নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙ্গালী জাতীয় চেতনার কবি, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, সাহিত্যিক, সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মতিউর রহমান মল্লিক। কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন অপূর্ব প্রাণশক্তির প্রতীক। তিনি ছিলেন প্রেমের কবি। সে প্রেম প্রকৃতির জন্যে, মানুষের জন্যে, দেশের জন্যে, দেশবাসীর জন্যে, দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার জন্যে, মানবতার জন্যে। তার লেখায় ছিলো আল্লাহর প্রেম, রাসূলের প্রেম। শিশু রচনায় মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন শিশু মনস্তত্ত্ববিদ এবং শিশুবন্ধু। তিনি দীর্ঘদিন ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য সংগঠন বিপরীত উচ্চারণের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ‘বিপরীত উচ্চারণ’ সাহিত্য সংকলনও সম্পাদনা করেছেন তিনি। সম্পাদনা করেছেন মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘কলম’ সাপ্তাহিক সোনার বাংলার। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় সমমনা সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। আশির দশকে প্রকাশ পায় তার কথা, সুর ও স্বকণ্ঠে পরিবেশিত গানের ক্যাসেট 'প্রতীতী এক ও দুই'। ইসলামী গানের শ্রোতাদের নিকট আ্যলবাম দুটি এখনও সমান জনপ্রিয়। সাহিত্যিক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক ১৯৬৫ সালের আজকের দিনে বাগের হাটে জন্মগ্রহণ করেন। ৪৯তম জন্মদিনে কবি মতিউর রহমান মল্লিককে ফুলেল শুভেচ্ছা।
মতিউর রহমান মল্লিক ১৯৫৬ সালের ১লা মার্চ বাগেরহাট জেলার রায়পাড়ার বারুইপাড়া গ্রামের এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুন্সী কায়েম উদ্দিন মল্লিক আর মাতা আছিয়া খাতুন। গ্রামের পাঠশালা থেকে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। এর পর খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা থেকে ফাযিল পরে বাগেরহাট পিসি কলেজ ও সর্বশেষ ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (সাবসিডিয়ারি) এবং এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন একজন হাস্যরসিক। তার মন ছিল নরম। গাল্পিক মন। শিশু মনের অধিকারী এই কবি শিশুদের হাসির জগতে আকর্ষণ করেছেন। তিনি কখনো নির্মল আনন্দ বিতরণ করেছেন, কখনো বা নীতি, উপদেশপূর্ণ ভালো ভালো কথা গীতিকাব্যের মাধ্যমে তুলে ধরে দৃপ্ত করেছেন। যেমনঃ
এইতো সেদিন রাত বারোটায় দেখি
হায়! হায়! হায়! চৌরাস্তায় একী!
পিচিছ ম্যালা, পনরো ষোল আর
যুবকতো নয় নাঙ্গা তলোয়ার
সমান তালে মারছে রঙের গোলা
ঠায় দাঁড়িয়ে হাসছে ক’জন ভোলা।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক গ্রামেই লালিত পালিত এবং গ্রাম্য সৌন্দর্যময়ী প্রকৃতি তাকে মুগ্ধ কবি-আত্মার অধিকারী করেছে। বাংলার প্রাকৃতিক রূপ, গাঁয়ের সরল মানুষের প্রেম-প্রীতি, ঝগড়া-বিসংবাদ, আনন্দ-বিলাপ, ক্রীড়া স্ফূর্তি সবকিছুকে তিনি মমতার দৃষ্টি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে চক্ষুষ্মান করেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এই ঐতিহ্য ধারার অনুসারী। কবি মতিউর রহমান মল্লিকের শিশুতোষ রচনায় তিনি এসব অনুসরণ অনুকরণ করলেও স্বীয় কর্মের প্রভাবে তিনি উত্তরসূরী হয়েও এ পথে এক নব দিগমেত্মর দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শিশু সাহিত্য সাধনায় তিনি লোকজীবনের উপাদান ও ঐতিহ্যের যথার্থ প্রয়োগে ছিলেন কুশলী। পল্লীর প্রচলিত গান, গজল ও লোকসাহিত্য সংগ্রহ করতে করতে তিনি বাংলাসাহিত্যে ইসলামী ধারার গান, কবিতা ইত্যাদি সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। তার লেখা ছড়া-কবিতা যেমনি শিশুদের আনন্দ দিয়েছেন তেমনি তার লেখা অসংখ্য হামদ-নাত এবং আধুনিক ইসলামী গান শ্রোতাদের মন জয় করেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পর বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতকে আধুনিক ভাবধারায় একমাত্র মতিউর রহমান মল্লিকই উজ্জীবিত করছেন। যেমনঃ
পাখি তুই কখন এসে বলে গেলি
মোহাম্মদের নাম,
যে নাম শুনে পৃথিবীকে
ভালো বাসিলাম।
কর্মজীবনে কবি মতিউর রহমান মল্লিক সপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, মাসিক কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের সদস্য সচিব ছিলেন। মতিউর রহমান মল্লিক একাধারে ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, গান লিখে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন করেছেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় সমমনা সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। তিনি দীর্ঘদিন ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য সংগঠন বিপরীত উচ্চারণের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ‘বিপরীত উচ্চারণ’ সাহিত্য সংকলনও সম্পাদনা করেছেন তিনি। সম্পাদনা করেছেন মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘কলম’ সাপ্তাহিক সোনার বাংলার । সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছোট-বড় সবার কবি। তিনি সবার জন্য লিখেছেন। অনেক অনেক লেখা তার। সে তুলনায় প্রকাশিত হয়েছে মাত্র সামান্য কিছু গান-কবিতা। তার অসংখ্য লেখা এখনো অপ্রকাশিত রয়েছে। তার লেখা প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থঃ
