নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আন্তন পাভলোভিচ চেখভ, বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক যিনি আন্তন চেখভ নামে সমাধিক পরিচিত। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এমন নাট্যকারদের মাঝে শেকসপিয়র ও ইবসেনের পাশাপাশি চেখভের নামও উল্লেখ করা হয়। চেখভ তাঁর সাহিত্যিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, যদিও এ থেকে তিনি সামান্যই উপার্জন করতেন। তিনি অধিকাংশ রোগীর চিকিৎসা করতেন বিনামূল্যে। তাই জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান আসতো তাঁর লেখালেখি থেকে। তিনি বলতেনঃ " ডাক্তারী হল আমার বৈধ স্ত্রী আর সাহিত্য হল অবৈধ প্রেম "। নাট্যকার হিসেবে পেশাজীবনে চেখভ চারটি ক্ল্যাসিক রচনা করেন। এগুলো হলো আঙ্কল ভানিয়া, দ্য সীগাল, থ্রি সিস্টারস এবং দ্য চেরি অরচার্ড। এই নাটকগুলিতে কোনো সনাতন বাহ্যিক নাট্যক্রিয়া নেই। তবে নাট্যকার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান থ্রি সিস্টারস, দ্য সীগাল এবং দ্য চেরি অরচার্ড এই তিনটি নাটকের মাধ্যমে। ১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে তিনি সর্বমোট ৬০০টি সাহিত্যকর্ম রচনা ও প্রকাশ করেন। তাঁর ছোটগল্পগুলো লেখক, সমালোচক সমাজে প্রভূত সমাদর অর্জন করেছে। ১৯০৪ সালের আজকের দিনে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ছোটগল্পকার এবং নাট্যকার আন্তন চেখভের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
(তরুণ বয়সে আন্তন চেখভ)
আন্তন পাভলোভিচ চেখভ ১৮৬০ সালের ২৯ জানুয়ারি দক্ষিণ রাশিয়ার আজভ সাগর সংলগ্ন বন্দরনগরী তাগানরোগ নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পাভেল জেগোরোভিচ চেখভ ছিলেন ভোরোনেজ প্রদেশের একজন প্রাক্তন ভূমিদাস কৃষক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর ও রূঢ়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন চেখভের রচিত কপটতাপূর্ণ চরিত্রগুলো তৈরী হয়েছে তাঁর পিতার আদলে। তবে তার মা জেভগেনিয়া জাকোভলেভনা ছিলেন চমৎকার গল্পকথক। চেখভ তাঁর বাবা মায়ের কথা স্মরণ করেছেন এভাবে, “আমরা আমাদের মেধা বাবার কাছ থেকে পেয়েছি, কিন্তু হৃদয় পেয়েছি মা’র কাছ থেকে”। তাগানরোগের বাণিজ্যে গ্রিক ব্যবসায়ীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই চেখভের পিতা চেখভ ও তাঁর ভাই নিকোলাইকে গ্রিক স্কুলে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলটি চলছিল অসফলভাবে এবং দুই বছর পরেই এটি পরিণত হয় তাগানরোগ শরীরচর্চা কেন্দ্রে, যা এখন “চেখভ জিমনেসিয়াম”। স্কুলে চেখভের কৃতিত্ব ছিল গড়পড়তা মানের। পনের বছর বয়সে চেখভকে একই ক্লাসের পুনরাবৃত্তি করতে হয়েছিল, কেননা তিনি একটি গ্রিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। এই ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে চার্চের ধর্মীয় সমবেত সংগীতে এবং তাঁর পিতার দোকানের কাজে চেখভের নিয়মিত অংশগ্রহণ। এছাড়াও কারণ হিসেবে যোগ করা যেতে পারে সমকালীন রাশিয়ার কতৃত্বপূর্ণ শিক্ষা ও শিক্ষাদান পদ্ধতি।
(২৯বছর বয়সে যুবক চেখভ)
