নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঊনিশ শতকের ষাট দশকে আবির্ভূত অন্যতম কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ, একাধারে কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক, অনুবাদক, নাট্যকার ও গবেষক। পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময় ধ'রে বাংলা সাহিত্যকে নানান দিকে দিয়ে ঋদ্ধ করেছেন। একসময় তিনি বাংলা গদ্যে প্রচুর নিরীক্ষা করেছেন, ঠিক তেমনি কবিতায় নিজস্ব একটি ধারা ও স্বাতন্ত্র বজায় রেখেছিলেন। অনুবাদেও ছিলেন তিনি সহজ ও সরল। পরিশ্রমী এই লেখক সাহিত্যের সব শাখায় ছিলেন সমান পারদর্শী। প্রায় ৩০০টিরও বেশী গ্রন্থ তিনি লিখেছেন। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস, সমালোচনা, নাটক ইত্যাদি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সুপ্রসার ও সুগভীর অবদান রেখেছেন। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অনন্যসাধারণ শিল্পী। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, আলাওল পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে তিনি সম্মানতি হয়েছেন। ২০১০ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে আব্দুল মান্নান সৈয়দকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
আব্দুল মান্নান সৈয়দের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৩ সালের ৩রা আগস্ট অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার ইছামতি নদী থেকে অনতিদূরে জালালপুর নামক গ্রামে। পিতা সৈয়দ এ. এম. বদরুদ্দোজা ছিলেন সরকারী চাকুরে ; সাহিত্যের বিশেষ অনুরাগী এবং মাতা কাজী আনোয়ারা মজিদও সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন। জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে, ১৯৪৬-এ, কলকাতায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গা হয় এবং পরের বছর ১৯৪৭-এ বৃটিশ শাসিত ঔপনিবেশিক ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। ১৯৫০-এ ভয়াবহ আরেকটি দাঙ্গা হয় পশ্চিম বঙ্গে। তখন তার পিতা নৌকোয় করে পালিয়ে সপরিবার পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকা শহরে চলে আসেন। ঢাকায় এসে তারা গোপীবাগে বসবাস করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে গ্রীন রোডে জমি কিনে তাঁর পিতা স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। সে সময় গ্রীন রোডের নাম ছিল "কুলি রোড"। ৫১ গ্রীন রোডই ছিল তাঁর আমৃত্যু ঠিকানা। তার পিতা মান্নান সৈয়দের লেখালেখির জন্য গ্রীন রোডের বাসায় উঠানের একপাশে আলাদা দোচালা ঘর তুলে দিয়েছিলেন।
(আবদুল মান্নান সৈয়দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে)
১৯৫৮ খৃস্টাব্দে ঢাকার নবাবপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬০ খৃস্টাব্দে। অত:পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৬৩-তে স্নাতক সম্মান এবং ১৯৬৪-তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।শিক্ষা-জীবন শেষে তিনি সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। সারা জীবন প্রধানত: অধ্যাপনা ক'রে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। কর্মজীবনে তিনি ফরিদপুর শেখ বোরহানুদ্দীন কলেজ, সিলেটের এম. সি. কলেজে, এবং ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ডিসট্রিক্ট গেজেটিয়ারে। ঢাকার জগন্নাথ কলেজে দীর্ঘ কাল অধ্যাপনা করার পর ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত মেয়াদের জন্য তিনি নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের পদে অধিষ্ঠিত হন।
(২০০৬ সালে আবদুল মান্নান সৈয়দ ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম)
সব্যসাচী লেখক আব্দুল মান্নান সৈয়দে বাংলা সাহিত্যের যে শাখাতেই চর্চা করেছেন সেখানে সাফল্য ও কীর্তি ধরা দিয়েছে অবলীলায়। বলা হয় এদেশে তাঁর মতো পরিশ্রমী লেখক নেই। সমসাময়িককালে তাঁর মতো বড় মাপের লেখক দেখা যায় না। দুই বাংলাতেই তাঁর মতো সাহিত্যসমালোচক খুঁজে পাওয়া যায় দুষ্কর। বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে ছিল তাঁর অগাধ ধারণা। কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় তাঁর সৃজনশীলতা অসাধারণ। প্রচণ্ড তোলপাড় করা শক্তি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। যে কোন লেখার মধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। বাংলা কবিতায় কবিতায় তিনি যুক্ত করেছিলেন পরাবাস্তববাদী দিগন্ত। তাঁর উদ্ভাবনী শক্তি ও ব্যঞ্জনা সৃষ্টি তাঁর ভাষাকে করে তুলেছে ব্যতিক্রমী। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় প্রচৃর কাজ করলেও ভগ্নস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে তিনি আরো কাজ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
(২০০৯-এর ২৫শে এপ্রিল শাহবাগের পাঠক সমাবেশে আব্দুল মান্নান সৈয়দ)