১। নীষন্ন পাখির নীড়ে (কবিতাগ্রন্থ), ২। সুর-শিহরণ (ইসলামি গানের বই), ৩। যত গান গেয়েছি (ইসলামি গানের সঙ্কলন), ৪। আবর্তিত তৃণলতা (কবিতাগ্রন্থ), ৫। তোমার ভাষায় তীক্ষ্ন ছোরা (কবিতাগ্রন্থ), ৬। অনবরত বৃক্ষের গান (কবিতাগ্রন্থ), ৭। চিত্রল প্রজাপতি (কবিতাগ্রন্থ), ৮। ঝংকার (ইসলামি গানের বই) ১৯৭৮, ৯। নির্বাচিত প্রবন্ধ (প্রবন্ধের বই), ১০। রঙিন মেঘের পালকি (ছোটদের ছড়ার বই), ১১। প্রতীতি এক (ইসলামি গানের ক্যাসেট), ১২। প্রতীতি দুই (ইসলামি গানের ক্যাসেট), ১৩। প্রাণের ভিতরে প্রাণ (গীতিকাব্য) উল্লেখযোগ্য।
অনুবাদক হিসেবেও তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তার অনুদিত উপন্যাসঃ ১। পাহাড়ি এক লড়াকু (উপন্যাস), ২। মহানায়ক (উপন্যাস)। এছাড়া হযরত আলী (রা.) ও আল্লামা ইকবালের মতো বিশ্বখ্যাত মুসলিম কবিদের কবিতাও অনুবাদ করেছেন তিনি।
সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কবি মতিউর রহমানের প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
১। সাহিত্য পুরস্কার : সবুজ-মিতলী সংঘ, বারুইপাড়া, বাগেরহাট
২। স্বর্ণপদক : জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, ঢাকা
৩। সাহিত্য পদক : কলমসেনা সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা
৪। সাহিত্য পদক : লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদ
৫। সাহিত্য পদক : রাঙামাটি সাহিত্য পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম
৬। সাহিত্য পদক : খানজাহান আলী শিল্পীগোষ্ঠী, বারুইপাড়া, বাগেরহাট
৭। সাহিত্য পদক : সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ
৮। সাহিত্য পুরস্কার : সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ, বাগেরহাট
৯। প্যারিস সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, ফ্রান্স
১০। বায়তুশ শরফ সাহিত্য পুরস্কার : বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম
১১। ইসলামী সংস্কৃতি পুরস্কার : ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রাম
১২। সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য পরিষদ, ফ্রান্স।
১৩। কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার।
মতিউর রহমান মল্লিক দীর্ঘ প্রায় দু’বছর ধরে কিডনিসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। এসময় তিনি ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন। ২০১০ সালের মার্চ মাসে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তাকে ব্যাংকক নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে তার হৃদরোগ ধরা ও শেষে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। চিকিত্সকরা তাকে এক বছর পর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য আবার ব্যাংকক নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিধির অমোঘ বিধানে ২০১০ সালের ১১ আগস্ট বুধবার রাত পৌনে একটা সময় অর্থাৎ ১২ জুলাই ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
গানের পাখি কবি মতিউর রহমান মল্লিক তাঁর গানে বলেছেনঃ
পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়
মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রঙিন পরিচয়।..
জাতীয় চেতনার কবি ও সাহিত্যিক মতিউর রহমান মল্লিকের আজ ৪৯তম জন্মবার্ষিকী। দেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মতিউর রহমান মল্লিকের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
২| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: এইডাতো জামাতের বান্ধা কবি আছিলো। কোবিদ মিয়া আফনে ছুপা জামাতী না কি?
০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭
কোবিদ বলেছেন:
আামি ২০১২ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর সমাজ সংস্কারক বাংলার নবজাগরণের প্রাণপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর জন্ম দিন আজঃ মানবতাবাদী এই শিক্ষাবিদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা শিরোণামে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। তাইলে কী
আমিকি ভারতীয় দালাল?
৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৭
সীমানা ছাড়িয়ে বলেছেন: আসসালাম
গদাম
মা'আসসালাম
০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮
কোবিদ বলেছেন:
ওয়ালাইকুম আস সালাম
আপনার উপরেও বর্ষিত হোক
৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:০৩
ঢাকাবাসী বলেছেন: শুনছি বলে মনে পড়েনা!
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
এম এ কাশেম বলেছেন: আল্লাহ তাহাকে রহমত করুক
এবং জান্নাহ দান করুক,