নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিচয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রকাশ কালঃ শান্তিনিকেতন, ১৩ মাঘ, ১৩৪৩
একদিন তরীখানা থেমেছিল এই ঘাটে লেগে
বসন্তের নূতন হাওয়ার বেগে।
তোমরা শুধায়েছিলে মোরে ডাকি,
'পরিচয় কোনো আছে নাকি,
যাবে কোন্খানে?
আমি শুধু বলেছি, কে জানে!
নদীতে লাগিল দোলা, বাঁধনে পড়িল টান
একা বসে গাহিলাম যৌবনের বেদনার গান।
সেই গান শুনি
কুসুমিত তরুতলে তরুণতরুণী
তুলিল অশোক
মোর হাতে দিয়ে তারা কহিল, এ আমাদেরই লোক।
আর কিছু নয়
সে মোর প্রথম পরিচয়
তার পরে জোয়ারের বেলা
সাঙ্গ হল, সাঙ্গ হল তরঙ্গের খেলা;
কোকিলের ক্লান্ত গানে
বিস্মৃত দিনের কথা অকস্মাৎ যেন মনে আনে;
কনকচাঁপার দল পড়ে ঝুরে,
ভেসে যায় দূরে,
ফাল্গুনের উৎসবরাতির
নিমন্ত্রণলিখনপাঁতির
ছিন্ন অংশ তারা
অর্থহারা
ভাটার গভীর টানে
তরীখানা ভেসে যায় সমুদ্রের পানে।
নূতন কালের নব যাত্রী ছেলেমেয়ে
শুধাইছে দূর হতে চেয়ে,
'সন্ধ্যার তারার দিকে
বহিলা চলিছে তরণী কে?
সেতারেতে বাঁধিলাম তার,
গাহিলাম আরবার,
'মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক,
আমি তোমাদেরই লোক,
আর কিছু নয়
এই হোক শেষ পরিচয়।
বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের লোক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, শিল্পকলা ও শিল্প চেতনা নতুনভাবে ও নতুনরূপে বিকশিত হয়েছে। বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তিনি বিশ্বকবি ও কবিগুরু হিসেবে সম্মানিত ও খ্যাত। স্বদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ছাড়িয়ে বিশ্বমাঝে তিনি ছড়িয়ে গেছেন তার জাদুর পরশ। রবীন্দ্রনাথ মানেই গল্প, গান কবিতা, যা সব বাঁধনের সীমা অতিক্রম করে গেছে। পড়লেই মন জুড়িয়ে যায়। শুনলেই মুগ্ধ হয়ে যায় মন। তিনি আছেন গানে, কবিতার আড্ডায়, গল্পের উপমায়। ছবির ক্যানভাসে। তাকে ছাড়া ছোটগল্প, কবিতা, গান কল্পনা করা যায় না। কোথায় নেই তিনি? সবুজের মাঠ পেরিয়ে গোধূলি বিকেল। টাপুর টাপুর বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা। বৃক্ষের সজীবতায়। আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে। সবখানেই তার বিচরণ। তার লেখনীতে উঠে এসেছে প্রত্যাশা, হতাশা, বিচ্ছিন্নতা, বৈরাগ্য। তার কবিতায় প্রেম বিবৃত হয়েছে সার্থকভাবে। উপমা ও চিত্রকল্পে তিনি প্রকৃতিনির্ভর উপাদান জীবনকেন্দ্রিক ছবি তুলে ধরেছেন এবং দেশপ্রেম তার কবিতায় অন্যতম উপাদান।
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তার সারা জীবনের কর্মে সমৃদ্ধ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাহিত্য হচ্ছে তার কবিতা ও গান। অবশ্য উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, ভ্রমণ কাহিনী এবং নাটক রচনায়ও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। কবিতা ও গান বাদ দিলে তার সবচেয়ে প্রভাবশালী রচনা হচ্ছে ছোটগল্প। তাকে বাংলা ভাষায় ছোটগল্প রচনাধারার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার সাহিত্যকর্মের ছান্দসিক, আশাবাদী ও গীতিধর্মী রূপ সহজেই সকলকে আকৃষ্ট করে। সাধারণ মানুষের জীবনই ছিল তার প্রধান উপজীব্য। তাঁর সকল সৃষ্টির মতো ছোটগল্পগুলোও এককথায় অসাধারণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার। আসলে বাংলা ভাষায় ছোটগল্প তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বলাই, শোভা, পোস্টমাস্টার, ছুটি, যোগাযোগ, ঘরে বাইরে, একরাত্রি এমন অসংখ্য ছোটগল্প আজও মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য নাটক ডাকঘর, যেখানে একটি বালক তার দৈনন্দিন আবদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি চায় ও অবশেষে ঘুমিয়ে পড়ে (যেটা তার দৈহিক মৃত্যুকেই নির্দেশ করে)। সার্বজনীন আবেদনমূলক ডাকঘরের এ গল্পে (ইউরোপে যা প্রভূত সাড়া ফেলেছিল) যে মৃত্যু দেখানো হয়েছে, তা রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘জাগতিক স্তুপিকৃত সম্পদ ও প্রচলিত বিশ্বাস’ থেকে ‘আধ্যাত্মিক মুক্তি’।
