নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইন্দিরা নেহেরু ও ফিরোজ গান্ধীর জ্যৈষ্ঠ পুত্র ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির সাবেক সভাপতি এবং ভারতের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কংগ্রেস আর গান্ধী পরিবারের নাম। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী প্রত্যেকেই ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রেখেছেন অবিস্মরণীয় ভূমিকা। গান্ধী পরিবারের উজ্জল নক্ষত্র রাজীব গান্ধী তাদের অন্যতম। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর মায়ের মৃত্যুর দিন তিনি মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ভারতের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীরূপে কার্যভার গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৯ সালের ২রা ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের পর পদত্যাগ করার আগে পর্যন্ত তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৯১ সাল পর্যন্ত রাজীব গান্ধী ছিলেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। ১৯৪৪ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। আজ রাজীব গান্ধীর ৭০তম জন্মবার্ষিকী। ভারতের সর্বকনিষ্ঠ রাস্ট্রপতি রাজীব গান্ধীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
(মাতা প্রধানন্ত্রী ইন্দিরা নেহেরুর সাথে সঞ্জয় ও রাজীব (ডানে )
রাজীব গান্ধী ১৯৪৪ সালের ২০ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের বোম্বাই (অধুনা মুম্বাই) শহরে বিশিষ্ট রাজনীতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফিরোজ গান্ধী এবং মাতা ইন্দিরা নেহেরু। ইংলান্ডে থাকাকালীন ইন্দিরা এবং ফিরোজ পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং ফিরোজের পার্সি ধর্মাবলম্বী হবার কারণে প্রাথমিক ভাবে জওহরলাল নেহরুর তরফ থেকে আপত্তি থাকা স্বত্তেও ১৯৪২ সালের মার্চে তাঁরা বিবাহ করেন। ১৯৪৪ সালে যখন তাঁর পিতা, মাতা উভয়েই প্রায়ই ইংরেজের কারারুদ্ধ হচ্ছিলেন তখন তাঁর জন্ম হয়। ১৯৬০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হযে ফিরোজের মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যু কালের মধ্যেই গান্ধী, প্রাথমিক ভাবে বেসরকারী আবাসিক বিদ্যালয় ওয়েলহাম বয়'স স্কুল, ও পরে দ্য দুন স্কুলে চলে যান। 'এ লেভেল', এই স্তরের পড়া-শোনার জন্য ১৯৯১ সালে তাঁকে লন্ডনে পাঠানো হয়। ১৯৬২ সালে তিনি কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রাজীব কেমব্রিজে ছিলেন এবং কোনো ডিগ্রী ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় পরিত্যাগ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পান এবং এক বছর পরেই আবার তিনি কোনো ডিগ্রী ছাড়াই ইম্পেরিয়াল কলেজ পরিত্যাগ করেন।
(স্ত্রী সোনিয়া মাইনের সাথে রাজীব গান্ধী)
১৯৬৫ সালে কেমব্রিজের ভার্সিটি রেস্তোরায় সোনিয়া মাইনের সঙ্গে পরিচয় হয় রাজীব গান্ধীর। সোনিয়া তখন লেন্নোক্স স্কুল অফ ল্যাঙ্গুয়েজে ইংরাজি নিয়ে পড়া-শোনা করছিলেন এবং ভার্সিটি রেস্তোরায় একজন সহকারিনী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মাইন এর পরিবার তাদের বিয়েতে রাজি না হওয়ায় সো্নিয়া মাইন গান্ধীর সঙ্গে ভারত বর্ষে চলে আসেন এবং ১৯৬৮ সালে তাঁদের বিবাহ হয়। ১৯৬৭ সালে তাঁর মা যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখন রাজীব ইন্ডিয়ান এয়ার্লাইন্সে একজন পেশাদার বিমানচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭০ সালে তাঁর স্ত্রী তাঁদের প্রথম সন্তান রাহুল গান্ধীর এবং ১৯৭২ সালে তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জন্ম দেন। রাজীব গান্ধি কখনই রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি এবং নিয়মিত ভাবে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নিবাসে তাঁর মায়ের সঙ্গেও বসবাস করতেন না। গান্ধী রাজনীতিতে নিরুত্সাহী হলেও, তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা সঞ্জয় তাঁদের মায়ের একজন নিকট পরামর্শদাতা হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৮০ সালে সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর তাঁর মা এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টির রাজনীতিকদের দ্বারা তাঁকে রাজনীতিতে প্রবেশ করার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করা হয়। