তনু হত্যা এবং আমাদের চিন্তাধারা।

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৯

আমি জানি, লেখাটা পড়ার পর আপনারা আমাকে “বাইঞ্চোদ” ছাড়া কিছুই বলবেন না।
যদিও আমার ফেইসবুক প্রোফাইলে ফালতু কথা নিয়ে কিছু নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে, তবুও আমি আজ কিছু কথা বলছি যেগুলো না বললেই নয়।
১. আপনারা গত কয়েকদিন ধরে দেখে আসছেন , বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদি তে একটি বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মতামত দেয়া হচ্ছে।
ছোট থেকে শুরু করে দারি ওয়ালা মুরুব্বিরাও এই কথা নিয়ে লেখা দেখতে দেখতে আজ বিরক্ত।
জী, আমি তনু হত্যা নিয়ে কথা বলছি।
...
২. আমি অমুক... এই মর্মে শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়জিত রাখিব, দেশের প্রতি অনুগত থাকিবো, দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিব। ইত্যাদি ইত্যাদি ... ব্লা ব্লা ব্লা...
সেই ছোটবেলায় যখন বই মাথায় নিয়ে স্কুলে যেতাম, বিকাল ৩ টায় ঠাডা পড়া রোদে লাইনে দারিয়ে এই শপথ নিতাম। শপথের প্রতিটি কথা আজও আমার কানে বাজে। আমি মনে করি , আমার মত আমার সহপাঠী সবার এই একই অবস্থা।
আজ ১০ বছর পর , যখন সেই স্কুলে গেলাম, আমার শিক্ষকরা দেখি আলোচনা করছেন। একটা বিষয় নিয়ে। বিষয় হলঃ তনু হত্যা।
...
৩. বিকালে বন্ধুদের সাথে হাঁটতে বেরুলাম। একটা মাঠের মাঝে দেখলাম কিছু যুবক বসে আছে। কি যেন কথা বলছিলেন ওনারা। সামনে জেতেই কথার ভাজ শুনে বুঝতে পারলাম ... ওনারা যে বিষয় নিয়ে কথা বলছেন... সেটা আমার কাছে ব্যাপক পরিস্কার। বিষয়টা হলঃ তনু হত্যা।
...
৪. সন্ধ্যায় আমি আসলাম আমার ছোট্ট দোকানে। কয়েকটা অল্প বয়সী ছেলে আসলো। ওদের মাঝথেকে একজন আমাকে বলল, ভাই আমাকে কয়েকটা পিক ডাউনলোড করে দিবেন ? আমি বললাম... কিসের পিক ?
বলল... তনুর পিক।
...........................

ঘটনা ১
ফেইসবুক জুরে আমি তনু হত্যা নিয়ে পোস্ট দেখতে দেখতে মহা জ্ঞানী হয়ে গেছি। যদিও আমার ঘরে আমার বোন আছে। আর তনুও আমার বোন। আমার দায়িত্ব ছিল তনুকে নিয়ে সামান্য কিছু লিখা। জ্ঞানের অভাবে আমি লিখতে পারলাম না। আসলে সবাইকে দিয়ে সব কিছু হয় না।
তনুর নিথর দেহ দেখার পর নিজেকে নিয়ে সংসয় তৈরি হয়েছিল। আমি পুরুষ, এই সমাজে আমার সম্মান আছে তো ? যেখানে তনুর মত বোন, আমাদের মত পুরুষের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়, অবশেষে তাকে ছারতে হয় পৃথিবী। সেখানে কোথায় আমাদের সেই সম্মান, কোথায় আমাদের মানবতা।
ঘটনা ২
মনে করিয়ে দেই আবার সেই শপথের কথা। ছোট বেলার সেই শপথ।
আজ কোথায় সেই শপথের নীতিমালা , কোথায় সেই শপথ পাঠকারী ব্যাক্তি মহাশয়। আসুন, আজ আপনারা আওয়াজ তুলুন, আমার বোন আজ নির্যাতিত, শপথ বাক্য পাঠ করান, যাতে আমার দেশের আর কোন বোন নির্যাতিত না হয়।
৩.
বিকেলের কথা বলি, যখন আমি মাঠের মাঝে ছিলাম, ওইসব ছেলে যুবকদের কথা শুনে আমার অবস্থা খারাপ হতে লাগলো, আসলে কি যে বলব। মৃত মানুষদের নিয়ে যারা বিরুপ মন্তব্য করতে পারে তাদের জন্ম নিয়ে আমার বিরুপ মন্তব্য করতে দ্বিধা হবে না। যে দেশে একজন মেয়ে লাঞ্ছিত হয়ে খুন হল, তার ছবি দেখার পরও যারা নতুন করে ঐ মেয়েকে আবার ভোগ করাতে চায়, সেই যুবকদের প্রতি রইল শস্রদ্ধ সালাম, আশা করি, আপনাদের বোনদের বেলায় ঐ একই ব্যাপার ঘটবে। সত্যি বলতে কি ... যুবসমাজ দেশের প্রান, তারাই যদি খারাপ মন্তব্য করে তাহলে এরকম হাজারো তনু তো নির্দ্বিধায় ঝরে যাবে অকালে। আর তখনি পাওয়া যাবে আসল মজা। মাঠের মাঝখানে, বা চা এর দোকানে কিংবা আড্ডা মারার মত কোথাও শোনা যাবে সেই অমৃতবানী ... যে মেয়েটা মারা গেল... মাম্মা... মালডা চরম আছিলো।
৪.
এবার আসি সর্বশেষ কথায়। আমি আসলাম আমার দোকানে। কয়েকটা ছোট ছেলে আসলো, আমার কাছে। ওদের বয়স ১৩ এর বেশি হবে বলে মনে হয় না। কারো হাতে কোন এন্ড্রয়েড মোবাইল দেখলাম না বা ওরা যে মোবাইল ব্যাবহার করে সেটা মনে হল না। আমার কাছে ছবি চাইলে আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম ছবি দিয়ে কি করবা তোমরা ? ওদের মধ্যে থেকে একজন বলল, আমরা তনু আপুর প্রতি সম্মান জানিয়ে মোমবাতি জ্বালাবো।
তোমরা মোম জালিয়ে করবা কি, মোম জালাইয়া দিলেই কি আত্মা শান্তি পায় ??? আমার প্রশ্নের জবাব হয়ত ওরা দিতে পারে নাই। কে পারবে আমার প্রশ্নের জবাব দিতে ? আসলে, আমরা সবাই সহযোগিতা করতে জানি, সহমর্মিতা দেখাতে পারি, কিন্তু পারিনা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। আসলে আমাদের ভেতর সেই সাহস টা নাই,
*** যেখানে ঘটনাটা ঘটে সেটা দেশের অন্যতম নিরাপদ স্থান। সেখানে এইরকম একটা বিশাল ঘটনা হয়ে গেল , আর দেশের মান্য গন্য মিডিয়া প্রায় নির্বিকার, এর পিছনে নিশ্চয় কোন না কোন ঢোল খঞ্জনীর বাজনা আছে।
আমার কথা হল , যে সরিষা দিয়ে ভুত তারাবো, সেই সরিষার ভেতরই ভুত থাকলে আমরা সাধারন জনতা যাব কোথায় ????
প্রশ্ন রইল জাতির বিবেকের কাছে।

০ টি +০/-০