নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রাথমিকভাবে গবেষণা করেছিলেন কিংবা পুরানো কাগজপত্র ঘেঁটে অনুসন্ধান করেছিলেন, যোগশেচন্দ্র বাগল তাদের মধ্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে যোগেশচন্দ্রকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা। বাঙালি জাতির উনিশ শতকের ইতিহাস রচনা করে যোগেশচন্দ্র প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে বাঙালি জাতিই ভারতে জাতীয় চেতনা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্মদাতা। বাঙালি জাতির ইতিহাস যোগেশচন্দ্রের রচনায় সমৃদ্ধ। ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ ৪২তম মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
গবেষক ও লেখক যোগেশচন্দ্র বাগল ১৯০৩ সালের ২৭শে মে পিরোজপুর জেলার কুমিরমারা গ্রামের মাতুলালয়ে স্বল্প আয়ের এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস পিরোজপুরের চলিশা গ্রামে। গৃহশিক্ষকতা করে পড়া লেখার ব্যায় নির্বাহ করে বাগল ১৯২২ সালে কদমতলা জর্জ উচ্চ ইংরেজি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৯২৪ সালে বাগেরহাট পি.সি. কলেজ থেকে আই.এ. এবং ১৯২৭ সালে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ. ক্লাসে অধ্যয়ন করলেও তাঁর পাঠ অসমাপ্ত থেকে যায়।
১৯২৮ সালে প্রবাসী পত্রিকায় প্রুফরিডার হিসাবে কর্মজীবনের শুরু করেন যোগেশচন্দ্র বাগল। এখানে কর্মদক্ষতার পরিচয় প্রদান করলে কিছুকাল পরেই এ পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরে নিযুক্ত হয়ে সহকারী সম্পাদকরূপে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তিনি কোলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৬১ সালে বাগল দৃষ্টিশক্তি হরালে সাংবাদিকতার চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। যোগেশচন্দ্র বাগল মূলত: জাতীয় ও সমসাময়িক বিষয়ে লিখতেন। গবেষণার মাধ্যমে উপাদান ও উপকরণ সংগ্রহ করে তিনি উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের পুনর্মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ করেছেন। উনিশ শতকের বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার নবজাগরণের বিস্তৃত ইতিহাস এবং কৃতি বাঙালি সন্তানদের তথ্যসমৃদ্ধ জীবন-চরিত রচনা করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৬১ সালে দৃষ্টিহীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি গবেষণা ও লেখালেখির কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর রচিত বাংলা গ্রন্থ সংখ্যা ২১টি এবং ইংরেজী ৪টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ গবেষণামূলক গ্রন্থঃ ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা’ (১৯৪১), ‘রাধাকান্ত দেব’ (১৯৪২), ‘দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর’ (১৯৪৩), ‘জাতীয়তার নবমন্ত্র বা হিন্দুমেলার ইতিবৃত্ত’ (১৯৪৫), ‘রাজনারায়ণ বসু’ (১৯৪৫), ‘ভারতের মুক্তি সন্ধানী’ (১৯৪৭), ‘বাংলার জনশিক্ষা’ (১৯৪৯), ‘বাংলার স্ত্রীশিক্ষা’ (১৯৫০), ‘জাতীয় আন্দোলনে বাঙ্গালী’ (১৯৫৪), ‘বরণীয়’ (১৯৫৯), ‘বিদ্যাসাগর পরিচয়’ (১৯৫৯), ‘জাগৃতি ও জাতীয়তা’ (১৯৬০), ‘বেথুন সোসাইটি’ (১৯৬১), ‘মুক্তির সন্ধানে ভারত’ (১৩৭৯) ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যঃ ‘সাহসীর জয়যাত্রা’ (১৯৩৮), ‘জগৎ কোন্ পথে’ (১৯৪০), ‘জাতির বরণীয় যাঁরা’ (১৯৪৩), ‘মার্কিন জাতির কর্মবীর’ (১৯৪১), ‘বীরত্বের রাজটীকা’ (১৯৪৩), ‘সংকল্প ও সাধনা’ (১৯৫০), ‘বিদ্যার্থী মনীষী যাঁরা’ (১৯৬০)। সম্পাদিত গ্রন্থঃ ‘ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও অন্যান্য’ (১৯৪৩), ‘বঙ্কিম রচনাবলী’ (১ম খণ্ড ১৯৫৩ ও ২য় খণ্ড ১৯৫৪), ‘রমেশ রচনাবলী’ (১৯৬০) ইত্যাদি। তাঁর কর্মময় জীবনের প্রতিটিক্ষণের পরিবর্তন, সুখ-দুঃখের আবর্তনের বাস্তব স্মৃতিকথা 'জীবন নদীর বাকে বাকে'। সাহিত্য রাচনায় বিশেষ অবদানের জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক ‘রামপ্রাণ গুপ্ত পুরস্কার’ (১৩৫৬), ‘সরোজনী বোস স্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৬২) ও ‘শিশির কুমার পুরস্কার’ (১৯৬৬) লাভ করেন।
ইতিহাসের গবেষক ও লেখক যোগেশচন্দ্র বাগল ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৪২তম মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২৪
সকাল রয় বলেছেন:
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এমন মানুষের কথা জানতমই না