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী উভয়েই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং প্রকাশ্যেই জানান যে তিনি তাঁর ভাইয়ের আসন থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন না। তা সত্বেও, ঘটনাচক্রে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারীতে তাঁর ভাইয়ের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের আমেথি লোকসভা (সংসদীয়) কেন্দ্র থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দী লোকদল নেতা শরদ যাদব কে ২০০,০০০ এর ও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়ে গান্ধী তাঁর মায়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উপদেষ্টা হয়ে ওঠেন এবং শীঘ্রই তিনি 'যুবো কংগ্রেস' কংগ্রেস পার্টির যুবো শাখার সভাপতি মনোনীত হন।
১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর যেদিন ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দুই শিখ দেহরক্ষীদের দ্বারা নিহত হন সেদিন রাজীব গান্ধী পশ্চিম বঙ্গে ছিলেন। তাঁর মায়ের হত্যা-কান্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উচ্চ পর্যায়ের কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ এমনকি রাষ্ট্রপতি জৈল সিং ও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য চাপ দিতে থাকেন। বাধ্য হয়ে তিনি মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ভারতের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীরূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। গান্ধী ভারতের সমাজতান্ত্রিক নীতি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বন্ধুত্যপুর্ণ সম্পর্কের কারণে দীর্ঘ সংকটাদীর্ণ ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি এবং অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার প্রসার সাধন করেন। ১৯৮৮ সালে রাজীব গান্ধী প্রশাসন মালদ্বীপের সামরিক অভ্যুথান ব্যর্থ করে দিয়ে পিপলস লিবারেশন ওর্গনাইজেশোন অফ তামিল ইলমের (PLOTE) মতো অন্য একটি জঙ্গি তামিল গোষ্ঠীর সঙ্গেও শত্রুতা সৃষ্টি করেছিল। এই শত্রুতার জের ধরে ১৯৯১ সালের ২১ মে শুধুমাত্র বিরোধের জের ধরে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের শ্রীপেরামবুদুরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় রাজীব গান্ধীকে। পতন হয় একটি নক্ষত্রের। ভারতের ইতিহাসে এই হত্যাকাণ্ড রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। বোমা বিস্ফোরণে রাজীব ছাড়াও আরও ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন। এই হত্যাকান্ডটি একজন স্থানীয় চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরায় ধরা হয়ে থাকে যেটি পরে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া যায়। চিত্রগ্রাহকও ওই বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় কিন্তু ক্যামেরা টি অক্ষত ছিল।
রাজীব হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থলে রাজীব গান্ধী স্মৃতি স্তম্ভ গড়ে তলা হয়েছে এবং এই ছোট শিল্প নগরীটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। তাঁর অন্তেষ্ঠী স্থানটিতে বীর ভূমি নামে একটি স্মারক স্তম্ভ গঠিত হয়ছে। হায়দ্রাবাদে নির্মিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি রাজীব গান্ধীর নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে এবং সেটির উদ্বোধন করেন UPA এর সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। আজ ২০ আগস্ট রাজীব গান্ধীর ৭০তম জন্মবার্ষিকী। ভারতের সর্বকনিষ্ঠ রাস্ট্রপতি গান্ধীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
২০ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১০
কোবিদ বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ ইমতিয়াজ মন্তব্যের জন্য
ভালো থাকবেন, শুভকানা............
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২৬
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: শুব জন্মদিন রাজীব গান্ধী, গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাস আরো সমৃদ্ধ হউক।