নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা ও চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্তের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯



বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা, সিনেমা চিত্রশিল্পী ও অভিনেতা সুভাষ দত্ত। ষাটের দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ সুভাষ দত্ত। এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তিনি একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও শিল্প নির্দেশক ছিলেন এবং এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর সৃজনশীল কর্মের ঈর্ষণীয় সাফল্য।বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একুশে পদক-এ ভূষিত হন। সুভাষ দত্তের কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল সিনেমার পোস্টার এঁকে। এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর পোস্টার ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন তিনি। মাটির পাহাড় চলচ্চিত্রে আর্ট ডিরেকশনের মধ্যে দিয়ে তাঁর পরিচালনা জীবন শুরু হয়। এরপরে তিনি এহতেশাম পরিচালিত এ দেশ তোমার আমার ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র সুতরাং (১৯৬৪) এবং সর্বশেষ চলচ্চিত্র ও আমার ছেলে ২০০৮ সালে মুক্তি লাভ করে। চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি প্রচুর মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে ঢাকার আরণ্যক নাট্যদলের প্রথম প্রযোজনা কবর নাটকে তাঁর প্রথম মঞ্চাভিনয় ১৯৭২ সালে। আজ এই কিংবদন্তি চিত্র নির্মাতার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর আজকের দিনে তিনি ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন রোড়স্থ নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।



সুভাষ দত্ত ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুনশিপাড়া নামক স্থানে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাসস্থান বগুড়া জেলার চকরতি গ্রামে। সুভাষ দত্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ও সুশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল শিখতে ভারতের বোম্বেতে গিয়ে পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে একটি ছায়াছবির পাবলিসিটির ষ্টুডিওতে মাত্র ত্রিশ টাকা মাসিক বেতনে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে ভারত থেকে ঢাকায় ফিরে যোগ দেন প্রচার সংস্থা এভারগ্রিন-এ। এরপর তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন চলচ্চিত্রের পোস্টার আঁকার কাজের মাধ্যমে। ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর পোস্টার ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৫৭ সালে ওয়ারিতে ভারতের হাই কমিশনের উদ্যোগে একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে । সেখানে দেখানো হয় সত্যজিৎ রায়'র পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রটি। এবং পথের পাঁচালী দেখেই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রাণিত হন। ১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম এর এ দেশ তোমার আমার চলচ্চিত্রে একজন দুষ্ট নায়েব (কানুলাল) এর ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এটি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি। ষাটের দশকের শুরুর দিকে নির্মিত বহুল আলোচিত হারানো দিন চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। মুস্তাফিজ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি লাভ করে ৪ আগস্ট, ১৯৬১ এবং এটি বাংলা ভাষার প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে এক পেক্ষাগৃহে পঁচিশ সপ্তাহ প্রদর্শনের রেকর্ড তৈরী করে। এরপর তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রে তিনি কৌতুকাভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেও বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন।



(সুভাষ দত্ত অভিনীত বিনিময় চলচ্চিত্রে জানতাম যদি সুভংকরের ফাঁকি)

১৯৬৩ সালের মে মাসে তিনি নির্মাণ শুরু করেন সুতরাং চলচ্চিত্রটি এবং ১৯৬৪ সালে এটি মুক্তি দেন। এর প্রধান অভিনেতা হিসেবে তিনি অভিনয় করেন সেই সময়কার নবাগতা অভিনেত্রী কবরী'র বিপরীতে। এবং এটি বাংলাদেশের প্রথন চলচ্চিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্মাননা লাভ করেছিল। ১৯৬৮ সালে জহুরুল হক ও প্রশান্ত নিয়োগির লেখা কাহিনী নিয়ে আবির্ভাব চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন সুভাষ দত্ত এবং ছবির একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একবার আটক করে সুভাষ দত্তকে। তবে কয়েকটি উর্দু ছবিতেও অভিনয় করার কারণে তখন পাকিস্তানেও তিনি পরিচিত মুখ। সেই সুবাদে সেদিন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন তাঁকে ছেড়ে দিতে বলেন। এবং প্রাণে বেঁচে যান সুভাষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মাণ করেন অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, যাকে তার বানানো অন্যতম সেরা ছবি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭৭ সালে আলাউদ্দিন আল আজাদের বিখ্যাত উপন্যাস '২৩ নম্বর তৈলচিত্র' অবলম্বনে বসুন্ধরা নামের যে চলচ্চিত্রটি সুভাষ দত্ত নির্মাণ করেন- তা আজো চলচ্চিত্র সমালোচকদের আলোচনার বিষয়। সত্তর দশকের শেষের দিকে ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা গল্প গলির ধারের ছেলেটি অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করছিলেন ডুমুরের ফুল চলচ্চিত্রটি।



চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সুভাষ দত্ত আন্তর্জাতিক সম্মাননাসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৬৫ সালে ফ্রাংকফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে সুতরাং দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করে সুভাষ দত্ত। এ ছাড়া ১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব এবং ১৯৬৫ সালে ফ্রাংকফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার পুরস্কার। ১৯৬৮ সালে নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে সুভাষ দত্তের চলচ্চিত্র। এ ছাড়াও তিনি ১৯৭৭ সালে ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ তার প্রযোজনা-পরিচালনার বসুন্ধরা চলচ্চিত্রটির জন্য সেরা পরিচালক ও প্রযোজকসহ এটি মোট পাঁচটি পুরস্কারসহ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একুশে পদক-এ ভূষিত হন তিনি। ২০০৩ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।



সুভাষ দত্ত ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর ৮২ বছর বয়সে সকাল ৭টায় ৮২ বছর বয়সে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন রোডস্থ নিজ ফ্ল্যাট সত্যাশ্রয়ে হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ১৭ নভেম্বর কাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাঁর মৃতদেহ স রাখা হয় শহীদ মিনারে। শহীদ মিনারে তাকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা গার্ড অব অর্নার প্রদান করা হয়। শহীদ মিনার থেকে তাঁর মৃতদেহ দুপুরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি)-তে। এফডিসিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁর মৃতদেহ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পোস্তগোলা শ্মশানে এবং সেখানেই চির শায়িত করা হয় তাঁকে।



মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে, দুই মেয়ে, পুত্র-পুত্রবধূ, নাতি নাতনী রেখে গেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সুভাষ দত্তের প্রথম মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪১

জনাব মাহাবুব বলেছেন: মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৯

কামরাজ বলেছেন: আমার প্রিয় মানুষদের একজন পরিচালক সুভাষ দত্তকে জানাচ্ছি আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: শ্রধ্ধাঞ্জলী সুপ্রিয় সুভাষ দত্ত ।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৮

অনুরনন স্পর্শা বলেছেন: আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জল রইল ।

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৬

গোলাম দস্তগীর লিসানি বলেছেন: শুনেছি সুভাষ দত্ত একজন অসাধারণ শুদ্ধ ধরনের মানুষ ছিলেন।
কথাগুলো শুনেছি মৃততুর পর। তারপর তাঁকে দেখতে ইচ্ছা হয়েছিল খুব।
তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী।

আশা করি ভাল আছেন কোবিদ ভাই। ভালমানুষগুলোকে প্রাণান্ত স্মরণ করার এই প্রক্রিয়া খুব ভাল লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.