সব্যসাচী লেখক মান্নান সৈয়দ কথাসাহিত্যেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে গেছেন। জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ, জোৎস্না রৌদ্রের চিকিৎসা, সংবেদন ও জলতরঙ্গ, পরাবাস্তব কবিতা, মাছ সিরিজ, সকল প্রশংসা তাঁর, আমার সনেট, সত্যের মতো বদমাশ, মৃত্যুর অধিক ক্ষুধা লাল, কলকাতা, পোড়া মাটির সংসার, শুদ্ধতম কবি, জীবনানন্দ দাশের কবিতা, করতলে মহাদেশ, চেতনায় জলপড়ে শিল্পের পাতা নড়ে, দশ দিগন্তের স্রস্টা ,মাতাল মানচিত্র, বুদ্ধদেব বসুর সুনির্বাচিত কবিতা, আমার বিশ্বাস প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। প্রতীকী এবং পরাবাস্তবতাবাদী পরিচর্যা আবদুল মান্নান সৈয়দের ছোটগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রথম পর্বের গল্পের ভাষারীতিতে আরোপিত আধুনিকতা দ্বিতীয় পর্বে পরিত্যক্ত হয়েছে; ফলে, গল্পস্রোত হয়েছে অনেক বেশি সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ। সত্যের মত বদমাস, চল যাই পরোক্ষে এবং মৃত্যুর অধিক লাল ক্ষুধা ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ। শুধু কবিতা-কথাসাহিত্য নয়, তিনি লিখেছেন, কাব্যনাট্যপ্রহসন, একাঙ্ক, শ্রুতিনাট্য, পূর্ণাঙ্গ নাটক, অনুবাদ নাটক, ইত্যাদি। ১৯৯২ খৃস্টাব্দে বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত হয় তাঁর নাট্যগুচ্ছ। ২০০৯-এ প্রকাশিত হয় নাট্যধর্মী সকল লেখার সঙ্কলন নাট্যসমগ্র। তিনি ছোটগল্পের নাট্যরূপ দিয়েছেন। তাঁর কয়েকটি কাব্য নাট্যের নাম বিশ্বাসের তরু, জ্যোৎস্না-রৌদ্রের চিকিৎসা, ঈশ্বরপ্রাপ্তির ছোট্ট গাঁথা, চাকা, কবি ও অন্যেরা এবং আটতলার ওপরে।
আব্দুল মান্নান সৈয়দ দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। ২৭ আগষ্ট ২০১০ চ্যানেল আই নামক টেলিভিশনে আয়োজিত একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নিকটস্থ ঢাকা মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসা লাভ করেন তিনি। সেই থেকে বাসায়ই অবস্থান করছিলেন কবি। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ ইফতারীর কিছু আগে ঘুমের ভিতর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। বাসার অদূরে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে ডাক্তাররা তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরদিন ৬ আগস্ট জনাজা শেষে তাঁর লাশ আজিমপুর গোরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে সমকালীন বাংলা সাহিত্য এক অপূরণীয় শূন্যতায় নিমজ্জিত হলো এবং এমন একটি সংকট তৈরী হলো যা দীর্ঘকাল ধ'রে অনুভূত হবে। তাকে মূল্যায়ণ করতে হলে পূর্ণাঙ্গ মান্নান সৈয়দকেই সামনে রাখতে হবে। এই পরিপূর্ণ আবদুল মান্নান সৈয়দ সৃষ্টির প্লাবনে যে ভূখণ্ডের অধিশ্বর তা থেকে তার বিলয় নেই। তার সৃষ্টির গুনেই আজ তিনি আমাদের সাহিত্যের এক অনন্য পুরুষ।
আব্দুল মান্নান সৈয়দ ছিলে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম "পোয়েট ইন রেসিডেন্স"। তাঁকে স্কলার-ইন-রেসিডেন্স পদমর্যাদায় নিয়োগ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংগ্রামী জীবনকে গ্রোথিত করে পূর্ণাঙ্গ নজরুলজীবনী রচনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে সাহিত্য কর্মে যে তুলনারহিত সৃজনশক্তির স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন তার মূল্য জীবদ্দশায় যথাযথভাবে স্বীকৃত হয় নি। স্বীয় বিশ্বাসে রাজনৈতিক ঔদার্য়ের কারণে তাঁকে প্রায়শঃ রাষ্ট্রীয় উপেক্ষার শিকার হতে হয়েছে।
সব্যসাচী লেখক মান্নান সৈয়েদের আজ ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী। মুত্যুদিনে কবিকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
পাঠকরে জন্য আব্দুল মান্নান সৈয়দের সত্যের মত বদমাস গল্পটি সংযোজন করলামঃ
তারা দুজন, মা আর ছেলেঃ মা-র মুখমণ্ডল তৈলাক্ত করুণ ও লম্বিত আর ছেলেটার গোলমুখ বিস্ময় আনন্দ ও কৌতূহলে ভরা, তারা দুজন এক মুষ্টি অথচ সমুদ্রসমান এই গ্রহের মেলার মধ্যে এসে ঢুকলো। এতো লোকজন, আলো হাসি-গান, বাঁশি বাজছে ঐদিকে, কুকী মেয়েদের নাচ দেখার জন্য সাতজন মহাহল্লা করতে করতে পরস্পরের পিঠে চড়ে চলে গেলো। তার পাশ দিয়ে গলাগলি করে শূন্যে তেইশটি বেলুন উড়ছে যেন চাঁদে যাবে; কিন্তু কী এক বিষাদ পেয়ে বসলো ছেলেটিকে।
‘মা, এ কোন রাজা?’ ছেলেটির কণ্ঠে ঝরে পড়লো বিপন্ন বিস্ময়।
‘কেন, এখানেই তুই তো আসতে চেয়েছিলি।’ বিব্রত মা বললেন, ‘আমি তো তোকে এখানেই আনবো বলেছিলাম।’
‘তখন ভেবেছিলাম আমার ভালো লাগবে, কিন্তু এখানে এসে অবধি ভয় লাগছে। এ আমাকে কোথায় নিয়ে এলে, মা? আমি তো চাইনি এখানে আসতে, আমি কখনো চাইনি, কক্ষণো না।’
‘ভয় করিসনে খোকা। দেখছিস না কতো লোকজন ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কতো আলো দেখছিস না, কতো ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে লাফিয়ে উঠছে খুশিতে, খেলা করছে আনন্দে ধুলোর উপর মা-বাপের হাত ধরে, ওরাও তোর মতো বেড়াতে এসেছে মেলায়।’
‘তা তো দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আমার বুকের মধ্যে ভয় এলে আমি কি করবো, বলো।’ মা-র আর তার শরীরের পশ্চাতে মুক্তি ও প্রতিরোধহীন জন্তুর মতো কী একটা দেখতে পেয়ে শিউরে উঠলো সে, তোমার পিছনে আমার পিছনে ওটা কী?’
