নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নয়নাভিরাম লালাখাল

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭

সোহেল রানা: ভ্রমণের নেশা ছোট থেকেই। নতুন কারো সঙ্গে পরিচয়ে ভ্রমণ নিয়ে খানিকটা আলাপ করা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় এসে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় সোহাগের সঙ্গে। সেও আমাদের সমবয়সী, বন্ধুর মতো। আমরা ঢাকায় একসঙ্গে ছিলাম দীর্ঘদিন। একবার অপ্টিমাইজেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সোহাগকে কিছুদিনের জন্য সিলেট যেতে হল টেলিকমের একটা কাজে। যাওয়ার সময় ওকে সিলেট ভ্রমণে আমার আগ্রহের কথা জানালাম। কয়েকদিন পর সে সিলেট ভ্রমণের যাবতীয় আয়োজন করে আমাদের যেতে বলল। ওইদিন রাতের ট্রেনেই আমি ও বন্ধু মিজান রওয়ানা দিলাম সিলেটের উদ্দেশে। ভোরে সিলেট পৌঁছে সোহাগের বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে সকাল ৯টায় সোহাগের অফিসের মাইক্রোবাস নিয়ে সিলেট ভ্রমণ শুরু হলো। প্রথম দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনায় ছিল জাকারিয়া সিটি হয়ে তামাবিল চেকপোস্ট দেখে জাফলং যাব। এখানে দুপুরের খাবার খেয়ে ফেরার পথে লালাখাল দেখে সিলেটে ফিরব। ভ্রমণটা ছিল নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। আমাদের সবার আগ্রহের কেন্দ্র ছিল লালাখাল। জাফলং যাওয়ার পথে কৌতূহলবশত সারিঘাট এলাকাটা আমরা দেখে নিলাম। এখান থেকে নৌকায় চড়ে সারি নদী পাড়ি দিয়ে লালাখাল যেতে হয়। প্রথম দর্শনেই সারি নদী আমাদের আকৃষ্ট করল। আমাদের ইচ্ছে ছিল জাফলংয়ের স্বচ্ছ পানিতে দুপুরে গোসল করার। প্রস্তুতি হিসেবে লুঙ্গি-গামছাও ছিল সঙ্গে। কিন্তু সারি নদী দেখার পর জাফলংয়ে গোসলের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত হল জাফলং থেকে ফিরে লালাখালে গিয়ে গোসল করব। সারি নদীর পানি যে কোনো পর্যটককে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। লালাখাল দেখার নেশায় দ্রুত তামাবিল-জাফলং ঘুরে ৪টার দিকে এসে পৌঁছলাম সারি ঘাটে। এখান থেকে ৫০০ টাকায় লালাখাল যাওয়া-আসার জন্য নৌকা ভাড়া করে রওয়ানা হলাম সারি নদী ধরে লালাখালের উদ্দেশে। সারি নদী ও দুইধারের রূপ-সৌন্দর্য দেখার জন্য আমরা নৌকার ছইয়ের ওপর উঠে বসলাম। এখন চারিদিকে শুধু দু’চোখ ভরে দেখার পালা। চোখে পড়ছে দূরে মেঘালয়ের পাহাড়গুলো। সারি নদীর পান্না সবুজ পানি, বালু বোঝাই নৌকা, মাঝে মাঝে গ্রামীণ মানুষের কর্মব্যস্ততা, নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা সবই উপভোগ্য হবে লালাখাল যাত্রায়। নয়নাভিরাম এই জায়গাটি যে কারো মন ভরিয়ে দেবে। স্বচ্ছ রঙিন জলরাশি আর দুধারের অপরূপ সৌন্দর্য, নৌকা ভ্রমণ যে কোনো পর্যটকের কাছে আর্কষণীয়। তেমনি এক নির্জন মনকাড়া স্থান লালাখাল। বাংলাদেশের অন্যতম বৃষ্টিপাতের স্থান লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। প্রায় ৪৫ মিনিট পর আমরা পৌঁছলাম লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরি ঘাটে। নৌকা থেকে নেমে লালাখাল বাজার ঘুরে দেখে বিকালের নাস্তা সেরে নিলাম। লালখাল