নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I am man of nothing ✌

kolpobazz

✌ কল্পলোকের কল্পবাজ https://www.facebook.com/kolpobazz

kolpobazz › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনেক দিন চিঠি লিখিনা, আজ লিখলাম। চিঠির পাঠক কি আজকাল আছে?

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৯

(এই চিঠি একান্তই কাল্পনিক, কারো সাথে মিলে গেলে তার জন্য আমি দায়ী নই। আসলে ঘটনার মিল তো থাকতেই পারে, তাইনা?)



......(নাম)......,

যেখানে জন্মের আড়ি, বহু বছর ধরে কথা হয়না, দেখা হয়না; সেখানে কেন জানি চিঠি লেখার কথা হুট করেই মাথায় এলো। ঠিক হুট করেই বলা যাবেনা, তোমার ইমেইল পেয়েই মনে হলো।



তুমি আমাকে বুঝো, নিজে না বুঝে যা করে ফেলি তাও বুঝো, আর এত বেশী বুঝো বলেই হয়তো তোমার আমার মধ্যে আজ এত বাজে সম্পর্ক। তুমি আজ জানতে চেয়েছো তোমার জন্মদিনে যে উইশ করলাম, তা আমার মনে আছে কিনা! মনে আমার ঠিকই আছে কিন্তু বহু বছর ধরে করা হয়না, কারন তুমিও আমার জন্ম দিনে উইশ করনা। ছোট একটা গল্প মনে পড়ে গেল। এক স্কুলে দুই জন বিপরীত ধর্মী শিক্ষক ছিলেন। একজন খালি ঘুমান আর একজন ক্লাশ নিতে নিতে খেটে মরেণ। অলশ শিক্ষক একদিন ক্লাশে ঘুমাচ্ছেন। ক্লাশে পরিদর্শক ঢুকে দেখেন এই অবস্থা! যখন টিচারকে ডেকে তুল্লেন তখন ঘুম ভেঙ্গেই অলশ শিক্ষক বুদ্ধি করে বল্লেন "একেই বলে ঘুম!"। পরিদর্শক চিন্তা করলেন, কত ভালো শিক্ষক! যে গভীর ঘুমের ভাণ করেই বুঝাচ্ছেন কাকে ঘুম বলে। কাজেকাজেই, ঐ শিক্ষকের পদোন্নতি করে দিলেন। খেটে মরা শিক্ষক ভাবলেন, আমি খেটে মরি তবু আমার কিছু হয়না! একদিন ক্লাশে তিনি পড়াচ্ছেন, এমন সময় দেখলেন একজন পরিদর্শক আসছেন। তিনি তখন ঘুমের ভাণ করলেন, পরিদর্শক এসে ঘুমন্ত শিক্ষককে দেখে তাঁকে সাসপেন্ড করে চলে গেলেন। ঐ খেটে খাওয়া শিক্ষক মশাই এর ভাগ্য আমার কপালের ভিতরে আষ্টে পিষ্টে বাধা। তাই অভিযোগ করার শত সহস্র কারণ থাকলেও তা উপস্থাপন করতে আমি পারিনা, আর যখন উপস্থাপন করি তখন তার ফলাফলটা বড় বিশ্রী দাড়ায়। অতএব অভিযুক্ত হয়েই গেলাম সারাটা জীবন।



"এই আমি কেন অচেনা হলেম.....আমার সবটুকু অপরাধ তোমার কাছে..." এই টাইপের একটা গান আছেনা আইয়ুব বাচ্চুর? তোমার ক্ষেত্রেও আমার হয়েছে সেই দশা। পরিবারের আর কারো সাথেতো এতটা ঘনিষ্টতা ছিলোনা, যতটা তোমার সাথে ছিলো। এই কারনেই হয়ত আমার সব কয়টা দোষ তোমাকে ছুঁয়ে গেছে। আজ বহু বছর পর কেন জানিনা একমাত্র আমাকেই দোষী করতে ইচ্ছা হচ্ছে না, এর কিছুটা দায়ভার আমার বয়স এবং তোমাকেও দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। এজন্য আবার তুমি মন খারাপ করোনা যেন!



