নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোহাম্মদ হামিদুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের মিছিলে যে সাত জনের আত্মত্যাগ ও বীরত্বে জাতি তাঁদেরকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে মরণোত্তর সম্মান দিয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান তাঁদের অন্যতম। মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া হামিদুর রহমান সাত জন বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। ১৯৭১ সালের ২৮ আক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার মাধবপুর ইউনিয়নের ধলই সীমান্তে এক সম্মুখ সমরে শহীদ হন মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। তিনি তখন সেনাবাহিনীর সিপাহী এবং মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টরের একজন যোদ্ধা ছিলেন। তাঁর এই অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। আজ এই বীর শ্রেষ্ঠের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খালিশপুর ইউনিয়নের খোর্দ খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হামিদুর রহমান। তার পিতা আক্কাস আলী মণ্ডল ও মাতা কায়দাছুন্নেসা। ১৯৪৭ সালে ভারতের চব্বিশ পরগনা থেকে অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মহেশপুরের খর্দা খালিশপুর গ্রমে বসতি স্থাপন করেছিলেন আক্কাস আলি। নতুন পরিবেশে নানামুখী অভাব অনটনের কঠিন এই জীবন সংগ্রামের মধ্যে হামিদুরের জন্ম। হামিদুর মা-বাবার প্রথম সন্তান। জন্মের পর একবেলা খেয়ে না খেয়ে বড় হতে লাগলেন হামিদুর রহমান। একাধারে দারিদ্রের কষাঘাত, তথাপি সততাকে এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়েননি হামিদ। পিতা আক্কাস আলী ঘর বাঁধার কাজ ভালো জানতেন বলে কাজের অভাব হতো না। পিতার সাহায্যকারী হিসেবে যোগালির কাজ শুরু করেন হামিদ ছোটবেলা থেকেই। আক্কাস আলীর সংসার বেড়ে হামিদরা হলেন সাত ভাই-বোন। সংসার বড় হয়েছে, বেড়েছে চাহিদাও। জীবন বাঁচানোর এই সংগ্রামে সংসারের টানাপোড়ন ছিল নিত্যসঙ্গী। খুব ছোটবেলা থেকে হামিদুরকে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়। কখনও পিতার সাথে কাজে বের হতেন আবার কখনও পরের বাড়ীতে পেটে ভাতে থাকতে হয়েছে তাঁকে।
ছেলে বড় হয়ে দরিদ্র পিতার পাশে দাঁড়াবেন এটিই ছিলো পিতা-মাতার আশা। লেখাপড়ার যথেষ্ট ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সংসারের অভাব অনটনের জন্য হামিদুরের পক্ষে পড়াশুনা চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। হাামিদুর রহমানের লেখায় হাতে খড়ি খালিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নিত্য অভাব অনটনে একসময় হামিদুর রহমান স্কুল ছেড়ে অন্যের বাড়িতে মজুরের কাজ নিতে বাধ্য হন। পরবর্তীকালে স্থানীয় নাইট স্কুলে সামান্য লেখাপড়া করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সিপাহী পদে যোগদান করেন। সেনাবাহিনীতে ভর্তির পরই প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে পাঠানো হলো চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে। ২৫ মার্চের রাতে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ওখানকার আরও কয়েকটি ইউনিটের সমন্বয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে ৪নং সেক্টরে অংশ নেয়। সিপাহী হামিদুর রহমান নিজের সততা এবং একান্ত কর্তব্যনিষ্ঠা থেকেই যোগ দিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনীর আক্রমণকালে শেষবারের মতো মায়ের সঙ্গে দেখা করতে তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাস ত্যাগ করে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। পরে সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল থানার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে ধলই নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীতে যোগদেন।
শ্রীমঙ্গল হতে দশ মাইল দক্ষিণে ধলই সীমান্ত ঘাঁটি। এরই মধ্যে চা বাগানের মাঝে আস্তানা গেড়েছে পাকহানাদার বাহিনী। মাত্র চারশো গজ দূরে ভারতীয় সীমান্ত। চা বাগানেই বাঙ্কার করে এক শক্ত অবস্থান নিয়ে বসে আছে পাকিস্তানী হানাদাররা। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে হটিয়ে ধলই সীমান্ত ঘাঁটি দখল নেয়ার দ্বায়িত্ব পরে হামিদুর রহমানের ইউনিটের ওপর। এই ইউনিটটির অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম। ২৮ অক্টোবরের পূর্ব রাত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি প্লাটুন অতর্কিত আক্রমণের উদ্যোগ নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোররাতেই আক্রমণ করা হবে ঘাঁটিটি। সারা রাত চলেছে আক্রমণের প্রস্তুতি। ২৮ অক্টোবর ১৯৭১ ভোর রাত। চারদিকে সুনসান নীরবতা। সেখানে জেগে আছে মুক্তিবাহিনীর একটি ইউনিট। রাতভর পথ চলে ভোরের দিকে ঘাঁটির কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে ইউনিটটি। সবকিছুই হচ্ছে নীরবে-নিভৃতে।
