নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী অথবা বিশেষ তাৎপর্যের সাথে পালিত হবে সিরাতুন্নবী

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩০



বালাগাল উলা বেকামালিহি,

কাশাফাদ্দুজা বে জামালিহি।

হাসানাত জামিউ খেসালিহি,

সাল্লুআলাইহে ওয়াআলিহি।


আজ ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)। এই দিনেই আমাদের প্রিয় নবী, শেষ নবী, নবীকুলের শিরোমণি, বিশ্বমানবতার আশীর্বাদ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মও মৃত্যু বরণ করেন। ১২ রবিউল আউয়ালকে মুসলিম বিশ্ব মহানবীর জন্ম ও ওফাতের দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন। এ দিবসটি একই সঙ্গে আনন্দের এবং দুঃখের। তাই এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যের সাথে পালিত হয় সিরাতুন্নবী হিসেবেও।



ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের তারিখ ছিল ১২ ই রবিউল আউয়াল, ইংরেজি সন মোতাবেক ৫৭০ খৃস্টাব্দে। তবে তাঁর জন্মের সুনির্দিষ্ট তারিখ কোনটি সে সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে স্বীয় জন্ম তারিখ সম্পর্কে কোন বিবরণ পাওয়া যায়না। তাঁর জীবনীকারদের মধ্যে তিনি কবে জন্ম গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে মতভেদ আছে। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০ সনই ব্যবহার করেছেন। এক বর্ণনা মতে তাঁর জন্ম ৫৭১ সালের ২০ বা ২২ শে এপ্রিল। তবে নবীর প্রকৃত জন্মতারিখ বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। এজন্যই এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। ঐতিহাসিক ও হাদিস বর্ণনাকারীদের সিংহভাগের মতে, তিনি রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। এ মাসের কোন তারিখে মহানবীর (সঃ) জন্ম তা নিয়ে ইসলামের দুটি প্রধান সম্প্রদায় সুন্নি ও শিয়াদের মত ভিন্নতা লক্ষণীয়। সুন্নি মতাবলম্বীদের সিংহভাগ ১২ রবিউল আউয়াল সোমবারকে মহানবীর জন্মদিন বলে ভাবেন। অন্যদিকে সিংহভাগ শিয়া ইতিহাসবিদ ও জীবনীকারের মতে, হজরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর জন্ম ১৭ রবিউল আউয়াল শুক্রবার। শিয়া জীবনীকারদের মধ্যে একমাত্র আল কুলাইনী মনে করেন, ১২ রবিউল আউয়ালেই মহানবী (সঃ)-এর জন্ম।



মহানবী (সঃ)-এর জন্মদিন সম্পর্কে মতভিন্নতার কারণ হলো তিনি যে সময় জন্ম নেন সে সময় আরবদের মধ্যে দিন ও পঞ্জিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। মহানবী (সঃ)-এর জীবনীকার তের শতকের ইতিহাসবিদ আল-ইরবিলি এ ধারণাই দিয়েছেন। স্মর্তব্য, শুধু মহানবী (সঃ) নয়, খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক হজরত ঈশা (আঃ) বা যিশুখ্রিস্টের জন্ম তারিখ নিয়েও রয়েছে একই ধরনের বিভ্রান্তি। ২৫ ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হলেও এর পক্ষে কোনো গ্রহণযোগ্য দলিল নেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ সম্পর্কে ঐতিহাসিক এবং সীরাতকারগণের মধ্যে যদিও মতভেদ রয়েছে, তথাপি তারা এ বিষয়ে একমত যে, মহানবী (সঃ) রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম পক্ষে সোমবার জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তা ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যকার কোনো একদিন ছিল। সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে শেষোক্ত মতই ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশী নির্ভরযোগ্য। যাই হোক, নবীর জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহনের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।



অপর দিকে রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যু দিবস হল ১২ রবিউল আউয়াল সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত। বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মদ (সঃ) জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রাঃ)এর কামরায় অবস্থান করতে থাকেন। তাঁর কাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল, মৃত্যুর একদিন পূর্বে তিনি এগুলোও দান করে দেন। বলা হয়, এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে। অবশেষে ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে তিনি মৃত্যবরণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আলী (রাঃ) তাকেঁ গোসল দেন এবং কাফন পরান। আয়েশ (রাঃ)এর কামরার যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, জানাযার পর সেখানেই তাকেঁ দাফন করা হয়। এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে দিনটিতে আমাদের প্রিয় নাবীর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয় সে দিনটি তাঁর মৃত্যু দিবস ও। সুতরাং এদিনটি পালন করতে হলে একই সাথে উৎসব ও দুঃখ প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু আমরা দুঃখ প্রকাশ না করে ঈদে মিলাদুন্ববী অর্থাৎ খুশিকেই বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রকারন্তে এটাকে দুঃখের দিনে খুশি হওয়ার সামিল।



মুসলমান হিসেবে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) জন্ম মাস রবিউল আউয়ালে আমরা সবাই আন্দোলিত হই। প্রিয়নবীর প্রতি আমাদের ব্যাকুল অন্তরের আকুল অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। মহব্বতে রাসূলের নতুন হাওয়া বইতে থাকে চারদিকে। তবে আমাদের মহব্বতের প্রকাশভঙ্গিটা যথার্থ কি-না তা বিবেচনার দাবি রাখে। অনুষ্ঠানের হিড়িক, চোখ ধাঁধানো চাকচিক্য এবং মহব্বতে রাসূলের সস্তা প্রয়োগের কারণে মাহে রবিউল আউয়াল আমাদের জীবনধারায় কোনোই পরিবর্তন আনতে পারে না। গতানুগতিক বহমান স্রোতে পণ্ড হয়ে যায় রবিউল আউয়ালের প্রকৃত চেতনা ও দাবি। রবিউল আউয়ালের পয়গাম ও দাবি কী, সেগুলোও আমাদের কাছে আজ স্পষ্ট নয়। আনুষ্ঠানিকতার সব আয়োজনই আমরা সম্পন্ন করি, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও শিক্ষা, বাস্তবজীবনে নববী আদর্শের কোনো ছাপ রাখতে পারি না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেনঃ

'রবিউল আউয়াল এলে তোমারই গান গাই,

রবিউল আউয়াল গেলে তোমায় ভুলে যাই।'


মিলাদ, কিয়াম, জশনে-জুলুশ আর অনুষ্ঠানসর্বস্ব রবিউল আউয়াল আমরা যতই উদযাপন করি, প্রাপ্তির খাতায় শূন্যতা থেকেই যাবে। এ জন্য সিরাতুন্নবীর যথার্থ দাবি আদায়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া ইমানদীপ্ত চেতনার সর্বপ্রধান দায়িত্ব।



বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী, সারওয়ারে কাওনাইন, রাহমাতুল্ লিল আলামীন, শাহানশাহে আরব ও আজম বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পৃথিবীতে শুভাগমন নিঃসন্দেহে ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। রূহানী দুনিয়া থেকে বস্তুজগতে মহানবীর (সঃ) আবির্ভাব সত্যি সত্যিই বিশ্বস্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীনের এক অপার করুণা। তাঁর আগমনে শিরক, পৌত্তলিকতা, জাহেলিয়াত ও বর্বরতা দূরীভূত হয়। তাঁর শুভাগমনে বিশ্বের সৌভাগ্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়। এমন মহামানবের জীবনচরিত আলোচনা একটি বড় এবাদত। তাঁর পবিত্র জীবনের প্রতিটি ঘটনা মানুষের হেদায়েতের জন্য উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।



আমি ধর্ম সম্পর্কে বিশেষ কিছু যানিনা বলেই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এই প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে যে এই পবিত্র দিনটিকে কেউ ঈদে মিলাদুন্নবী আবার কেউ কেউ সিরাতুন্নবী হিসেবে পালন করেন।

মিলাদুন্নবী রসুল পাক হযরত মোহাম্মদ (সঃ) জন্মদিন। অর্থাৎ খুশির দিন। তবে এদিন তো তাঁর ওফাত দিবসও যা শোকের বা দুঃখের। শোকের দিবসে খুশি আমার কাছে ঠিক পরিস্কার নয়। তাছাড়া হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার জিবদ্দশায় তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন কোন ঐতিহাসিক দলিল নেই বলে শুনেছি এমনকি তাঁর সাহাবারাও তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই ঈদে-মিলাদুন্নবি প্রথাটি কুর’আন অথবা সহিহ সুন্নাহ এমনকি নবীজির জিবদ্দশায় যেমন পালন করা হয় নাই তেমনি কোন সাহাবিদের আমল থেকে প্রমাণিত নয়। যদি এটা শুধু কল্যাণের কাজই হতো তাহলে আমাদের চেয়ে তারাই এ কাজটি বেশী করতেন। কেননা তারা আমাদের চেয়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বেশী সম্মান করতেন ও ভালবাসতেন এবং কল্যাণের কাজে তারা ছিলেন বেশী আগ্রহী।



তা ছাড়া বিশ্বের সর্ব শ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম কিংবা মৃত্যু দিবস পালন হোক সৃষ্টিকর্তা হয়তো তা চান নি বলেই একই দিন তাঁর মৃত্যু ও জন্ম দিবস নির্ধারণ করেছেন। যাতে করে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম কিংবা মৃত্যু দিবস মানুষ উৎসব মুখর পরিবেশে আথবা দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে পালন না করে। খুশি ও বেদনা হত এই দিনটি যেন কোন ভাবেই পালন না করে নীরবে তার উপর দরুদ (সঃ) পড়ে। সুতারাং এই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কতটুকু যুক্তি সংগত যে দিন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর ওফাত দিবসে। সম্ভবতঃ হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর ওফাতের ৬০০ বছর পরে তাঁর জন্মদিন পালনের প্রচলন হয়।



সুতরাং ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন শরিয়ত মতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য সে প্রশ্ন আমার। তবে বিশ্বমানবতার আশীর্বাদ হজরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর জন্মও মৃত্যু দিবসকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে আমরা সিরাতুন্নবী হিসেবে এই দিনকে অথবা বছরের যে কোন একটি দিনকে পালন করতে পারি। অপরদিকে ঈদে মিলাদুন্নবী হলো আমাদের পেয়ারা নবীরজীর জন্মদিনের মাঝে সীমাবদ্ধ, এতে তাঁর জীবনের সামান্যতম অংশই আলোচনা করার সুযোগ থাকে অথচ সিরাতুন্নবী হিসেবে বছরের যে কোন দিনে তার জীবনী আলোচনা করে আমরা দো জাহানের অশেষ নেকী অর্জন করতে পারি। কারণ হজরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জীবনে একটি দিবসে গন্ডিতে না থেকে তার ৬২ বছরের জীবনের আলোচনা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া তাঁর জন্মদিনের আদর্শ বাস্তবায়ন না করে তার সমগ্র জীবনের আদর্শ বাস্তবায়ন করা বা করার চেষ্টা করা বা করতে উদ্বুদ্ধ করা হজরত মোহাম্মদ (সঃ) এর উম্মত হিসেবে আমাদের নৈতিক দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য। বিশেষ করে এই পবিত্র দিনে আমরা মহানবী (সঃ)-এর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সালাম জানাই। হানাহানি ও অশান্তিতে ভরা এই বিশ্বে শান্তি স্থাপনে তার রেখে যাওয়া আদর্শ মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখাতে পারে। মানব জাতির জন্য যার প্রয়োজন আজ সবচেয়ে বেশি।



বিষয়ে আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অভিজ্ঞ বন্ধুদের কাছ থেকে সুচিন্তিত মতামত আশা করছি যা আমাদের সঠিক ভাবে হজরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্মদিন বা তার সারা জীবনের আদর্শ অর্থাৎ সিরাতুন্নবী পালনে উদ্বুদ্ধ করবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহি বুঝ বুজবার তৌফিক দান করুন। আমিন-

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৪১

মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: খুব সুন্দর করে বলেছেন ভাই।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮

কোবিদ বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ
লেখাটি পড়ার জন্য

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪২

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: অনেক কিছুই জানলাম কোবিদ ভাই। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ জনাব
আপনার মন্তব্যের জন্য

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: এই ব্যাপারে এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন,
মিলাদুন্নবী পালনের বিধান – শায়খ ড. সালেহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮

কোবিদ বলেছেন:
দুঃখিত আপনার উল্লেখিত লিংক এ যেতে পারলাম না।
তাই জানাও সম্ভব হলনা

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪

নতুন বলেছেন:

ভন্ডপীরের ধান্ধা হইলো টাকাপয়সা...

প্রথমে তারা বলে আল্লাহ/রাসুলের কথা.... শেষে বলে এই অনুস্ঠান উপলক্ষে দান করা ফরজ >>>

তাদের আসল ধান্ধা হইলো মুরিদের দান... যা তাদের আয়ের প্রধান উতস...

