![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে জন্ডিসের কারণে এক মাস বাসায় বিশ্রামে থাকতে হয়েছিল। কোন কাজ না করে বাসায় বসে থাকার যে কী কষ্ট সেটা তখনই টের পেয়েছিলাম। ক'টা দিন বাসায় থাকার পর অদ্ভুত কোন এক কারণে অফিসকে খুব মিস করছিলাম। অসুস্থতার ৩য় সপ্তাহে লিখে ফেললাম একখান চিঠি।
আজকে সেটা আবার পড়ে মনে হলো সামুতেও ছেপে দেই।
==========================================
সুপ্রিয় ভাই-ভগিনীবৃন্দ,
কিয়ৎকাল ধরিয়াই অসুস্থ দেহখানি লইয়া শয্যাশায়ী হইয়া শুভ্র আকাশপানে চাহিয়া থাকি আর সবুজসম সূর্য্যখানা দেখিয়া ভাবনার জালিকা বুনি। জালিকা বুনিতে বুনিতে হঠাৎই গতকল্য খেয়াল হইলো, আহা! কতকাল কর্মক্ষেত্রে যাওয়া হয় না, কতকাল প্রিয় সহকর্মীবৃন্দের সহিত সাক্ষাৎলাভ ঘটে না, বার্তালাপও হয় না। যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করিবার বড়ই সাধ জাগিলো অন্তরে। অথচ উহা কী মতে সম্ভবপর হইয়া উঠিতে পারে ঠিক ঠাহর করিতে পারিতেছিলাম না। আজি অপরাহ্ন দুই ঘটিকায় নিদ্রোত্থিত হইয়া কিঞ্চিত ভাবিয়া হঠাৎ সংকল্পবদ্ধ হইলাম, একখানা ত্বড়িৎ-পত্রই লিখিব।
অসুস্থ থাকিবার অনেকগুলি যন্ত্রণার মাঝে একটি সান্ত্বনা এইরূপ যে, এই সময়কার অখন্ড অবসরের কল্যাণে মনঃপ্রাণ ভারহীন হইয়া দুঃশ্চিন্তাগুলিকে দূরে ঠেলিয়া দেয় আর অনেক ভাবনা রচিবারও অবকাশ করিয়া দেয়। তাহাতে কাহারও কাহারও অন্তর্নিবিষ্ট সুপ্ত সাহিত্য প্রতিভা জাগ্রত হইবার প্রয়াস পায়। আমারও বোধ করি সেইরূপই অনুভব হইতেছে। যাহাই হউক, মূল বিষয়ের চাহিতে ভূমিকাই বড় হইয়া ঠেকিলো বলিয়া ক্ষমা ভিক্ষা চাহিতেছি।
কিঞ্চিত বলিয়া রাখা ভালো, পত্র রচনা করিবার পূর্বেই অন্তরে ভাবনার উদ্রেক হইলো যে, ইহা তো ভাষান্দোলনের মাস, বসন্তের মাস ও ভালোবাসার মাসও বৈকি। এমনতর ভাবিয়া সর্বদিক বিবেচনাপূর্বক দুইটি বিষয় সাব্যস্ত করিলাম। এক, যাহাই লিখিব মাতৃভাষা বাঙ্গালাতেই লিখিব এবং তাহা আধুনিক বাঙ্গালার আদি রূপে, যাহা সাধু ভাষা নামে পরিচিত, উহাতে। নিশ্চয় করিয়া ভাবিলাম, এ মতে মহান ভাষান্দোলনের প্রতি সন্মানের পরাকাষ্ঠা দেখানো যাইবে। তবে অনভিজ্ঞ হস্তে লিখার দরুন সম্পূর্ণ প্রয়াস গুরুচন্ডালী দোষে না দোষাম্বিত হইয়া পড়ে সেই ভয় রহিয়াই গিয়াছে। দুই, সবাইকে তুমি সম্বোধন করিয়াই লিখিব। ইহাতে সকলের প্রতি আমার অগাধ ভালোবাসার প্রমাণ দেওয়া হইবে। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত কাহারও নিকট মানহানিকর বা আপত্তিজনক ঠেকিলে অবশিষ্টাংশ না পড়িবার পরামর্শ রহিলো।
অতএব, মার্জনাপ্রার্থনাপূর্বক এক্ষণে জিজ্ঞাসিতেছি, তোমরা সকলে কীরূপ আছো? আমার প্রত্যাশা এবং বিশ্বাস, তোমাদের সকলের সকল কিছু ভালোই চলিতেছে।
এই বার আপনার বর্ত্তমানাবস্থা বর্ণনা করিবার সামান্য সুযোগ লই। মনে বড়ই আকাঙ্ক্ষা ছিলো দ্বিতীয়বারের ডাক্তারি পরীক্ষার পরপরই সুস্থতার সনদ লইয়া বাহিরজগতে পদচারণার উপায় মিলিবে। কিন্তু, হা হতোস্মি! গতকল্য প্রতিবেদন হস্তগত হইবার পর যারপর নাই আশাহত হইলাম। তাহার উপরে, এই অধমের চাহিতেও স্বল্পভাষী ডাক্তার মশাই দিন তিনেকের ছুটিতে গিয়াছেন জ্ঞাত হইয়া কষ্ট আরও বাড়িলো বৈ কমিলো না। অবশ্য, মঙ্গলবার উনার সাক্ষাত মিলিবার আশা রহিয়াছে। নিম্নে, পুনরপি করা আমার দুইটা পরীক্ষার ফলাফল জানাইয়া দিতেছি : -
