নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের নাট্য জগতকে যিনি একের পর এক নাটক লিখে মঞ্চায়িত করে এবং নিজের অভিনয়ের ছোঁয়া দিয়ে ঋদ্ধ করেছেন তিনি নাট্যজন আব্দুল্লাহ আল মামুন। সংস্কৃতির এমন কোন শাখা নেই যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর নাটক, চলচ্চিত্রে সকল সময় সম-সাময়িক ঘটনা প্রবাহ সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে। এই গুনী নাট্যজন ১৯৪৩ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৭০তম জন্মদিন, জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
আব্দুল্লাহ আল মামুন ১৯৪২ সালের ১৩ই জুলাই জামালপুরের আমড়া পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস এবং মাতা ফাতেমা খাতুন। তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এমএ পাস করেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন তার পেশাগত জীবন শুরু করেন 'দৈনিক সংবাদ'-এ। এর পর ১৯৬৬-১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজক ও পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। ১৯৯২ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তিনি জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটউট-এর মহাপরিচালক এবং ২০০১ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহ্পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিক প্রতিনিধি হিসেবে জাপান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম র্জামানি, চীন, সিঙ্গাপুর সহ পৃথিবীর নানা দেশ ভ্রমন করেছেন আবদুল্লাহ আল মামুন।
তাঁর প্রথম প্রকাশিত নাটক শপথ ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য নাটক হলো সুবচন নির্বাসনে (১৯৭৪), এখন দুঃসময় (১৯৭৫), এবার ধরা দাও (১৯৭৭), শাহজাদীর কালো নেকাব (১৯৭৮), চারদিকে যুদ্ধ (১৯৮৩), এখনও ক্রীতদাস (১৯৮৪), কোকিলারা (১৯৯০), মেরাজ ফকিরের মা (১৯৯৭)। তাঁর লিখিত উপন্যাস গুলো হচ্ছে মানব তোমার সারা জীবন (১৯৮৮), হায় পারবতী (১৯৯১), খলনায়ক (১৯৯৭)।
পেশাগত জীবনের পাশে নাটক ছিল মামুনের প্যাশন৷ নাটকের সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র, টিভি সিরিয়াল৷ অসংখ্য নাটক রচনায় যেমন নিজের প্রতিভা আর শক্তির পরিচয় দিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন, তেমনি তাঁর নির্দেশনা ও অভিনয়ে নিজের অপরিমেয় ক্ষমতার প্রমাণ রেখেছেন। শহীদুল্লাহ কায়সার এর প্রখ্যাত উপন্যাস সংশপ্তক নিয়ে ধারাবাহিক নাটকের পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে তিনি পান প্রবাদপ্রতিম খ্যাতি। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে সুবচন নির্বাসনে, এখনও দুঃসময়, সেনাপতি, এখনও ক্রীতদাস, কোকিলারা, দ্যাশের মানুষ, মেরাজ ফকিরের মা, মেহেরজান আরেকবার ইত্যাদি। নাট্য সংগঠন থিয়েটার-এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
নাটক ছাড়াও তিনি কৃতিত্বের সাথে পরিচালনা করেছেন বেশ কয়েকটি দর্শক নন্দিত চলচ্চিত্র। তাঁর সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র "সারেং বউ"। শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস 'সারেং বউ'-এর চলচ্চিত্রায়ন দেখে সমালোচকরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এক পক্ষ ছবিটিকে প্রত্যাখ্যান করেন। আরেক পক্ষ একে সেলুলয়েডের মহাকাব্য বলে বর্ণনা করেন। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এতে ফারুক ও কবরীর অভিনয় সবার মন কাড়ে। এছাড়াও এখনি সময়, দুই জীবন, সখী তুমি কার, দমকা, জনমদুখী, বিহঙ্গ, শেষ বিকেলের মেয়ে, দুই বিয়ায়ের কীর্তি পরিচালনা করেন। মারা যাওয়ার আগে তিনি 'দরিয়া পাড়ের দৌলতি' চলচ্চিত্রটি পরিচালনা ও এতে অভিনয় করছিলেন।
আবদুল্লাহ আল মামুন নিজের কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছিলেন অসংখ্য জাতীয় পুরস্কার। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো-প্রথম জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৮), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৯), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সেরা কাহিনী চিত্রনাট্যকার হিসেবে পেয়েছেন দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়াও থিয়েটার প্রবর্তিত মুনির চৌধুরী সন্মাননা(১৯৯১), চিত্রনাট্যকার ও কাহিনীকার হিসেবে বাংলাদেশ ফিল্ম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন পুরস্কার-তারকালোক পদক, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০০০ সালে এদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি ।
বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতিম নাট্যব্যক্তিত্ব আব্দুল্লাহ আল মামুন দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০০৮ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
নাট্যামোদী মানুষের প্রিয় মানুষ আবদুল্লা আল মামুনের আজ ৭০তম জন্মদিন, জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৪২
মাহতাব সমুদ্র বলেছেন: শুভ জন্মদিন
৩| ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:২৪
পড়শী বলেছেন: খুব প্রিয় একজন মানুষ। অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪১
নুর ফ্য়জুর রেজা বলেছেন: +++