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯

কোবিদ বলেছেন:
নিজের বিবেচনায়
এবং বিজ্ঞ আলেমদের
কাছ থেকে সঠিক পথের
সন্ধান অনুসন্ধান করা
আবশ্যক।

৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন: বিশ্লেষণধর্মী লেখা, উপস্থাপনাও ভাল

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:০৭

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে ড. মোস্তাফিজুর রহমান
আশা করি সাথে থাকবনে

৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩৩

বেলা শেষে বলেছেন: আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।
এটা এ কারণে যে, যারা কাফের, তারা বাতিলের অনুসরণ করে এবং যারা বিশ্বাসী, তারা তাদের পালনকর্তার নিকট থেকে আগত সত্যের অনুসরণ করে। এমনিভাবে আল্লাহ মানুষের জন্যে তাদের দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।

৭| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮

শাহাদাত রুয়েট বলেছেন: প্রথম কবিতাটার অর্থ লিখলে ভালো হতো ।

মিলাদুন্নবী কেন বিদআত

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১১

কোবিদ বলেছেন:
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়ঃ

কুল মখলুক গাহে হযরত
--কাজী নজরুল ইসলাম
কুল মখলুক গাহে হযরত
বালাগাল উলা বেকামালিহি।
আঁধার ধরায় এলে আফতাব
কাশাফাদ্দুজা বেজামালিহি।।
রৌশনীতে আজো ধরা মশ্গুল,
তাই তো ওফাতে করি না কবুল,
হাসনাতে আজো উজালা জাহান
সাল্লু আলায়হি ওয়া আলিহি।।(সংক্ষেপিত)

৮| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭

হাবা বাবা০০০১ হ্যাপী বলেছেন: ধন্যবাদ একটা ভাল লেখা উপস্থাপনের জন্য

৯| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২

শাহাদাত রুয়েট বলেছেন: আমি বাংলা অর্থ জানতে চাচ্ছিলাম।

১০| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বালাগাল উলা বেকামালিহি/বিকামালিহি
কাশাফাদ্দুজা বে জামালিহি।/বি জামালিহি
হাসানাত জামিউ খেসালিহি,/খিসালিহি
সাল্লুআলাইহে ওয়াআলিহি।আলাইহি

আরবীতেএ কারের ব্যবহার নেই ।এটাই শুদ্ধ নিয়ম ।যারা লিখেছে ওটা ভুল। শুধু মাত্র বিসমিল্লাহী মাজরেহা তে রে আছে।


আযানের দোয়াতেই আছে


ইয়া আল্লাহ হযেরত মুহাম্মদ সাঃ কে দান করো বেহেশতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান যার প্রতিশ্রতি তুমি তাকে দিয়েছো। নিষ্চয় তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যাত্যয় করো না।

আর ইয়াল্লাহা তার উছিলায আমাদের দেশে শান্তি শৃঙ্খলা সমৃদ্ধি দান করো ।

১১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২০

Rain_in_Sydney বলেছেন: Praise be to Allah, Lord of all the worlds, and Peace and Blessings upon His Prophet and Messenger Muhammad SAW, His family and all His companions.

Salam Brother..

We have come to a time in which we hear complaining about the remembrance of the Prophet's birthday, There is not a single verse in the Qur'an OR a Hadith of Prophet Muhammad (Peace be upon him) forbidding the celebration of Prophet's birthday. However, those who oppose the birthday celebration of Prophet Muhammad (Peace be upon him) quote many verses from the holy Qur'an and Hadith giving an impression to the less knowledgeable Muslims that it is forbidden. We cannot see any single verse in the email of which proves that celebration of MAWLID is invalid or unlawful as per the holy Quran & hadith.

What is Mawlid/ Eid-Milad-un-Nabi and its activities:
Eid-Milad-un-Nabi means birthday of Prophet (peace be upon him). The Muslim celebration of the birthday of Prophet Muhammad (peace be upon him) is quite different from the Christian Celebration of Christmas, the birthday of Jesus Christ (peace be upon him). What do Muslims do on the day of Eid Milad un Nabi (peace be upon him)? They organize gatherings in which Muslims discuss the birth, the life and the message of Prophet Muhammad (Peace be upon him). They feed the poor and the guests. They read the Qur’an and learn Qur’an from scholars. They praise Prophet Muhammad (peace be upon him) and sing Naat / Nasheed (poems / rhymes). They reach out to non-Muslims and inform them about Islam. The day is celebrated with purely religious and spiritual aspects of an Islamic life. At this occasion Muslims remind themselves to love and follow Allah's last Messenger (Peace be upon him) in daily life. Eid Milad un Nabi (peace be upon him) is just like any other religious get-together of Muslims for the remembrance of Allah and His beloved Messenger (Peace be upon him).

We should strengthen and refresh our love for the Prophet Muhammad (pbuh) by reading articles and poems about him. Man cannot love a person whom he doesn’t know, so in order to know and understand and consequently love him much more, we should read books, articles, poems etc. that tell about Him(pbuh). One of the most important duties of a Muslim is to know, understand the Prophet(pbuh), consider Him(pbuh) as a model and resemble Him(pbuh) in every aspect and to learn and practice the religion that He (pbuh) devoted himself. Miracles that seen in the birth and childhood years of the Beloved Prophet (pbuh) should be discussed.
The activities of the Mawlid, are lawful in Islam. Muslims are rewarded for doing the Mawlid. The doing of the Mawlid does not contradict Qur’an, Hadeeth, Consensus or the practices and sayings of the Companions. Remembering the birth of the Prophet by doing rewardable deeds is a praise-worthy practice for those who prepare and participate in this honorable event.
Muslims rejoice on birth of Prophet (Peace & Blessings be upon him) because Allah has told us to rejoice on His "Bounties and Mercies" This following text shall be based on
a) Holy Qur'an

b) Holy Hadith

c) Sayings of eminent scholars and fuqaha
d) Counter refutation of claims made against Mawlid.

Now we should carefully read through the following and see what the Holy Quran & Hadith state about this (May Allah gives us all good understanding..ameen)

Surah Ayat What Says in the Holy Quran Brief Scholar's explanation
Yunus 58 "In the bounty of God. And in His Mercy, in that "LET THEM REJOICE" that is better than the (wealth) they accumulate Some might think in their wildest of imaginations that birth and arrival of Prophet (salallaho alaihi wasalam) is not a mercy, some even falsely limit the Mercies of Allah by saying that mercy mentioned here does not refer to Prophet Muhammad (salallaho alaihi wasalam) thus we should not rejoice, so in reply to such people the best answer is found in Tafsir of Qur'an through Qur'an itself ( Refer to the next Ayat) Imam Ibn al-Jawzi (rah) explains 10:58 in his Tafsir
ad-Dhahak narrated from Ibn Abbas (ra) that Bounty mentioned in this verse means Knowledge (i.e of Qur'an and Tawhid) whereas Mercy means Muhammad (Salallaho alaihi wasalam) [Ibn Jawzi Z'ad al Maseer fi Ilm at Tafsir, (4/40)]
Imam Abu Hayyan al Andalusi (Rahimuhullah) also says:
Bounty refers to Knowledge whereas Mercy refers to Muhammad (salallaho alaihi wasalam) [Tafsir Al-Bahr al Muheet, (5/171)]

Imam Jalal uddin Suyuti (Rahimuhullah) says
Abu Sheikh (rah) narrated from Ibn Abbas (RA) That Bounty of Allah means Knowledge, whereas Mercy means Muhammad (Salallaho alaihi wasalam) Allah Ta'ala said: We have sent thee not but as Mercy to Worlds (Al Anbiya: 107) [As-Suyuti in Dur al Manthur (4/330)]
Al-Anbiya 107 And We have sent you (O Muhammad SAW) not but as a mercy for the 'Alamîn (mankind, jinn and all that exists). Hence without any shadow of doubt arrival of Prophet (Peace & Blessings be upon him) is a mercy not only upon us but all worlds and creations of Allah azza Wajjal, thus we should rejoice as ordered in Qur'an
Maryam 15 And peace be upon him the day he was born and the day he dies and the day he is raised alive. So the days when Anbiya are born are days of "Tranquility" in sight of Allah
Ibrahim 5 We sent Moses with Our signs (and the command). "Bring out thy people from the depths of darkness into light, and teach them to remember the “Days of Allah (بِأَيَّامِ اللَّهِ)." Verily in this there are Signs for such as are firmly patient and constant,- grateful and appreciative What are the Ayyam of Allah? Imam al-Bayhaqi narrates in his Shu'ab al Iman that Prophet (Peace be upon him) said: The Days of Allah are his "Blessings and Signs" [Tafsir Ruh ul Ma’ani under 14:5]
Qalam 4 Truly you (Muhammad SAW) are of a magnificent character
The Celebration of the Holy Prophet's birth is motivated by this obligation to love the Prophet, Peace be upon him, to obey him, to remember him, to follow his example, and to be proud of him as Allah is proud of him, since Allah has boasted about him in His Holy Book by saying this ayat
Al-Ahzab 56 Allah sends His Salat (Graces, Honours, Blessings, Mercy) on the Prophet (Muhammad SAW) and also His angels (ask Allah to bless him). O you who believe! Send your Salat[] on (ask Allâh to bless) him (Muhammad SAW), and (you should) greet (salute) him with the Islamic way of greeting. The Obligation to Increase the Love and Honor of the Prophet;
Perfection of faith is dependent on love of the Prophet because Allah and His angels are constantly raising his honor, as is meant by the verse already quoted,
The benefit brought by obeying an order of Allah, and the light that it brings to our heart, cannot be measured. That obligation, furthermore, is mentioned in the plural: Allah and His angels are praying on and praising the Prophet -- in a gathering. It is entirely incorrect, therefore, to say that praying on and praising the Prophet must be done alone. What happens in Mawlid celebration? Recitation of Darud which ALLAH SWT orders us

Hadith Name Book/No What is about Breif Scholar's explanation
Muslim Book 006,
# 2606 Abu Qatada Ansari (Allah be pleased with him) reported that Allah's Massenger (may peace be upon him) was asked about fasting on Monday, whereupon he said: It is (the day) when I was born and revelation was sent down to me. The Prophet Emphasized Monday As the Day He Was Born;
It is clear from this Hadith that the Holy Prophet (Peace be upon him) was very happy about the day of his birth and so fasted out of gratitude. Fasting is a form of worship, so one can celebrate this day by any form of ibada. One can fast or hold gatherings or provide food to the poor, all being acts of worship. This Hadith is also reported in by Imam al-Bahayqi in his “Sunnan ul Kubra” (Vol. 4, pg. 300 Hadith no 8182, 8259), in the “Sunan” of Imam Nisai and the “Musnad” of Imam Ahmad bin Hanbal.
Bukhari Volume 7, Book 62, Number 38 Narrated 'Ursa ra; Abu Lahab freed his handmaid ( slave) Thuwayba when she(the slave of Abu Lahab) brought him the news of the Prophet's birth . When Abu Lahb died, one of his relatives saw him in a dream in a very bad state and asked him, "What have you encountered?" Abu Lahb said, "I have not found any rest since I left you, except that I have been given water to drink in this (the space between his thumb and other fingers) and that is because of my manumitting Thuwaiba." The Effect of Observing Mawlid on Unbelievers ;
Abu Lahab freed Thuwaiba on joy at birth of Prophet (salallaho alaihi wasalam), even the worst of Kufaar and greatest of enemies is given relaxation in his Adhaab due to freeing Thawaiba by pointing with his finger, so Imagine the situation of a momin who rejoices on Mawlid.
Sunnan an Nasai’i Volume 1, Page No. 241, Hadith No. 448 Hadrat Anas bin Malik (RA) narrates that Prophet (Peace be upon him) while mentioning his journey of Miraaj explains: Jibreel (a.s) asked me to get off from Buraak at Bethlehem and told me to say the prayer there, after which he said: Do you know where you have prayed (O Messenger of Allah)? You prayed at Bethlehem where Isa (a.s) "was born". The Prophet Emphasized the Birthplace of Prophets;
Imam al-Bayhaqi (rah) narrated this hadith with a different route too from another Sahabi called "Shaddad bin Aws (RA). After narrating it he said :هذا إسناد صحيح
Means : This Sanad is "SAHIH" [al-Bayhaqi in Dalayl un Nubuwah (2/355-356)] So the Mawlid and the places where Prophets (A.S) are born are amongst Sha’ir (sings to be venerated) of Allah.
Suyuti's Husn al-maqsid p. 5 and in Ibn Kathir's Mawlid p. 30 as well as Ibn Hajar's Fath al-Bari. In the time of the Prophet, it is well-known that poets came to him with all kinds of works praising him, writing about his campaigns and battles and about the sahaba. This is proved by the numerous poems quoted in the Siras of Ibn Hisham, al-Waqidi, and others. The Prophet was happy with good poetry since it is reported in Bukhari's al-Adab al-mufrad and elsewhere that he said: "There is wisdom in poetry." Thus the Prophet's uncle al-`Abbas composed poetry praising the birth of the Prophet, in which are found the following lines ( Translated in Eng):
When you were born, the earth was shining,
and the firmament barely contained your light,
and we can pierce through,
thanks to that radiance and light and path of guidance. The Prophet Accepted Poetry in His Honor;
The Prophet was happy with those who praised him because it is Allah's order, and he gave them from what Allah was providing him. If we get together and do something in order to approach the Prophet, we are doing something to approach Allah, and approaching the Prophet will make Allah happy with us. Ibn Kathir mentions the fact that according to the Sahaba, the Prophet praised his own name and recited poetry about himself in the middle of the battle of Hunayn in order to encourage the companions and scare the enemies. That day he said: "I am the Prophet! This is no lie. I am the son of `Abd al-Muttalib!"
Muslim, Abu Dawud, an-Nasa'i, and at-Tirmidhi The Prophet emphasized in his hadith both the day and the place of birth of previous prophets. Speaking of the greatness of the day of Jum`ah (Friday), the Prophet said in his hadith: "On that day [i.e. Jum`ah], Allah created Adam." This means that the day of Friday is emphasized because Allah created Adam on that day. The Prophet Emphasized the Birthday of Prophets;
This means that the day of Friday is emphasized because Allah created Adam on that day. That day is emphasized because it saw the creation of the prophet and father of all human beings. What about the day when the greatest of prophets and best of human beings was created?

