![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখির মাধ্যমে আমি নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল প্রকাশ খুঁজে পাই। আমার লেখার লক্ষ্য পাঠকদের ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা এবং একটি অর্থবহ আলোচনা তৈরি করা।
“ছয় বছরের প্রতীক্ষা শেষে ফিরে এলেন আরিফ—মরুভূমি পেরিয়ে স্বপ্ন ফিরল তার বাড়ি, সুমি আর ছোট্ট আয়রার বুকে।”
আরিফের চোখে ক্লান্তির ছাপ। মরুভূমির তপ্ত বালিতে দিনের পর দিন কাজ করতে করতে শরীরটাই যেন ধুঁকতে ধুঁকতে বুজে যাচ্ছে। দুবাইয়ের নির্মাণ সাইটে হাজারো শ্রমিকের মাঝে সে নিজেকে একাকার মনে করে, কিন্তু মনে মনে একটাই আশার আলো—সে বাড়ি ফিরবে। একদিন সে সুমিকে জানাবে, তাদের ছোট্ট পৃথিবী আবার এক হবে। আয়রা, তার ছোট্ট মেয়ে, যাকে সে কখনও হাতেও ধরতে পারেনি, তার মুখ দেখতে পাবার স্বপ্ন।
ছয় বছর হয়ে গেছে, সুমি আর আয়রা একা। সুমি মা হিসেবে যুদ্ধ করে গেছে, এক হাতে সংসার সামলেছে, আরেক হাতে সন্তানকে বড় করেছে। কিন্তু গ্রামে লোকজনের কটূক্তি, প্রতিবেশীদের উক্তি তাকে কষ্ট দিত। “স্বামী বিদেশে, তুই একাই মেয়ে বড় করছিস?”—এগুলো ছিল তার প্রতিদিনের সংগ্রাম।
তবে আয়রার মনস্তত্ত্ব ছিল আরও জটিল। পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি বারবার মায়ের কাছে প্রশ্ন করতো, "বাবা কোথায়, মা?" তার মনে এই প্রশ্ন ছিল—একদিন কি বাবাকে দেখা যাবে? সেই শিশুটির হৃদয়ে ছিল মিশ্র অনুভূতি—অপেক্ষা, একাকীত্ব, আর ধীরে ধীরে বাবার অভাব।
আরিফ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল, দেশে ফিরলে আর কখনও বিদেশে যাবে না। কিন্তু অভাব আর সংসারের চাহিদা তাকে বাধ্য করেছিল আরও কিছু সময় সেখানে থাকতে। একদিন তার দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হয়। সে শিডিউল নিয়ে প্রস্তুত হলো, কিন্তু একটি অদ্ভুত দ্বিধা তার মনে জায়গা নিল—সুমি কি জানবে? না, সে কি জানত আরিফ ফিরে আসবে?
আরিফের মন আজ অস্থির, কিছুটা শঙ্কিত। সে জানত না সুমি কতটা প্রস্তুত। সে চুপচাপ গ্রামের পথে পা বাড়ায়, সেই পথ যা সে বহু বছর আগে ত্যাগ করেছিল। পথে ধীরেধীরে পেরিয়ে যায় একের পর এক স্মৃতির পাহাড়। সেই পুরনো টং দোকান, যেখানে একসাথে বসে চা খেত, সেই নদীর পাশ দিয়ে হাঁটার সময়ের চেনা গন্ধ—সব কিছু যেন তার দিকে তাকিয়ে ছিল। একে একে স্মৃতিগুলো চোখে ভাসে। কখনোই এত দীর্ঘ সময় এভাবে বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা হয়নি তার। কিন্তু আজ তাকে ফিরতেই হবে। ফিরে আসতেই হবে।
সুমি তখন বাড়ির উঠোনে, আয়রাকে বুকে আঁকড়ে ধরে গোসলের কাপড় ধোয়ার কাজ করছিল। তবুও, তার মন ছিল দূরে, স্বপ্নে। সে জানত না তার স্বামী ফেরত আসবে, আর যদি আসে, কীভাবে সে তার সঙ্গে মিলে এক নতুন জীবন শুরু করবে। এমন সময় সুমির পেছন থেকে এক সশব্দে তার স্বামীর কণ্ঠ শোনা যায়, "ফিরেছি... স্থায়ীভাবে।"
সুমি হঠাৎ চমকে ওঠে, তার শরীরে যেন বিদ্যুৎ চলে আসে। সে মুহূর্তেই পিছনে ফিরে তাকায়, এবং দেখল আরিফ তার সামনে দাঁড়িয়ে। অনেকটা সময় সে কেবল তাকিয়ে রইল, তারপর হঠাৎ সে আরিফকে জড়িয়ে ধরে, অশ্রু বিসর্জন দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠল। সমস্ত দুঃখ-কষ্ট, অভিমান, আর অপেক্ষার শেষ যেন সেই মুহূর্তে আছড়ে পড়ল।
ঠিক তখনই, আয়রা ছোট্ট পায়ের শব্দ নিয়ে আসে। সে তার মায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে দেখে, মা আর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
আয়রা কিছুটা বিভ্রান্ত, কিছুটা অবাক, সে তো বাবা সম্পর্কে কিছুই জানতো না। মা যখন তাকে বাবার দিকে ইশারা করল, আয়রা ছোট্ট হাতটা বাড়িয়ে দেয়। তার বাবা তাকে কোলে তুলে নেয়। সে আনন্দিত। সেই ক্ষণটি যেন আরিফের জীবনের সবচেয়ে পূর্ণতম মুহূর্ত ছিল।
আরিফ, সুমি, এবং আয়রা—তিনজন একে অপরকে জড়িয়ে থাকে। আরিফের চোখে অশ্রু ছিল না, কিন্তু তার হৃদয়ে ছিল এক অদ্ভুত শান্তি। সে জানত, এই পৃথিবীটা এখন পূর্ণতা পেয়েছে। তার স্বপ্ন, সুমির অপেক্ষা, আয়রার অবাধ আনন্দ—সব কিছু এক হয়ে গেছে।
"এবার আর কখনও বিদেশে যাব না," মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আরিফ। জীবনটা সে এখন নিজের দেশে, নিজের পরিবারের সঙ্গে কাটাবে।
এটি ছিল সেই সময়, যখন "স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার"—এবং এক নতুন পৃথিবী তাদের অপেক্ষায় ছিল।
স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার—অবশেষে এক নতুন ভোরের শুরু।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করছি। একদিন হয়তো সঠিক হবে।
২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়লাম।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩২
বিজন রয় বলেছেন: প্রবাস জীবনের একটি আবেগঘন লেখা।
প্রত্যেক লেখা লেখকের কাছে অনেক মূল্যবান।
ভাল লিখেছেন, আপনি লিখতে থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩০
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
আপনি সবকিছু লেখেন, কোনটাই সঠিক হয় না।