‘ওটা ছায়া।’
‘ছায়া? ছায়া কী?’
‘ছায়া সব সময় তোর সঙ্গে-সঙ্গে ঘুরবে, হয় পিছনে না হয় সম্মুখে, ছায়া নেই এরকম কোনো মানুষ আমি দেখিনি। ভয় কি, অমন করে উঠলি কেন?’
‘না মা, আমি ছায়া চাই না।’
‘না চাইলেই তো ও চলে যাবে না। অন্ধকার থেকে আমরা আসি কি না, তাই আমাদের শরীরের সঙ্গে ছায়া জড়িয়ে থাকে। ভয় পাসনে খোকা, এতো লোক কেউ ভয় পায় না, তুই কি সবার থেকে আলাদা হতে পারবি? ছায়াকে আর ফেরত দেয়া যায় না। কিন্তু খোকা, তুই কোনো মানুষ থেকে আলাদা হতে পারবি না, তুই একা একরকম হবি তা হয় না, মানুষ কোনো দিন অসাধারণ হতে পারে না_খামাখা এসব বাজে বকছিস কেন, ভয় পাচ্ছিসই বা কেন? তার চেয়ে দ্যাখ দোকানে দোকানে লাল নীল সবুজ কতো আলো জ্বলছে, বেলুন উড়ছে ফুর্তিতে, ঘুরছে নাগরদোলা। এই দ্যাখ আমাদের পাশে খেলনার দোকান : কতো রকমের পুতুল সাজানো রয়েছে : রিকশা, ট্যাঙ্ িএরোপ্লেন, আম, কাঁঠাল, সাহেব মেম।’
‘ওসব আমাকে কিনে দেবে না মা?’
‘দেবো, বাবা, দেবো। কোনটা তোর ভালো লাগে, কোনটা নিতে চাস তুই বল?’
‘আমি সবগুলো চাই।’
‘দূর বোকা সবগুলো কি নেয়া যায়, তাহলে দোকান চলবে কী করে? আচ্ছা ভালো দেখে আমিই একটা জিনিস পছন্দ করে দিচ্ছি তোকে। রেল গাড়ি নিবি, এই রেলগাড়িটা?’
‘নেবো, কিন্তু এই রেলগাড়িটাই বিশেষ করে তোমার পছন্দ হলো কেন মা?_যাকগে সে কথা। আচ্ছা মা, আসল রেলগাড়ি কি ছোটো, এই রেলগাড়ির মতো?’
‘হ্যাঁ, অবিকল এই রকম। এরকমই এঞ্জিন, কামরাগুলো দু-একটা মালগাড়িও আছে, পিছনে গার্ডের ঘর, গার্ডের হাতে সবুজ নিশান দোলে, কামরার জানলায় জানলায় সারি সারি মুখ দেখা যায়। তফাৎ শুধু একটু যে, এই রেলগাড়ি চলতে পারে না, সেই রেলগাড়ি কেবলি চলে, স্টেশনে স্টেশনে থামে অল্পক্ষণ, তারপরই আবার চলা, যে রেলগাড়ি চলতে পারে না সে আর রেলগাড়ি থাকে না_বাতিল হয়ে যায়।’
‘ওমা, দ্যাখো, দ্যাখো, কি সুন্দর নাগরদোলা।’ ছেলেটার মনোযোগ কেড়ে নিয়ে গেলো। নাগরদোলা উঠছে আর পড়ছে কী সুন্দরভাবে ঘুরছে। ‘আমি নাগরদোলায় চড়বো, মা।’
‘না, বাবা, তোমার মতো ছোটো ছেলেমেয়ে কেউ চড়ছে না, দেখছো না? তুমি বড়ো হও, তারপরে চড়ো।’
‘কি মজা, বড়ো হলে আমি নাগরদোলায় চড়বো! একবার উপরে উঠে যাও আকাশে, তারপর শাঁ করে নেমে এসো নিচে। লোকগুলোকে দ্যাখো, মা, উপরের দিকে যখন উঠছে, খুশিতে লাফাচ্ছে যেন, আর নিচে নামার সময় ভয়ে দু’চোখ বুজে ফেলছে। আমি বড়ো হয়ে নাগরদোলায় চড়বো।’
‘যতো মজা ভাবছিস, খোকা, অতো মজা নয়। ওই দ্যাখ, একজন লোক মাটিতে উবু হয়ে বসে বমি করছে।’
‘কেন, মা?’
‘নাগরদোলা ওর সহ্য হয়নি, হয়তো ও মরে যাবে।’
‘ম’রে যাবে। তাহলে আমি কিছুতেই নাগরদোলায় চড়বো না, বুঝলে মা, আমি চড়বো না। কিছুতেই না, আমি মরে যেতে চাই না, পৃথিবী যতো দিন থাকে আমি ততো দিন বেঁচে থাকবো, মা।’
‘তোমাকে ওরা জোর করে নাগরদোলায় তুলে দেবে।’
‘কারা মা? তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?’
‘তোকে আবার আমি ভয় দেখাতে যাবো কেন রে? কিন্তু ওরা ভারি বদ্লোক। ঐ দেখছিস না, নাগরদোলার গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে চারজন লোক, একেকটা কোঠা নেমে এলেই জোরে দিচ্ছে ঠেলে_ওরা।’
‘তাই তো, এখন বুঝতে পারছি; এতোক্ষণ ভাবছিলাম নাগরদোলাটা ঘুরছে কী করে, ও, ওদের চালাকি। কেমন চুপি চুপি ঠেলছে, যেন কেউ দেখতে না পায়। আমি নাগরদোলায় কিছুতেই উঠবো না, তবু ওরা জোর করে তুলে দেবে আমাকে? মা তুমি উত্তর দিচ্ছো না কেন?’