হানাদার বাহিনী আগেই মাইন পেতে রেখেছিল। হামিদুরের ইউনিট ঘাঁটির কাছাকাছি পৌঁছতেই ঘটে সর্বনাশ। অকস্মাৎ একটি মাইন ফেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার দেহ। আহত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লাগলেন। রক্তে রক্তে লাল হয়ে গেল মাটি। কিন্তু এত মৃত্যুর পরও পেছনে হটার কোনো সুযোগ নেই। ঘাঁটি দখল করতেই হবে। এক পর্যায়ে হতাহতের সংখ্যা আরও বেড়ে গেল। মাইন বিস্ফোরণের শব্দে শত্রুপক্ষ সচকিত হয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করে। শত্রুপক্ষের গুলিবর্ষণের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতি মারাত্বকভাবে ব্যাহত হয়। এ সময় হামিদুর রহমান তাঁর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে হামাগুড়ি দিয়ে এলএমজি পোস্টের দিকে অগ্রসর হন এবং দুই এলএমজি চালকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের হত্যা করেন। সঙ্গে সঙ্গে শত্রুর এলএমজি স্তব্দ হয়ে যায়। কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবর্ষণ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। তীব্র আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর ঘাঁটি দখল করে নেয়। বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজি পোস্টের কাছে দৌড়ে এসে পেলেন শহীদ হামিদুর রহমানের মৃতদেহ। তাঁর পাশেই মৃত অবস্থায় পড়ে আছে দুই পাকসেনা। ধলাই বর্ডার আউটপোস্ট দখল হলো কেবল সিপাহী হামিদুর রহমানের কারণেই। সহযোদ্ধারা হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়ায় আমবাসা গ্রামের এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করেন। নীচু স্থানে অবস্থিত কবরটি এক সময় পানির তলায় তলিয়ে যায়। ২০০৭ সালের ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করে, এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের জন্য হামিদুর রহমানকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের একটি অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অন্যান্য ছয়জনের সাথে তার নাম ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া তাঁর নিজের গ্রাম 'খোর্দ খালিশপুর'-এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় হামিদনগর৷ এই গ্রামে তাঁর নামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ ঝিনাইদহ সদরে রয়েছে একটি স্টেডিয়াম৷ ১৯৯৯ সালে খালিশপুর বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি কলেজ৷ এই শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর গ্রামে লাইব্রেরি ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷
আজ ২৮ অক্টোবর বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ৪২তম শাহাদৎ বার্ষিকী। শহীদ দিবসে বীরশ্রে্ষ্ঠ হামিদুর রহমানের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৩
মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: বীরশ্রেষ্ঠের জন্য শ্রদ্ধা।
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪
হাতীর ডিম বলেছেন: বাংলা মায়ের সর্ব শ্রেষ্ঠ সন্তারের জন্য। হাজার লাল সালাম।
জয় বাংলা।
৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৭
হৃদয় রিয়াজ বলেছেন: লাল সালাম তোমায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ঘুমাও তুমি। জেগে আছে তোমার মায়ের অতন্দ্র প্রহরীরা।
৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৯
নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: রণাঙ্গনের সেই বীরযোদ্ধারা,
তোমরা আছো এই মনে।
তোমাদের স্মৃতিকথা চির অমলিন রবে
তোমরা রবে কোটি প্রাণে।
অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আমাদের এই শহীদ বীরশ্রেষ্ঠের প্রতি।
৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪৯
মশিকুর বলেছেন:
শ্রদ্ধা রইল।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:১০
উযায়র বলেছেন: এ সময় হামিদুর রহমান তাঁর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে হামাগুড়ি দিয়ে এলএমজি পোস্টের দিকে অগ্রসর হন এবং দুই এলএমজি চালকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের হত্যা করেন। সঙ্গে সঙ্গে শত্রুর এলএমজি স্তব্দ হয়ে যায়। কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবর্ষণ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। তীব্র আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর ঘাঁটি দখল করে নেয়। বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজি পোস্টের কাছে দৌড়ে এসে পেলেন শহীদ হামিদুর রহমানের মৃতদেহ। তাঁর পাশেই মৃত অবস্থায় পড়ে আছে দুই পাকসেনা। ধলাই বর্ডার আউটপোস্ট দখল হলো কেবল সিপাহী হামিদুর রহমানের কারণেই।