন 'নবারুণ' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে এবং পরবর্তিতে 'বঙ্গশ্রী' পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। বিচিত্র সব মানুষ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন লেখক। তার এই সকল অভিজ্ঞতাকেই তিনি তার সাহিত্যে তুলে ধরেছেন বিচিত্র সব চরিত্রের আড়ালে।
১৯৩৮ সালে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সংসার জীবনে সচ্ছলতা আনবার মানসে ১৯৩৯ সালে তিনি একটি প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন কিন্ত কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে কয়েকমাস তিনি একটি সরকারী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদেন এবং আজীবন তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এসময় থেকে তাঁর লেখায় কম্যুনিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৪৬ সালে ভারতের দাঙ্গা-বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৩ সালে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন
মানিক বন্দ্যোপাধায়ের উল্লেখ যোগ্য সাহিত্য কর্মের মধ্যে
উপন্যাসঃ
১। জননী (১৯৩৫), ২। পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), ৪। পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬), ৫। জীবনের জটিলতা (১৯৩৬), ৫। স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১) ৬। পাশাপাশি (১৯৫২),
৭। সার্বজনীন (১৯৫২), ৮। ফেরিওয়ালা (১৯৫৩), ৯। হরফ (১৯৫৪), ১০। পরাধীন প্রেম (১৯৫৫), ১১। হলুদ নদী সবুজ বন (১৯৫৬)
ছোটগল্পঃ ১। প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭), ৩। মিহি ও মোটা কাহিনী (১৯৩৮), ৪। সরীসৃপ (১৯৩৯), ৫। বৌ (১৯৪০), ৫। সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩), ৫। ভেজাল (১৯৪৪), ৬। হলুদপোড়া (১৯৪৫), ৭। আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬), ৮।খতিয়ান (১৯৪৭), ৯। মাটির মাশুল (১৯৪৮) ১০। ছোট বকুলপুরের যাত্রী (১৯৪৯), ১১। ফেরিওলা (১৯৫৩), ১২। লাজুকলতা (১৯৫৪), এবং নাটকঃ ভিটেমাটি (১৯৪৬) উল্লেখযোগ্য।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার লেখনিতে বিশাল বিস্তীর্ণ নদ-নদীর পটভূমিকায় সাধারণ মানুষের যেমন বস্তুনিষ্ঠ জীবন চিত্র অঙ্কন করেছেন, তেমনি মানুষের কাম-পিপাসায় জীবন চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে আদিমতার অন্ধকারে ফিরে গেছেন বারবার। অদ্ভুত নিরাসক্ত ভাবে তিনি মানুষের জীবন ও সমস্যাকে দেখেছেন, সমাধানের চেষ্টাও করেছেন নিজের নিয়মে। নর নারীর জৈবসত্তা বিকারের নানাদিক লেখককে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি বাংলা উপন্যাসে নতুনত্ব ও আধুনিকতা নিয়ে আসেন। তার প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা উপন্যাসগুলোতে মানব মনের জটিলতার অসাধারণ যৌক্তিক ব্যাখ্যা মেলে।
জীবনযুদ্ধে পর্যদুস্ত, বিপন্ন, নিরাশ্রিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনকাল ছিল মাত্র আটচল্লিশ বছরের। ১৯৫৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে। আজ এই বিখ্যাত লেখকের জন্মদিন, তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।
২| ১৯ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০০
সায়েদ রিয়াদ বলেছেন: সুন্দর লিখা । প্রিয়তে রাখলাম
৩| ২০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৫
রাইসুল সাগর বলেছেন: শুভেচ্ছা রইল প্রিয় এই লেখকের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৫২
রঁমাকান্তকামারঁ বলেছেন: পুতুল নাচের ইতিকথা পড়েছিলাম।
আজকেই পদ্মা নদীর মাঝিটা পড়ছিলাম!!