‘ঐ দ্যাখ, কী সুন্দর টিয়েপাখি।’
‘তুমি আমাকে ভোলাতে চাচ্ছো?’
‘দূর, তা না। ঐ দ্যাখ, টিয়েপাখিটা কথা বলছে। ওর চারপাশে ভিড় জমে আছে। চল ওদিকে যাই।’
‘বা-বা! কী চমৎকার লাল ঠোঁট নেড়ে নেড়ে কথা বলছে। কি বলছে, মা?’
‘কেন, বুঝতে পারছিস না? বলছে, সোজা পথে চলো।’
‘সোজা পথে চলো।’ কী আশ্চর্য কথা! ‘সোজা পথে চলো।’ এমন বিশ্রী কথা কেউ কোনো দিন বলেনি।
‘খারাপ কথা কেন, কথাটা তো খুব ভালো। খোকা, এদিকে আয়, তোর কানে কানে বলি : আর কখনো যেন এসব কথা বলিস না, বুঝেছিস? শুনতে পেলে, এখানে যারা ভিড় করে আছে রেগে যাবে তারা। আর ঐ বুড়ো লোকটাও।’
‘শাদা দাড়ির বুড়ো লোকটা আমার দিকে কী ভীষণভাবে তাকিয়ে আছে, দ্যাখো মা, যেন আমার মনের সব কথা জেনে ফেলেছে লোকটা। আমার ভয় লাগছে, লোকটা আমার দিকে অমন করে তাকিয়ে আছে কেন?’
‘ওকে সালাম করো, খোকা। টিয়েপাখিটা বন থেকে এনে উনিই পুষেছেন, কথা বলতে শিখিয়েছেন।’
‘ও, টিয়েপাখি যে কথা বলছিলো, তাহলে এই লোকটার। কথাটা এখন আমার আরো খারাপ লাগছে। ওকে আমি কিছুতেই সালাম করবো না।’
‘জেদ করো না খোকা। কেন সম্মান করবে না ওকে? দেখছো না সবাই ওকে ঘিরে আছে, কথা বলছে।’
‘আশ্চর্য তো, মা। অমন সুন্দর পাখিটাকে ভুলে সবাই কিনা ওর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে, কান দিয়ে যেন ওর কথাগুলো খাচ্ছে।’
‘চোখের ইশারায় তোকে উনি ডাকছেন, খোকা, আয়, ভিড় ঠেলে ভিতরে যাই।’
‘না, মা, আমি যাবো না, তুমি চলে এসো। চলো, এই ভিড় থেকে আমরা পালিয়ে যাই ওদিকে। টিয়েপাখি এমন ভীষণ ফাঁদ পেতে রেখেছে, আমি তা কখনো ভাবিনি। এসো মা।’
‘আমার হাত ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস, খোকা?
‘চলো না, ওদিকে পশুশালা দেখা যাচ্ছে। পশুরা এদের চেয়ে অনেক ভালো, তারা কথা বলতে পারে না, আর এরা এমন বদমাশ যে পাখিদেরও কথা বলতে শেখায়। আচ্ছা মা, তুমিই বলো আমার গা ছুঁয়ে, যে পাখি কথা বলতে শেখে, সে কি আর পাখি থাকে? সে তো একটা বদমাশ হয়ে যায়।’
‘খোকা, দেখতে পাচ্ছিস, ওদিকের ওই ছোটো ঘরটায় দুটো বাঘ রয়েছে। তুই তো ওদের ভালো বলছিলি, কিন্তু দ্যাখ, আমরা কতো দূরে রয়েছি, তবুও ওখান থেকে এসে ওদের গায়ের কটু গন্ধ আঘাত করছে আমাদের। ওদিকে ছোটো ছোটো ডালের সঙ্গে চেন দিয়ে বাধা কতো বাঁদর উঠছে বসছে, চুল খুঁটে দিচ্ছে একে অপরের।’
‘ওদিকে কালো মিশমিশে ভালুক। ওদিকে কেমন সুন্দর শিঙ উঁচিয়ে আছে হরিণেরা। আর পাখি, ছোটো ছোটো কাগজের বলের মতো ফুটফুটে পাখি_নাচছে, ঝরছে, একটি মাত্র পাতা নিয়ে বুনে তুলছে।
‘দেখা হলো তো, এবার চলো ফিরে যাই।’
‘আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে, মা!’
‘বাড়ি চলো, আমি বানিয়ে দেবো। এখানকার জিনিস খেলে অসুখ করবে। উঃ!’
‘কী হলো মা, পা মাড়িয়ে দিয়েছে? কে তুমি আমার মা-র পা মাড়িয়ে দিলে? ভারি বদমাশ লোক তো তুমি। কখন থেকে দেখছি, তুমি আমাদের পিছু পিছু ঘুরছো। মা বলেছিলো ছায়া, তাই আমি কিছু বলিনি। এখন দেখছি তুমি একটি বদমাশ, শয়তান। আবার পায়ে পায়ে আঁধারে মিলিয়ে যাচ্ছে, দ্যাখো।’
‘ছি খোকা, অমন করে বলতে নেই, উনি একজন ভদ্রলোক।’
‘ভদ্রলোক কাদের বলে, মা, যারা লুকিয়ে লুকিয়ে খারাপ কাজ করে তাদের?’
