নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নান্দনিক সৌন্দর্য আর এক চিলতে লাজুক হাসি দিয়ে যিনি পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষের নজর কেড়েছিলেন তিনি প্রিন্সেস ডায়ানা। পুরো নাম লেডি ডায়ানা ফ্রান্সেস স্পেন্সার। যুবরাজ চার্লসের প্রথম স্ত্রী এবং ১৯৮১ হতে ১৯৯৭ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের যুবরাজ্ঞী। ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লসের সাথে বিয়ের পরে তার নাম দেয়া হয় ডায়ানা ফ্রান্সেস মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর।
১৯৮১ খ্রীস্টাব্দে যুবরাজ চার্লসের বিবাহের পর থেকে ১৯৯৬ খ্রীস্টাব্দে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত তাঁকে হার রয়াল হাইনেস দি প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স বলে সম্বোধন করা হত। এর পরে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আদেশক্রমে তাঁকে শুধু ডায়ানা, প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স বলে সম্বোধনের অনুমতি দেয়া হয়। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিখ্যাত সেলিব্রেটি প্রিন্সেস অফ ওয়েলস ডায়ানা। আজ থেকে ১৫ বছর আগে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। আজ তার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া লেডি ডায়নার মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
(শিশু বয়সে লেডি ডায়ানা ফ্রান্সেস স্পেন্সার)
লেডি ডায়ানা স্পেন্সার ১৯৬১ সালের ১ জুলাই ইংল্যান্ডের নরফোর্কে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লসের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ডায়ানা। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই তাদের রাজকীয় বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ওই বিয়ের অনুষ্ঠান দেখেছিল বিশ্বের প্রায় ৭৫ কোটি মানুষ। বিয়ের পরে পরবর্তীতে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তায় স্বামী চার্লসকে ছাড়িয়ে যান ডায়ানা। তার সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান, ফ্যাশনের জন্যও খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন তিনি। ডায়ানা ছিলেন বিংশ শতাব্দির অন্যতম বিখ্যাত সেলিব্রেটি।
১৯৮১ খ্রীস্টাব্দে ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লসের সাথে বাগদানের পর থেকে ১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ডায়ানাকে বলা হত পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান মহিলা। ফ্যাশন, সৌন্দর্য, এইডস রোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তাঁর অবদান, এবং ভূমি মাইনের বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলন তাঁকে বিখ্যাত করেছে। তাঁর জীবদ্দশায় ডায়ানাকে বলা হত বিশ্বের সর্বাধিক আলোকচিত্রিত নারী। অবশ্য সমালোচকদের মতে এই খ্যাতি এবং খ্যাতির জন্য প্রচেষ্টাই ডায়ানার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার দাতব্য কার্যক্রম ঢাকা পড়ে যায় বিভিন্ন কেলেঙ্কারির গুজবে, যার মধ্যে ছিল তার বিয়ে সংক্রান্ত কাহিনী।
নব্বইয়ের দশকে ডায়ানার প্রেমের কাহিনী সারা বিশ্বের পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার বিয়ে সুখে শান্তিতে কাটেনি। চার্লসের বিশ্বাসঘাতকতাসহ নানা কারণে অবশেষে ১৯৯৬ সালের ২৮ অগাস্ট প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর আক্ষরিকভাবেই তিনি জনগণের হৃদয়ের রাণীতে পরিণত হন। তাদের দুই ছেলে রাজপুত্র উইলিয়াম ও হ্যারি। ব্রিটিশ মসনদের উত্তরাধিকারীদের তালিকায় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।
প্রচণ্ড স্বাধীনচেতা স্বভাবের কারণে ডায়ানা অপ্রাসঙ্গিক অনেক কিছুই করতেন যা ছিল রাজকীয় কানুনবহির্ভূত। শাশুড়ি রানী এলিজাবেথ মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না ডায়ানার প্রতি। প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডিভোর্সের পর তার প্রিন্সেস উপাধি কেড়ে নেয়া হয়। কিন্তু কোনো অসম্ভব জাদুকরী ক্ষমতাবলে ডায়ানা বিশ্বময় সবার চোখে প্রিন্সেস থেকে যান। পৃথিবীময় সবার কাছে অভাবনীয় গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন ডায়ানা, এমনকি রয়্যাল পরিবারের যে কোনো সদস্যের চেয়েও অনেকগুণ বেশি। প্রিন্সেস ডায়ানা মানবিক নানা কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। বিশ্বব্যাপী ল্যান্ডমাইনবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানবিক ডাকে তিনি তৎক্ষণাৎ সাড়া দিয়েছেন সেই সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো ভ্রমণ করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার কল্যাণমুখী মানসিকতা অব্যাহত ছিল।
