নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রখ্যাত মার্কিন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক ওয়াল্ট হুইটম্যানের ১৯৫তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা

৩১ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪



প্রভাবশালী মার্কিন কবিদের অন্যতম মানবতাবাদী কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক এবং মুক্ত ছন্দের জনক ওয়াল্ট হুইটম্যান। ছোট গল্প, কবিতা এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জীবনযাপন নিয়ে লেখার মাধ্যমে অতি সহজেই তিনি সবার হৃদয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন। মানবতাবাদী এই সাহিত্যিক তার রচনায় তুরীয়বাদ আর বাস্তবতাবাদের সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। সারাজীবনই তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন। তার কবিতায় জাতিগোষ্ঠীগুলো সম্পর্কে সমতাবাদী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। মুক্তছন্দের জনক হিসেবে স্বীকৃত পেলেও তার রচনা বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। হুইটম্যানের কবিতার সঙ্গে তার যৌনপ্রবৃত্তির বিষয়টিও বহুল আলোচিত যা সেযুগে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করে। বিশেষত তাঁর কাব্যসংকলন লিভস অফ গ্রাস মাত্রাতিরিক্ত অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়। কবিতা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, সরকারি করণিকবৃত্তি এবং আমেরিকান গৃহযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করেন হুইটম্যান। প্রখ্যাত এই মার্কিন কবি ১৮১৯ সালের আজকের দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ১৯৫তম জন্মবার্ষিকী। মুক্ত ছন্দের জনক, কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক ওয়াল্ট হুইটম্যানের জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।



মানবতাবাদী কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক এবং মুক্তছন্দের জনক ওয়াল্ট হুইটম্যান (Walt Whitman)১৮১৯ সালের ৩১ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টাউন অব হান্টিংটনের ওয়েস্ট হিলেসের লং আইল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। যে পরিবারে ওয়াল্টের জন্ম সে পরিবারটি সতের শতকের গোড়ার দিকে আমেরিকায় অভিবাসি হয়। ১৮২৩ এ হুইটম্যান পরিবার লঙ আইল্যান্ড ছেড়ে ব্রুকলিনে চলে আসে। ওয়াল্টের পিতা ছিলেন একজন কাঠ মিস্ত্রী।ওয়াল্ট ১৮২৫ থেকে ১৮৩০ অবধি পাবলিক স্কুলে পাঠভ্যাস করেন, অতঃপর ৪ বছর কাটে প্রিন্টিং ব্যবসার শিক্ষানবিশ হিসাবে। ১৮৩৫-এ তিনি নিউ ইয়র্কে ভ্রাম্যমান মুদ্রণকরের কাজ শুরু করেন।