‘ভদ্রলোক কাদের বলে! আমি… আমি তো ঠিক… ঠিক বলতে পারি না। যারা দামি জামা জুতো পরে, আমি তো দেখি, তাদেরই লোকে ভদ্রলোক বলে, হ্যাঁ, শুধু তাদেরই।’
দেখেছো মা, লোকটা আস্তে আস্তে সরে পড়লো, নিশ্চয়ই বদ মতলবে ঘুরছিলো আমাদের সঙ্গে সঙ্গে। তা তুমি এমন করছো কেন মা, তোমার চোখ-মুখ, আমি কি তোমাকে ব্যথা দিলাম? ও বাবাগো মা-মা-মা মাগো!’
‘ভয় পেয়েছিস বুঝি, খোকা, খোকা! এই তো আমি, তোর মা, খোকা! আমার দিকে তাকা। কী, ভয় পেলি কেন এতো, খোকা?’
‘মা, আমার পায়ের তলায় একটি সাপ মনে হলো।’
‘কই দেখি। ও, এই তো, আরে এ তো কাগজের সাপ; দূর পাগল, ওতো কাগজের; তুই ভেবেছিলি বুঝি সত্যিকার। কেউ হয়তো কিনেছিলো, পড়েটড়ে গেছে কি করে। এই দ্যাখ, কাগজের সাপ আমি ধরে আছি দেখছিস না? ও কামড়াতে পারে না রে।’
‘না মা, ফেলে দাও, ফেলে দাও। হোক কাগজের আমার কেন যেন ভয় লাগছে। কিংবা হয়তো কাগজের বলেই ভয় লাগছে আমার, সত্যিকার সাপ হলে আমার হয়তো একটু ভয় লাগতো না। আমার ভয় লাগছে মা, তুমি ছুড়ে ফেলে দাও ওটাকে। আমি চোখ বুজছি; চোখ বন্ধ করে আমি এক দুই তিন বলবো, তুমি তিন বলার আগেই ফেলে দেবে, তারপর আমি চোখ খুলবো। তারপর আমরা বাড়ি চলে যাবো, আমার কিছুই ভালো লাগছে না, চারিদিক থেকে যেন শুঁড় তুলে আসছে ভয়। মা, আমি চোখ বুজলাম এইবার_তুমি ফ্যালো_এক_কাগজের সাপটাকে তুমি ফেলে দাও ছুড়ে, ফেলে দাও_দুই_ফেলে দিয়েছো তো মা? কাগজটাকে ফেলে দিয়েছো তো? এইবার আমি তিন বলবো, তারপরই চোখ খুলবো, তুমি তাড়াতাড়ি ফেলে দাও, কথা বলছো না কেন মা, এইবার আমি তিন বলেই চোখ খুলবো যে দাও ফেলে_তিন। কই! একি, মা কই! মাকে তো দেখতে পাচ্ছি না মা, মা, মা-গো! কোথায় তুমি মা সাড়া দাও। আমার মা কই, আমার মা কি হারিয়ে গেলো! মা, মা, এতো লোকজনের মধ্যে তুমি কোথায় চলে গেলে, মা। তুমি ছাড়া আমি যে বাঁচবো না, মা। ঈশ আমার মা আর নেই, আমার মা কোথায় হারিয়ে গেছে, হায় ঈশ্বর! মার মুখের পাণ্ডুর আদলটুকুও কী দ্রুত ভুলে যাচ্ছি আমি, আমার কি উপায় হবে, মা, তুমি ফিরে এসো, একবার অন্তত একবার, তোমার মুখ আমি গেঁথে নেবো মনে।_এই তো কয়েকজন লোক দেখছি, আরে, এরাই তো নাগরদোলা ঠেলছিলো সেই চারজন লোক। আচ্ছা, তোমরা আমার মা কে দেখছো কি কেউ, খুব ভালো আমার মা-কে, সবচেয়ে সুন্দর আমার মা-কে?’
‘তোর মা-কে পাচ্ছিস না বুঝি’ প্রথমজন বললো।
‘ও, বুঝেছি, এ কাদের কাজ’ দ্বিতীয়জন বললো।
‘তোর মা-কে নিয়ে ওরা খুব মজা লুটছে এখন’ তৃতীয়জন বললো।
‘তুই ভাবিস না কিছু, তোর মা-রও এতে মনে মনে শায় আছে’ চতুর্থজন বললো।
‘কী আজেবাজে কথা বলছো তোমরা। আমার মাকে তোমরা কেউ চেনো না; অতো সুন্দর আমার মাকে তোমরা কি চিনতে পারো?_তোমরা তো বদমাশ! দেখি সরো, মাকে খুঁজে বের করবো।’
‘পয়সা পড়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যায়, মানুষ পড়ে গেলে কখনো পাওয়া যায় না’ চতুর্থজন বললো।
‘আমি খুঁজে বের করবো মাকে। তোমরা চারজন চারদিক থেকে ঘিরে আছো কেন আমাকে? সরো, আমি মার কাছে যাবো।’
‘তোর মা-র কাছে তোকে পেঁৗছে দেবার জন্যই তো এসেছি আমরা, চল আমাদের সঙ্গে’ তৃতীয়জন বললো।
‘না, আমি তোমাদের সঙ্গে যাবো না, তোমরা বদমাশ। আমার গা ধরছো কেন তোমরা, দাও ছেড়ে দাও আমাকে।’
‘তোর মা-কে পাইনি, তোকে দিয়েই সেই কাজ চলবে আমাদের’ দ্বিতীয়জন বললো।
‘একি, আমাকে তোমরা কাঁধের উপর তুললে কেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে? মা, তোমাকে কারা ধরে নিয়ে গেছে, আমাকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে।’
‘তোর মাকে পাইনি, তোকে দিয়েই সেই কাজ চলবে আমাদের’ প্রথমজন বললো।
‘ইশ কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে এরা আমাকে, এরা কি সেই নাগরদোলায় জোর করে আমাকে চড়িয়ে দেবে? মা_মা-গো!’