১৮৭৬ সালে একটি নতুন বাড়ি তৈরিতে অনেক বেশি পুঁজি বিনিয়োগের পর চেখভের পিতাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কারাবাস এড়াতে তিনি মস্কোতে পালিয়ে যান। তখন চেখভকে নিজের পড়াশোনার ব্যয় নিজেকেই বহন করতে হতো। এই খরচের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি বেশ কয়েকরকমের কাজ করতেন যার মধ্যে একটি ছিল গৃহশিক্ষকতা। ১৮৭৯ সালে চেখভ স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে মস্কোতে তাঁর পরিবারের সাথে যোগ দেন। মস্কোতে চলে আসার অল্প কিছুদিন পরেই চেখভ মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এখানেই তাঁর শিক্ষা গ্রহণ চলে ১৮৭৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৮৮৪ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত। ঐ গ্রীষ্মে চেখভ ফাইনাল পরীক্ষা দেন।
শুরুতে চেখভের লেখক হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিলো না। প্রথমদিকের গল্পগুলো তিনি লিখেছিলেন জীবনযাপন ও পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পরে তাঁর মধ্যে শিল্পীসুলভ উচ্চাকাঙ্ক্ষা জন্ম নিলে ক্রমে তিনি সাহিত্যচর্চার ভিন্ন রীতি ও প্রবণতার উদ্ভাবন করেন যা আধুনিক ছোটগল্পের বিকাশে বিশেষ প্রভাব রাখে। ১৮৯০ সালের শুরুতে বাস্তবেই রাশিয়ার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হয়ে ওঠেন আন্তন পাভলোভিচ চেখভ। তাঁর নামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জুড়ে গিয়েছিল "জীবন মুখী" লেখকের উপাধি। যিনি সমাজের সমস্যার কথা বলেন. ১৮৯০ সালে চেখভ সাখালিন দ্বীপের নির্বাসিত দের শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, সেখানে তিন মাস সময়ের মধ্যে আন্তন পাভলোভিচ ডাক্তার, সমাজ বিদ ও গবেষকের কাজ করে এখানের অসংখ্য বন্দীর কথা লিপিবদ্ধ করেন। জন গণনার কাজ করে প্রায় দশ হাজার লোকের হিসাব করেন। ১৮৯২ সালে চেখভ মস্কোর উপকন্ঠে মেলিখোভো বলে একটি গ্রামের জমিদারী কিনে নেন এবং সেখানে তাঁর সামাজিক কাজকর্ম শুরু করেন। এখানে তিনি নিজের খরচে ডাক্তার খানা, চাষীদের ছেলেমেয়েদের জন্য তিনটি স্কুল খোলেন ও একটি পোস্ট অফিস ও টেলিগ্রাফের জন্য সুপারিশ করে তা বহাল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সময়েই তিনি তাঁর বিখ্যাত রচনাঃ ১। ছয় নম্বর ওয়ার্ড, ২। খোলসের মানুষ, ৩। ইওনীচ, ৪। রাস্প বেরী ও ৫। গ্রামের ইতিকথা নামে ধারাবাহিক লেখা শেষ করেন। সাথে তিন বছর নামের উপন্যাস এবং ১। চাইকা (গাঙচিল), ও ২। ইভান খুড়ো (চাচা ভানিয়া) নামের নাটক লেখেন। ১৮৯৬ সালে তার দ্য সীগাল নাটকটি মঞ্চস্থ হলে সেটি একেবারেই দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। প্রবল বিশৃংখলার মধ্য দিয়ে এর মঞ্চায়ন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে চেখভ থিয়েটার বর্জন করেন। পরে ১৮৯৮ সালে এই নাটকটিই কনস্ট্যান্টিন স্ট্যানিস্লাভস্কির আগ্রহে মস্কো আর্ট থিয়েটারে মঞ্চস্থ হলে তা ব্যাপক প্রশংসা পায়। মস্কো আর্ট থিয়েটার চেখভের আঙ্কল ভানিয়া নাটকটি প্রযোজনাসহ তাঁর শেষ দুটি নাটক, থ্রী সিস্টারস এবং দ্য চেরী অরচার্ড এর প্রথম প্রদর্শনীও করে।
(১৯০১ সালো মধুচন্দ্রিমায় চেখভ এবং ওলগা)
