নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুরবানির ইতিহাস

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫


আবু বকর হারুন

যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে কুরবানির সুমহান
রীতি।ইসলামে কুরবানির ইতহাস অনেক পুরাতন। যা
পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানব আমাদের আদি পিতা হযরত
আদম (আ,) এর সময় থেকে প্রচলিত । তবে বিভিন্ন
যুগে কুরবানির ধরণ ছিল বিভিন্নরকম।
কুরবানি সংক্রান্ত আলোচনার পূর্বে জেনে
নেওয়া পয়োজন কুরবানি শব্দের পরিচয়।
কুরবানি মূলত আরবি শব্দ "কুরবুন" থেকে উৎকলিত।
যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ করা, উপঢৌকন
পেশ করা, নৈকট্য অর্জন করা, সান্নিধ্য লাভ , নৈকট্য বা
সান্নিধ্য লাভের
মাধ্যম হওয়া ইত্যাদি। আমাদের দেশসহ বিশ্বের
কোন কোন অঞ্চলে এ শব্দেটির শেষে
আরবি বর্ণ 'ইয়া' যোগ করত: "কুরবানি" বলা হয়ে
থাকে, যার অর্থ হল- আমার উৎসর্গ বা আমার কুরবানি ।
কুরবানি করার দ্বারা বান্দাহ আল্লহর কুরবত বা নৈকট্য লাভ
করতে সক্ষম হয় বলে এটাকে "কুরবানি" বলে নাম
দেওয়া হয়েছে।
আর শরীয়তের পরিভাষায় নুসুক বা কুরবানি হচ্ছে ,
আল্লহর নৈকট্য বা রেজামন্ডি লাভের আশায় পার্থিব
কোন বস্তু কে আল্লহর জন্যে উৎসর্গ করা ।
এখন চাই এটা পশু যবেহ করার দ্বারা হোক বা দান
সাদকাহ আদায়ের মাধ্যমে।
তবে কুরবানিতে উদ্দেশ্য হওয়া উচিত একমাত্র
রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্য বা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন।
এতদভিন্ন কুরবানি দ্বারা যদি অন্যকিছু উদ্দেশ্য থাকে
।যেমন : যশ খ্যাতি অর্জন, মাংশ খাওয়া, লৌকিকতা বা
সামাজিক রীতি রেওয়াজ হিসেবে কুরবানি করা। এ
ক্ষেত্রে এমন কুরবানি নিছক কুরবানি দাতার পার্থিব
স্বার্থ সিদ্ধির কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে গণ্য
হবে ।এতে কখনোই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি
অর্জন উদ্দেশ্য হতে পারে না।যেমনটি স্বয়ং
আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে এরশাদ
করছেন, " আল্লাহ তা'আলার নিকট কুরবানিকৃত পশুর মাংশ
রক্ত কিছুই পৌঁছে না,বরং আল্লহর কাছে পৌঁছে শুধু
তোমাদের একান্ত খোদাভীতি।" (সূরা হজ্ব
:আয়াত-৩৭)
কুরআনে কারীমের মোট তিনটি স্থানে কুরবানি
সংশ্লিষ্ট শব্দ এসছে ।যা কুরবানির ইতহাসের প্রতি
ইঙ্গিত বহন করে।
এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, "আর যারা বলে,
আল্লাহ তা'আলা আমাদের কে নির্দেশ দিয়েছেন
যে, আমরা যেন কোন রাসূলের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন না করি যে যাবৎ না উক্ত রাসূল আমাদের
সামনে কোন এমন কুরবানি পেশ করেন যাকে
আসমানি অগ্নি এসে ভস্ম করে দিয়ে যায়।" (সূরা
আলে ইমরান: আয়াত-১৮৩)
ইহুদী সম্প্রদায় আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ (সা,)
কে বরাবরই অস্বীকার করে আসছিল।এক পর্যায়ে
তারা ফন্দি আঁটে ,পূর্ববর্তী নবিদের ক্ষেত্রে
কুরবানি প্রথা তো এমন ছিল যে, কুরবানি দাতা তার
উৎসর্গের প্রাণী বা বস্তু কোন উম্মুক্ত প্রান্তর
বা পর্বত শৃঙ্গে রেখে আসত ।এমনিভাবে সাদকাহ
ও মান্নতের নির্ধারিত সামগ্রীও জনমানবহীন
কোন স্থানে ছেড়ে আসা হত ।এরপর আকাশ
থেকে অগ্নিকুন্ডলী এসে উৎসর্গকৃত বস্তু কে
জ্বালিয়ে দিয়ে গেলে প্রতীয়মান হত যে কুরবানি
গৃহীত হয়েছে ।আর কারো উৎসর্গকৃত সামগ্রী
কে আসমানি আগুন ভস্মিভূত না করলে ধরা হত যে
,তার কুরবানি আল্লহর দরবারে মাকবুল হয়নি। কিন্তু নবি
মুহাম্মদের (সা,) এর যুগে এমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে
না।দেখা যাক বিষয়টি উত্থাপন করে মক্কার নবি মুহাম্মদ