কর্মজীবনের প্রথম ভাগে ১৮৪২ সালে তিনি ফ্র্যাঙ্কলিন ইভান্স নামে একটি টেম্পারেন্স উপন্যাস রচনা করেন। ১৮৪২ থেকে ১৮৪৪ পর্যন্ত The Aurora ও The Evening Tattler নামে দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করেন; ১৮৪৫-এ আবার ব্রুকলিনে ফিরে আসেন এবং ১৮৪৬-৪৮ কালে Brooklyn Daily Eagle ও ১৮৪৮-৪৯ কালে Brooklyn Weekly Freeman সম্পাদনার কাজ করেন। ১৮৫০-৫৫, নিজস্ব প্রেস, স্টেশনারী দোকান, গৃহ নির্মান প্রতিস্ঠান চালান। হুইটম্যান নিউ ইয়র্কে অপেরা থিয়েটারের নিয়মিত দর্শক ছিলেন। হোমার, শেক্সপিয়র, কোল্ডরিজ, ডিকিন্স, ওয়াল্টার স্কট ছিল তার প্রিয় পাঠ্য। ১৮৫৫ তে নিজের অর্থে লেখক ও প্রকাশকের নাম বিহিন Leaves of Grass নামে একটা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই কাব্যের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের পাঠযোগ্য এক আমেরিকান মহাকাব্য রচনা। হুইটম্যান সারা জীবন ধরে এই গ্রন্থের সংশোধন ও সংযোজন করেছেন। তার জীবৎ কালে এই কাব্যগ্রন্থটার ১০ টা সংস্করণ বের হয়। ধারণা করা হয়, Leaves of Grass আমেরিকার কাব্য ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও পঠিত কাব্যগ্রন্থ। যদিও কাব্যগ্রন্থটি মাত্রাতিরিক্ত অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়। হুইটম্যানের কবিতার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর যৌনপ্রবৃত্তির বিষয়টিও বহু আলোচিত। জীবনীকারদের মধ্যে তাঁর যৌনতাবোধ নিয়ে তর্ক থাকলেও, তিনি সাধারণত সমকামী বা উভকামী হিসেবে বর্ণিত হন। যদিও কোনো পুরুষের সঙ্গে হুইটম্যানের যৌন অভিজ্ঞতা ছিল কিনা, সে নিয়েও তাঁর জীবনীকারদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। চিরকুমার ওয়াল্ট হুইটম্যান ছিলেন গণতন্ত্রের কবি এবং তাকে আমেরিকার জাতীয় কবি বলা হয়। তিনি তার লেখায় সর্বদা আমেরিকার নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। এ ছাড়া তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়াস চালিয়েছেন। রাজনৈতিক পাঁয়তারায় হুইটম্যানের সাংবাদিকতা পেশার সমাপ্তি ঘটলেও তার কবিতা লেখার সমাপ্তি ঘটেনি। সার্বজনীনতা ছিলো হুইটম্যানের কবিতার মূল সুর। বিশ্ব প্রকৃতির প্রতিটি বস্তু ও ঘটনার মধ্যে তিনি সৌন্দর্য দেখেছেন। গণতান্ত্রিক জীবনধারায় গভীরতম বিশ্বাস নিয়ে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে সবাইকে দেখেছেন মানবিকতার দৃষ্টিতে।



কবির ‘সং অব মাইসেল্ফ’ কবিতাটি গোটা বিশ্বের মানুষের উদ্দেশ্যে একটি দীর্ঘ ভাষণ। সং অব মাইসেলফ কোনো একক সত্তার গান নয়। এটি সমস্ত সত্তার কথা বলে এবং ধীরে ধীরে বিশ্বসত্তায় রূপান্তরিত হওয়ার রহস্য প্রকাশ করে। হুইট ম্যানের ‘আমি’ সব কিছু ধারণ করে। তিনি যখন নিজ সত্তার গান করেন তখন তিনি গোটা মানবতারই গান করেন। কবির কাছে আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক উভয় সত্তার মিলিত রূপই পরিপূর্ণ সত্তা। কবি এই কবিতার মধ্য দিয়ে দাবি করেন যে আত্মসত্তা সর্গীয় সত্তার একটি অংশ মাত্র। তিনি সব কিছুর মাঝে নিজকে দেখতে পান। মোট কথা বিশ্বসত্তার মাঝে তিনি একক সত্তাকে একাকার রূপে দেখতে পান। রচনা শৈলীর বিবেচনায় কবিতাটি প্রচলিত কথা ও ছন্দ থেকে ভিন্ন। যদিও কবিতাটির বিষয়বস্তু অনেক ঊর্ধ্বের কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছার জন্য কবি তার এ কবিতায় সাধারণ ব্যবহৃত শব্দাবলী ব্যবহার করেছেন। তার পদ্যরূপও বেশ সহজ। আত্মসত্তার ধারণা, বিভিন্ন সত্তার সাথে একাত্মীকরণ ও বিশ্বসত্তার সাথে আত্মসত্তার মিলিত হওয়ার অভিযাত্রাই এ কবিতার মূল বিষয়। কবি হুইটম্যানের জন্মের প্রায় হাজার বছর আগে মুসলিম দার্শনিক মনসুর হাল্লাজ আত্মা সম্পর্কে একই মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহর সত্তা একাধারে ‘লাহুত’ [ঐশী] ও ‘নাসুত’ [মানবিক] এ দ্বিবিধ প্রকৃতির অধিকারী। মনসুর হাল্লাজের প্রায় দুইশত বছর পরে মুসলিম দার্শনিক ইবনুল আরবী ‘ওহদাতুল ওজুদ’বা আল্লাহর পরম সত্তার ঐক্যের যে তথ্য দিয়েছেন তাই যেন হুইটম্যানের কণ্ঠে আরাবীর ইন্তিকালের প্রায় সাত শত বছর পরে প্রতিধ্বনিত হয়েছে ‘সং অব মাইসেলফ’ কবিতায়। ওয়াল্ট হুইটম্যানের প্রকাশিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ যথাক্রমেঃ ১৮৫৬ সালে মুক্ত পথের গান (Songs of the Open Road), ১৮৬০ সালে একদা আমি অতিক্রান্ত হয়েছি এক জনাকীর্ণ নগর, (Once I Passed Through a Populous City), ১৮৬১ সালে Beat! Beat! Drums!, ১৮৭১ সালে Passage to India, এবং ১৮৯১ সালে Good-bye My Fancy, ইত্যাদি।



