নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সঙ্গীত জগতের প্রবাদ পুরুষ, সুর সম্রাট মিয়াঁ তানসেনের ৪২৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩



বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীত জগতের সম্রাট কিংবদন্তি সুর স্রষ্টা তানসেন। তার পুরো নাম রামতনু পাণ্ডে। মোঘল সম্রাট আকবর তাকে তানসেন উপাধিতে ভূষিত করেন। তানসেন নামের অর্থ যিনি সঙ্গীত দিয়ে হৃদয় দ্রবীভুত করেন। যিনি চাইলেই গান গেয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারতেন, আবার গান গেয়েই নামাতে পারতেন আকাশ থেকে অঝর ধারার বৃষ্টি। তানসেন শুধু বড় গায়কই ছিলেন না তিনি ছিলেন গীতিকার ও কবি। আধুনিক ধ্রুপদ সঙ্গীতের প্রবক্তা তানসেন কিছু রাগের নবরুপ দিয়েছিলেন সে সকল রাগ তার নামের সাথে আজও জড়িয়ে আছে। যথাঃ মিয়াকী দরবারী কানাড়া, মিয়াকী মল্লার, মিয়াকী তোড়ি। এসব রাগ সেই যুগ হতে আজও সকলের কাছে সমান জনপ্রিয়। কিংবদন্তি এই সঙ্গীত যাদুকরের আজ ৪২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। যদিও তার জন্ম-মৃত্যু সাল নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। মাহবুবুল হক সংকলিত বিশ্বতারিখ অনুযায়ী ১৫৮৯ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুৃবরণ করেন। সঙ্গীত জগতের সম্রাট কিংবদন্তি সুর স্রষ্টা তানসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।



আলৌকিক ক্ষমতাধর, সঙ্গীতের যাদুকর তানসেন আনুমানিক ১৫০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের মধ্য প্রদেশের অন্তর্গত গোয়ালিয়ের বেহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম রামতনু পাণ্ডে। তার বাবা মুকুন্দ পাণ্ডে একজন কবি এবং তিনি ছিলেন বারাণসীর বাসিন্দা। তার কোনো সন্তানই বেঁচে থাকতো না। শোনা যায় মৃতবৎসা স্ত্রীকে তিনি গোয়ালিয়রের মুহাম্মাদ গওস এর মাদুলী গ্রহন করেন যাতে করে তানসেনের জন্ম হয়। শেখ মুহাম্মদ গাউস ষোড়শ শতাব্দীর অন্যতম সুফী দরবেশ ও ফকির ছিলেন। সকল ধর্ম বিশ্বাসের লোকের কাছে তিনি সনামধন্য ছিলেন। ছেলের জন্মে তিনি অতি আনন্দিত হন এবং এই জন্মের পিছনে সাধু গাউসের আশীর্বাদ রয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছেলের নাম রাখেন রামতনু (রামতনু পাণ্ডে)। ছোটবেলা থেকেই রামতনু সঙ্গীত শিক্ষা করতে শুরু করেন। এই শিক্ষায় তার গুরু ছিলেন বৃন্দাবনের তৎকালীন বিখ্যাত সঙ্গীত শিক্ষক হরিদাস স্বামী। মাত্র ১০ বছর বয়সে তার মেধার ক্ষমতা প্রকাশিত হয়।