মাস দুই এর মত হয়ে যাচ্ছে, আমি আমার জীবনের সবচাইতে কষ্টের দিনগুলো কাটাচ্ছি। আজ তোমার ইমেইল পড়ে মনে হলো তুমি একটা কিছু আন্দাজ করেছো, কিন্তু অনেকদিন ধরে হয়ত এই আমার সাথে তোমার কোন যোগাযোগ নেই বলেই তুমি এতটা ভিন্ন ধরণের আন্দার করতে পেরেছো! তোমার সাথে আমার এত তিক্ত সম্পর্ক, তারপরেও এর ভাজে ভাজে রয়ে গেছে সেইসব দিনগুলো যখন আমরা দু'জন মিলে খুব দুঃসময় গুলো একসাথে ভাগাভাগি করেছি। অতএব যা আন্দাজ করেছো তা ভেবে তুমি কতটা কষ্ট পেয়েছো তা কিছুটা অনুমান করতে পেরেছি। এবং আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি তা হয়ত তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।



ভেবেছিলাম আমার এই বিপদের কথা/ কষ্টের কথা আমি কাওকে কোনদিনও বলবোনা, দূর হতে দূরে যদি চলে যাই, যদি পড়াশুনা নিয়ে আবার ব্যাস্ত হয়ে পড়ি তাহলে আমি সব ভুলে যাবো। কিন্তু সরাসরি না হলেও তোমাকে আজ এর আভাস আমাকে দিতেই হবে।



অনার্স শেষ করার প্রায় বছর খানেক আগে থেকেই তোমার সাথে আমার কথাবার্তা চিরদিনের মত বন্ধ হয়েছিলো। তাই তুমি জানোনা কি পরিমান যুদ্ধ আমি করেছি এই পর্যায়ে এসে দাড়াতে। কাজের চাপ, চ্যালেঞ্জ, নেশা আমাকে রোবট করে দিয়েছিলো। চাকুরী ক্ষেত্রে যেখানেই গিয়েছি, আমি দেখায়ে দিয়েছি মেধা আর অধ্যবসায় এর সমন্বয়ে কত কী সম্ভব! কিন্তু মাস দু'এক আগে আমি হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম, এক সময় আমি কবিতা লিখতাম! শুধু তাই নয়, খুব করে খেয়াল করে দেখলাম, মন-মহলের এক কোনে একজন শিল্পীও আছেন! তিনি আমার অবহেলা পেয়ে রং, তুলি আর ক্যানভাস নিয়ে বড় অভিমানে এক কোনে বসে আছেন! আমার কবিতা লিখতে ইচ্ছা হলো, লিখতেও শুরু করলাম আগের মত! আমার ছবি আঁকতে ইচ্ছা হলো, আমি কিছুতেই রং, তুলি নিয়ে মনের চিত্র ফুটায়ে তুলতে পারলামনা! আমি চারুকলায় কয়েকদিন গেলাম, আমি আস্তে আস্তে করে একটা বিশাল ঘোরের মধ্যে পড়তে শুরু করলাম, নিজের অজান্তেই! তবে কিভাবে এই ঘটনার শুরু হলো তা আমি বলবোনা, কারন শুরুটা হওয়ার ছিল বলেই হয়েছে, এখানে কারনটা মুখ্য নয় অথবা বলতে চাইছিনা।