১৮৯৭ সালে চেখভের যক্ষা রোগ বেড়ে যায়, আর তিনি হেমন্ত ও শীত কাল নিতসে ও প্যারিসে কাটিয়ে ১৮৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে কৃষ্ণ সাগর তীরের ইয়ালতা শহরে ফিরে আসেন। সেখানে স্বাস্থ্য বজায় রেখে চেখভের পক্ষে যতটা সম্ভব হয়েছিল, ততটাই তিনি সমাজ সেবা করতে থাকেন। ১৯০১ সালের মে মাসে আন্তন পাভলোভিচ ও মস্কো আর্ট থিয়েটারের অভিনেত্রী ওলগা ক্নিপ্পের বিয়ে করেন। ১৯০৪ সালে তাঁর লেখা আরও একটি নাটকের মঞ্চাভিনয়ের ব্যবস্থা হয়। সে বিখ্যাত নাটকের নাম মঞ্জরী আমের মঞ্জরী (চেরি ফলের বাগান)। এই নাটকটি চেখভের লেখা শেষ শিল্প কর্ম। ১৯০১ সাল থেকেই যক্ষা রোগ তাঁকে কাবু করে ফেলেছিল। ১৯০৪ সালের ১৫ই জুলাই রাতে তাঁর খুব খারাপ লাগতে থাকে, দেখতে আসা ডাক্তারকে তিনি শান্ত গলায় আত্ম বিশ্বাসের সঙ্গে বলেনঃ "আমি মারা যাচ্ছি"। তার পর আস্তে ধীরে শ্যাম্পেন ঢেলে খেয়ে শুয়ে পড়েন ও তাঁর দেহাবসান হয়। মস্কোর নভোদেভিচি কবর খানায় চেখভ কে কবর দেওয়া হয়। বিনয়ী ও নিরহঙ্কার চেখভ তাঁর মরণোত্তর খ্যাতির এই ব্যাপ্তির কথা কল্পনাও করতে পারেননি। যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন, সে বছরে দ্য চেরি অরচার্ডের বিপুল সংবর্ধনা এ কথাই প্রকাশ করে যে রুশ জনগণের মনের কতটা উচ্চাসনে তিনি স্থান করে নিয়েছেন।
আজ ১৫ জুলাই বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক আন্তন পাভলোভিচ চেখভের ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ছোটগল্প লেখক ও নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভের মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:২৬
কোবিদ বলেছেন:
বস নয় দাদা,
আমি ম্যাংগো পাবলিক
২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪০
আরজু মুন জারিন বলেছেন: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ছোটগল্পকার এবং নাট্যকার আন্তন চেখভের ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
কোবিদ কে হৃদয় থেকে শুভেচ্ছা এই পোস্ট টির জন্য। ভাল থাকবেন।
১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:০২
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ জারিণ আপু
শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:১১
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আরে আপনারে না! নাট্যকার আন্তন চেখভের কথা বললাম।
আপনাকেও ধন্যবাদ, উনার ব্যাপারে লেখার জন্য।
১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:০৩
কোবিদ বলেছেন:
ও আচ্ছা !!! আমি ভাবলাম ক্যামতে কী !!
৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৬
জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন:
চেখভ স্যাররে অতিক্রম করতে পারলেই হওয়া যাবে আসল ছোটগল্পকার। কিন্তু ক্যামনে তা সম্ভব? ভদ্রলোকের গল্পগুলা তো এই কালেও আধুনিক।
বসরে স্যালুট!
আপনেরে ধন্যবাদ পোস্টের জন্য।
১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:০৪
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ সিদ্দিকী ভাই
স্বাগতম আমার ব্লগে।
শুভেচ্ছা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৪
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: বস পাবলিক!!!!!!