কথিত আছে ১০ বছর বয়সে রামতনু গাছের আড়াল হতে বাঘের ডাক নকল করে সঙ্গীতাচার্য্য স্বামী হরিদাসকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করে। তার মেধা দেখে স্বামীজি বিস্মিত হন এবং তার বাবাকে বলে নিজের সাথে বৃন্দাবন নিয়ে যান। সেখানেই রামতনু সঙ্গীতের তালিম নেন বেশ কয়েক বছর। এই বৃন্দাবনেই তানসেনের মূল ভিত রচিত হয়। বিভিন্ন রাগের সুষ্ঠু চর্চার মাধ্যমে তিনি বিখ্যাত পণ্ডিত শিল্পীতে পরিণত হন। অনেক বিখ্যাত হওয়ার পরও তাই তিনি সময় পেলেই বৃন্দাবন আসতেন। বৃন্দাবন থেকে বেহাটে ফিরে তানসেন শিব মন্দিরে সঙ্গীত সাধনা শুরু করেন। লোকমুখে শোনা যায়, তার সঙ্গীতে মন্দিরের দেয়াল আন্দোলিত হত। স্থানীয়রা পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, তানসনের সঙ্গীতের কারণেই মন্দিরটি এক দিকে একটু হেলে পড়েছে। তানসেন সম্বন্ধে আরও কিছু অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমনঃ বৃক্ষ ও পাথরকে আন্দোলিত করা, নিজ থেকেই বাতি জ্বালানো এবং যখন বৃষ্টির কোন চিহ্নই নেই তখন বৃষ্টি আনয়ন করা ইত্যাদি। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর রামতনু গওসের কাছে যান আর তার সাথেই বসবাস শুরু করেন। এই সময় গওসের সহায়তায় রাজা মানসিংহের বিধবা স্ত্রীর সভায় যোগ দেন রামতনু। তিনি এসময় ধর্মান্তরীত মুসলমান রমনী প্রেমকুমারী, পরে যার নাম হয় হোসেনী তাকে বিয়ে করেন ও মুসলিম ধর্ম গ্রহন করেন। তার নাম হয় আতা আলি খাঁ। তবে তানসেন ইসলাম গ্রহন করেছিলেন কি না তা নির্ভরযোগ্য ভাবে জানা যায় না।এর পক্ষে ও বিপক্ষে দুইদিকেই প্রচুর মত পাওয়া যায় তানসেনের দুজন স্ত্রী ও পাচ সন্তানের খবর পাওয়া যায় যথাঃ হামির সেন, সুরত সেন, তরঙ্গ সেন ও বিলাস খাঁ নামে ৪ পুত্র এবং স্বরস্বতী দেবী নামে এক কন্যা।



মোঘল সম্রাট আকবরের সভায় নবরত্নের এক রত্ন ছিলেন আতা আলি খাঁ। দিল্লীর সম্রাট আকবর সিংহাসনে বসার সাত বছর পর ১৫৬২ খ্রীস্টাব্দে আতা আলী খাঁ এর কথা জানতে পান ও তাকে দিল্লীর দরবারে অধিষ্ঠিত করেন। সে সময় তিনি রেওয়ার মহারাজা রাজারাম( রামচাঁদ) এর সভা গায়ক ছিলেন। সম্রাট আকবার একদিন আতা আলী খাঁ এর গান শুনে এতই বিমোহিত হয়ে পড়েন যে তার গলা থেকে কন্ঠহার খুলে তাকে পরিয়ে দেন এবং তার নাম দেন তানসেন। তানসেনের সময়ে আকবরের রাজসভায় আরো নামজাদা গায়ক ও সংগীতজ্ঞ ছিলেন। এদের মধ্যে মিয়া খোদাবক্স, জ্ঞান খাঁ, দারিয়া খাঁ, মিয়া মসনদ আলি খাঁ, বাবা রামদাস, সুরদাস, নবাব খাঁ, রাজ বাহাদুরসহ অনেকে।