(সা,) এর নবুয়ত কে অস্বীকৃত জানানো যায় কিনা।
এই লক্ষ্যে ইহুদীরা রাসূল (সা,) কে প্রশ্নবিদ্ধ
করার প্রয়াস পেয়েছিল।
বস্তুত তাদের এই দাবি ছিল একেবারেই অবান্তর।
কেননা আল্লাহ তা'আলা পূর্বক্ত নবিদের (আ,)
ক্ষেত্রে ভস্মিভূত করার বিধান রেখেছিলেন আর
শেষ নবি মুহাম্মদ (সা,) এর সময়ে তিনিই বিধান
করেছেন যে ,কুরবানিকৃত জন্তু থেকে
আত্মীয় স্বজন, দু:খীজন কে বিতরণ করা যাবে
এবং ইচ্ছে হলে কুরবানি দাতা নিজেও ভক্ষণ করতে
পাারবে। এটা আল্লহ তা'আলার পক্ষ থেকে
উম্মতে মুহাম্মদীর জন্যে আরোপকৃত বিধান
কে সহজ ও উপভোগ্য করার নমুনা মাত্র।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ
করেন, "আপনি যথাযথভাবে বর্ণনা করুন, আদম (আ,)
এর দুই পুত্র( হাবিল কাবিল)এর ঘটনা।যখন তারা উভয়ে
কুরবানি করেছিল। সেখান থেকে তাদের
একজনের কুরবানি গৃহীত হয়েছে। অন্যজনেরটি
মাকবুল হয়নি। (তখন) সে বলল, অবশ্যই আমি
তোমাকে হত্যা করবো।অপরজন বলল, নিশ্চয়ই
আল্লাহ তা'আলা মুত্তাকীদের থেকেই গ্রহণ
করে থাকেন। "(সূরা হজ্ব : আয়াত-২৭)
আলোচ্য আয়াতের প্রেক্ষাপট হল, হযরত আদম
ও হাওয়া আ, যখন পৃথিবীতে অবতরণ করলেন এবং
তাঁদের থেকে বংশ বিস্তার
হতে লাগলো। তখন প্রতি বছর হযরত হাওযা আ, এর
উদরে দু'টি করে সন্তান আসত।সে ক্ষেত্রে
পরবর্তী সন্তানদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের
জন্য বিধান ছিল যমজ দুই সন্তানের মাঝে বিবাহ
যায়েজ হবে না।
বরং এক বছরের সন্তান কে পরের বছরের
সন্তানের (ছেলে/মেয়ে) সাথে বিবাহ প্রদান করা
হবে।ঘটনাচক্রে কাবিলের সহোদরা বোন ছিল
অনিন্দ্য সুন্দরী ।আর হাবিলের সহজাত বোন ছিল
কালো, কুৎসিত। যেহেতু পরস্পর সহোদর ভাই
বোনের বিবাহ অবৈধ ছিল, তাই হিসেবানুযায়ী
কাবিলের ভাগে আসে হাবিলের সহোদরা কুৎসিত
কণ্যা। কিন্তু কাবিল এতে সন্তুষ্ট হতে পারছিল না।
সুতরাং বিষয়টি যে, আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে
মীমাংসিত, এটা বুঝানোর জন্য হযরত আদম আ,
তাদের কে কুরবানি করার নির্দেশ দেন।
হাবিল মেষ,দুম্বা জাতীয় গৃহপালিত পশু পালন করত।
সে তার থেকে একটি জন্তু আল্লহর নামে
উৎসর্গ করে পাহাড়ে রেখে আসলো ।এদিকে
কাবিলের পেশা ছিল কৃষিকার্য। সে তার উৎপন্ন
সশ্যের কিছু অংশ কুরবানির উদ্দেশ্যে পর্বত চূড়ায়
রেখে আসল।
পরবর্তীতে আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে
হাবিলের কুরবানি কে ভস্মিভূত করে যায়। অথচ
কাবিলের উৎসর্গকৃত সশ্য আপন অবস্থয় পড়ে
থাকে।
এটা ছিল মানব ইতহাসে সর্বপ্রথম কুরবানি।
হযরত আদম আ, এর পর পৃথিবীর বুকে অনুষ্ঠিত হয়
ঐতিহাসিক দ্বিতীয় কুরবানি গোটা মুসলিম জাতির আদি
পিতা হযরত ইব্রাহিম আ, কর্তৃক ।বর্তমানে আমরা যে
কুরবানি দিয়ে থাকি তা হযরত ইব্রাহিম আ, এর
পদাঙ্কানুসারেই।
সাহাবায়ে কেরাম রা, কুরবানি প্রসঙ্গে আল্লহর রাসূল
সা, কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ হচ্ছে
তোমাদের আদি পিতা ইব্রাহিম আ, এর সুন্নাত।
( সুনানে ইবনে মাজাহ)
হযরত ইব্রাহিম আ, এর কুরবানি প্রসঙ্গে পবিত্র
কুরআনে বিশদভাবে বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ
তা'আলা বলেন-"তিনি (ইব্রাহিম আ,) বললেন ,আমি
আমার রবের প্রতি চললাম।তিনি অবশ্যই আমাকে সৎ
পথে পরিচালিত করবেন।হে আল্লাহ ! আপনি
আমাকে একজন সৎকর্ম পরায়ণ সন্তানের নেয়ামত
দান করুন।অত:পর আমি তাকে স্থীর বুদ্ধি সম্পন্ন
এক পুুত্রের সুসংবাদ দিলাম। আর যখন ইব্রাহিম আ, এর
পুত্র স্বীয় পিতার সঙ্গে চলার মত সক্ষমতা অর্জন
করলো,তখন ইব্রাহিম আ, আপন পুত্রকে উদ্দেশ্য
করে বললেন, হে আমার প্রিয় পুত্র ! আমি
স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ
(কুরবানি) করছি।এখন তুমি এ ব্যাপারে কী বলো ?
