নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ বারীন মজুমদারের একাদশ মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪০



‘গান শাররীক কসরতের বিষয় নয় , কোমল করে গাও, হৃদয় দিয়ে গাও ’ এই কথা যিনি বলতেন তিনি হচ্ছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ বারীন মজুমদার । সঙ্গীতকে ভালবেসে তিনি সারা জীবন শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চায় নিজেকে ব্যাপ্ত রেখেছিলেন। জীবনের শুরুতে চিন্ময় লাহিড়ী,ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ, পন্ডিত শ্রীকৃষ্ণ রতনজনকারের মতো গুনী শিল্পীদের কাছে রাগ সঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন । উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা অনবদ্য। ১৯৬৩ সালে তিনি দেশের প্রথম সংগীত মহাবিদ্যালয় ’কলেজ অব মিউজিক’ প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি একুশে পদক,স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভুষিত হয়েছিলেন। আজ ৩ অক্টোবর। ২০০২ সালের আজকের এইদিন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।



ওস্তাদ বারীন মজুমদার ১৯১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী পাবনা শহরের রাঁধানগর অঞ্চলের বিখ্যাত মজুমদার জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন। সে সময় মজুমদাররা জমিদার ছিলেন। তাঁর পিতা নিশেন্দ্র মজুমদার এবং পুরো পরিবারই সংস্কৃতি’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিশেন্দ্র মজুদার ছিলেন অভিনেতা। আর মা বাজাতেন সেতার। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর ঝোঁক ছিল সংগীতে। তাই বাবা তাঁকে কলকাতার সংগীতগুরু ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। এখানে তিনি শেখেন রাগ ভূপালি। কিছুদিনের মধ্যে গুরু-সন্ন্যাস নেন। পরে পাবনায় ফিরে আসেন বারীন মজুমদার। এর পরে সঙ্গীতে উচ্চতর ডিগ্রী নেবার জন্য তাই তিনি লক্ষ্মৌ গমন করেন। সেখানে প্রথমেই তাঁর পরিচয় হঢ ওস্তাদ উদয় শংকর ও রবি শংকরের সঙ্গে। দেখা হয় বন্ধু চিন্ময় লাহিড়ির সঙ্গে। সেখানে মরিস কলেজ অব মিউজিকে ভর্তি হন তিনি। লক্ষ্মৌয়ের ওস্তাদ রঘুনন্দন গোস্বামীর নিকটও সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে লক্ষ্মৌ 'মরিস কলেজ অব মিউজিক' থেকে সঙ্গীত বিশারদ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি পণ্ডিত শ্রীকৃষ্ণ রতনজনকর, অধ্যাপক জে এন নান্টু, ওস্তাদ হামিদ হোসেন খাঁ, চিন্ময় লাহিড়ী, ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ ও ওস্তাদ খুরশীদ আলী খাঁর কাছে স্বতন্ত্রভাবে তালিম নেন।



দেশ ভাগের পর বারীন মজুমদার ফিরে আসেন জন্মভূমিতে। এ সময় অর্থসংকটে পড়ে তাঁর পরিবার। জীবিকার প্রয়োজনে একপর্যায়ে বেছে নেন ফটোগ্রাফি। কিন্তু সংগীতের নেশায় বেশি দিন ফটোগ্রাফি করতে পারেননি। ১৯৫৭ সালে উচ্চাঙ্গ সংগীতের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন বুলবুল একাডেমীতে। এখানে শুরু করেন প্রথাসিদ্ধ ধ্রুপদী সংগীত চর্চার কোর্স। এ সময়ে তিনি ঢাকা বোর্ডের সঙ্গীত সিলেবাস প্রণয়ন করেন এবং ঢাকা রেডিওতে বিশেষ শ্রেণীর শিল্পী হিসেবে রাগসঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে 'কলেজ অব মিউজিক' নামে এ দেশের প্রথম সংগীত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। যেটা শুরু হয়েছিল ১৬ জন শিক্ষক ও ১১ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারের অডিশন ও গ্রেডেশন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য এর অনেক আগে থেকেই তিনি বিশেষ শ্রেণীর রাগ সংগীতশিল্পী ছিলেন ঢাকা বেতারের। ১৯৮৬ সালে ওস্তাদ বারীণ মজুমদার 'মণিহার সঙ্গীত একাডেমী' প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি সঙ্গীতের পাঠ্যপুস্তক 'সঙ্গীতকলি' ও 'সুর লহরী' প্রণয়ন করেন।



সঙ্গীত চর্চায় ও সঙ্গীত শিক্ষায় অসামান্য ও গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য প্রয়াত ওস্তাদ বারীণ মজুমদার পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের খেতাব 'তমঘা-ই-ইমতিয়াজ' লাভ করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুবউল্লা ট্রাস্ট পুরস্কার পান ১৯৮৮ সালে। ছায়ানট ১৯৯০ সালে তাঁকে সিধু ভাই পুরস্কার দেয়। বারীন মজুমদার ১৯৯৭ সালে পাবনা পদক ও ১৯৯৮ সালে জনকণ্ঠ গুণীজন সম্মাননা পদক পান। ১৯৯৯ সালে অর্জন করেন বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ। ২০০২ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।



(স্বামী ওস্তাদ বারীন মজুমদারের সঙ্গে ইলা মজুমদার। দুজনই এখন স্মৃতি)

ব্যাক্তিগত জীবনে ওস্তাত বারীন মজুমদার বিশিষ্ট ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী ইলা মজুমদারের স্বামী এবং বর্তমানের জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক পার্থ মজুমদার এবং সঙ্গীত পরিচালক ও জনপ্রিয়

কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের পিতা।
উল্লেখ্য ২০১১ সালের ২ মে ৭০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান সংগীতজ্ঞ ইলা মজুমদার। ১৯৮১ সাল থেকে প্রায় ২২ বছর তিনি রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে জুনিয়র সেকশনে শিক্ষকতা করেছেন। এ ছাড়া তিনি ১৫ বছর জাতীয় সংগীত মহাবিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি তিন সন্তান রেখে গেছেন। সংগীতচর্চা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি ইলা মজুমদার লেখালেখির জগতেও বিচরণ করেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে 'স্মৃতিতে শ্রুতিতে বারীণ মজুমদার', 'দিনগুলি মোর' ও 'সংগীতের তত্ত্বকথা'।



দীর্ঘ রোগভোগের পর দেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ বারীন মজুমদার ২০০২ সালের ৩ অক্টোবর ঢাকার হলিফ্যামিলি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আজ একাদশ মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৫৯

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: অনেকদিন থেকেই আপনার ব্লগের উপর নজর রাখছি, ভালো নজর কিন্তু :P :P :P বিশেষ ব্যক্তিবর্গের জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা বিশেষবার্ষিকী উপলক্ষে অনেক জ্ঞানগর্ভ পোস্ট দেন। পোস্টের ধরণ দেখেই বোঝা যায় যে আপনি অনেক খেটে খেটে পোস্টগুলো তৈরি করেন। আপনার এই প্রচেষ্টা আমার ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.