তৎকালীন সমসাময়িক সঙ্গীতজ্ঞরা তানসেন এর এমন সৌভাগ্যে হিংসায় এক কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা যড়যন্ত্র করে তাকে পুড়ে মারবার জন্য দীপক রাগইতে বলেন। দীপক রাগ এমনি এক শক্তিশালী রাগ যা গাইলে গান থেকে সৃষ্ট আগুনে তানসেনের শরীর ঝলসে যাবার সম্ভাবনা ছিলো। তানসেন তা জানতেন। তাই তিনি প্রথমে রাজী হননি। তিনি জানতেন, দীপক রাগ গাওয়ার পর যখন আগুন জ্বলবে তাকে নেভানোর জন্য প্রয়োজন হবে মেঘমল্লার রাগ। কিন্তু একার পক্ষে তো একসাথে দুটো রাগ গাওয়া সম্ভব নয়। ষড়যন্ত্রকারীও জানতেন, তানসেন কোনদিন এই রাগ পরিবেশন করবেন না তাই তানসেনের বিরোধীপক্ষ সম্রাট আকবরকে সংগীতানুষ্ঠানের সময় অনুরোধ করলেন তানসেনের কণ্ঠে দীপক রাগ শুনতে। সরল বিশ্বাসে সম্রাট আকবর তানসেনকে অনুরোধ করলেন দীপক রাগ গাইতে। বিচক্ষণ তানসেন বিপজ্জনক এই রাগের পরিবেশনার জন্য সময় চেয়ে নিলেন সম্রাটের কাছে। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করার জন্য মেয়ে স্বরস্বতী ও গুরু কন্যাকে মেঘমল্লার গানে তালিম দিতে লাগলেন।



(চিত্রে রাগ মেঘ মল্লার)

নিজ কন্যা স্বরস্বতী ও গুরু কন্যাকে তালিম দেবার পর এক দিন রাজসভায় দীপক রাগ গাওয়ার ঘোষণা দিলেন। তানসেনের এই পূর্ব প্রস্তুতির কথা কেউ জানতেন না। নির্দিষ্ট দিনে রাজসভায় লোকে লোকারণ্য। মাঝখানে বসে আছেন স্বয়ং সম্রাট আকবর যথাসময়ে বসল গানের আসর। শত্রু পক্ষের ধারণা, কিছুক্ষণের মধ্যে তানসেনের ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে। তানসেন শুরু করলেন দীপক রাগ। শুরু হওয়ার পর এক সময় সভাগৃহের সমস্ত মোমবাতিতে আগুন ধরে গেল। অবস্থা দেখে সবাই দিগ্বিদিক ছুটতে লাগলেন। তানসেনের নিজের শরীরেও আগুন জ্বলতে শুরু করলো। তিনি ছুটলেন বাড়ির দিকে। সেখানে নিজ কন্যা ও গুরুকন্যা সমস্বরে মেঘমল্লার গাইছে। আকাশ থেকে নামতে শুরু করেছে বৃষ্টিধারা। সেই বৃষ্টিজল নিভিয়ে দিলো তানসেনের শরীরের জলন্ত আগুন। শোনা যায় এই ঘটনার পর অসুস্থবস্থায় ছয়মাস তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। তিনি যেমন গানের সুর-মূর্ছনায় আগুন ধরাতে পারতেন, আবার মেঘমল্লারে বৃষ্টির ধারাও নামাতে পারতেন।তেমনি দরবারি গান গেয়ে সুস্থ করতে পারতেন দুরারোগ্য রোগীকে। তানসেন গান গেয়ে দিনের আলোকে অন্ধকার করে রাত। রাতের আঁধার দূর করে দিনের আলোয় ভরে দিতে পারতেন চারদিক। শুধু গানে নয়, যন্ত্র সংগীতেও তার অসীম ক্ষমতা। আধুনিক বাদ্যযন্ত্র বীণা। এটা তানসেনেরই আবিষ্কার।



(ভারতের মধ্য প্রদেশের অন্তর্গত গোয়ালিয়র নামক স্থানে অবস্থিত তানসেনের সমাধি)