নিরুত্তর চারজন লোক তাকে কবরে যাবার খাটিয়ার চারটি পায়ার মতো বয়ে নিয়ে গেলো।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২১
কোবিদ বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ পরিবেশ বন্ধু
ভালো থাকবেন
২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৭
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: খুবই তথ্যপূর্ণ লেখা। মান্নান সৈয়দের তুলনা বের করা কঠিন। তাঁর লেখা ''শুদ্ধতম কবি'' হচ্ছে জীবনানন্দ দাশের সাহিত্য সম্পর্কিত শ্রেষ্ঠতম বইয়ের অন্তর্গত। আপনি তাঁর সবচেয়ে বেশী কাজের কথাই সেভাবে উল্লেখ করেননি। সেটি হচ্ছে সম্পাদনা। বাংলা সাহিত্যের বহু সাহিত্যিকের সারাজীবনের লেখা একত্র করে সম্পাদনার যে ভীষণ পরিশ্রমের কাজ তিনি করে গেছেন তা শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখা দরকার। বর্তমানে কুষ্টিয়াস্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধরী ছাড়া এ কাজে তাঁর তুল্য কোন ব্যক্তি বাংলাদেশে নেই।
আরেকটি ছোট্ট তথ্য যুক্ত করতে পারেন। সৈয়দ সাহেব ১৯৮৪ সালের শেষ দিকে অল্প কিছুদিন নোয়াখালী সরকারী মহিলা কলেজে চাকরী করেছেন। সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে সেখানে বদলি করা হয়। পদোন্নতি কার্যকর করার শর্ত পালনের জন্য তাঁকে সেখানে যোগদান করতে হয়। বিষয়টা আমি জানি এজন্য যে, নোয়াখালি শহরের তাঁর একাকী কিছু বিকেলের আড্ডার সাথী ছিলাম আমি। ক্লাস শেষ হয়ে গেলে তাঁর কিছু করার ছিলো না সেখানে।
সৈয়দ সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
আরেকটা ছোট্ট বেদনা শেয়ার করি। সৈয়দ সাহেব ড.ক্ষেত্র গুপ্তের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি থিসিস সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু এতবড়ো এ গবেষক ডিগ্রীটি পাননি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রী দেয়া হলে ডিগ্রীটি সম্মানিত হতো।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২০
কোবিদ বলেছেন:
কামাল ভাই ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য
কিংবদন্তি এই লেখকের জীবনকাল এত ছোট্ট পরিসরে
গ্রথিত করা দূরহ বিধায় অনেক কিছুই বাদ দিতে হয়েছেঅ
আশা করি আমার সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: সালটি নিয়ে আমার একটু সন্হে হচ্ছে সেটা ১৯৮৪ শেষ অথবা ৮৫ সালের শুরুতে হবে। আমার শুধু মনে আছে সেগুলো ছিলো শীতের বিকেল।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৯
কোবিদ বলেছেন:
আবদুল মান্নান সৈয়দ বিভিন্ন লেখক-সাহিত্যিকের রচনাসমগ্র সংকলন ও সম্পাদনায়
অতুলনীয় ধৈর্য্য ও পরিশ্রমের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। যেমন জীবনানন্দ দাশের কবিতা, ফররুখ আহমদের শ্রেষ্ঠ কবিতা, বাংলাদেশের কবিতা, বাংলাদেশের ছড়া, সমরসেনের নির্বাচিত কবিতা, মোহিতলাল মজুমদারের নির্বাচিত কবিতা,ইত্যাদি। এছাড়াও চিত্রকলাতেও যথেষ্ঠ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন
৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৫
আশরাফ মাহমুদ মুন্না বলেছেন: .
আমার মন্তব্যটি ডিলিট করা হলো কেন? অশ্লীল ছিলো?
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৮
কোবিদ বলেছেন:
দুঃখিত মুন্না ভাই
লেখাটাতে একটু সম্পাদনা করতে গিয়ে আপনার মন্তব্যটি
অনিচ্ছাকৃতভাবে ডিলিট হয়ে গেছে। নিজগুণে ক্ষমাসুন্দর
দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
৫| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৪
ডি মুন বলেছেন: আব্দুল মান্নান সৈয়দ আমাকে বিস্মিত করেন তার কর্মপরিধির ব্যাপকতা ও বৈচিত্রের গুণে।
শ্রদ্ধাঞ্জলি, আল্লাহ তা'আলা তাকে শান্তিতে রাখুন ।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৯
কোবিদ বলেছেন:
ডি মুন অসংখ্য ধন্যবাদ
আপনার প্রার্থনার জন্য
৬| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৩
আশরাফ মাহমুদ মুন্না বলেছেন: .
প্রথমে ২ নং মন্তব্যকারী মি. এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল এর মন্তব্যে প্লাস। উনার একটি লাইন আমি কোট করছি ...
QUOTE
....... এতবড়ো এ গবেষক ডিগ্রীটি পাননি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রী দেয়া হলে ডিগ্রীটি সম্মানিত হতো।
UNQUOTE
হ্যাঁ, এবার আমার মন্তব্য ..... বলতে চেয়েছিলাম ...
