নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন

"আমার মাঝের অন্য আমি"

কৃষ্ণবিবর

একজন সাধারণ মানুষ।

কৃষ্ণবিবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিন ঠ্যাঙ্গা কুকুর

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬

- ভাই খারাপ লাগে না? এই যে দেশে এত অস্থির, কবে আবার সব স্বাভাবিক হবে কোন ঠিক ঠিকানা নাই... খারাপ লাগে না?

- না। রাজনিতী বুঝিও না, ভালোও লাগে না।

- রাজনিতী বাদ দেন, এই যে ডেইলি মানুষ মারা যাছে, খারাপ লাগে না?

- না।

- কেমনে পারেন এত পাষান হতে?



আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে বাজার যাওয়ার পথে মিনিসিপিউলিটির ডাস্টবিন। দুই/তিন্টা নেড়ি কুকুর প্রায়ই ঘুরাঘুরি করে, আবর্জনা ঘেটে খাবার খুজে। নিয়মিত দেখতে দেখতে একসময় নিজের অজান্তেই নাম দেই একেকটাকে। সবচেয়ে মোটাটা বাঘা, চামড়া ছাড়াটা ছিলা। পুরো কালোটা কাল্লু। আর ছিল ট্যারা। বেশীর ভাগ সময় একটু দুরে বসে আড় চোখে তাকিয়ে থাকত। অন্য পাড়ার কোন কুকুর ধারে কাছে আসলেই সবার আগে তাড়া করত। অন্য সময় উদাস মনে রোদ পোহাত।



দুই বছর পরের কথা, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। ছয় ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে টিকেট কিনেছি, আরও ছয় ঘন্টা বাসে। দিন ভাল থাকলে একি যাত্রা সব মিলিয়ে তিন ঘন্টার কম লাগে।ঈদের ছুটি চারদিনের একদিন শেষ যাওয়া আসাতেই। মনে মনে মন্ত্রী-মিনিষ্টারের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশায় উঠলাম। রাস্তার ধুলাবালি, রিকশাওলাদের ঈদকালীন অযাচিত ভাড়া সব মিলিয়ে নিজেকে বন্দী বন্দী লাগে। দম আটকে আসতে চায়। অভিমানে ভরে ঊঠে বুকটা। অজানা আক্রোশে চিৎকার করে উঠতে ইছা করে। সব কিছুর জন্য নিজের ভাগ্যকেই দোষ দিতে থাকি।



ঘেঊ ঘেঊ ডাকে চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটে। তাকিয়ে দেখি ট্যারা। সব আগের মতই আছে, কিন্তু একটা পায়ের অর্ধেকটা কাটা পড়েছে। বুকে একটা ধাক্কা দিয়ে উঠলো। হঠাৎ করেই আর কিছু চিন্তা করতে পারি না। রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম। এগিয়ে গেলাম ট্যারার কাছে। দগদগে পায়ের ঘায়ে অল্প কয়েকদিনেই মারা যাবে, একটা পা ছাড়া চলা ফেরাও অনেক কষ্টের। চোখ বরাবর তাকালাম, কিন্তু সেখানে বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই, নেই কোন হতাশা। একটা পা না থাকার মর্মটাই ধরতে পারে না কুকুরটা।



সেই থেকে আমিও আর কষ্ট পাই না। চোখ বুজে থাকি আরে বলি ভাল আছি... ভাল আছি। তিন ঠ্যাঙ্গা কুকুরের মত...

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১৫

পৃথিবীর আলো বলেছেন: স্বান্তনার কি চরম বাণী শোনালেন ভাই। সাকার মত বলতে ইচ্ছা করতেছে "মাননীয় স্পিকার আমি আবারও চোদনা হয়ে গেলাম।

এক দল মানুষরূপী শয়তান আমাদের ওপর নির্য়াতন,জুলুম করেই যাবে, আর আমরা শুধু নিজেদেরকে স্বান্তনা দিয়েই যাব আর পাছার পাঁচরা চুলকিয়ে ভাববো, আমি তো ভালোই আছি.......।

স্বন্তনার এই বাণী আমাদেরকে জোর করে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে বা আমরা নিজেরাই মুখস্ত করে নিয়েছি। কারণ আমাদের সঠিক কথা বলার সাহস নাই বা অধিকার নাই। অথবা আমরা কারো জবাবে যেন বলতে পারি "ভালো আছি।

কবিতাটা ছোটকালে পড়েছিলাম আবার মনে পড়ে গেল.....

একদা ছিল না জুতা চরণও যুগলে............

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩২

কৃষ্ণবিবর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
লেখাটার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজের মধ্যবিত্ত বর্জুয়া শ্রেনীর চোখ বুজে ভাল থাকার চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আশা করে সফল হয়েছি।

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩০

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
কৃষ্ণবিবর,
মর্ম ছেড়ে দিলে ভালো থাকা সহজ হয় কি ! কে জানে। আপনার লেখা পড়ে আমিও বলি ভালো আছি ভালো আছি।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:০০

কৃষ্ণবিবর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। কবে আবার আমাদের মর্ম ফিরে আসবে তার অপেক্ষায় আছি।

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৪৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সেই শিক্ষকের কথা মনে পড়ে গেল যিনি ছাত্রদের প্রশ্ন করেছিলেন,আমি গৃহিনী আর সন্তান মিলে সাহেবের কুকুরের কয়টা ঠ্যাং এর সমান?? আমরা আজ প্রশ্ন করতে পারি(সেই শিক্ষকের মত কিন্তু একটু ঘুরিয়ে) আর কতকাল আপনাদের ক্ষমাতার খেলার বলী হবো??

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:০৪

কৃষ্ণবিবর বলেছেন: চারপাশে সবাই ভাল থাকার অভিনয় করে, অভিনয় করতে করতে সে যে ভাল নেই সেটাই ভুলে গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.