পরীক্ষার নাম | পূর্বেকার ফল | বর্ত্তমানের ফল
``````````````````````````````````````````````````````````
বিলিরুবিন | ৮.০২ | ৩.২৭
হেপাটাইটিস-এ | ৪.০৫ | ৩.৫৮
দুইটা ক্ষেত্রেই মাত্রা ১.০০ -এর নিচে নামিলে রূদ্ধাবস্থা হইতে আমার পরিত্রাণের পথ মিলিবে।
পত্রখানি আর টানিয়া বড়ো করা বোধ করি সমীচীন হইবে না।
বিশ্বমন্ডলের সকল প্রাণীই সুখী হউক, এই কামনায় সমাপ্তি টানিলাম।
সকলের নিত্যশুভাকাঙ্ক্ষী,
ঘুনমদন্তবে পণ্ণথিষকনি।
১১ই ফাল্গুন, ১৪১৫ বঙ্গাব্দ।
পুনশ্চ:
ক. যাহারা বাঙ্গালা পড়িতে পারিতেছ এবং লিখাগুলি বড় দেখিতেছ তাহারা, যাহারা লিখাগুলি ছোট দেখিতেছে উহাদের শিখাইয়া দাও।
খ. যাহারা বাঙ্গালা পড়িতে পারিতেছ কিন্তু লিখাগুলি ছোট দেখিতেছ তাহারা, যাহারা লিখাগুলি বড় দেখিতেছে উহাদের নিকট হইতে শিখিয়া লও।
গ. আর, যাহারা বাঙ্গালা দেখিতেই পারিতেছে না তাহাদের উদ্দেশ্যে আমার কিছুই বলিবার অবকাশ নাই। কী আর বলিব? উহারা তো এই পত্রই পড়িতে পারিতেছে না।
`````````````````````````````````````
পাদটীকা:
* শুভ্র আকাশপানে: ঘরের সাদা ছাদের দিকে।
* সবুজসম সূর্য্যখানা: ঘরের ঘূর্ণায়মান সবুজ পাখা।
* গুরুচন্ডালী দোষ: সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ যা দূষণীয়।
* সন্মানের পরাকাষ্ঠা: এখানে মহান ভাষা আন্দোলনকে অসন্মান করা হয়নি। আসলে, আমরা কেউ কেউ এই একটা মাস খুব বাঙালী হয়ে যাই। বাকি এগারো মাস কোন খেয়াল থাকে না। অনেকটা রোজার মাসে খুব ইবাদত বন্দেগী করে বাকি বছর পাপে মগ্ন থাকার মতো। তাদেরকেই কটাক্ষ করা হয়েছে মাত্র।
==========================================
আমি এমনিতেই ভালো লিখতে পারি না। আর, সাধু ভাষা? সে তো আরো না! আমি নিশ্চিত এখানে হয়ত বেশ কিছু ভুল আছে। ধরিয়ে দিলে খুশিই হবো।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: চাপ্পুর চীপ মডু জনাব ডিমওয়ালা। এটি লিখে পাঠানোর আগে ওনাকে দেখিয়েছিলাম। বেশ কিছু ভুল সংশোধন করে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে ধন্যবাদ।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:২১
নিষণ্ণ বেদন বলেছেন: সাধু ভাষায় কীভাবে হো হো করিয়া হাসিতে হয় জানা নাই। তবে "সংযোগ দিয়া" এই অংশটুকু পড়িয়া উচ্চকণ্ঠে আমোদিত হইলাম।
২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:১৬
সাদা কালো এবং ধূসর বলেছেন: পত্রখানি অসাধারণ হইয়াছে
জন্ডিসের কথা পড়িয়া কিঞ্চিত উদাস হইলাম, একখানি সার্থক পত্র ইহা।
সাধু ভাষায় আর ইহার অধিক কহিতে/লিখিতে পারিলাম না।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৫১
নিষণ্ণ বেদন বলেছেন: বটে! সত্যই ইহা একটি সত্যকথন ছিলো কি, হে কবি? নাকি এই অধমের পানে স্বভাবসুলভ দয়া ফরমাইলেন? আর, উদাস তো পূর্ব থাকিয়াই হইয়া রহিয়াছেন, নতুন করিয়া আরো উদাস হওয়া উচিত হইবে কি?