পুত্র(ইসমাঈল) বললেন, হে আমার পিতা ! আপনি যে
বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন ,তা বাস্তবায়ন করুন।
ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের
অন্তর্ভূক্ত পাবেন। অত:পর উভয়ে যখন অনুগত
হলেন আর ইব্রাহিম আ, স্বীয় সন্তান কে উপুড়
করে শুইয়ে দিলেন ।তখন আমি ইব্রাহিম আ, কে
ডেকে বললাম,হে ইব্রাহিম ! নিশ্চয়ই আপনি আপনার
স্বপ্ন কে বাস্তবায়ন করেছেন।
আর আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে
থাকি। নিশ্চিতভাবে এ ছিল বড় এক পরীক্ষা। অত:পর
আমি একটি বড়
আকারের কুরবানির জন্তুর বিনিময়ে ছেলেটিকে
রেহাই দিলাম।আর পরবর্তীদের মধ্যে তাঁর প্রশংসা
চিরকালের জন্য রেখে দিলাম।শান্তি বর্ষিত হোক
ইব্রাহিম আ, এর উপর ।নিশ্চয়ই আমি
সৎকর্মশীলদের এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি।তিনি
ছিলেন আমার মুমিন বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত। (সূরা
সাফফাত:আয়াত ৯৯—১১১)
ইতিহাস ও তাফসির গ্রন্থ থেকে জাানা যায় ,যখন ইব্রাহিম
আ, এই স্বপ্ন দেখেন ,তখন তাঁর পুত্র ইসমাঈল আ,
এর বয়স ছিল মাত্র তের বছর ।
বিখ্যাত সীরাত গবেষক ইবনে ইসহাক
রহ,বলেন,যবেহের লগ্নে পুত্র ইসমাঈল পিতার
উদ্দেশ্যে বলেছিল,হে আমার পিতা ! যবেহের
সময়ে আপনি আমাকে দঁড়ি দ্বারা মজবুত করে
বেঁধে নেবেন। করণ মৃত্যু যন্ত্রনায় আমি খুব
বেশি নড়াচড়া করতে পারি। যে কারণে আমার
রক্তের ফোঁটা আপনার শরীরে গিয়ে লাগবে।
আর এটা আল্লহর দরবারে আপনার পুরষ্কার বা
সাওয়াবের ক্ষেত্রে ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে ।
আর আপনার ছুড়ি খুব ধার দিয়ে নেবেন যাতে আমার
মৃত্যু যন্ত্রনা লাঘব হয়।আমাকে উপুড় করে চেহারা
নীচের দিকে দিয়ে তবেই যবেহ করবেন
,কারণ যবেহ করার সময়ে আমার চেহারা দেখে
আপনার ভেতরে মায়ার সৃষ্টি হতে পারে।
যে কারণে আপনি আল্লহর হুকুম যথাযথভাবে পালন
করতে বিঘ্নিত হবেন।আর আপনি যদি ভালো মনে
করেন, তহলে আমার পরিধেয় বস্ত্রটা স্মৃতি স্বরূপ
মায়ের কাছে পৌঁছে দেবেন ।যাতে এর মাধ্যমে
উনার কিছুটা শান্তনা লাভ হয়।
এটাই ছিল আল্লহর দুই মাকবুল বান্দাহর ত্যাগ ও কুুরবানির
অবিস্মরণীয় ইতিহাস।
আল্লহ তা'আলার কাছে সেদিন হযরত ইব্রাহিম আ, এর
এই একনিষ্ঠ কুরবানি অত্যন্ত পছন্দ হয়েছিল ।তাই
প্রিয় বন্ধুর এই অসাধারণ বিসর্জন কে চির স্মরণীয়
করে রাখতে উম্মতে মুহাম্মদী সা, এর জন্য প্রতি
বছর যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে কুরবানি করাকে
ওয়াজিব করে দিয়েছেন ।
তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে , হযরত ইব্রাহিম আ, এর
অনুসৃত পথে উৎসাহ উদ্দীপনা ও হৃদি প্রেরণা নিয়ে
আল্লহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরবানির জন্তু যবেহ
করা।তাহলেই আমাদের কুরবানি হবে স্বার্থক এবং
অর্থবহ ।undefined

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.