১৯১৩ সালে তিনি তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রথম এশীয় হিসাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তার সারা জীবনের কর্মে সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তিনি বিশ্বকবি ও কবিগুরু হিসেবে সম্মানিত ও খ্যাত। তিনি বিশ্বের একমাত্র কবি যিনি দু’টি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্যবিধাতা’ উভয়টির রচয়িতাই রবীন্দ্রনাথ। জীবনের শেষ চার বছর রবীন্দ্রনাথের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা ছিল ও তার এই দুরারোগ্য অসুস্থতা মোট দুই বছর বজায় ছিল। ১৯৩৭ সালের শেষ দিকে তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন ও এরপর দীর্ঘ সময় মুমূর্ষু অবস্থায় কোমায় ছিলেন। তিন বছর পর ১৯৪০ সালে আরেকবার ভাল রকমের অসুস্থ হয়ে পড়েন যা থেকে আর আরোগ্য লাভ করতে পারেন নি। এসময় রচিত কবিতাগুলো তার জীবনের অন্যতম প্রধান রচনা হিসেবে খ্যাত। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট তারিখে (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮) জোড়াসাকোর ঠাকুর বাড়ির উপর তলার একটি কক্ষে তিনি প্রাণত্যাগ করেন। যে ঘরে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন।
আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৩ তম জন্মজয়ন্তী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এদিনে তৎকালীণ ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকোতে ধনাঢ্য ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আমাদের লোক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে শুভেচ্ছা।
০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:০২
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ সেলিম ভাই
ভালো লাগলো অনেকদিন পরে
আপনাকে পেয়ে। ভালো থাকবেন
২| ০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪
মোঃ আমিনুল ইসলাম (জীবন) বলেছেন: কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলী।
সোনার তরী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান-কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা–
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা॥
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা—
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা—
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা॥
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে!
দেখে যেন মনে হয়, চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু ধারে—
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে॥
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে?
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও—
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে॥
যত চাও তত লও তরণী-পরে।
আর আছে?— আর নাই, দিয়েছি ভরে॥
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে—
এখন আমারে লহো করুণা ক’রে॥
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহি নু পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী॥
শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
কোবিদ বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ জীবন
৩| ০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বিশ্ব কবির প্রতি
++++++++++++++++++
আজ কবি গুরু রবি ঠাকুরের জন্মদিন
ধরণীর বুকে বাজে তাই আনন্দের বীণ
বাংলা সাহিত্যর প্রবাদ পুরুষ খ্যাত কবি
জয় করল বিশ্ব কি যে মায়াময় ছবি ।
কত রচনা কত গানে গানে জাগরিত প্রান
দিয়েছে মানবের পথের দিশা হয়ে অম্লান
কত যে রূপ মাধুর্য আঁকা তার বধনে
অমিয় সৃষ্টির বানী রচিল মানবের কল্যানে
চিরদিন বেচে থাকবে কবি সাহিত্য আসরে
এস আজ তারে করি গো স্মরণ প্রান ভরে ।
তার জন্ম জয়ন্তিতে কবিতাটি উৎসর্গ
পরিবেশ বন্ধু কবি
০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
কোবিদ বলেছেন:
চমৎকার ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন!
ভালো লাগলো আপনার কাব্যিক
মন্তব্য। ধন্যবাদ
৪| ০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯
সুমাইয়া আলো বলেছেন:
০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ সুমাইয়া আলম
৫| ০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০১
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: আমাদের লোক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৩তম জন্মজয়ন্তীতে শুভেচ্ছা!
০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭
কোবিদ বলেছেন:
দেশ প্রেমিক বাঙালী অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
কবি গুরুর জন্মজয়ন্তিবতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য
৬| ১০ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:২১
রাবার বলেছেন: শ্রদ্ধা
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: রাবীন্দ্রিক শুভেচ্ছা কোবিদ।কবিগুরু সম্পর্কে তথ্যবহুল পোস্ট। সুন্দর ।