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:৪০
নিষণ্ণ বেদন বলেছেন: আমি যাহা লিখিলাম তাহাকে বলিলেন সার্থক পত্র, আপনি উহা লিখিলে তাহাকে নিশ্চয়ই বলিতাম সার্থক পদ্য!
৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:১৪
মমমম১২ বলেছেন: আপনার পত্র পাঠ করিয়া বড়ই চিন্তযুক্ত হইয়াছি,এই রুপ পত্র অসুস্থতাহেতু মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ বলিয়া বোধ হইতেছে।
পরম করুনাময়ের নিকট আপনার আশু মঙ্গল কামনা করিতেছি।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:০৮
নিষণ্ণ বেদন বলেছেন: চিন্তাযুক্ত হইয়া কি দুর্মনা হইয়াছেন? উহা তো বোধ হইতেছে না। বরঞ্চ বেশ পুলকিত হইয়াছেন বলিয়াই আমার ধারণা হইলো।
আর, মঙ্গল কামনার মাঝেও দুর্বাসনা ফুটিয়া উঠিলো। বলি, মঙ্গলের আগেই যে শনি আসিয়া শ্বাস ফেলিবে তখন বাঁচিবার কি কোন উপায় দেখিতে পাইবো?
৪| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২০
মেঘশাদা বলেছেন: ভাইয়া তুমি এত কঠিন করে কেমনে লিখছ?
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৪০
নিষণ্ণ বেদন বলেছেন: তুমি কি সম্পূর্ণ পত্রখানি পড়িয়াছ? পড়িয়া বুঝিয়া থাকিলে মানিতে হইবে ইহা নিশ্চয়ই কঠিন নহে। আর, ইহাকে কঠিন বলিতেছ কেনো? আমার লিখা তো সাধু ভাষার অতিশয় সহজ একটি রূপ মাত্র। তুমি কি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কোন উপন্যাস পড়িয়াছ? পড়িলেই বুঝিবে সাধু ভাষা কাহাকে বলে, উহা কত প্রকারের এবং কী কী! তাঁহার কোন কোন শব্দের অর্থ হূমায়ুন আহমেদের একাধিক বাক্যের সমান হইয়া দাঁড়ায়!!
আমার বিশ্বাস, প্রচেষ্টা করিলে তুমিও এরূপ লিখিবার সামর্থ্য লাভ করিবে।
৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:২৮
শূন্য আরণ্যক বলেছেন: হাহাহাহাাহাহ
কঠিন কঠিক ---
অসুস্থ মস্তিস্কে মাঝে মাঝে বিকার ভর করে --
তোয়ালে কে নিরুপমা ভেবে চেপে ধরতে ইচ্ছে করে
ঠা ঠা ঠা !!
০৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৫১
নিষণ্ণ বেদন বলেছেন: "অসুস্থ মস্তিস্কে ..." !? "তোয়ালে কে নিরুপমা ভেবে ..." !?
হে বন্য আরণ্যক, কী কহিলেন আপনি ইহা!!
যাহাই হউক, তিনি তো নিরুপমা নহেন! তিনি যে মোর অনামিকা!! :#>
৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৩৪
দেশী পোলা বলেছেন: বাক্যরুদ্ধ! কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া গেলাম
০৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:০৫
নিষণ্ণ বেদন বলেছেন: বাক রুদ্ধ হউক। কর্তব্য বিমূঢ় হইয়া পড়ুক। তথাপি লেখনী ছুটিয়া চলিতে থাকুক অবিরাম।
৭| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৫২
সাদা কালো এবং ধূসর বলেছেন:
মহাশয়ের প্রতি গদ্যেই যে পদ্যলক্ষণ উপস্থিত থাকে উহার উপায় কি হইবে
সবুজ সূর্য - আহা!
গোপনে পদ্যচর্চা বিশেষ দোষনীয় এবং ক্ষতিকর কর্মকান্ড।
০৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৩:০৬
নিষণ্ণ বেদন বলেছেন: কবি সর্বদা, সর্বস্থানে, সর্বকিছুর মাঝে পদ্যই দেখিবেন ইহা আর নূতন কী?
আমি লিখিলাম পত্র।
তিনি বুঝিলেন ছত্র।
৮| ১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:২৬
মমমম১২ বলেছেন: আরো কিছু আসুক এক চিঠি আর কতকাল
৯| ৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:১৫
সাদা কালো এবং ধূসর বলেছেন: মমমম১২ বলেছেন: আরো কিছু আসুক এক চিঠি আর কতকাল
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৫৩
ব্রাইট বলেছেন: সংযোগ দিয়া বাধিত হইলাম।