সাধারণত কলেজে যারা অধ্যাপনা/শিক্ষকতা করেন তারা সাধারণত গল্প কবিতা ছাড়া সিরিয়াসধর্মী সাহিত্য রচনা করেন না বা করার মেধা যোগ্যতা ধৈর্য্য রাখেন না। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মরহুম আবদুল মান্নান সৈয়দ।
তিনি গল্প কবিতা তো রচনা করেছেনই তদুপরি এমন সমালোচনা সাহিত্য রেখে গেছেন যা' দিয়ে ভবিষ্যতের গবেষকগণ উপকৃত হবেন ও দিকনির্দেশনা পাবেন। অগ্রজ ড. আহামদ শরীফও তার ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন।
আমি মাত্র একটি কবিতার বই ও বেশ কিছু প্রবন্ধ পড়েছি। তাই ২ নং মন্তব্যকারী চাইতে ভাল স্মার্ট মন্তব্য করতে পারবো না। সাহিত্য চর্চা ছেড়ে দিয়েছি প্রায় ১০ বছর হলো। না-হলে আর কিছু বলতে পারতাম বাংলা সাহিত্যের এমন একজন হস্তী সম্পর্কে।
হ্যাঁ, উনাকে বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের একজন হস্তী-ই বলা চলে নির্দ্বিধায়।
উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
পোষ্টে +++।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৫
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ মুন্নাভাই
হারিয়ে যাওয়া মন্তব্য সহকারে ফিরে আসার জন্য।
তবে বহুমূখী প্রতিভার সব্যসাচী এই
লেখক যিনি একাধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সমালোচক, সম্পাদক, চিত্রকর হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন তাঁকে হস্তির সাথে তুলনা করাটা কেমন যেন বেমানান লাগছে। যা হোক আপাদমস্তক একজন কবি, সাহিত্যকর্মী আবদুল মান্নান সৈয়দের মৃত্যু দিনে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি
৭| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৪
আশরাফ মাহমুদ মুন্না বলেছেন: .
হস্তী এখানে আক্ষরিক অর্থে নয়। ইডিওমেটিক ইউসেজ। রূপক।
হাতী জীবিত থাকলে লাখ টাকা, মরলেও লাখ টাকা।
হাতির দাঁত বা আইভরি। এসব নিশ্চই শুনেছেন।
হাতী মূল্যবান জন্তু। হাতীর দাতের বিশাল আন্তর্জাতিক স্মাগলিং হয়। হাতির Poaching হয়। তাই হাতী একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। অর্থাৎ বিলুপ্তির পথে।
হস্তী আমি 'বড়ত্ব' প্রকাশক অর্থেই ব্যবহার করেছি। লিটারেচারে এ ধরণের ব্যবহার রয়েছে। রেটরিক বা আলঙ্কারিক অর্থে।
ভুল বোঝার অবকাশ নেই।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে
মু্ক্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী আমি।
তবে হাতিকে সব সময় আমার কাছে একটা বোকা বা
মাথা মোটা প্রাণিই মনে হয়। এত বিশাল দেহ, শক্তির অধীকারী
অথচ সে সর্ম্পকে তার কোন ধারণাই নাই। যে যদি জানতে পারতো
তার কত ক্ষমতা ও শক্তি তা হলে হয়তো সে কখনোই সামান্য একটা
মাহুতের অঙ্গুলি হেলনে চলতে বাধ্য হতো না।
৮| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৩
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আশরাফ মাহমুদ মুন্না- কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে যারা সাহিত্যক্ষেত্রে অবদান রেখে বিখ্যাত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে আবদুল মান্নান সৈয়দ ছাড়াও আছেন/ছিলেন - জীবনানন্দ দাশ, শওকত ওসমান, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, শওকত আলী, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মমতাজ উদ্দিন আহমদ, ড. করুণাময় গোস্বামী, যতীন সরকার, মোবাশ্বের আলী, আবদার রশীদ, ড. হরি শঙ্কর জলদাস প্রমুখ।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর কবি গোলাম মোস্তফা ছিলেন হাই স্কুলের শিক্ষক।
৯| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২২
ডাব্বা বলেছেন: আহমদ ছফা এবং আবদুল মান্নান সৈয়দ অবশ্যই হস্তী সদৃশ। তাঁকে স্মরণ করার জন্যে ধন্যবাদ লেখককে।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭
কোবিদ বলেছেন:
আহমদ ছফা এবং আব্দুল মান্নান সৈয়দ বহুধারার জ্ঞানের সমুদ্র।
তাঁরে সৃষ্টির প্লাবনে বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডার পলিমাটির ন্যায় উর্বরা।
তিনি আমাদের সাহিত্যের এক অনন্য পুরুষ। এই কৃতিমান লেখকের
মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
১০| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪২
আশরাফ মাহমুদ মুন্না বলেছেন: .
আমার আগের মন্তব্য থেকে ...
" ...... সাধারণত কলেজে যারা অধ্যাপনা/শিক্ষকতা করেন তারা সাধারণত গল্প কবিতা ছাড়া সিরিয়াসধর্মী সাহিত্য রচনা করেন না বা করার মেধা যোগ্যতা ধৈর্য্য রাখেন না। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মরহুম আবদুল মান্নান সৈয়দ। ................ "
উপরে বোল্ডকৃত অংশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আপনার মন্তব্যে উল্লিখিত -
জীবনানন্দ দাশ - মূলত কবি।
শওকত ওসমান - মূলত ঔপন্যাসিক।
আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদ - মূলক সংগঠন।
(বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ও উচুঁমানের রসবোধ সম্পন্ন উপস্থাপক/কথক ছাড়া উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম আছে কি?)
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস - মূলত ঔপন্যাসিক।
মমতাজউদ্দিন - মূলত নাট্যকার ও অভিনেতা।
ড. করুণাময় গোস্বামী, যতীন সরকার, ড. হরিশঙ্খর জলদাস, বিভুতিভূষন বন্দ্যোপাধ্যায় - এরা ভারতীয় হওয়ায় এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ এখানে বাংলাদেশকে বিবেচনায় রেখেই আলোচনা করতে চাই।
মোবাশ্বর আলী - মূলত সমালোচনা সাহিত্যের লেখক হলেও একটি মাত্র উল্লেখযোগ্য বই "বিশ্ব সাহিত্য"। আর তেমন উল্লেখযোগ্য সমালোচনা সাহিত্য আছে কি?