১২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪১

শাহ্ আজাহার বলেছেন: প্রসঙ্গঃ ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং জন্মবার্ষিকী পালন।
===========

بِسمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ
আল্লাহ'র নামে আরম্ভ যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু।

ক.শাব্দিক পরিচয়

‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ শব্দটি যৌগিক শব্দ। যা তিনটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত।

এক, ঈদ
দুই, মিলাদ
তিন, নবী।
প্রথমত
ঈদ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ উৎসব, আনন্দ, খুশি।

বিশ্ববিখ্যাত অভিধান প্রণেতা ইবনু মনযুর বলেন-

ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﻓﻴﻪ ﲨﻊ

‘সমবেত হবার প্রত্যেকদিনকে ঈদ’ বলা হয়।

— ইবনু মনযুর, লিসানুল আরাব, দারু সাদির, বৈরুত, ১ম সংস্করণ, খ. ৩য়, পৃ.৩১৫

মুফতি আমীমূল ইহসান আলাইহির রাহমাহ বলেন-

ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﻓﻴﻪ ﲨﻊ ﺍﻭ ﺗﺬﻛﺎﺭ ﻟﺬﻱ ﻓﻀﻞ

কোন মর্যদাবান ব্যক্তিকে স্মরণের দিন বা সমবেত হবার দিনকে ঈদের দিন বলা হয়।

— মুফতি আমীমূল ইহসান, কাওয়ায়িদুল ফিকহ, আশরাফি বুক ডিপু, ভারত, ১ম সংস্করণ, ১৩৮১ হিজরী, পৃ.৩৯৫

দ্বিতীয়ত
মিলাদ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ: জন্মকাল, জন্মদিন। এ অর্থে মাওলিদ (ﻣﻮﻟﺪ) শব্দের ব্যবহার আরবি ভাষায় অত্যোধিক।

তৃতীয়ত
নবী, এখানে নবী বলতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। কারণ মুসলিম জাতি ও পুরো সৃষ্টিজগত তাঁর আগমণের শোকরিয়া আদায় করে। সুতরাং ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ অর্থ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র শুভাগমনের আনন্দ উৎসব।



খ.‘মিলাদুন্নবী’ শব্দের প্রচলন
‘মিলাদুন্নবী’ শব্দের মধ্যে ‘মিলাদ’ শব্দটি কারো জন্ম বা জন্মকাল বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এ অর্থে শব্দটির ব্যবহার রয়েছে হাদিস শরিফে, অভিধান গ্রন্থে, ইতিহাস গ্রন্থে, এমনকি অনেক কিতাবের নামেও। এটি নতুন কোন শব্দ নয়। এর কয়েকটি ব্যবহার নিম্নে উলে­খ করা হল।

১. অভিধান গ্রন্থ
আল্লামা ইবনু মনযুর তার সুপ্রসিদ্ধ আরবি অভিধান ‘লিসানুল আরব’-এ লিখেছেন-

ﻣﻴﻼﺩ ﺍﻟﺮﺟﻞ: ﺍﺳﻢ ﺍﻟﻮﻗﺖ ﺍﻟﺬﻱ ﻭﻟﺪ ﻓﻴﻪ

লোকটির মিলাদ- "যে সময়ে সে জন্ম গ্রহণ করেছে সে সময়ের নাম"।

— ইবনু মনযূর, প্রাগুক্ত, খ. ৩য়, পৃ.৪৬৮, আল্লামা ইসমাঈল বিন হাম্মদ জাওহারী, আস-সিহাহ, দারুল ইলম, বৈরুত, ১৪০৪ হিজরী, খ.১ম, পৃ.৩০৬

২. হাদিস গ্রন্থ
ইমাম তিরমিযী আলাইহির রাহমাহ তাঁর ‘আল জামেউস সহীহ’ গ্রন্থের একটি শিরোনাম হল-

ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﰲ ﻣﻴﻼﺩ ﺍﻟﻨﱯ

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম সম্পর্কে বর্ণিত বিষয়ের অধ্যায়।

— ইমাম তিরমিযী, আল-জামেইস সহীহ, দারুল গারব আল ইসলামী, বৈরুত,লেবানন, ১৯৯৮ইং, খ. ৫ম, পৃ.৫৮৯।

হযরত উসমান বিন আফ্ফান রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বনী ইয়ামর বিন লাইসের ভাই কুরাছ বিন উশাইমকে জিজ্ঞেস করলেন-

ﺃﺍﻧﺖ ﺃﻛﱪ ﺃﻡ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ ﺃﻛﱪ ﻣﲏ ﻭﺃﻧﺎ ﺍﻗﺪﻡ ﻣﻨﻪ ﰲ ﺍﳌﻴﻼﺩ

‘আপনি বড় নাকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেয়ে বড়। আর আমি জন্মের মধ্যে তার চেয়ে অগ্রজ।

নোটঃ
ইমাম তিরমিযী, প্রাগুক্ত;
ইমাম তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মূলুক, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, লেবানন, ১৪০৭ হি. খ. ১ম, পৃ.৪৫৩,
ইবনু কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন, ১৪১৯ হিজরী, খ.২য়. পৃ.২১৬,
মিয্যী, তাহযীবুল কামাল, মুয়াস সাসাতুর রিসালা, বৈরুত, লেবানন, ১৪০০হিজরী, খ. ২৩, পৃ.৪৬৭,
আহমাদ বিন আমর শায়বানী, আল-আহাদ ওয়াল মাছানী, দারুর রাইয়া, রিয়াদ, সৌদি আরব, ১৪১১হিজরী, খ. ১ম, পৃ.৪০৭।
৩. ইতিহাস ও সীরাত গ্রন্থ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের সময় ‘সাওর’ গুহায় আশ্রয় নেন। এদিকে মক্কার কুরাইশরা তাকে খুঁজতে খুঁজতে ‘সাওর’ গুহা মুখে পৌছলে তাদের একজন বলল-

ﺃﻥ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻌﻨﻜﺒﻮﺕ ﻗﺒﻞ ﻣﻴﻼﺩ ﺍﻟﻨﱯ ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺎﻧﺼﺮﻓﻮﺍ

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মের পূর্ব থেকে এ গুহামুখে মাকড়শার জাল রয়েছে। অতঃপর তারা চলে গেল।

নোটঃ
ইবনে সাদ, আত্ তাবকাতুল কুবরা, দারু বৈরুত লিত্-তাবয়া ওয়ান নশর, বৈরুত, লেবানন, ১৩৯৮ হি. খ.১ম,পৃ.২২৮,
ইমাম সুয়ূতী, আল-খাছায়িছুল ক্বুবরা, মাকতাবাতু নূরিয়্যা রিজকিয়্যা, ফয়সালাবাদ, পাকিস্তান, ১৯৯৮ ইং, খ.১ম, পৃ.৩০৫
ইবনু আউন (রহ.) বলেন-

হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ৯১ বছর বয়সে শহীদ হন। তিনি জন্মের ক্ষেত্রে রাসুলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অগ্রজ ছিলেন।

— ইবনে সাদ, প্রাগুক্ত, খ. ৩য়, পৃ. ৩৫৯

হযরত ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-

ﻭﻛﺎﻥ ﺑﲔ ﻣﻴﻼﺩ ﻋﻴﺴﻰ ﻭﺍﻟﻨﱯ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﲬﺲ ﻣﺎﺋﺔ ﺳﻨﺔ ﻭﺗﺴﻊ ﻭﺳﺘﻮﻥ ﺳﻨﺔ

আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের মাঝখানে ৫৬৯ বছর ব্যবধান ছিল।

নোটঃ
ইবনু সাদ, প্রাগুক্ত, খ. ১ম, পৃ.৫৩,
ইমাম তাবারী, প্রাগুক্ত, খ. ১ম, পৃ.৪৯৫,
ইমাম কুরতুবী, আল-জামেঈ লিআহকামিল কুরআন, দারু ইহইয়ায়িত তুরাসিল আরাবী, বৈরুত, লেবানন, খ.৬ষ্ঠ, পৃ.১২২।
আল্লামা ইবনু হাজর আসক্বালানী আলাইহির রাহমাহ বলেন-

তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র জন্মের কিছুকাল পরে জন্ম গ্রহণ করেছেন।

— আল্লামা ইবনু হাজর আসকালানী, ফতহুল বারী, দারু নশরিল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, লাহর, পাকিস্তান, ১৪০১হি. খ.৬ষ্ট, পৃ.৫৫৭।

উপরিউক্ত উদ্ধৃতি থেকে বুঝা গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র জন্ম বুঝানোর জন্য ‘মিলাদুন্নবী’ শব্দটির ব্যবহার সাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকে অদ্যাবধি রয়েছে; এ যুগের নবসৃষ্ট কোন শব্দ নয়। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে যে ‘মিলাদুন্নবী’ একটি ইদানিং সময়ের শব্দ, যা আদৌ সঠিক নয়। আবার কেউ কেউ ‘মিলাদ’ শব্দের অর্থ ‘জন্ম’ না নিয়ে অন্যঅর্থ নেয়ার চেষ্টা করে, যা কোন অভিধান প্রণেতা উলে­খ করেননি।

গ. ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’র পরিচয়
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতে বুঝায়-এ ধরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনে আনন্দিত হওয়া এবং এ অদ্বিতীয় নিয়ামত পাবার কারণে সৎকাজ ও ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা।

কোরআনপাক ও হাদীসপাক হতে ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও জন্মোৎসব পালনের দলিল সহ বিস্তারিত আলোচনা পাঠকদের সম্মুখে পেশ করা হলো।

