নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গণেশ ঘোষ একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী বাঙালি বিপ্লবী নেতা ও রাজনীতিবিদ। স্বাধীনতার পুর্বে যুগান্তর দল, স্বাধীনোত্তর কালে ভারতের মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের যুগান্তর দলের সদস্য ছিলেন তিনি। আজ এই বিপ্লবী নেতার জন্মদিন। জন্মদিনে বিপ্লবী গণেশ ঘোষের জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।
বিপ্লবী গণেশ ঘোষ জন্মেছিলেন ১৯০০ সালের ২২ জুন বাংলাদেশের যশোহর জেলার বিনোদপুর গ্রামে। তাঁর পিতা বিপিনবিহারী ঘোষ ছিলেন রেলকর্মচারী। পিতার কর্মস্থল ছিল চট্টগ্রাম। প্রাথমিক পড়াশুনা শেষে গণেশ ঘোষকে তাঁর বাবা চট্টগ্রামের মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে পড়াশোনা করার সময় বন্ধু অনন্ত সিং-এর মাধ্যমে তিনি বিপ্লবী সূর্য সেনের সংস্পর্শে আসেন গণেশ ঘোষ। বন্ধু অনন্ত সিং এর কাছেই মূলত তাঁর রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি হয়। খুব অল্প বয়স থেকে গণেশ ঘোষ দেশকে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হন।
এরপর তিনিও বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে চট্টগ্রাম যুগান্তর দলের সদস্য হয়েছিলেন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্কুল-কলেজ, চট্টগ্রামের বার্মা ওয়েল মিল, স্টিমার কোম্পানি, আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে ইত্যাদি ধর্মঘটে সক্রিয় অংশ নেন। বিপ্লবী দলের কর্মকাণ্ডের প্রতি একাগ্রতার কারণে মাধ্যমিক পাশ করার পর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় পড়তে যেতে রাজি ছিলেন না। অবশেষে মাষ্টারদা সূর্যসেনের পরামর্শ অনুযায়ী ১৯২২ সালে তিনি কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউশনে (যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ) ভর্তি হন। এখানে এসে তিনি বিপ্লবী দলের কাজে যুক্ত থাকার পাশাপাশি ছাত্রদের নিয়ে বিপ্লবী দল গঠনের কাজে নিয়েজিত হন। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় ১৯২৩ সালে মানিকতলা বোমা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুদিন জেলে থাকার পর প্রমাণাভাবে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
(শ্রী গণেষ ঘোষের স্বাক্ষর)
১৯২৪ সালে ভারত উপমহাদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন। ভারত জুড়ে বিপ্লবীরা গড়ে তোলেন সশস্ত্র সংগ্রাম। ধীরে ধীরে সর্বত্র সংগঠিত হতে থাকেন স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিক বিপ্লবীরা। এ সময় সংগঠিত হয় বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক ডাকাতি। বিপ্লববাদীদের এই ধরণের সশস্ত্র কার্যকলাপের কারণে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে ব্রিটিশ সরকার '১ নং বেঙ্গল অর্ডিনান্স' নামে এক জরুরি আইন পাশ করে। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল 'রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য সন্দেহভাজনদের বিনা বিচারে আটক রাখা'। ১৯২৪ সালের ২৫ অক্টোবর ভারত রক্ষা আইন'-এ গণেশ ঘোষ, নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিং সহ আরো কয়েকজন গ্রেফতার হন। এসময় গণেশ ঘোষ চার বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কারাগারে কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯২৮ সালের শেষের দিকে মুক্তিলাভ করেন তিনি।
(বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য্যসেন)
১৯২৮ সালে সূর্য সেনের নেতৃত্বে আরও কয়েকজনের সঙ্গে কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনে যোগ দেন। এই অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু যে বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দল গঠন করেছিলেন, তার আদলে মাস্টারদার চট্টগ্রামের দলে তিনি জিওসি হন। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসে নির্বাচিত হওয়ার পর সূর্য সেন যে ‘বিপ্লবী পরিষদ’ গঠন করেছিলেন, গণেষ ঘোষ ছিলেন তার পাঁচ সদস্যের অন্যতম সদস্য (অপর সদস্যেরা হলেন মাস্টারদা নিজে, অম্বিকা চক্রবর্তী, নির্মল সেন ও অনন্ত সিং)। পরে পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের নাম পালটে ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা’ রাখা হয়।
পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার দখলের কর্মসূচি গ্রহণ করেন বিপ্লবীরা। গণেশ ঘোষ ছিলেন এই অভিযানের ফিল্ড মার্শাল। রাত দশটা পনের মিনিটে বিপ্লবীরা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন। বিপ্লবীরা একের পর এক অতর্কিত আক্রমণ করে সরকারি অস্ত্রাগার, টেলিফোন কেন্দ্র, টেলিগ্রাফ ভবনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে নেন, যা ছিল দেড়শত বছরের ইতিহাসে ইংরেজদের জন্য খুবই অপমানজনক ঘটনা। এটি ছিল সরাসরি ইংরেজ বাহিনীর প্রথম পরাজয়। পরে ঘটনাচক্রে তিনি অপর কয়েক জন সঙ্গীর সঙ্গে বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ২২ এপ্রিল কলকাতার পথে রওনা হন। ফেণী স্টেশনে রেলপুলিশের হাতে বন্দী হলেও তাঁরা পালাতে সক্ষম হন।
(গণেশ ঘোষ, তারেকেশ্বর দস্তিদার ও লাল মোহন সেন)
কলকাতায় আসার পর যুগান্তর দলের সহায়তায় তাঁদের চন্দননগরে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৩০ সালের ১ সেপ্টেম্বর চন্দননগর সংঘর্ষের ঘটনায় অন্যান্য কয়েকজনের সঙ্গে গণেশ ঘোষ বন্দি হন। ১৯৩২ সালে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় দণ্ডিতদের সঙ্গে তাঁকেও সেলুলার জেলে চালান করা হয়। বলিউডে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন নিয়ে "খেলে হাম জি জান সে" শীর্ষক একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে যার অন্যতম প্রধান চরিত্র বিপ্লবী গণেশ ঘোষ। এই ছবিতে তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের শিল্পী সম্রাট মুখার্জী।
('খেলে হাম জি জান সে' চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য)
১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর গণেশ ঘোষ ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির একজন নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। পরে কমিউনিষ্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তাঁকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। এর পর তিনি তিনবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন (১৯৫২, ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে)। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি বিভাজনের পর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) নামক নবগঠিত দলে যোগ দেন। এরপর তিনি ১৯৬৭ সালে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি মাস্টারদা সূর্য সেনের সহকর্মী ও অনুরাগীদের নিয়ে গঠিত 'বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থা'-র সভাপতিত্বের ভার গ্রহণ করেন।
১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন এই বিপ্লবী নেতা। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী নেতা গনেশ ঘোষের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা
২| ২২ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২৮
আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী বলেছেন: বিপ্লব জিন্দাবাদ।
বিপ্লবী গনেশ ঘোষের জন্মদিনে শুভেচ্ছা।
৩| ২২ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭
সায়েদ রিয়াদ বলেছেন: সুন্দর লিখা । প্রিয়তে রাখলাম ।
৪| ২৩ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৪:৩৭
কাজী মামুনহোসেন বলেছেন: আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী বলেছেন: বিপ্লব জিন্দাবাদ।
বিপ্লবী গনেশ ঘোষের জন্মদিনে শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২৫
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ++++++++++++