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিখ্যাত সেলিব্রেটি ডায়ানা ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ফ্রান্সের প্যারিস শহরে পন্ট-ডি-আলমা রোড টানেলে তার তখনকার প্রেমিক দোদি ফায়েদসহ এক মর্মান্তিক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে ডায়ানাকে মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়েছিলো। এ কারনেই তাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে মিডিয়ার চোখ কে ফাকি দ্যে চলতে হয়েছে। প্রিন্স চার্লসের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে ডায়ানা নিজেকে মিডিয়া থেকে আড়াল করতে চাইতেন, চাইতেন ক্যামেরার ফ্লাশ যেনো তার পিছু নিতে না পারে। অনেকতা আত্নগোপন করতে চাইতেন নিজেকে। কিন্তু মিডিয়া তার পিছু ছাড়ে নি। ডায়ানার ছবি তোলার জন্য তার পেছনে অনবরত লেগে থাকা ফটোগ্রাফারদের থেকে দূরে থাকার জন্য খুব দ্রুত চলছিল গাড়িটি। দ্রুত চলমান মার্সিডিজ গাড়িটি টানেলের একপাশের দেয়ালে সজোরে আঘাত করলে দুমড়েমুচড়ে যায় সেটি। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল পাপ্পারাজি নামে পরিচিতি পাওয়া নাছোড়বান্দা ফটোগ্রাফারদের কারণে দ্রুত গতিতে চলতে গিয়েই গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল। পরবর্তীতে তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, গাড়িটির চালক মাতাল ছিলেন।
প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু নিয়ে ১৫ বছর পর ষড়যন্ত্রের নতুন খবর তাতিয়ে দিয়েছে প্রচার মাধ্যমকে। সড়ক দুর্ঘটনায় নয়, ডায়ানা ও তার বন্ধু ডোডি ফায়েদ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। আর এর পেছনে একজন ব্রিটিশ সেনা অফিসার দায়ী। প্যারিসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেও এ ব্যাপারে গোপন সূত্র থেকে পাওয়া নতুন তথ্যটি খতিয়ে দেখছে ব্রিটিশ পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র একজন ব্রিটিশ সেনাকে অভিযুক্ত করে সাত পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছে যেখানে ডায়ানা ও তার বন্ধুর মৃত্যুর পেছনে রাজকীয় ব্রিটিশ বিশেষ বিমান বাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ সেনা সদস্যের হাতে ডায়ানা, ডোডি ও তাদের গাড়ির ড্রাইভার হেনরি পল নিহত হয়েছিলেন বলে একটি তথ্য তাদের কাছে এসেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ চ্যানেল স্কাই টিভি। যদিও রাজকীয় মুখপাত্র এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
আগামী একমাসেরও কম সময়ের মধ্যে ব্রিটেনে ডায়ানার জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ডায়ানা'র প্রিমিয়ার বাজারে আসছে। তবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রয়াত বধূ প্রিন্সেস ডায়ানার ‘জীবনকাহিনি’ নিয়ে নির্মিত ডায়ানা চলচ্চিত্রে ‘নিষ্ঠুর মিথ্যাচার’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর সাবেক প্রেমিক হাসনাত খান। গতকাল সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে এ কথা জানানো হয়। পাকিস্তানি হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ হাসনাতের সঙ্গে ডায়ানার প্রেমকে উপজীব্য করে এই চলচ্চিত্রের কাহিনি এগিয়েছে। বিশাল বাজেটের চলচ্চিত্রটি শিগগিরই মুক্তি পাবে। এতে নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নাওমি ওয়াটস। প্রিন্সেস ডায়ানাকে নিয়ে ১৬ বছর ধরে কোনো কথা বলেননি হাসনাত খান। এবার আর তিনি মুখ বন্ধ রাখতে পারেননি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, এই কাহিনি ডাহা মিথ্যা। তাই এই চলচ্চিত্র কখনো দেখবেন না।
(ডা. হাসনাত খানের সাথে প্রিন্সেস ডায়না)
চলচ্চিত্রটির প্রযোজক মৌখিক সম্মতি নেওয়ার যে দাবি জানিয়েছেন, তাও নাকচ করে দিয়েছেন হাসনাত। ডেইলি মেইল-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, ‘আমি কখনো কোনো অনুমতি দিইনি।’ যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট নাগরিক জেমিমা খান বলেছিলেন, হাসনাতের সঙ্গে গভীর প্রেমে মজেছিলেন ডায়ানা। তাঁকে বিয়ে করার কথা ভেবেছিলেন। বিয়ের সম্ভাবনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ডায়ানা গোপনে পাকিস্তানে হাসনাতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু হাসনাত তাঁকে বিয়ে করার ব্যাপারে আগ্রহী নন—বুঝতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন ডায়ানা। পরে তিনি হাসনাতকে একটা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই দোদি আল ফায়েদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
প্রিন্সেস ডায়ানা- যাকে বলা হয় হৃদয়ের রানী। যদিও তিনি কখনোও রানী হতে পারেননি। হতে পারেননি কুইন অফ ওয়েলস। তবে তিনি পৃথিবীর সবার কাছে অভাবনীয় গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তার গ্রহণযোগ্যতা রয়্যাল পরিবারের যে কোনো সদস্যের চেয়েও অনেকগুণ বেশি। প্রিন্সেস ডায়ানা স্মরণে 'ডায়ানা ফোয়ারা' রয়েছে লন্ডনের হাইড পার্কে। ডায়ানার জীবন ও মৃত্যু ব্রিটিশ রাজপরিবারের নতুন প্রজন্মকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘জনগণের হৃদয়ের রাণী’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া লেডি ডায়নার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:০৩
আমি অপদার্থ বলেছেন:
পোষ্টের জন্য থ্যাংকস।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
মির্জা গালিব বলেছেন: পোস্টের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।