শরীয়ত মুতাবিক জন্মদিন পালন করা , দাওয়াত করা, খাওয়ানো , দুয়া করা সুন্নত। সুবহানাল্লাহ!
জন্মদিন পালন বা উৎযাপনের বিষয়ে হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের বিখ্যাত সঙ্কলক ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আদাবুল মুফরাদ’ কিতাবে ২ খানা বাব বা পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন যথাক্রমে -
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ - শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত।
بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ - সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা।
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ - “শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রোযা ভঙ্গ করে শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াতের খানা খেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ بِلَالِ بْنِ كَعْبٍ الْعَكِّيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ زُرْنَا حَضْرَتْ يَـحْيَى بْنَ حَسَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـي قَرْيَتِهِ اَنَا وَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ بْنُ اَدْهَمَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ قَرِيرٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ مُوسَى بْنُ يَسَارٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَجَاءَنَا بِطَعَامٍ، فَاَمْسَكَ حَضْرَتْ مُوسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ حَضْرَتْ يَـحْيَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَمَّنَا فِـي هٰذَا الْمَسْجِدِ رَجُلٌ مِنْ بَنِي كِنَانَةَ مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَنَّى حَضْرَتْ اَبَا قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً، يَصُوْمُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، فَوُلِدَ لِاَبِـيْ غُلَامٌ، فَدَعَاهُ فِـي الْيَوْمِ الَّذِيْ يَصُوْمُ فِيْهِ فَاَفْطَرَ، فَقَامَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَكَنَسَهُ بِكِسَائِهِ، وَاَفْطَرَ حَضْرَتْ مُوْسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَضْرَتْ اَبُو عَبْدِ اللهِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَبُو قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اسْـمُهُ جَنْدَرَةُ بْنُ خَيْشَنَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ.
অর্থ : “হযরত বিলাল ইবনে কা’বিল ‘আক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি, হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল আযীয ইবনে কুদাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মূসা ইবনে ইয়াসার ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাসতিনী রহমতুল্লাহি আলাইহির সাথে উনার গ্রামে গিয়ে সাক্ষাত করলেন। হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাস্তিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাদের জন্য খাবার আনলেন। হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি রোযাদার হওয়ায় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিনানা গোত্রীয় একজন ছাহাবী, যাঁর উপনাম হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চল্লিশ বছর যাবত এই মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি এক দিন রোযা রাখেন এবং এক দিন বিরতি দেন। আমার একজন ভাই জন্মগ্রহণ করলে আমার পিতা উনাকে দাওয়াত দেন। সেটি ছিল উনার রোযা রাখার দিন। তিনি রোযা ভাঙ্গলেন। হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে উনার চাদরখানা হাদিয়া দেন এবং হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহিও রোযা ভাঙ্গেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ছাহাবী হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক হযরত জানদারা ইবনে খায়শানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দা’ওয়াতি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে শিশুর জন্মদিনেই জন্মদিন পালনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার চুড়ান্ত সন্তুষ্টি মুবারক দুনিয়াতেই প্রাপ্ত হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রোযা ভঙ্গ করে জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাদ্য গ্রহণ করেছেন।
আবার بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ - “সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম শিশুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দাওয়াতে এসে খানাপিনা করেছেন এবং শিশুর জন্য দোয়া করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ بْنَ قُرَّةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَقُوْلُ لَمَّا وُلِدَ لِـي اِيَاسٌ دَعَوْتُ نَفَرًا مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَطْعَمْتُهُمْ فَدَعَوْا فَقُلْتُ‏‏ اِنَّكُمْ قَدْ دَعَوْتُـمْ فَبَارَكَ اللهُ لَكُمْ فِيْمَا دَعَوْتُـمْ وَاِنّـيْ اِنْ اَدْعُوْ بِدُعَاءٍ فَاَمّنُوْا قَالَ‏ فَدَعَوْتُ لَهُ بِدُعَاءٍ كَثِيْرٍ فِـيْ دِينِهِ وَعَقْلِهِ وَكَذَا قَالَ‏‏ فَاِنّـيْ لَاَتَعَرَّفُ فِيْهِ دُعَاءَ يَوْمِئِذٍ‏.‏
অর্থ : “হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উনার আওলাদ ইয়াস জন্মগ্রহণ করলে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে দাওয়াত করে খাবার পরিবেশন করেন। উনারা দোয়া মুবারক করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনারা দোয়া মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক আপনাদের দোয়া মুবারকের উসীলায় আপনাদের বরকত দান করুন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন বললেন, তিনিও কতগুলো দোয়া করবেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যেন আমীন বলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি উনার আওলাদের দ্বীনদারি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের জন্য অনেক দোয়া করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি সেদিনের দোয়ার প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দু‘য়ায়ি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৫)
সুতরাং জন্মদিন পালন বা জন্মোৎসব করা সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের রীতি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রদান করেছেন বলেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম শিশুর জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়েছেন, জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাবার খেয়েছেন এমনকি রোযা ভঙ্গ করে খাবার খেয়েছেন এবং দোয়া করেছেন। তাই জন্মোৎসব পালন করাকে হারাম বলা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু এই বিষয়টি পবিত্র হাদীছ শরীফে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন।

পবিত্র মিলাদুন্নবীর ইতিহাস অতি প্রাচীন |মিলাদুন্নবীর সুচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন | রোজে আজলে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামেকে নিয়ে আল্লাহ এই মিলাদের আয়োজন করেছিলেন | নবী গনের মহাসম্মেলন ডেকে মিলাদুন্নবী আয়োজক স্বয়ং আল্লাহ তিনি নিজে ছিলেন মীরে মাজলিস বা সভাপতি | সকল নবীগন ছিলেন শ্রোতা | ঐ মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের বিলাদত , শান ও মান অন্যান্য নবীগনের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে তাঁর উপর ঈমান আনয়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা |
★কোরআন মজিদের ৩য় পারা সুরা আলে এমরানে ৮১-৮২ নং আয়াতে মধ্যে আল্লাহতায়ালা ঐ মিলাদুন্নবী মাহফিলের কথা উল্লেখ করেছেন | নবীজীর সম্মানে এটাই ছিল প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের উদ্যোগ্ক্তা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা | সুতরাং মিলাদে মাহফিল আনুষ্ঠান হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত বা তরিকা |
ঐ মজলিসে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম ও উপস্থিত ছিলেন | ঐ মজলিসে স্বয়ং আল্লাহ নবীজীর শুধু আবির্ভাব বা মিলাদের উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন | সিরাতুন্নবীর উপর কোন আলোচনা সে দিন হয়নি | সমস্ত নবীগন খোদার দরবারে দন্ডায় মান থেকে মিলাদ শুনেছেন এবং কিয়াম করেছেন | কেননা খোদার দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই ,পরিবেশটি ছিল আদবের | মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ এবং কিয়ম কারীগন ছিলেন আমবিয়ায়ে কেরাম |এই মিলাদ ও কিয়াম কোরআনের ” ইকতেদো উন নস ” দ্বারা প্রমানিত হলো : উল্লেখ্য যে কোরআনে মজিদের “নস” চার প্রকার যথা :
১/ইবারত , ২/দালালত , ৩/ ইশারা ও ৪/ইক্কতিজা | উক্ত চার প্রকার দ্বারাই দলিল সাবেত হয় | ( নুরূল আনওয়ার দেখুন ) নিম্নে উল্লেখিত আয়াতের মধ্যে ইবারতের দ্বারা প্রমানিত হয়েছে অঙ্গীকার / দালালাতের দ্বারা নবীগনের মাহফিল , ইশারার দ্বারা মিলাদের বা আবির্ভাবের এবং ইকতিজার দ্বারা কিয়ামের প্রমানিত হয়েছে | সুতরং মিলাদুন্নবী মহফিল কেয়াম নবীগনের সম্মিলিত সুন্নাত ও ইজামায়ে আম্বিয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত |
★কোরআন মজিদে আলে এমরানের আয়াত ৮১-৮২ উল্লেখ করা হলো :
وَإِذ أَخَذَ اللَّهُ ميثٰقَ النَّبِيّۦنَ لَما ءاتَيتُكُم مِن كِتٰبٍ وَحِكمَةٍ ثُمَّ جاءَكُم رَسولٌ مُصَدِّقٌ لِما مَعَكُم لَتُؤمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ قالَ ءَأَقرَرتُم وَأَخَذتُم عَلىٰ ذٰلِكُم إِصرى قالوا أَقرَرنا قالَ فَاشهَدوا وَأَنا۠ مَعَكُم مِنَ الشّٰهِدينَ
আল্লাহ বলেন ( ৮১ ) ” হে প্রিয় রাসুল ! আপনি স্মরণ করূন ঐ দিনের কথা , যখন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীগন থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন এ কথার উপর যে , যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরন করবো ; তারপর তোমাদের কাছে আমার মহান রাসুল যাবেন এবং তোমাদের নবুয়্যাত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবেন , তখন তোমরা অবশ্য অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তাঁকে সাহায্য করবে ” আল্লাহ বলেন : ” তোমরা কি এ সব কথার উপর অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহন করে নিয়েছো ( তখন ) তাঁরা সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন, আমরা অঙ্গিকার করছি | আল্লাহ বলেন : “তাহলে তোমরা পরস্পর সাক্ষি থাক | আর আমি ও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী রইলাম “|

فَمَن تَوَلّىٰ بَعدَ ذٰلِكَ فَأُولٰئِكَ هُمُ الفٰسِقونَ
( ৮২ ) ” অত:পর যে কোন লোক এই অঙ্গীকার থেকে ফিরে যাবে- সেই নফরমান ” (কাফের ) | ( আলে এমরান আয়াত ৮১/৮২ ) |
উক্ত দুটি আয়াতে মধ্যে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর ব্যাপারে ১০ টি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে । যথা :
১ । এই ঐতিহসিক মিলাদ সম্মেলনের ঘটনাবলীর প্রতি রাসুলে কারিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দৃষ্টি আকর্ষণ | যেহেতু নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সময়ে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন |
২। আল্লাহ কর্তৃক অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামের নিকট থেকে নবীজীর শানে অঙ্গীকার আদায় |
৩। নবীগনের রমরমা রাজত্বকালে এই মহান নবীর আগমন হলে তাঁর উপর ঈমান আনতে হবে |
৪। তাঁর আগমন হবে অন্যান্য নবীগনেরর সত্যতর দলীল স্বরূপ |
৫। ঐ সময়ে নবীগনের নবুয়ত স্থগিত রেখে-নবীজীর উপর ঈমান আনয়ন করতে হবে |
৬। নবীজীকে সর্বাবস্থায় পুর্ন সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার আদায় | জীবনের বিনিময়ে এই সাহায্য হতে হবে নি:শর্তভাবে |
৭। নবীগনের স্বীকৃতি প্রদান |
৮। পরস্পর সাক্ষী হওয়া |
৯। সকলের উপরে আল্লাহ মহাসাক্ষী |
১০। ওয়াদা ভঙ্গের পরিনাম – নাফরমান ও কাফের |
১১. নং দফায় নবীগনের উম্মত তথা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের পরিনতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে | কেননা নবীগগনের অস্বীকারের প্রশ্নই উঠে না | অস্বীকার করেছেন ইয়াহুদী ও নাসারাগন | সুতরাং তারাই কাফের” |
বর্তমানে আমাদের সমাজে একদল রাসুল (সাঃ) বিদ্বেষী একদল মুনাফেক মুসলমানের আবির্ভাব ঘটেছে। কোরআন হাদিসের জ্ঞানশুন্য মুর্খ থেকে শুরু করে লেবাসধারী আলেম উলামা পীর মাসায়াখেরা পর্যন্ত বলে এবং বেদাতের ফতুয়াবাজি করে যে, মহাপবিত্র ঈদুল আজম “ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” নাকি কোরআন হাদিসে নাই ? মুর্খ মুনাফেকদের এই মিথ্যাচারের দাতভাঙ্গা জবাব হিসেবে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ থেকেই পবিত্র মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দলিল আপনাদের খেদমতে উপস্থাপন করছি |
★পবিত্র কুরআনুল কারীমের সুরা আলে ইমরানের ১০৩ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন,
” ﺍﺫﻛﺮﻭﺍ ﻧﻌﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻜﻢ ” অর্থাৎ তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেওয়া হয়েছে তার জিকির কর এবং খুশি কর|

★আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের সুরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন,
” ﻗﺎﻝ ﺑﻔﻀﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﺑﺮﺣﻤﺘﻪ ﻓﺒﺬﺍﻟﻚ
ﻓﻠﻴﻔﺮﺣﻮﺍ ﻫﻮ ﺧﻴﺮﻣﻤﺎ ﻳﺠﻤﻌﻮﻥ
অর্থাৎ হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর দয়া ও রহমতকে কেন্দ্র করে তারা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও
অধিক শ্রেষ্ঠ |
এ পৃথিবীতে যত নেয়ামত রয়েছে বা এসেছে এর চেয়ে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম | আল্লাহর এই নেয়ামত ও অনুগ্রহকে কেন্দ্র করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও আনন্দ উদযাপন করার নির্দেশ স্বয়ং রাব্বুল আলামিন দিয়েছেন যার প্রমান উপরোক্ত পবিত্র কোরআনের আয়াত |অতএব নবীজির শুভাগমনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আর কি হতে পারে ?
★আবার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনের সুরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে দয়াল নবীজির শ্রেষ্টত্ব প্রকাশ করার জন্য ঘোষণা করেন,
” ﻭﻣﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺇﻻ ﺭﺣﻤﺔ ﻟﻠﻌﺎﻟﻤﻴﻦ “
অর্থাৎ নিশ্চয় আমি আপনাকে জগতসমূহের রহমত করেই প্রেরণ করেছি |
★আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদার ১১৪ নং আয়াতে এরশাদ করেন ,
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﺍﻧﺰﻝ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻣﺎﺀﺩﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺗﻜﻮﻥ ﻟﻨﺎ ﻋﻴﺪﺍ ﻻﻭﻟﻨﺎﻭﺍﺧﺮﻧﺎ
অর্থাৎ ঈসা ইবনে মারিয়াম ( আ ) দুয়া করলেন , হে আল্লাহ ! হে আমাদের প্রভু আমাদের প্রতি আকাশ হতে খাদ্য অবতীর্ণ করুন যেন সেটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে ( বর্তমানে আছে ) এবং যারা পরে , সকলের জন্য আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ হতে এক নিদর্শন হয় ( ঈদের দিন ) | আর আপনি আমাদেরকে রিজিক প্রদান করুন বস্তুত আপনিই সর্বোত্তম রিজিক প্রদানকারী |
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে খাদ্য ভর্তি পেলে তা যদি ঈসা ( আঃ ) এর ভাষায় সৃষ্ঠির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আনন্দ উত্সবের কারণ হয় তবে রাহমাতুল্লিল আলামিন নবীজির মত মহান নেয়ামতের শুভাগমনের দিনটি কতই না গুরুত্বপূর্ণ , মর্যাদাপূর্ণ ও আনন্দের তা সহজেই অনুমান করা যায় |
★তাছাড়া সুরা আজহাবের ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন , إِنَّ اللَّهَ وَمَلٰئِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى النَّبِىِّ يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا صَلّوا عَلَيهِ وَسَلِّموا تَسليمًا
নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ও তার ফিরিশ্‌তাগণ দরূদ প্রেরণ করেন ওই অদৃশ্যবক্তা (নবীর) প্রতি, হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ ও খুব সালাম প্রেরণ করো। ” |
অর্থাৎ আল্লাহ আমাদেরকে স্পষ্ট এখানে নির্দেশ করেছেন উনার হাবিবের প্রতি দুরুদ সালাম জানানোর জন্য | আল্লাহর নির্দেশ বিবেচনায় যা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য ফরজ ( অর্থাৎ নবীজিকে তাজিম করা , সম্মান করা , নবীজিকে দিয়ে ভালো মনোভাব পোষণ করা ) |
এখন যারা মিলাদুন্নবীর বিপক্ষে কথা বলে , পাইকারী ফতুয়াবাজি করে এবং কোরআনে নেই বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালায় তারা মূলত পবিত্র
কুরআনকে অস্বীকার করার মাধ্যমে যে কাফেরে পরিনত হয়ে যাচ্ছে সেই খবর কি ওদের আছে ?
অতএব পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের উক্ত আয়াতগুলো থেকে সুস্পষ্ট প্রমান হয়ে যায় ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুশি মনে পালন করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য ঈমানী দায়িত্ব এবং এই দিনের চেয়ে নিয়ামতপূর্ণ দিন আর হতেই পারেনা !

হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) নূর নবী [ﷺ]-এঁর জন্ম প্রসঙ্গে ৯ম হিজরীতে একটি কবিতায় বলেছেনঃ-
- وانت لما ولدت اشرقت الأرض - وضاءت بنورك الأفق
অর্থঃ ”হে প্রিয় রাসূল, আপনি যখন ভূমিষ্ঠ হন, তখন পৃথিবী উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল এবং আপনার নূরের ছটায় চতুর্দিক আলোময় হয়ে গিয়েছিল।” (নশরুত ত্বীব, মাওয়াহিব, বেদায়া ও নেহায়া)

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হাসসান বিন সাবিত (رضي الله عنه) মীলাদুন্নবী নবী [ﷺ] বর্ণনা প্রসঙ্গে একখানি কবিতাগ্রন্থ লিখেছিলেন এবং হুযুর নবী [ﷺ]-কে শুনিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যার নাম রাখা হয়েছিল 'দিওয়ানে হাসসান বিন সাবিত'। তিনি লিখেন,

أنك ولدت مبرا من كل عيب -كأنك خلقت كما تشاء -
وضم الاله اسمه الي اسمه -إذا قال في الخمس المؤذن اشهد -
وشق له من اسمه ليجله فذو العرش محمود ومذا محمد -

অর্থঃ ”হে প্রিয় রাসূল [ﷺ], আপনি সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুটিমুক্ত হয়েই মাসুম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছেন। মনে হয়, যেন আপনার ইচ্ছা অনুযায়ীই আপনার বর্তমান সুরত পয়দা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ আযানের মধ্যে আপন নামের সাথে আপনার নাম সংযোজন করেছেন, যখন মুয়াযযিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানে উচ্চারণ করেন, أشهد أن لا اله الا الله وأنى رسول الله 'আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ', 'আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলাল্লাহ' [ﷺ]। আর আল্লাহ আপন নামের অংশ দিয়ে তাঁর প্রিয় হাবীবের নাম রেখেছেন। আরশের অধিপতি হলেন 'মাহমুদ' এবং ইনি হলেন 'মুহাম্মদ [ﷺ]'।”

মাহমুদ থেকে মুহাম্মদ নামের সৃষ্টি হয়েছে এবং আহাদ থেকে আহমদ নামের সৃষ্টি হয়েছে (আল হাদীস)। মাহমুদ থেকে মুহাম্মদ গঠনে একটি 'و' অক্ষর বাদ দিতে হয় এবং আহাদ থেকে আহমদ গঠনে একটি ”م” অক্ষর যোগ করতে হয়। যোগ বিয়োগের এই প্রক্রিয়াটি সুফী-সাধকগণের নিকট অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থাৎ মাহমুদ ও মুহাম্মদ এবং আহাদ ও আহমদ অতি ঘনিষ্ঠ। আল্লাহর নামটি চার অক্ষরবিশিষ্ট এবং মুহাম্মদ ও আহমদ নামটিও চার অক্ষরবিশিষ্ট। প্রধান ফেরেশতা, প্রধান আসমানী কিতাব, প্রধান সাহাবী, প্রধান মাযহাব ও প্রধান তরীকার সংখ্যা চার চার এবং সৃষ্টির প্রধান উপাদানও চারটি। যথাঃ আব, আতিশ, খাক, বাদ (আগুন, পানি, মাটি, বায়ু)। কালেমা তাইয়েবার তাওহীদ অংশ বারো অক্ষরবিশিষ্ট এবং রিসালাত অংশও বারো অক্ষরবিশিষ্ট। নবী করীম [ﷺ]-এঁর নামকরণ এবং কালেমাতে আল্লাহর সাথে মুহাম্মদ নাম সংযোজন, সবই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। এতে মানুষের কোন হাত নেই। সুতরাং এই পরিকল্পনার তাৎপর্য পূর্ণভাবে উপলব্ধি করাও মানুষের সাধ্যাতীত ব্যাপার।

এখানে উপরোল্লিখিত হযরত আব্বাস ও হযরত হাসসান (رضي الله عنهما ( সাহাবীদ্বয়ের কাব্য রচনার ঘটনাটি ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন ও স্মরণিকা প্রকাশের একটি উত্তম দলীল ও প্রকৃষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে মীলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে প্রতি বৎসর ঈদ ও পবিত্র আনন্দানুষ্ঠান পালনের কথা উল্লেখ করেছেন। সূরা বাক্বারাতে মূসা (عليه السلام) ও বনী ঈসরাইলগণের নীলনদ পার হওয়া এবং প্রতি বৎসর এ উপলক্ষ্যে আশুরার রোযা ও ঈদ পালন করা এবং সূরা মায়েদায় ঈসা (عليه السلام) ও বনী ঈসরাইলের হাওয়ারীগণের জন্য আকাশ থেকে আল্লাহ কর্তৃক যিয়াফত হিসেবে মায়েদা অবতীর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে প্রতি বৎসর ঐ দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করার কথা কোরআনে উল্লেখ আছে (সূরা মায়িদা ১১৪)।

বনী ঈসরাইলের উপর আল্লাহর রহমত নাযিলের স্মরণে যদি প্রতি বৎসর ঐ দিনে ঈদ পালন করা যায়, তাহলে আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন [ﷺ]-এঁর আগমন দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বৎসর ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] পালন করা যাবে না কেন?রাহমাতুল্লিল আলামিন হুজুর পুর নূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই নিজের মিলাদ পালন করেছেন |
★এই প্রসঙ্গে পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে ,
” ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﻗَﺘَﺪَﺓَ ﺍﻻَﻧْﺼﺎَﺭِﻯ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻨﻪُ ﺍَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺱﺀﻝ ﻋَﻦْ ﺻَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡ ﺍﻻِﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻗَﻞَ ﺫَﺍﻙَ ﻳَﻮْﻡٌ ﻭُﻟِﺪْﺕُ ﻓِﻴْﻪِ ﺑُﻌِﺜْﺖُ ﺍَﻭْﺍُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻓِﻴْﻪِ –
অর্থাৎ হজরত আবু কাতাদা ( রা ) হতে বর্ণিত , একজন সাহাবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন ই রাসুলাল্লাহ , ইয়া হাবিবাল্লাহ আমার মাতা পিতা আপনার নূরের পাক কদমে কুরবান হোক | আপনি প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন কেন ? জবাবে সরকারে দুজাহান নূরে মুজাস্সাম হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে , এই দিনে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এই দিনেই আমার উপর নাজিল হয়েছে | (সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ: হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী , ইমাম বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন ,
ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﺴﻬﻴﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﻓﻲ
ﻣﻨﺎﻣﻲ ﺑﻌﺪ ﺣﻮﻝ ﻓﻲ ﺷﺮ ﺣﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻟﻘﻴﺖ ﺑﻌﺪ
ﻛﻢ ﺭﺍﺣﺔ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺛﻮﻳﺒﺔ
ﺑﺸﺮﺕ ﺍﺑﺎ ﻟﻬﺐ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻓﺎﻋﺘﻘﻬﺎ
অর্থাৎ হজরত আব্বাস ( রা ) বর্ণনা করেন , ” আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি | সে আমাকে বলে ভাই আব্বাস আমার মৃত্যুর পর থেকে কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই | কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্থি লাগব করে দেওয়া হয় | এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস ( রা ) বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাগবের কারণ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন নবীজির শুভাগমনে খুশি হয়ে হজরত সুয়াইবা ( রা ) আজাদ করে ছিলেন | (ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী , অম্দাতুল কারী শরহে সহীহুল বুখারী )|
এখন কথা হলো আবু লাহাবের মত কাট্টা কাফের যদি নবীজির একদিনের বেলাদত শরীফে খুশি হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সোমবার তার জাহান্নামের আজাব লাগব হয়ে যায় , আমরা যারা মুমিন মুসলমান তারা জীবনে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কতগুলা বেলাদত শরীফ খুশি মনে পালন করে তার বিনিময়ে কি জান্নাত পেতে পারিনা ?

উক্ত প্রমাণাদিই ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] পালনের স্বপক্ষে জোরালো দলীল।

উল্লেখ্য, মু’মিনের ঈদ মাত্র দু’টি নয়, ঈদ মোট ৯টি। যথাঃ- (১) ঈদে রামাদ্বান, (২) ঈদে কোরবান, (৩) ঈদে আরাফা, (৪) ঈদে জুমআ, (৫) ঈদে শবে বারাআত, (৬) ঈদে শবে ক্বাদর, (৭) ঈদে আশুরা, (৮) ঈদে নুযুলে মায়েদা এবং (৯) ঈদে মীলাদুন্নবী। সবগুলোই কোরআনে, হাদীসে ও বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ আছে।

★এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ অলিয়ে কামেল শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দেসে দেহলভী ( রহ ) বলেন ,
ﻣﻦ ﻋﻈﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﻣﻜﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ
ﺍﻟﻔﺎﺀﺯﻳﻦ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺴﻼﻡ
অর্থাৎ যারা হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারী হবে |
(মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড, খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা) |
অতএব হাদিস শরিফ থেকে মহা পবিত্র ঈদ উল আজম ঈদ ই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈধতা স্পষ্টভাবে প্রমানিত হলো , এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিপক্ষে কথা বলে , বেদাতের ফতুয়া দেয় বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ , মুর্খ নতুবা মুনাফেক রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জাত শত্রু | কেননা অন্ধ আর মূর্খর পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব না আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান মান তথাপি উনার পবিত্রজন্মদিনকে অস্বীকার করতে পারেনা !

ইন্তেকাল দিবস পালন হয় না কেন?
আরেকটি বিষয় প্রশ্ন সাপেক্ষ! তা হচ্ছে, নবী করীম [ﷺ]-এঁর শুধু জন্মতারিখ পালন করা হয় কেন, ইন্তেকাল তো একই তারিখে এবং একই দিনে হয়েছিল? সুতরাং একসাথে জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করাইতো যুক্তিযুক্ত। যেমন অন্যান্য মহামানব ও ওলী-গাউসদের বেলায় মৃত্যু দিবসে ওরস পালন করা হয়ে থাকে।

প্রথম উত্তর হলো, আল্লাহ পাক কোরআন মাজীদে নির্দেশ করেছেন নিয়ামত পেয়ে খুশী ও আনন্দ করার জন্য। নিয়ামত পাওয়া জন্ম উপলক্ষ্যেই হয়। যেমন কোরআনে আছেঃ- قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ

অর্থঃ ”হে নবী! আপনি এ কথা ঘোষনা করে দিন, মুসলমানগণ খোদার ফযল ও রহমত পাওয়ার কারণে যেন নির্মল খুশি ও আনন্দোৎসব করে। এটা তাদের যাবতীয় সঞ্চিত সম্পদ থেকে উত্তম।”
(সূরা ইউনুস, আয়াত নং ৫৮)

তাফসীরে রুহুল মা

১৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৯

শাহ্ আজাহার বলেছেন: উক্ত আয়াতে 'ফযল' ও 'রহমত' অর্থে হযরত মুহাম্মদ [ﷺ]-এঁর নাম উল্লেখ করেছেন। এটা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)'র ব্যাখ্যা। রাসূল [ﷺ]-এঁর একহাজার চারশত নামের মধ্যে 'ফযল', 'রহমত', বরকত', 'নেয়ামত' ও 'নূর' প্রভৃতি অন্যতম গুণবাচক নাম, যা গ্রন্থের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং নেয়ামতপ্রাপ্তি উপলক্ষ্যে শুকরিয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান করাই কোরআনের নির্দেশ। সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে নবীজী'র জন্মোৎসব পালন করার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] ও জশনে জুলুস কোরআনের আলোকেই প্রমাণিত।
দেখুন তাফসীরে রুহুল মায়ানী সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা।)