ড. আবদার রশীদ - মূলত অনুবাদক, নিশ্চিত নই। "গ্রীস ও ট্রয়ের উপাখ্যান" অনুবাদ করেছিলেন।
অন্যদিকে যদি প্রশ্ন করা হয় আবদুল মান্নান সৈয়দ মূলত কী? উনি তো সব্যসাচী লেখক। তাই না?
আমার মতে উনি মূলত সাহিত্য সমালোচক। এই Genre তেই ওনার অবদান সবচেয়ে বেশী। নতুন একজন গবেষক ওনার ঐ গবেষণা থেকে সাহায্য পাবে। বাংলা সাহিত্যের সব সেরা সেরা সাহিত্যিকের উপর উনি সমালোচনা সাহিত্য রচনা করে গেছেন।
আমার ফোকাস শুধু "বিখ্যাত" হওয়া নয়,
সুনির্দিষ্টভাবে "সমালোচনা সাহিত্যে" বিখ্যাত হওয়া ও অবদান রাখা।
শুরুতেই আমি সিরিয়াস ধর্মী সাহিত্য বলতে "সমালোচনা সাহিত্য"-ই বুঝিয়েছি।
ভুল বললে শুধরে দিয়েন।
ধন্যবাদ।
১১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫
সোনালী ডানার চিল বলেছেন:
আব্দুল মান্নান সৈয়দের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী;
সাহিত্যের অন্যসব বিভাগ থেকে মুক্ত করে তাকে আমি
একজন প্রিয়তম কবি হিসাবে দেখি।
আপনার পোষ্টটি সমৃদ্ধ এবং প্রশংসার দাবী রাখে।
পাশাপাশি মন্তব্যে খুব চমৎকার কিছু তথ্য আমাদেরকে
সমৃদ্ধ করেছে।
লেখাটি প্রিয়তে নিলাম।
১২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৭
আশরাফ মাহমুদ মুন্না বলেছেন: .
একটা কারেকশান হবে।
সংগঠন শব্দটি সংগঠক পড়তে হবে। (আবু সাইয়িদ)।
১৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৯
এহসান সাবির বলেছেন: আমার প্রিয় কবির প্রতি শ্রদ্ধা।
১৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:০৫
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: সব্যসাচী লেখক মান্নান সৈয়েদের আজ ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী। মুত্যুদিনে কবিকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
১৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৯
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আশরাফ মাহমুদ মুন্না-সিরিয়াস সাহিত্য বলতে যদি শুধু সমালোচনা বুঝিয়ে থাকেন তাহলে বেশি কিছু বলার নেই। কিছু তথ্য শেয়ার করি- জীবনানন্দ দাশ মূলত: কবি হিসাবে পরিচিত হলেও তাঁর উপন্যাস,ছোট গল্প, প্রবন্ধ, সমালোচনামূলক রচনা মিলে তিনি এখন সুধীমহলে আরো বিস্তৃত পরিসরে বিবেচিত হন।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্মৃতি কথা, প্রবন্ধ, সাহিত্য সমালোচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ত্রিশটির বেশী বই প্রকাশ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের একজন সেরা সম্পাতক। তাঁর কণ্ঠস্বর পত্রিকার মাধ্যমেই আবদুল মান্নান সৈয়দ,আসাদ চৌধুরী,মহাদেব সাহাসহ ষাটের নতুন সাহিত্যিক প্রজন্মের উত্থান হয়েছে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ২টি উপন্যাস, ৬টি গল্পগ্রন্থ আর ১টি প্রবন্ধ সঙ্কলন প্রকাশ করেছেন।
মোবাশ্বের আলী সমালোচনা সাহিত্যেই কাজ করেছেন। ত্রিশটির বেশী বই প্রকাশ করেছেন। বাংলা একাডেমী থেকেই তাঁর ৫/৬টি বই বের হয়েছে। কয়েকটি অনুবাদ আছে তাঁর। বইয়ের তালিকার একটা লিঙ্ক দিলাম-
http://rokomari.com/author/1362?page=1
আবদার রশীদ মূলত ছড়াকার ও শিশু সাহিত্যিক। তাঁর লেখা চড়ুইভাতি একসময় স্কুলপাঠ্য ছিলো।
ড. করুণাময় গোস্বামী, যতীন সরকার, ড. হরিশঙ্খর জলদাস ভারতীয় নন। করুনাময় গোষ্বামী নারায়নগঞ্জের তোলারাম সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে অবসর নিয়েছেন। যতীন সরকার নেত্রকোনার লোক। সে অঞ্চলেই অধ্যাপনা করেছেন। হরিশঙ্কর জলদাস কর্ণফুলীর পারের জেলেপাড়ার মানুষ। চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের অধ্যাপক হিসাবে অবসর নিয়েছনে। তবে তিনি উপন্যাস আর গল্পে জেলেদের সুখ দুখ ফুটিয়ে তোলেন।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৮
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ কামাল ভাই
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও
শুভকামনা রইলো। চমৎকার
তথ্য সংযোজন করে লেখাটিকে
সমৃদ্ধ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
১৬| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬
আরুশা বলেছেন: শ্রদ্ধা রইলো এই কৃতি সাহিত্যিকের প্রতি ।
১৭| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৪
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আশরাফ মাহমুদ মুন্না-
যতীন সরকার-http://bn.wikipedia.org/wiki/যতà§à¦¨_সরà¦à¦¾à¦°
১৮| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪০
আশরাফ মাহমুদ মুন্না বলেছেন: .
@এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল.
ইমপ্রেসড্। থ্যাংকস্।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৮
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: এই সব্য সাচি লেখকের ৩য় মৃত্যু বার্ষিকী কে জানাই তার জান্নাতি আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা ।।