চা ফ্যাক্টরি ঘাটের উল্টো দিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি ক্যাম্প রয়েছে। বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই রয়েছে রিভার কুইন নামের একটি চমৎকার রেস্টুরেন্ট। দেশী বিদেশী উন্নতমানের খাবার পাওয়া যাবে এখানে। এরপাশেই সুউচ্চ টিলার উপর দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এই টাওয়ারে দাঁড়িয়ে ওপারের ভারতীয় পাহাড় আর এপারের সারি নদীর পান্না সবুজ জলও দেখা যাবে স্পষ্টভাবে। যা যে কোনো পর্যটকের মন ভরিয়ে দিতে পারে। একইস্থানে রয়েছে নাজিমগড় রিসোর্টের টেন্ট সাইট। টেন্ট সাইটে ৮/১০টি তাবু স্থায়ীভাবে টানানো রয়েছে। রাতে ক্যাম্পফায়ার, বারিবিকিউ আর জ্যোস্নাযাপনের জন্য আদর্শ স্থান হতে পারে এ টেন্ট সাইটটি। তাবুর ভেতর রাত্রি যাপনের লোভ হলেও সময় স্বল্পতার জন্য আমাদের আর থাকা হয়নি সেখানে। আমরা লালাখাল চা বাগান ঘুরে দেখলাম। বিশাল এলাকাজুড়ে বাগান। উঁচু-নিচু টিলাজুড়ে বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এক ঝিরি। তবে তার গভীরতাও বেশ। এরই নাম লালাখাল। খাল বরাবর তাকালে উচ্চ লালাখাল টিলা। ওপাশেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। স্থানীয়রা জানান, এখানে নাকি দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। হতেও পারে, ওপারে তো শিলংয়ের মওসিনরাম, যেখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়। আগে হতো শিলংয়ের চেরাপুঞ্জিতে। চা-বাগান ছাড়াও আশপাশের টিলাগুলোয় সবুজ বনানী রয়েছে। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। আমরা ফেরার জন্য নৌকায় উঠলাম। নৌকা ছাড়ল সারি ঘাটের উদ্দেশে। সবাই আপসোস করতে লাগলাম। সারাটা দিন যদি এখানে কাটাতে পারতাম। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সারি ঘাটে ভিড়ল নৌকা। নৌকা থেকে নেমে আমরা রওয়ানা হলাম সিলেটের পথে। কিভাবে যাবেন : সিলেট থেকে প্রথমে জাফলং রোডে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে সারিঘাট নামক স্থানে নামতে হবে। ঘাটে পাবেন লালাখাল যাওয়ার জন্য ভাড়া নৌকা। রয়েছে ¯িপ্রডবোটও। যেতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। ইঞ্জিন নৌকায় ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। আর ¯িপ্রডবোটে ভাড়া পড়বে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এছাড়া সড়কপথেও সিলেট থেকে মাইক্রোবাস বা টেম্পোযোগে সরাসরি লালাখালে যাওয়া যায়। মাইক্রোর ভাড়া ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। আগে লালাখালে থাকার তেমন কোনো সুবিধা ছিলো না। তবে সম্প্রতি ‘ওয়াইল্ডারনেস’ নামে একটি নতুন রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে সেখানে। নদী, পাহাড়, ঘনবন আর পাখির কিচিরমিচিরের মাঝখানে গড়ে ওঠা এই রিসোর্টটি যে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের আকর্ষনীয় স্থান এটা বলা যায় নি:সন্দেহে। তবে এতে থাকার জন্য খরচ অনেকটা বেশিই পড়বে। এছাড়া পর্যটকরা লালাখাল ঘুরে এসে সিলেট শহরেও রাতযাপন করতে পারেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.