এ আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন খুশি উদযাপনের দুটি উপকরণ সাব্যস্ত করেছেন। একটি হল (ﻓﻀﻞ) আর অপরটি হল (ﺭﲪﺔ)। এতদুভয়ের মর্ম কী-এর ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত তাফসির বিশারদ আল্লামা মাহমূদ আলুসী তাফসিরে রুহুল মায়ানী, দারু ইহইয়ায়িত্ তুরাসিল আরাবী, লেবানন, বৈরুত, খ. ১০ম, পৃ.১৪১-এ, ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী আদ্ দুরর“ল মনছুর, দার“ল মারিফা, লেবানন, বৈরুত, খ.৪র্থ, পৃ.৩৩০-এ ,ইমাম আবু হাইয়ান আনদালূসী আল বাহরুল মুহীতে আলাইহিমুর রাহমান স্ব-স্ব তাফসীর গ্রন্থে, তাফসিরকারকদের শিরোমণি হযরত ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এখানে (ﻓﻀﻞ) দ্বারা জ্ঞান এবং (ﺭﲪﺔ) দ্বারা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুঝানো উদ্দেশ্য। আল্লামা ইবনু জাওযী (রহ.)বলেন-
ان فضل الله العلم ورحمته محمد صلى الله عليه وسلم رواه الضحاك
অর্থাৎ-‘নিশ্চয় আল্লাহর ‘ফদ্বল’ হল জ্ঞান আর ‘রহমত’ হল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা ইমাম দাহ্হাক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন।
— ইবনু জাওযী, যাদুল মাসীর, আল-মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত, ১৪০৪ হিজরী, খ.৪র্থ, পৃ.৪০।
আল্লামা তাবরিযী উলি¬খিত আয়াতের অর্থ করতে গিয়ে বলেন
فافرحوا بفضل الله عليكم ورحمته لكم بإنزال هذا القرآن وإرسال محمد إليكم فانكم تحصلون بهما نعيما دائما مقيما هو خير لكم من هذه الدنيا الفانية
অর্থাৎ-‘তোমাদের প্রতি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করে এবং কুরআন অবতীর্ণ করে আল্লাহ তায়ালা তোমদের ওপর যে দয়া ও করুণা করেছেন, তাতে তোমরা খুশি উদযাপন কর। কেননা উভয়ের (ফদল ও রহমত) মাধ্যমে নিশ্চয় তোমরা চিরস্থায়ী নিয়ামত অর্জন করবে, যা এ নশ্বর পৃথিবী থেকে তোমাদের জন্য অধিকতর শ্রেয়।
— আল্লামা তিবরিসী, মাজমাউল বয়ান, ইনশরাতে নাসির খসরু, তেহরান, ইরান, তারিখ বিহীন, খ. ৫ম, পৃ. ১৭৭
ইমাম বাক্বির রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রখ্যাত মুফাসসির হযরত ক্বাতাদাহ্, হযরত মুজাহিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা প্রমুখ থেকে বর্ণনা করেন যে (ﷲ (فضلদ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। (আল্লামা তিবরিসী, মাজমাউল বয়ান, ইনশরাতে নাসির খসরু, তেহরান, ইরান, তারিখ বিহীন, খ.৫ম, পৃ. ১৭৮)
উলি¬খিত আয়াতে ‘রহমত’ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা বুঝানো হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেছেন
ﻭﻣﺎ ﺃﺭﺳﻠﻨﺎﻙ ﺇﻻ رحمة للعالمين
‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।
— আল-কুরআন, সূরা: আম্বীয়া, আয়াত নং ১০৭
প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা মাহমূদ আলূসী আলাইহির রাহমাহ প্রমুখের মতে ‘রহমত’ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি নাম। এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। এতে কারো দ্বিমত নেই। তাই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-

ولقد من الله على المؤمنين إذ بعث فيهم رسولا من أنفسهم
অর্থাৎ-‘আল্লাহ মুমিনদের ওপর অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের নিকটি রাসূল প্রেরণ করেছেন।
— সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১৬৪

সুতরাং বুঝা গেল যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য বড় অনুগ্রহ ও নিয়ামত। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ বড় অনুগ্রহ তথা রাসূলুল্লাহকে পাবার ওপর খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহকে পাবার দিন হল ‘মিলাদুন্নবী’ এবং ‘মিলাদুন্নবী’ কে কেন্দ্র করে খুশি উদযাপন করাই হল ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ যা পালন করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন।
দেওবন্দীদের গুরু মাওলভী আশরাফ আলী থানভী সাহেব বলেন যে,
উলি¬খিত আয়াতে ‘রহমত’ ও ‘ফদ্বল’ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামাকে বুঝানো হয়েছে, যার জন্মের ওপর আল্লাহ তায়ালা খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ তিনি সকল নিয়ামতের মূল। তাই তাঁর আগমনে যতই খুশি উদযাপনকরা হোক না কেন তা কমই হবে।
— মৌলভী আশরাফ আলী থানভী, মিলাদুন্নবী, জীলি কুতুবখানা, লাহুর, তারিখবিহীন, পৃ. ১৫৪, ১২০, ১২১

সুরা দোহায় মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
"وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
অর্থ- আল্লাহর তরফ হতে প্রাপ্ত নেয়ামতের খুব চর্চা কর।"

অতএব , এটা প্রমাণ হল যে, হুযুর পাকের শুভাগমন বান্দাদের জন্য শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আর সেই উদ্দ্যেশে খুশি মানানো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর হুকুম পালন করা,আর এর বিরোধিতা বা অমান্য করা মানে প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর হুকুমের অমান্য করা ।

মোদ্দাকথা, আল্লাহ পাক হুযুর [ﷺ]-এঁর আবির্ভাব উপলক্ষ্যে আনন্দোৎসব করার নির্দেশ করেছেন। কিন্তু ইন্তেকাল উপলক্ষ্যে শোক পালন করতে বলেননি। তাই আমরা আল্লাহর নির্দেশ মানি।

দ্বিতীয় উত্তর- নবী করীম [ﷺ] নিজে সোমবারের রোযা রাখার কারণ হিসেবে তাঁর পবিত্র বেলাদাত ও প্রথম ওহী নাযিলের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ বা ইন্তেকাল উপলক্ষ্যে শোক পালন করার কথা উল্লেখ করেন নি। যদি করতেন, তাহলে আমরা তা পালন করতাম। সুতরাং একই দিনে ও একই তারিখে নবী করীম [ﷺ]-এঁর জন্ম এবং ইন্তেকাল হলেও মৃত্যুদিবস পালন করা যাবে না। এটাই কোরআন-হাদীসের শিক্ষা।

তৃতীয় উত্তর- নবী করীম [ﷺ] তো স্বশরীরে হায়াতুন্নবী। হায়াতুন্নবীর আবার মৃত্যুদিবস হয় কী করে? মৃত ব্যক্তির জানাজা হয়, নবীজীর কি জানাজা হয়েছিলো? তিনি নিজে জানাজা না করে দরূদ পড়তে আদেশ দিয়ে গেলেন কেন? কেউ কি জীবিত পিতার মৃত্যুদিবস পালন করে? আসলে ওরা কোনটাই পালনের পক্ষে নয়। শুধু ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] পালনকারীদেরকে ঘায়েল করার লক্ষ্যেই এইসব শয়তানী কূটতর্কের অবতারণা করে থাকে। ওরা শয়তানের প্রতিনিধি। আমরা কোরআন নাযিলের আনন্দোৎসব করি শবে ক্বদরে এবং নবীজী'র আগমনের আনন্দোৎসব পালন করি ১২ ই রবিউল আউয়ালে। আসলে বিদায়াতি আলু হদস, মওদুদি, ওহাবীরা কোনটাই পালনের পক্ষপাতী নয়। আমরা সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতের নির্দেশ পালন করি। বিদায়াতি মওদুদি ওহাবীরা কার নির্দেশে মিলাদুন্নবীতে নাখোশ থাকে???

চতুর্থ উত্তর- ১২ রবিউল আউয়ালে ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনা না করে নবীজীর ওফাত বা মৃত্যুকে উপলক্ষ করে মৃত্যুদিবস কিংবা শোক দিবস পালন করা ও তা করার জন্যে উদবুদ্ধ করা শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম বা নিষেধ। আর কেউ যদি কোরআন পাক ও হাদীস শরীফের নির্দেশকে উপেক্ষা করে ১২ই রবিউল আউয়ালে সওয়াব পাওয়ার উদ্দেশ্যে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনের পরিবর্তে নবীজীর মৃত্যু দিবস কিংবা শোক দিবস পালন করে অবশ্যই সে মন্দ বিদায়াতের প্রচলন করল।

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
ﺍﻣﺮﻧﺎ ﺍﻥ ﻻ ﻧﺤﺪ ﻋﻠﻲ ﻣﻴﺖ ﻓﻮﻕ ﺛﻼﺙ ﺍﻻ ﻟﺰﻭﺝ
অর্থ : আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,
আমরা যেনো কারো ইন্তেকালে তিন দিন পর
আর শোক প্রকাশ না করি। তবে স্বামীর
জন্য স্ত্রী চার মাস দশ দিন শোক পালন
করতে পারবে।”
[বুখারী শরীফ; মুসলিম শরীফ;
মুয়াত্তা মালিক শরীফ; আবু দাউদ শরীফ;
নাসায়ী শরীফ; তিরমিযী শরীফ;
ইবনে মাজাহ শরীফ; দারেমী শরীফ;
মিশকাত শরীফ]

অতএব, শরীয়তের অকাট্য দলীল
দ্বারা প্রমান
হলো কারো পক্ষে নবীজী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ
এর দিন ১২ই রবীউল আওয়াল
শরীফকে শোকের দিন হিসাবে সাব্যস্ত
করা সম্ভব নয়!!

বিলাদাত শরীফ এবং বিছাল শরীফ উভয়ই
কল্যাণময় নেয়ামত প্রাপ্তির দিন। দলীল
** পবিত্র কুর’আন থেকে
১. যেমন, আল্লাহ পাক হযরত
ঈসা আলাইহিস সালাম উনার
ব্যাপারে ইরশাদ করেন ,
ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﻳﻮﻡ ﻭﻟﺪ ﻭ ﻳﻮﻡ ﻳﻤﻮﺕ ﻭﻳﻮﻡ ﻳﺒﻌﺚ ﺣﻴﺎ
অর্থ : উনার প্রতি সালাম (শান্তি), যেদিন
তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন
এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ
করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত
হবেন!”
[সূরা মারইয়ম ১৫]

২. অনুরুপ হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম
সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেটা তিনি নিজেই
বলেন-
ﻭﺍﻟﺴﻠﻢ ﻋﻠﻲ ﻳﻮﻡ ﻭﻟﺪﺕ ﻭﻳﻮﻡ ﺍﻣﻮﺕ ﻭﻳﻮﻡ ﺍﺑﻌﺚ ﺣﻴﺎ
অর্থ : আমার প্রতি সালাম বা শান্তি যেদিন
আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যেদিন
আমি বিছাল শরীফ লাভ করি, যেদিন
পুনুরুত্থিত হবো!”
[সূরা মারইয়াম ৩৩]

** হাদীস শরীফ থেকে
১.
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻮﺩ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺣﻴﺎﺗﻲ ﺧﻴﺮ ﻟﻜﻢ ﻭ ﻣﻤﺎﺗﻲ ﺧﻴﺮ ﻟﻜﻢ
অর্থ : আমার হায়াত-বিছাল (ইন্তেকাল)
সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ
বা উত্তম বা খায়ের বরকতের কারন !””
[কানযুল উম্মাল শরীফ; শিফা শরীফ ২য়
খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা]
উক্ত হাদীস শরীফে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই
বলতেছেন, উনার বিছাল শরীফ এর দিনও
কল্যাণময়!
২. অপর স্থানে এর হিকমত প্রসঙ্গে বণীর্ত হয়েছে
যখন আল্লাহ তায়ালা কোন উম্মতের উপর নিজের খাস করম করতে চান তখন সেই উম্মতের মধ্য থেকে নবীকে বেসাল করিয়ে নেন, এবং তিনি ওই উম্মাতের জন্য শাফায়াতের মাধ্যম হয়ে যান।
—সহিহ মুসলিম শরীফ

আদম আলাইহিস সালাম যে দিন বিছাল
লাভ করেছেন সেই শুক্রবার দিনটিকেই ঈদ
বলা হয়েছে
দলীলঃ-
১.
ﺍﻥ ﻣﻦ ﺍﻓﻀﻞ ﺍﻳﺎﻣﻜﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻴﻪ ﺧﻠﻖ ﺍﺩﻡ ﻭﻓﻴﻪ
ﻗﺒﺾ
অর্থ : তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম
দিন হচ্ছে, জুমুয়ার দিন। এদিনে আদম
আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন
এবং এদিনেই তিনি বিছাল বা ইন্তেকাল
লাভ করেন!
[সহীহ নাসায়ী শরীফ -জুমুয়ার অধ্যায়]
২. অতপর এই জুমুয়ার দিন ঈদের দিনকেই
ঘোষনা করে ইরশাদ হয়-
ﺍﻥ ﻫﺬﺍ ﻳﻮﻡ ﺟﻌﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻴﺪﺍ
অর্থ :এ জুমুয়ার দিন হচ্ছে এমন একটি দিন,
যেদিনকে আল্লাহ পাক ঈদের দিন সাব্যস্ত
করেছেন!”
[সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ; মুসনাদে আহমদ
শরীফ; মিশকাত শরীফ – জুমুয়ার অধ্যায়]
উক্ত হাদীস শরীফ থেকে প্রমানিত
হলো জুমুয়ার দিন আল্লাহ পাক উনার
নবী এবং রসূল হযরত আদম আলাইহিস
সালাম উনার বিছাল শরীফ এর দিন হওয়ার
সত্ত্বেও আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই
সে দিনটিকে উত্তম দিন হিসাবে নিদৃষ্ট
করে দিয়েছেন! এবং স্বয়ং হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি নিজে জুমুয়ার দিনকে ঈদের দিন
বলে ঘোষনা দিয়েছেন!
এখন বিরোধীতাকারীরা কি বলবে যে,
আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছাল শরীফের দিন
ঈদ পালন করতে বলে অন্যায় করেছেন??
তারা কি আল্লাহ পাক এবং তাঁর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও
বেশী বুঝে??
নাউযুবিল্লাহ মিন জালিক!!

উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মাণ হল,
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের
আগমন এবং বিছাল শরীফ উভয়ই
খুশি বা ঈদের দিন! যারা শোকের বা কষ্টের
দিন বলবে তারা কুরআন শরীফ এবং হাদীস
শরীফ এর বিরোধীতা করল।
তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে, নবী আলাইহিস
সালাম গণ আমাদের থেকে পর্দা করছেন
মাত্র। উনারা উনাদের
রওজা মোবারকে বিশ্রাম করছেন
এবং আল্লাহর রিজিক প্রাপ্ত হচ্ছেন।
উনারা রওজায় আল্লাহর জিকির
এবং নামাজ দ্বারা ইবাদাত এ মসগুল থাকেন।
‘হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল
সাঃ ইরশাদ করেছেন-নবীরা কবরে জীবিত।
আর তারা সেখানে নামায পড়েন।‘
[মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৮৮৮,
মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫,
সহীহ কুনুযুস সুন্নাতির নববিয়্যাহ, হাদীস
নং-২২]

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মিলাদুন্নবীতে খুশি হতে বলেন,
ﻗُﻞْ ﺑِﻔَﻀْﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَ ﺑِﺮَﺣْﻤَﺘِﻪِ ﻓَﺒِﺬَﺍﻟِﻚَ ﻓَﻠْﻴَﻔْﺮَﺣُﻮْﺍ ﻫُﻮَﺍ
ﺧَﻯْﺮٌ ﻣِﻤَّﺎ ﻯَﺠْﻤَﻌُﻮْﻥَ
আর্থাৎ- “হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর
“অনুগ্রহ” ও “রহমত” প্রাপ্তিতে তাঁদের
মুমিনদের খুশি উদযাপন করা উচিত
এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল
কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট”।
[সুরা ঈউনূছ,আয়াত ৫৮]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) এই
আয়াতের তাফসীরে বলেন, এখানে আল্লাহ
এর “অনুগ্রহ” দ্বারা ইলমে দ্বীন
এবং “রহমত” দ্বারা নবী কারীম (সাঃ) এর
কথা বুঝানো হয়েছে।
[আদ্দুররুল মনসূর পৃঃ ৩৩০; তাফসীর রুহুল
মা’আনী ১১তম খন্ড, পৃঃ ১৮৩]
সুতরাং আলোচ্য আয়াত এবং তাফসীরের
মাধ্যমে বুঝা গেল, মিলাদুন্নাবী বা রাসূল
(সাঃ) এর দুনিয়ায় শুভাগমনের
কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজে আমাদের
আনন্দ উৎসব করার আদেশ দিয়েছেন। আর
মিলাদুন্নাবী বা রাসূল (সাঃ) এর আগমন
উপলক্ষে আনন্দ-উতসব বা খুশী উদযাপন
করার নামই হল পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাঃ)।
শুধুমাত্র ইবলিশ শয়তান জীবনে নূর
নবীজীর ﷺُ দুনিয়াতে আগমনের সময়টাতেই
খুব বেশি কেঁদেছে বা আফসোস/হা-হুতাশ
করেছে।
ﺃﻥ ﺇﺑﻠﻴﺲ ﺭﻥ ﺃﺭﺑﻊ ﺭﻧﺎﺕ ﺣﻴﻦ ﻟﻌﻦ ﻭﺣﻴﻦ ﺃﻫﺒﻂ
ﻭﺣﻴﻦ ﻭﻟﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺣﻴﻦ
ﺃﻧﺰﻟﺖ ﺍﻟﻔﺎﺗﺤﺔ
১. আল্লাহ যখন তাকে অভিশপ্ত
হিসেবে ঘোষণা দিলেন,
২. যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত
করা হল,
৩. নূর নবীজীর ﷺُ দুনিয়াতে আগমনের সময়
এবং
৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হবার সময়
[সূত্রঃ ইবন কাসির, আল আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ১৬৬]
সুতরাং যারা বলে খুশি প্রকাশ করতে না,
তারা বুঝে বা না বুঝে অথবা জেনে বা না জেনে কাদের
কাতারে পড়ছে আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
আল্লাহ তা’আলা তাদের সুবুদ্ধি দান করুন ।
তাই আখেরী রসূল, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত
শরীফকে নিয়মত মনে করে উক্ত
দিনকে ঈদ পালন করতে হবে ।

এ ছাড়াও রাসুল(দঃ) এর বেসাল বা ওফাত প্রাপ্তি এমনটি নয় যে উম্মতের সাথে উনার সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে গেছে বরং উনার ফায়জানে নবুওত ক্বিয়ামত পযন্ত জারী থাকবে এবং তাঁর বারযাখী জিন্দেগী দুনীয়াবী জিন্দেগী হতে অধিক হায়াতের মালিক । যেমন ভাবে মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বনর্না করেছেন-
এখানে না মওত না ওফাত বরং এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থায় গমন ।

সহী সনদে বর্ণিত হাদীসের আলোকে নবীজীর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ নিয়ে দ্বন্দের নিরসনঃ

আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবীদের নেতা মাওলানা আকরাম খাঁ, ওহাবী ও মউদূদী পন্থীসহ ঈদে মীলাদুন্নবী বিরোধীরা নবী করীম [ﷺ]-এঁর ইনতিকালের তারিখ নিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করে প্রতি বৎসর পেপার পত্রিকায় প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের অবশ্যই জানা থাকার কথা যে, কোন একটি বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা ও মতামত থাকলেও নির্ভরযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত অবশ্যই আছে। অনুসন্ধান করে সেটা বের করা এবং সে অনুযায়ী আমল করাই ঈমানদারের কাজ এবং মানুষকেও ঐ সত্যটি অবগত করানো উচিত। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই সন্দেহের সৃষ্টি করে রাখে - কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী সঠিক ফয়সালাটি তারা বলেনা। তাদের কেউ বলে, রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখে নবী করীম [ﷺ] ইনতিকাল করেছেন। কেউ কেউ বলে, ৮ তারিখ। কেউ বলে, ৯ তারিখ। কেউ বলে, ১০ তারিখ। কিন্তু ১২ই রবিউল আউয়ালের বর্ণনাটি যে সঠিক এবং অধিকাংশের মত, এ কথাটা তারা গোপন রাখে।

তাই আমি পাঠকদের খেদমতে ইবনে কাছির প্রণীত আল-বিদায়া ওয়ান-নেহায়া গ্রন্থের ৫ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৫৪-২৫৬ হতে প্রয়োজনীয় উদ্ধৃতি পেশ করলাম- যেন তারা আপন গুরুর কথা মেনে নেয়। ইমাম আহমত রেযা (رحمة الله عليه)-এর ফতোয়াও এতদসঙ্গে উল্লেখ করা হলো।

ইবনে কাছির (মৃত্যু ৭৭৪ হিজরী) বলেন - “ইবনে ইসহাক ও ওয়াকেদীর বিশুদ্ধ বর্ণনামতে নবী করীম [ﷺ] ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ সোমবার দিন ইনতেকাল করেছেন।” উক্তিটি নিম্নরূপঃ

توفى رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتنتي عشرة ليلة خلت من شهر ربيع الاول فى اليوم الذي قدم فيه المد ينة مها جرا ـ

অর্থঃ- ”নবী করীম [ﷺ] ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে সোমবার দিনে ইনতেকাল করেন- যে দিনে তিনি হিজরত করে মদীনায় প্রবেশ করেছিলেন” (বেদায়া-নেহায়া ৫ম খন্ড ২৫৫ পৃষ্ঠা)। এরপর ইবনে কাসির মন্তব্য করেনঃ-

والمشهور قول ابن اسحاق والوا قدي ورواه الواقدى عن ابن عباس عن عاإشة رضي الله عنها وعن عروة عن عاإشة قالا توفى رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الا ثنين لثنتى عشرة ليلة خلت من ربيع الا ول ورواه ابن اسحاق عن عبد الله بن ابى بكر بن حزم عن ابيه مثله ـ وزاد ودفن ليلة الاربعاء ـ

অর্থঃ- “নবী করীম [ﷺ]-এঁর ইনতেকালের তারিখের বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে ইবনে ইসহাক ও ওয়াকিদীর বর্ণনাই প্রসিদ্ধ ও মশহুর। ওয়াকেদী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং ওরওয়া ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)-এঁর সূত্রে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنها) থেকে রেওয়ায়াত করেন- তাঁরা উভয়ে বলেন- রাসূল কারিম [ﷺ] ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে বেছালপ্রাপ্ত হন। ইবনে ইসহাক আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর ইবনে হজম সূত্রে উপরোক্ত রেওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনায় অতিরিক্ত এই কথাটি ছিল- ’এবং মঙ্গলবার দিবাগত বুধবার রাত্রে নবী করীম [ﷺ]-কে দাফন করা হয়’ (বেদায়া নেহায়া ৫ম খন্ড ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা)।

ইনতিকাল তারিখ নির্ধারণে মতভেদের প্রকৃত কারণঃ
ইবনে কাছির বলেন- নবী করীম [ﷺ]-এঁর ইনতেকালের তারিখ নিয়ে বিভিন্ন মতের কারণ হলো - চন্দ্র দর্শনের হিসাব নিয়ে গোলমাল। কেননা, প্রথম চন্দ্র দর্শনের তারিখটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম হয়। মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফেও কোন কোন সময় ১ দিনের ব্যবধান হয়ে যায়। পূর্বাঞ্চলে ২ দিনের ব্যবধানও লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং মদীনা শরীফের চাঁদের হিসাবটিই এই ক্ষেত্রে মানদন্ড ধরে নিলে কোন সমস্যা থাকে না। সব হিসাব মিলে যাবে। সে মতে ১০ম হিজরীর শেষ মাস যিলহজ্ব চাঁদের ১লা তারিখ মদীনাবাসীগণ শুক্রবার থেকে গণনা করেন। কিন্তু মক্কাবাসীগণ আগের দিন বৃহস্পতিবার থেকে গণনা করে ৯ তারিখ শুক্রবার হজ্বের দিন ধার্য্য করেন - অথচ সেদিন মদীনা শরীফে ছিল, চাঁদের ৮ তারিখ। মক্কা মদীনার দূরত্ব ৫০০ কিঃ মিঃ। সুতারং চন্দ্র দর্শন বেশকম হতে পারে।

সে মতে এ মাস থেকে পূর্ববর্তী ৩ মাস মদীনায় একাধারে ৩০ দিনে পূর্ণ হয়। সে হিসেবে মহররম মাসের ১লা তারিখ মদীনা শরীফে ছিল রবিবার। পরবর্তী সফর মাসের ১লা তারিখ ছিল মঙ্গলবার। তার পরবর্তী মাস রবিউল আউয়ালের ১লা তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার এবং ১২ তারিখ ছিল সোমবার। সুতরাং নবী করীম [ﷺ]-এঁর ইনতেকাল তারিখটি ছিল ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার। (বেদায়া নেহায়া ৫ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৫৬) ওয়াকেদীর ব্যাপারে কারো আপত্তি থাকলেও ইবনে ইছহাকের ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি নেই। সুতরাং উপরের রেওয়াতটি বিশুদ্ধ।

আর একটি সহীহ বর্ণনা দেখুনঃ
عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس أنهما قالا: ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثاني عشر من شهر ربيع الأول ـ وفيه بعث ـ وفيه حاجرـ وفيه مات. وهذا هوا لمشهور (البد اية والنهايةج ٢ صفحة ٢٦)

