নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ ৩রা নভেম্বর, ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের জঘণ্যতম ও বেদনাবিধুর একটি অধ্যায়। যে কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশকে কাঙ্খিত অর্জনের পথে বাধা তৈরি করেছে, তার মধ্যে এই দিনটি অন্যতম। বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে ৩৭ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অভ্যন্তরীণ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই জাতীয় চার নেতাই বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন। অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী এই চার নেতা বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আজ এই চার জাতীয়নেতার মৃত্যুদিন, মৃত্যুদিনে তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগি এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট’ ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে যোগদানের প্রস্তাব জাতীয় চার নেতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহমদের প্ররোচণায় এক শ্যেণীর উচ্চাভিলাসী মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাস্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, ত্রান ও পূর্ণবাসন মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং স্বরাস্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলী কে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় ৩ রা নভেম্বর এই চার জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সেদিন জাতীয় চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহগুলোকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুরতম হত্যার ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল গোটা বিশ্ব। কারাগারে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
ঘটনার পরদিনই ৪ নভেম্বর তৎকালীন কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করে। পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। গত ৩৫টি বছর ধরেই এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি চলছে। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে উচ্চ আদালতের রায়ে আত্মস্বীকৃত খুনিদের প্রায় সবাই খালাস পাওয়ার পরও বিচারের দাবি এতটুকু কমেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। আট বছরেরও বেশি সময় ধরে এর বিচার কাজ চলার পর গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনের সাজা হয়। এর মধ্যে তিন সাবেক সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অন্যদিকে মামলার তদন্তে পাওয়া হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় যে পাঁচ আসামিকে খালাস দেয়া হয় তারা হচ্ছেন বিএনপি নেতা মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমান, বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক মন্ত্রী মরহুম তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান।
নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এখন দেশবাসী আশায় বুক বেঁধেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মতো জেল হত্যাকাণ্ডের অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে। হা হলেই দেশ হবে কলঙ্কমুক্ত। আজ এই চার জাতীয়নেতার মৃত্যুদিনে এটাই সকল বাঙ্গালীর প্রত্যাশা। মৃত্যুদিনে চার জাতীয় নেতার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অপূরনীয় এবং বড় মাপের ক্ষতি। আশা করি একদিন প্রকৃত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৯
আর ভি এফ বলেছেন: বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে এই চার জাতীয় নেতাকে সুপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৫
জনাব মাহাবুব বলেছেন: ইয়াহু! ভাই এই মাত্র সেফ (জেনারেল) হইলাম। এখন মন ভরে লিখতে পারবো।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৯
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে এই চার জাতীয় নেতাকে সুপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
কারাগারের মত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।