আমি সারা জীবন অন্যকে মুগ্ধ করার জন্য নানান ফাঁদ পেতে গেছি, মুগ্ধ চোখ দেখার আনন্দ আমাকে অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিলো। অল্প একটু তামিল, চাইনিজ, জাপানিজ ইত্যাদি শব্দ বলে বলে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করেই নিজেকে মহা মূর্খ বলে আবিষ্কার করলাম। দেখলাম, বহু বছর ধরে যে গজল (গোলাম আলী, মেহেদী হাসান, অনুপ জালোটা, জগজিৎ ...) শুনে আসছি, এর অনেক শব্দের মানেই আমি বুঝিনা! জুগনু অর্থ যে জোনাকী তা আমি জানিনা, রেত অর্থ যে বালু তা আমি জানিনা! আমি দিনে দিনে আত্মবিশ্বাস হারাতে শুরু করলাম। অফিসের সব কাজ বাদ দিয়ে আমি উর্দু, হিন্দি ডিকশেনারী নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু কলাম। আমি নেট এ আর্টিষ্টিক পিকচার খুঁজা শুরু কলাম। রাতে আমার ঘুম বন্ধ হয়ে গেল, সিগারেটের মাত্রা বাড়তে বাড়তে এমন একটা পর্যায়ে গেল যে কথা বলার সময়ও মনে হয় যেন ধূয়া বেরুচ্ছে! আমার স্বাস্থ ভাংতে শুরু করলো। আমি জানপ্রাণে চেষ্টা করতে লাগলাম যেন দূরে কোথাও গিয়ে মারাত্মক ব্যাস্ত হয়ে যেতে পারি, তাহলেই আমি এই ঘোর থেকে বের হতে পারবো্।



আসলে ঘরের বাধনওতো দিনকেদিন হালকা হয়ে যাচ্ছে, এও হয়তো একটা কারণ। প্রযুক্তিই হোক অথবা লাইফ ষ্টাইল কিছুটা উন্নতির কারনেই হোক, দিনে দিনে ঘরের সাথে যেন পর হয়ে গেছি। সকাল ৮টায় বের হয়ে বাসায় যখন রাত ১১:৩০~১২:০০ টায় ফিরি তখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে। আগে বাসায় এসে একলা একলা খেয়ে নিয়েছি, ইদানিং একলা খেতে ইচ্ছা করেনা, অফিস থেকেই খেয়ে আসি। অর্থাৎ সকালের নাস্তাটা তারাহুরা করে খাওয়া ছাড়া বাসায় তেমন আর খাওয়াও হয়না, নাস্তাটাও প্রতিদিন না।এঘর থেকে ওঘরে ভাইয়ার সাথে মাসে দু'একবার যা ও কথা হয় তা ও চ্যাটিং এ। যারযার ঘরে টিভি বলে টিভি দেখার ছলেও একসাথে বসা হয়না।



যাই হোক চাইলেইযে দূরে চলে যেতে পারবো সেরকম আত্মবিশ্বাও আজ আর কাজ করেনা। তোমার মত এত ভালো মেধা আমার কোন কালেও ছিলোনা, তাই দেশের বাইরে যেতে হলে টুফেল, আইএলট্স, জিআরই..এইসব করার মত মেধা বা আত্মবিশ্বাস কাজ করছেনা। তাই পাশাপাশি যা করছি তা হলো আরো কয়একটা পার্টটাইম জব খুঁজছি, যেন ব্যাস্ততা, দায়িত্ব, রিস্ক আরো বৃদ্ধি পায়, তাহলেই জীবনানন্দ টাইপ পাগলামী পালাই পালাই করে ভাগবে। জীবনানন্দের ঐ কবিতাটা পড়েছোতো! ঐযে,



"বধু শুয়ে ছিলো পাশে - শিশুটিও ছিলো;

প্রেম ছিলো, আশা ছিলো - জোৎস্নায়, - তবু সে দিখিলো

কোন ভূত ? ঘুম ভেঙে গেলো তার?

অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।"



শেষ করবো আর দু'টি কথা বলে। চিরদিনই আমি একটু কবিমনা, একটু মিশুক টাইপ মানুষ, তাই আমার এই ঘোর। আর সাধারণের মত হলে হয়তো এমনটা হতোনা। তুমি দূর দেশে আছো, ভালো থেকো, আর যদি ভালো কোন করেছি তোমার জন্য এমন খুঁজে পাও তাহলে দোয়া করো যেন অন্য কোন ব্যাস্ততায় আমি এই ঘোর থেকে শীঘ্রই বের হয়ে আসতে পারি।
#kolpobazz
repost
15-9-2008

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.