অর্থঃ- “হযরত জাবের (رضي الله عنه) ও হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে সায়ীদ ইবনে মীনা সূত্রে আফফান বর্ণনা করেছেন- জাবের ও ইবনে আব্বাস (رضي الله عنهما) বলেনঃ ”নবী করীম [ﷺ] হস্তী সনের ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন ভূমিষ্ট হয়েছেন। ঐ ১২ তারিখে এবং ঐ সোমবার দিনেই তিনি নবুয়তের দায়িত্ব লাভ করেছেন, হিজরত করেছেন ও ইনতেকাল করেছেন। এটাই প্রসিদ্ধ বর্ণনা।” (বেদায়া ২য় খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা)।

৭৭৪ হিজরী সনের পূর্বেই ইবনে কাছির তাঁর গ্রন্থে নবী করীম [ﷺ]-এঁর জন্ম ও ইনতিকালের তারিখ এবং দিনক্ষণের সুষ্ঠু সমাধান দেয়ার পরও বর্তমানকালের স্বঘোষিত পন্ডিতগণ বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করায় তাদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। আল্লাহ বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের সুমতি দান করুন। তাদের মতেই ইবনে ইসহাক ও মীনা নির্ভরযোগ্য রাবী। সেজন্যই তাঁদের উদ্ধৃতি পেশ করলাম।

মীলাদুন্নবী যুগে যুগে
মীলাদুন্নবী উৎসব যুগে যুগেঃ
===========
নবী করীম [ﷺ] নবুয়ত পরবর্তীকালে নিজেই সাহাবীদেরকে নিয়ে নিজের মিলাদ পড়েছেন এবং নিজ জীবনী আলোচনা করেছেন। যেমন- হযরত ইরবায ইবনে ছারিয়া (رضي الله عنه) একদিন নবী করীম [ﷺ]-কে তাঁর আদি বৃত্তান্ত বর্ণনা করার জন্য আরয করলে নবী করীম [ﷺ]-এরশাদ করেন- “আমি তখনও নবী ছিলাম- যখন আদম (عليه السلام)-এঁর দেহের উপাদান - মাটি ও পানি পৃথক পৃথক অবস্থায় ছিল। অর্থাৎ আদম সৃষ্টির পূর্বেই আমি নবী হিসেবে মনোনীত ছিলাম। আমাকে হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) দোয়া করে তাঁর বংশে এনেছেন- সুতরাং আমি তাঁর দোয়ার ফসল। হযরত ঈসা (عليه السلام) তাঁর উম্মতের নিকট আমার আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তাঁরা উভয়েই আমার সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত ছিলেন। আমার আম্মা বিবি আমেনা আমার প্রসবকালীন সময়ে যে নূর তাঁর গর্ভ হতে প্রকাশ পেয়ে সুদূর সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত করতে দেখেছিলেন, আমিই সেই নূর” (মিশকাত শরীফ)।

এভাবে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত ওমর (رضي الله عنه), হযরত ওসমান (رضي الله عنه), হযরত আলী (رضي الله عنه) খলিফা চতুষ্টয় নিজ নিজ খেলাফতযুগেও পবিত্র বেলাদত শরীফ উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল করতেন এবং মিলাদের ফযিলত বর্ণনা করতেন বলে মক্কা শরীফের তৎকালীন (৯৭৪) বিজ্ঞ মুজতাহিদ আলেম আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী (رحمة الله عليه) স্বীয় রচিত “আন-নি’মাতুল কোবরা আলাল আলম” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও অন্যান্য সাহাবীগণ নবীজীর জীবদ্দশায় মীলাদুন্নবী মাহফিল করতেন। উদাহরণ স্বরূপ -

১) হযরত আবু আমের আনসারীর মিলাদ মাহফিলঃ
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, আমি একদিন নবী করীম [ﷺ]-এঁর সাথে মদীনাবাসী আবু আমের (رضي الله عنه)'এঁর গৃহে গমন করে দেখতে পেলাম- তিনি তাঁর সন্তানাদি ও আত্মীয়-স্বজনকে একত্রিত করে নবী করীম [ﷺ]-এঁর পবিত্র বেলাদত সম্পর্কিত জন্ম বিবরণী শিক্ষা দিচ্ছেন এবং বলছেন যে, “আজই সেই পবিত্র জন্ম তারিখ।” এই মাহফিল দেখে নবী-করীম [ﷺ] খুশী হয়ে তাঁকে সুসংবাদ দিলেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য (মীলাদের কারণে) রহমতের অসংখ্য দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের সকলের জন্য মাগফিরাত কামনা করছেন” (আল্লামা জালালুদ্দীন সায়ুতির সাবিলূল হুদা ও আল্লামা ইবনে দাহ্ইয়ার আত-তানভীর-৬০৪ হিঃ)।

আরবি হাদীসখানা প্রমাণস্বরূপ হুবহু নিম্নে পেশ করা হলো-
عن أبى الدرداء قال مررت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وهو يعلم وقائع ولادته لأبنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم فقال النبي صلى الله عليه وسلم أن الله فتح عليك أبواب الرحمة وملائكته يستغفرون لكم (سبيل الهدى لجلال الدين سيوطى _ التنوير)

(মীলাদের উপর প্রথম গ্রন্থ রচনাকারী আল্লামা আবুল খাত্তাব ইবনে দেহিয়া (৬৩৩ হি:) ঈদে মীলাদুন্নবীর উপর লিখিত ”আত-তানবীর ফী মাওলিদিল বাশির আন নাযীর” গ্রন্থে এই মতটিকেই গ্রহণ করেছেন। কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মোস্তফা [ﷺ], হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

২। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কর্তৃক মিলাদ মাহফিলঃ
একদিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) নিজগৃহে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি উপস্থিত সাহাবাগণের নিকট নবী করীম [ﷺ]-এঁর পবিত্র বেলাদত সম্পর্কিত ঘটনাবলী বয়ান করছিলেন। শ্রোতামন্ডলী শুনতে শুনতে মীলাদুন্নবীর আনন্দ উপভোগ করছিলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও নবীজীর দরূদ পড়ছিলেন। এমন সময় নবী করীম [ﷺ] সেখানে উপস্থিত হয়ে এরশাদ করলেন, “তোমাদের সকলের প্রতি আমার সুপারিশ ও শাফাআত অবধারিত হয়ে গেল।” (আদ দুররুল মুনাযযাম) সুবহানাল্লাহ! হাদীস শরীফখানা নিম্নে দেওয়া হলো।
عن ابن عباس رضي الله عنهما كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم فيبشرون ويحمدون ويصلون إذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم وقال حلت لكم شفاعتى (الدر المنظم)

{আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতীর বিখ্যাত কিতাব ”সুবুলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা (ﷺ)“ এ শেষের হাদিস দুটি উল্লেখিত হয়েছে। # দুররুল মুনাযযাম - সপ্তম অধ্যায় - প্রথম পরিচ্ছেদ # ইশবাউল কালাম # হাক্বীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী ৩৫৫ পৃষ্ঠা}

৩। হযরত হাসসান (رضي الله عنه)-এঁর কিয়ামসহ মিলাদঃ
সাহাবী কবি হযরত হাসসান বিন সাবিত (رضي الله عنه) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নবী করীম [ﷺ]-এঁর উপস্থিতিতে তাঁর গৌরবগাঁথা পেশ করতেন এবং অন্যান্য সাহাবীগণ সমবেত হয়ে তা শ্রবণ করতেন। (সপ্তম অধ্যায়ে দেখুন)।
কিয়াম করে মিলাদ মাহফিলে নবী করীম [ﷺ]-এঁর প্রশংসামূলক কবিতা ও না’ত পাঠ করা এবং সালাম পেশ করার এটাই বড় দলীল। এরূপ করা সুন্নাত এবং উত্তম বলে মক্কা-মদীনার ৯০ জন উলামা ১২৮৬ হিজরীতে নিম্নোক্ত ফতোয়া দিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রেরণ করেছেন।

أعلم أن ذكر مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجميع مناقبه وحضور سماعه سنة روى أن حسانا يفاخر قياما من رسول الله صلى الله عليه وسلم بحضرته والناس يجتمعون لسماعه -

অর্থঃ- “হে মুসলমানগণ! আপনারা জেনে রাখুন যে, মীলাদুন্নবী [ﷺ]-এঁর আলোচনা ও তাঁর সমস্ত শান-মান বর্ণনা করা এবং ঐ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সবই সুন্নাত। বর্ণিত আছে যে, হযরত হাসসান বিন সাবিত (رضي الله عنه) কিয়াম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ [ﷺ]-এঁর পক্ষে হুযুরের উপস্থিতিতে হুযুর [ﷺ]-এঁর গৌরবগাথা পেশ করতেন, আর সাহাবীগণ তা শুনার জন্য একত্রিত হতেন।” (ফতোয়ায়ে হারামাঈন) একজনের কিয়ামই সকলের জন্য দলীল স্বরূপ।

হযরত হাসসান বিন সাবিত (رضي الله عنه)-এঁর কিয়ামের কাছিদার অংশবিশেষ ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। ঐ কাছিদায় তিনি রাসূল করীম [ﷺ]-এঁর আজন্ম নির্দোষ ও নিষ্পাপ হওয়া এবং হুযুরের ইচ্ছানুযায়ী তাঁর আকৃতি বা সুরতে মুহাম্মাদী সৃষ্টির তত্ত্ব পেশ করেছেন। নবী করীম [ﷺ] তাঁর এই কাসিদা শুনে দোয়া করতেন- “হে আল্লাহ! তুমি জিব্রাইলের মাধ্যমে হাসসানকে সাহায্য কর।” অর্থাৎ আমার পক্ষে আমার প্রশংসা বাক্য সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার তৌফিক দাও। এতে আমার দুশমনগণ ভালভাবে জব্দ হবে।

৪। সুদূর অতীতে মীলাদুন্নবীর চিত্রঃ মাওয়াহিবের বর্ণনা
সুদূর অতীতকালে কিভাবে মুসলমানগণ ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করতেন- তাঁর একটি বিস্তারিত বর্ণনা আল্লামা শাহাবুদ্দীন কাস্তুলানী (رحمة الله عليه) মাওয়াহেবে লাদুনিয়া কিতাবে বিধৃত করেছেন। মীলাদুন্নবী [ﷺ] সমর্থক বিজ্ঞ মোহাক্বেক ওলামায়ে কেরাম এবং ফকিহগণ নিজ নিজ গ্রন্থে দলীল স্বরূপ আল্লামা কাস্তুলানী (رحمة الله عليه)'র এই দুর্লভ প্রমাণাদি লিপিবদ্ধ করেছেন। ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] পালনকারী এবং সমর্থক ওলামা ও নবীপ্রেমিক মুসলমানদের

অবগতির জন্য উক্ত মন্তব্য কোটেশন আকারে অনুবাদসহ নিম্নে পেশ করা হলো।
ولا زال أهل الإسلام يحتفلون بشهر مولده عليه السّلام، ويعملون الولائم، ويتصدقون في لياليه بأنواع الصدقات، ويظهرون السرور، ويزيدون في المبرات، ويعتنون بقراءة مولده الكريم، ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم ومما جرب من جواصه أنه امان فى ذلك العام وبشرى عاجلة بنيل البغية والمرام فرحم الله امرأ اتخذ ليالى شهر مولده المباركة اعيادا (المواهب اللدنية والأنوار المحمدية صفحة ١٩).

অর্থঃ “সমগ্র মুসলিম উম্মাহ সুদূর অতীতকাল থেকে নবী করীম [ﷺ]-এঁর পবিত্র বেলাদত উপলক্ষে মাসব্যাপী সর্বদা মীলাদ-মাহফিল উদযাপন করতেন। যিয়াফত প্রস্তুত করে তারা লোকদের খাওয়াতেন। মাসব্যাপী দিনগুলোতে বিভিন্ন রকমের সদকা-খয়রাত করতেন এবং শরীয়তসম্মত আনন্দ উৎসব করতেন। উত্তম কাজ প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি করতেন। তাঁরা পূর্ণমাস শান শওকতের সাথে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত করতেন। যার বরকতে বরাবরই তাদের উপর আল্লাহর অপার অনুগ্রহ প্রকাশ পেতো। মিলাদ মাহফিলের বৈশিষ্ট সমূহের মধ্যে এটা পরীক্ষিত বিষয় যে, মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানের বরকতে ঐ বৎসর আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা কায়েম থাকে এবং তড়িৎগতিতে তা মনোবাঞ্ছা পূরণের শুভ সংবাদ বহন করে নিয়ে আসে। অতএব- যিনি বা যারা মীলাদুন্নবী মাসের প্রতিটি রাত্রকে ঈদের রাত্রে পরিণত করে রাখবে- তাঁদের উপর আল্লাহর খাস রহমত বর্ষিত হবে।”
(মাওয়াহেবে লাদুনিয়া, মা ছাবাতা বিছছুন্নাহ্)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.