![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
World is totally meaningless. Though sometime you will find here happiness. But length of happiness is highly limited. Original color of the world is black.
বাংলাদেশকে রাজাকারমুক্ত করার যে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ বা শুদ্ধি বিপ্লব শুরু হয়েছে, এই যুদ্ধে রাজাকার ও রাজাকার সন্তানদের হাতে প্রথম শহীদ জাফর মুন্সী। তবে তিনি এই তরুণ প্রজন্মের নন। তিনি প্রজন্মসেনাও নন। তিনি সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু তাঁর বুকের ভেতর থাকা দেশপ্রেমের আগুনটি জ্বালিয়ে দিয়েছিল এই রাজিবদের প্রজন্ম। অন্যদিকে রাজিব ছিলেন এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধটি বা আমাদের এই শুদ্ধি বিপ্লবের যাঁরা ডাক দিয়েছেন সেই সংগঠকদের একজন। শুক্রবার জাগরণী সমাবেশ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে জামায়াত-শিবির তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের আগে যে কাজ করেছিল সেই কাজ করেছে জামায়াত-শিবির, রাজিব হত্যার ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হলো তারা আবার সেই কাজ শুরু করেছে। তারা এখন আর শুধু পুলিশের ওপর হামলা করছে না। তারা একাত্তরের মতো আবার পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করেছে।
রাজিব হত্যার খবর শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে দাঁড়িয়ে পাওয়ার পরে মনে হয়, এই তরুণরা, যাঁরা কোনদিন রাজনীতি করেননি তাঁরা হত্যাকা-ের খবরে হয়ত ভয় পেয়ে যাবেন। জামায়াত-শিবিরের মূল উদ্দেশ্য সেটাই। কিন্তু বাস্তবে ঘটনা ঘটে উল্টো। ওই রাতেই এ খবর পাওয়ার পরে চারদিক থেকে শত শত তরুণ দলে দলে ঢুকতে থাকেন শাহবাগ চত্বরে। অথচ সকলে ধীরস্থির। ক্ষোভের আগুন তাঁদের চোখে-মুখে। কিন্তু চারপাশে রাখা এত গাড়ি, এত স্কুটার। না তাঁরা কোন ভাংচুর করছেন না। তাঁদের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ শুধু স্লোগানে আর অবস্থানে। আমাদের ভেতর কবে এই তরুণরা জন্ম নিয়েছেন, কবে বড় হয়েছেন আমরা কিন্তু বুঝতে পারিনি। এই তরুণরা তো পৃথিবীর উন্নত দেশের যে কোন তরুণের মতোই।
রাজিবের খবরের পরে এই যে শত শত তরুণ-তরুণী ওই মধ্যরাতে শাহবাগে ঢুকছেন। যাঁদের কণ্ঠে কেবল একটি কথা, রাজিব হত্যার বিচার চাই। যাঁদের কণ্ঠে সেই এক দাবি রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ চাই। অথচ তাঁরা কোন ভাংচুর করছেন না। একটি কাগজেও তাঁরা আগুন জ্বালাচ্ছেন না।
অন্যদিকে জঙ্গী জামায়াত- শিবির শুধু যে জাফর মুন্সী আর রাজিব হায়দারকে হত্যা করছে তা নয়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কক্সবাজারে তা-ব চালায় একই দিনে। তখন কেবল মনে হলো, বাংলাদেশে এখন যে পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম প্রতিনিধি আছেন তাঁরা কি আসলে অন্ধ হয়ে গেছেন। তাঁরা কি এই সত্যটুকু দেখতে পাচ্ছেন না যে, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ শান্তিপূর্ণভাবে একটি জঙ্গী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। যে লড়াই আমেরিকা, ইউরোপও করছে। লজ্জা করে এখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকায়। এরা কিনা বলছে বাংলাদেশের ধর্মীয় নেতাদের ফাঁসি দেয়ার জন্য আন্দোলন করছে? এসব সংগঠনের ভূমিকা দেখে এখন মনে হয়, আসলে এরা এখন ব্যবসা করে। এরা জঙ্গীদের অর্থ দ্বারা লালিত হয়।
শনিবার অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, জামায়াতের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরে শাহবাগে কেমন লোক হবে? যাঁরা এদিন বিকেলে শাহবাগ গিয়েছিলেন তাঁদের বুক ভরে যাওয়ার কথা। স্কুলের ছোট ছেলেমেয়েগুলোও তাদের স্কুল ড্রেস পরে চলে এসেছে। তারা উচ্চ কণ্ঠে অথচ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আর শাহবাগ হয়েছে জনসমুদ্র। জানাজা যেন মহাসমাবেশের আকার ধারণ করে। স্বাধীনতার ৪২ পরে জন্ম নেয়া এক তরুণের মৃতদেহ এলো জাতীয় পতাকায় জড়িয়ে, ফুলে ফুলে ও লাখো মানুষের বিনম্র্র শ্রদ্ধায় ভর করে শাহবাগ চত্বরে। তখন লাখো মানুষের চোখে জল, বুকে আগুন। আর একটি স্লোগান এক রাজিব লোকান্তরে, লক্ষ রাজিব ঘরে ঘরে।
যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন, তাঁদের প্রতি শুধু একটি অনুরোধ সারাদেশ আর কিভাবে এক হলে আপনারা বলবেন, জাতীয় ঐক্য হয়েছে। আর কবে আপনারা জঙ্গী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করবেন? হিযবুত তাহ্রীর মতো এরাও জঙ্গী। এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে আর কালক্ষেপণ কেন? প্রবাসী বাঙালীদের প্রতি অনুরোধ, যে যেখানে আছেন, রাজিবের রক্তের শপথ নিয়ে এখন বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে কাজ করুন। যেমন ’৭১-এ করেছিলেন প্রবাসী বাঙালীরা। যাতে বিশ্ব মিডিয়ায় আর ভুল সংবাদ বা একপেশে সংবাদ পরিবেশিত না হয়। বিশ্বজনমত গড়ে ওঠে যেন এদের নিষিদ্ধ করার পক্ষে।
তথ্যসূত্রঃ স্বদেশ রায়, দৈনিক জনকন্ঠ, রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৩, ৫ ফাল্গুন ১৪১৯
©somewhere in net ltd.