এই মহান সঙ্গীত সাধক ৮৩ বছর বয়সে ১৫৮৯ সালের ৬ মে আগ্রায় মৃত্যুবরণ করেন। গোয়ালিয়ের কাছে বেহাটে গোয়ালিয়রের মহান সুফি সাধক শেখ মুহাম্মদ গাউসের সমাধি কমপ্লেক্সেই মিয়া তানসেনে সমাধি রচিত হয়েছিল। গাউস এবং তানসেনের দুইটি সমাধি পাশাপাশি রয়েছে। সাধু গাউসের সমাধির ডান পাশে তানসেনের সমাধি অবস্থিত। সমাধিটি আজও অটুট রয়েছে। সমাধিস্থলে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে তানসেন স্মরণে জাতীয় পর্যায়ে সঙ্গীত উৎসব হয়। দেশ, বিদেশের সঙ্গীত শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতানুরাগীরা সেখানে যোগ দেন। আজ কিংবদন্তি এই সঙ্গীত শিল্পীর ৪২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। সঙ্গীতের চিরবিস্ময়, সঙ্গীত সম্রাট তানসেনের মৃত্যুৃবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:৩৯

(একজন নিশাদ) বলেছেন: সুন্দর পোস্ট

০৬ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮

কোবিদ বলেছেন:

ধন্যবাদ নিশাদ
মন্তব্য করার জন্য

২| ০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:২০

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: অসাধারন একটা পোস্ট ! +++

০৬ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:১১

কোবিদ বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ইসতিয়াক অয়ন,
ভালো লাগলো মন্তব্য পেয়ে। ভালো থাকবেন।

৩| ০৬ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪৭

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: সিরিয়াল দেখেছিলাম...আর...বিমোহিত হয়েছিলাম ...যদিও ছিল তা নকল অভিনয়>>>

আসলের যুগে আসিতে পারি নাই ...তাই বড় আফসোস্ হয় !

আরো একজন ছিলেন সানাই বাদক ...............যার সুরে বিমোহিত হতে হয় সবাইকে ...

যার মৃত্যুতেই আকাশ অঝরে কেঁদেছিল সেই দিন।

ধন্যবাদ। আপনাকে অতীতকে স্মরণ করে দেয়ার জন্য।

০৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৫০

কোবিদ বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ কাজী আবু ইউসুফ
সুর সম্রাট মিয়াঁ তানসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা
নিবেদনের জন্য

৪| ০৬ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সত্যিই এক অনন্য, অসাধারন, প্রতিভা আর ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি।

সেই সুর কই? সেই সাধনা? সেই রাগ!!!

হয়তো আছে, আমরাই বা কতটুকু খবর রাখি!!

হয়তো অলক্ষ্যে অবহেলায় বেড়ে উঠছে তানসেনের কোন উত্তরসূরী! কিন্তু বানিজ্যিক মিডিয়া আর সংস্কৃতির চটুল স্রোতের আড়াল, নিভৃতে!!!!!

০৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৫২

কোবিদ বলেছেন:

নষ্ট সাংস্কৃতির আগ্রাসনে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের
হাজার বছরের সংস্কৃতি। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য বিদ্রোহী।

৫| ০৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩৫

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: যিনি চাইলেই গান গেয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারতেন, আবার গান গেয়েই নামাতে পারতেন আকাশ থেকে অঝর ধারার বৃষ্টি।

আসলেই ?

০৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৫২

কোবিদ বলেছেন:
যুগ যুগ ধরে আমরা তাই শুনে আসছি,
এমন এক সময় ছিলো যখন হয়তো
এটা সম্ভব ছিলো।

৬| ০৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫

সোহানী বলেছেন: অনেক কিছুই জানলাম... অনেক ভালো লাগলো যদি ও আমি বিজ্ঞানে বিস্বাসী.. গান দিয়ে আগুন বা বৃস্টি সম্ভব নয় এটি উপকথা বা মিথ বলতে পারেন যা রুপক অর্থে ব্যবহ্রত হয়েছে।

০৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪

কোবিদ বলেছেন:

হয়তো বা, হয়তো না।
তার পরেও তিনি যে
কিংবদন্তি সুর সম্রাট
ছিেলেন তা অস্বীকার
করার উপায় নাই।
ধন্যবাদ সোহানী
মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.