সারাজীবনই হুইটম্যান ছিলেন রাজনীতি সচেতন। তিনি উইলমট প্রোভিসোর সমর্থক ছিলেন এবং এক সময়ে দাসত্বপ্রথা বিলোপের ডাক দিয়েছিলেন হুইটম্যান। যদিও পরে দাসত্ববিলোপবাদী আন্দোলনকে তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর মনে করতে শুরু করেন। হুইটম্যানের কবিতায় জাতিগোষ্ঠীগুলি সম্পর্কে সমতাবাদী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। তাই চেতনা ও যৌনতার গুণকীর্তন কারী হওয়ার পরেও হুইটম্যান একজন মরমী সাধক। তবে হুইটম্যানের মরমীবাদিতা প্রাচ্য জগতের মরমীবাদ থেকে ভিন্ন। হুইটম্যান বিশ্বাস করেন যে একজন মরমীবাদী আত্মার সাথে পরমাত্মার সংযোগ বা সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম। এ চিন্তায় হুইটম্যান একজন সত্যিকার মরমীবাদী। কিন্তু প্রাচ্যের মরমীবাদী বিশ্বাস করে যে আত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে সংযোগ স্থাপন সম্ভব একমাত্র বোধের বিজয় বা কৃচ্ছ্রসাধনা এবং দৈহিক চাহিদা নিবৃত্তির মাধ্যমে। কিন্তু অপরপক্ষে হুইটম্যান বিশ্বাস করেন যে দৈহিক চাদিা বিনাশ না করেও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। মরমীবাদী হুইটম্যান বিশ্বাস করতেন যে সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তার সত্তাই যেন বিশ্বসত্তা। কবি বিশ্বের সমস্ত মানুষ নারী-পুরুষ, হোক না তা ভিন্ন বয়সের, ভিন্নবর্ণের ও বিভিন্ন অঞ্চলের সবাইকে কবি স্বর্গীয় সত্তার সাথে ভালই বাসেন না তিনি মনে করেন যে তিনি তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ।



১৮৯২ সালের ২৬ মার্চ নিউজার্সির ক্যামডেনে পরলোকগমন করেন আমেরিকার মহাকবি ও আলোকিত মানুষ ওয়াল্ট হুইটম্যান। প্রখ্যাত এই মার্কিন কবি ১৮১৯ সালের আজকের দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ১৯৫তম জন্মবার্ষিকী। মুক্ত ছন্দের জনক, কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক ওয়াল্ট হুইটম্যানের জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:১৪

ডি মুন বলেছেন: +++++++

২| ০১ লা জুন, ২০১৪ সকাল ৭:২৯

সকাল হাসান বলেছেন: +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.