নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালি লেখক, সংগীতস্রষ্টা ও ভাষাবিদ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৭২তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা

০১ লা জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৫৮



বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্রজ বাঙালি লেখক, সংগীতস্রষ্টা ও ভাষাবিদ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির অন্যান্য সন্তানদের মতো তিনিও সাহিত্য ও সঙ্গীতানুরাগী ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগদানকারী প্রথম ভারতীয়। ব্রিটিশ ভারতের নারীমুক্তি আন্দোলনেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৮৪২ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতার জোড়াসাকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১৭২তম জন্মবার্ষিকী। সাহিত্যিক, ভাষাবিদ ও সঙ্গীতজ্ঞ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।



(সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহির্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর)

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪২ সালের ১লা জুন ভারতের জোড়সাকোর ঐতিহ্যবাহী ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মিহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি বাড়িতেই সংস্কৃত ও ইংরেজি শিখেছিলেন। হিন্দু স্কুলের ছাত্র হিসাবে সত্যেন্দ্রনাথ ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং প্রথম বিভাগে স্থান অধিকার করে প্রেসিডেন্সি কলেজে (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। ১৮৫৯ সালে তিনি মাত্র ৭ বছর বয়সের জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। সত্যেন্দ্রনাথের সাথে জ্ঞানদানন্দিনীর বিয়ের পর ঠাকুরবাড়িতেই তিনি গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া শেখেন। জ্ঞানদানন্দিনী প্রথম ভারতীয় বাঙালি নারী, যিনি শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন স্বামীর কর্মস্থলে।



(জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো শিক্ষাপ্রাঙ্গন)

১৮৬১ সালে আইসিএস আইন বলে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস চালু হলে ১৮৬২ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে বন্ধু মনমোহন ঘোষের আর্থিক সহয়তায় দু-জনে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ১৮৬৩ সালের জুন মাসে সত্যেন্দ্রনাথ ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে নির্বাচিত হন। এরপর শিক্ষাধীন প্রশিক্ষণ (প্রবেশনারি ট্রেনিং) সমাপ্ত করে ১৮৬৪ সালের নভেম্বর মাসে দেশে ফিরে এসে বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে কর্মে বহাল হন। এরপর বদলি চাকরির সূত্রে তিনি সারা দেশ ভ্রমণ করেন। বাংলার বাইরে বদলির চাকরির সূত্রে সত্যেন্দ্রনাথ অনেকগুলি ভারতীয় ভাষা শেখারও সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বাল গঙ্গাধর তিলকের গীতারহস্য ও তুকারামের অভঙ্গ কবিতাবলি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। বদলির সূত্রে সত্যেন্দ্রনাথ যেখানেই গিয়েছিলেন, সেখানেই ব্রাহ্মসমাজের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমেদাবাদ ও হায়দ্রাবাদ (সিন্ধু প্রদেশ) শহরে ব্রাহ্মসমাজের প্রসারে তাঁর বিশেষ অবদান ছিল। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহারাষ্ট্র অঞ্চলের অগ্রণী সমাজ সংস্কারক ও প্রার্থনা সমাজ নেতৃবর্গের সংস্পর্শে আসেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, কাশীনাথ ত্রিম্বক তেলঙ্গ, রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকর ও নারায়ণ গণেশ চন্দবরকর। কর্মজীবনে ৩০ বছর তিনি আইসিএস পদ অলংকৃত করেছিলেন। ১৮৯৭ সালে মহারাষ্ট্রের সাতারার জজ হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।



অবসর গ্রহণের পর সত্যেন্দ্রনাথ প্রথমে পার্ক স্ট্রিটে (অধুনা মাদার টেরিজা স্মরণি) ও পরে বালিগঞ্জে বসবাস করতে থাকেন। পারিবারিক সদস্যবর্গ ছাড়াও তারকনাথ পালিত, মনমোহন ঘোষ, সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত, বিহারীলাল গুপ্ত প্রমুখ বিশিষ্ট বন্ধুবর্গও এই দুই বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তাঁদের পার্ক স্ট্রিটের বাড়িটি ছিল তাঁদের সাহিত্যিক মজলিস-এর কেন্দ্র। তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু একটি বইতে গ্রন্থিত হয়েছিল। কিন্তু বইটি পরিবারের বাইরে প্রকাশিত হয়নি, এমনকি মুদ্রিতও হয়নি। আলোচনার কয়েকটি বিষয় ছিল বাংলা ভাষা ও বাংলা অক্ষর, কবিতার উপাদান, শৌর্য, পুরুষের প্রেম ও নারীর প্রেম। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনাবলীঃ

১। সুশীলা ও বীরসিংহ (নাটক, ১৮৬৭), ২। বোম্বাই চিত্র (১৮৮৮), ৩। নবরত্নমালা, ৪। স্ত্রীস্বাধীনতা, ৫। বৌদ্ধধর্ম (১৯০১), ৬। আমার বাল্যকথা ও বোম্বাই প্রবাস (১৯১৫), ৭। ভারতবর্ষীয় ইংরেজ (১৯০৮), ৮। রাজা রামমোহন রায় ইত্যাদি।



সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলার স্ত্রী-স্বাধীনতার পথিকৃৎ। সত্যেন্দ্রনাথ বিলেত থেকে ফেরার পর তাঁর কর্মস্থল মহারাষ্ট্রে স্ত্রীকে নিয়ে যাবার জন্যে পিতার অনুমতি প্রার্থনা করলে বাড়িতে ধিক্কার পড়ে যায়। এ ব্যাপারে সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন অটল। শেষ পর্যন্ত পিতার অনুমতি নিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ শুরু করেন যাত্রার আয়োজন। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল, জ্ঞানদানন্দিনী বাইরে যাবেন কী পোশাকে? কেন-না, সেকালের মেয়েরা বাড়িতে একখানা শাড়ি পরে থাকত। এমন বেশে জ্ঞানদানন্দিনী বাইরে যাবেন কি করে? অবশেষে জ্ঞানদানন্দিনীর জন্য তখনকার মত ফরাসি দোকানে অর্ডার দিয়ে বানানো হয় ‘ওরিয়েন্টাল ড্রেস'। পরাও কষ্ট। জ্ঞানদানন্দিনী নিজে তা পরতেই পারলেন না। ঐ পোশাক পরেই তৈরি হলেন। প্রথমবারের এই পোশাক সমস্যা জ্ঞানদানন্দিনীকে বিব্রত করেছিল বলেই পরবর্তী সময়ে তিনি মেয়েদের পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। স্বামীর কর্মস্থল বোম্বাই থাকাকালে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শাড়ি ও জামার নমুনার নানা রকম পরিবর্তন করেন। গুজরাটি মেয়েরা যেভাবে শাড়ি পরে তার কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে ডান কাঁধের বদলে বাম কাঁধে অাঁচল নিয়ে শাড়ি পরার প্রচলিত সে রূপটি আমরা আজকের দিনে বাঙালি হিন্দু-মুসলমান মেয়েদের দেখি তা জ্ঞানদানন্দিনীরই আবিষ্কার। শাড়ির নিচে সায়া, সেমিজ, জামা ব্লাউজ পরার চলটি জ্ঞানদানন্দিনীই অবিভক্ত বাংলাদেশে প্রবর্তন করেছেন।



(দাড়ানো ডান থেকে কাদম্বরী, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্ঞানদানন্দিনী এবং বসা যতিন্দ্রনাথ ঠাকুর)

১৮৭৭ সালে সত্যেন্দ্রনাথ জ্ঞানদানন্দিনীকে এক ইংরেজ দম্পতির সঙ্গে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন। জ্ঞানদানন্দিনী যে স্বামীকে ছাড়াই তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে ইংল্যান্ড পাড়ি দিয়েছিলেন, তা সেকালে ছিল এক দুঃসাহসী কাজ। এরপর সত্যেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথকেও ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথের সেই ছিল প্রথম ইংল্যান্ড ভ্রমণ। ১৮৮০ সালে সকলে ভারতে ফিরে আসেন। জ্ঞানদানন্দিনী বিলেত থেকে ফিরে বিকেলে বেড়াতে বেরোনো এবং নিজের ছেলেমেয়েদের জন্মদিন পালনের মধ্যে দিয়ে ইউরোপীয় প্রথাটি নিজের পরিবারে প্রথম প্রচলন করেন। সেখান থেকে অখন্ড বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে জন্মদিন পালন করার আনুষ্ঠানিক প্রথাটি। জ্ঞানদানন্দিনীর উৎসাহেই প্রথম রবীন্দ্র জন্মোৎসাব পালিত হয় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৪৯ নং পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে। পত্রিকা প্রকাশ, প্রবন্ধ রচনা, রূপকথাকে নাট্যরূপ দেয়া, অভিনয় এসব কাজে জ্ঞানদানন্দিনী পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। শুধুমাত্র জ্ঞানদানন্দিনীই নন, সত্যেন্দ্রনাথের বোনেরাও সামাজিক পরিবর্তনে অংশ নিয়েছিলেন। এজন্য উচ্চ ও মধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দু সমাজের মেয়েদের পর্দাপ্রথার বাইরে বের করে আনার কৃতিত্ব অনেকটাই পেয়ে থাকেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। পিতা দেবেন্দ্রনাথ ও তাঁর সংগঠিত ধর্মমতের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল সত্যেন্দ্রনাথের। প্রথম যৌবনেই তিনি ও মনমোহন ঘোষ কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে কৃষ্ণনগর কলেজে গিয়ে সেখানকার তরুণ সমাজকে ব্রাহ্মসমাজের প্রতি আকৃষ্ট করেন। ইংল্যান্ডে পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি ব্রাহ্মসমাজে উপদেশ প্রদান করতেন। পরবর্তীকালে আমেদাবাদে কর্মরত থাকার সময় তিনি ম্যাক্স মুলরকে ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পাঠান। ম্যাক্সমুলরের স্ত্রী স্বামীর জীবনীগ্রন্থটি রচনা করেছিলেন, সেখানে তিনি এই প্রতিবেদনটি অন্তর্ভুক্ত করেন।



১৯২৩ সালের ৯ জানুয়ারি মৃত্যুৃবারন করেন লেখক, সাহিত্যিক ও প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ তাঁর ১৭২তম জন্মবার্ষিকী। সাহিত্যিক, ভাষাবিদ ও সঙ্গীতজ্ঞ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.