নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

খালেদা জিয়ার জানাজা

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৯

আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন আমার নানীর বোন মারা যান। নানীর বোন তখন নানাবাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন। সেইবারই আমি প্রথম কোনো মৃতদেহ সরাসরি দেখেছিলাম। রাতের বেলা যখন লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দিল তখন আমারই পরিচিত বাড়িটা আমার কেমন যেন ভীত মনে হতে লাগল। আমি সেই ছোটবেলা থেকেই একা একা ঘুমাই। তবে সেদিন আমি আমার মায়ের পাশে ঘুমিয়েছিলাম ভয়ের কারণে। সেই যে ভয় এসে আমার মনের ভেতরে গেঁড়ে বসেছে তারপর থেকে আমি আর কোনো দিন কোনো লাশ দেখিনি, দেখতে যাইনি। এমনকি জানাজা থেকেও আমি দূরে থাকার চেষ্টা করেছি। আমার নানা যখন মারা গেলেন তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। নানাবাড়ি একেবারে আমাদের বাড়ির পাশেই। তবুও আমি নানার মৃত মুখ দেখতে যাইনি। জানাজাতে যদিও অংশ নিয়েছিলাম। তারপর আমি আর কোনো মানুষের জানাজা পড়িনি। আমি সব সময় এড়িয়ে চলেছি মৃতদেহ এবং জানাজা। তারপর ২০১২ সালে হুমায়ূন আহমেদের জানাজা পড়েছিলাম। এরমাঝে আরও কয়েকজন পরিচিত মানুষের মৃত্যুর খবর আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু আমি তাদের জানাজাতে অংশ নিইনি। মৃতদেহের কাছে গেলেই আমার মনের ভেতরে সেই ছোটবেলার ভয় এসে জড়ো হয়। হুমায়ূন আহমেদের বেলায় সম্ভবত সেই ভয় ছাপিয়ে তার প্রতি ভালোবাসাটা বেশি কাজে দিয়েছিল।
আজকে সকাল বারোটা পর্যন্তও আমার কোনো ইচ্ছে ছিল না বেগম খালেদা জিয়ার জানাজাতে অংশ নেওয়ার। আমি ঠিক করেছিলাম বাসাতেই থাকব। দুপুরে গোসলের সময় দাদা হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার এত জলদি গোসল করছেন, জানাজায় যাবেন নাকি! আমি হেসে না বলে দিলাম। তখন আমার যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু গোসল করতে করতে আসলে কী যে মনে হল আমি বলতে পারব না। আমার মনে হল যে আজকে যদি আমি মানিক মিয়া এভিনিউতে না যাই তবে বুঝি সারা জীবন একটা আফসোস রয়ে যাবে আমার!
আমি গোসল শেষ করে ওজু করেই বের হয়ে গেলাম। বাসা থেকে পুরো রাস্তা আমি হেঁটেই হাজির হলাম। টাউন হল পার হতেই দেখতে পেলাম যে আমার সাথে শত শত মানুষ হাঁটছে। আসাদ গেট পার হয়ে একটা পর্যায়ে এমন মানুষের ঢলের ভেতরে পড়লাম যে বলার মতো না। আমি বোকার মতো সংসদ ভবনের সামনে যেতে চাইলাম। কিন্তু এত এত মানুষ। আমি যেন মানুষের জনসমুদ্রে গিয়ে হাজির হয়েছি। আমি সবচেয়ে একবার ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বইমেলায় গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। সেই দিন মেলার গেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এত মানুষের ভিড় ছিল যে আমি তারপর থেকে সব ভিড় এড়িয়ে চলেছি। এমন কোনো জায়গায় আমি যাই না যেখানে ভিড় থাকে। কিন্তু আজকের এই ভিড়ের কাছে সেই সব ভিড় ছিল শিশু। তারপর কীভাবে সেই ভিড় পার হয়ে যে আমি সাতাশ নম্বরের কাছে গিয়ে হাজির হলাম। সেখানেও মানুষ আর মানুষ। তবে এখানে একটা সুবিধা ছিল এদিকে সবাই কাতারের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। তাই হাঁটা যাচ্ছিল। আমি সেখানে কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইলাম। তবে সেখানে মাইকের কোনো আওয়াজ আসছিল না। পরে আরও সামনের দিকে গিয়ে রাস্তা পার হয়ে লালমাটিয়ার ভেতরের দিকে চলে এলাম। অনেকটা সময় হাঁটার পরে আড়ংয়ের কাছে এসে হাজির হলাম। আর বেশি দূর যাওয়ার উপায় ছিল না। তবে এখানে সরাসরি মাইকের আওয়াজ ভেসে আসছিল। সেখানেই একটা কাতারে দাঁড়িয়ে গেলাম।
আবারও প্রায় ঘণ্টাখানেক কাতারেই দাঁড়িয়ে রইলাম। ঠিক জানাজার আগে তারেক রহমানের এক মিনিটের বক্তব্য কানে এল। একজন ছেলে সবার কাছে তার মৃত মায়ের ঋণের কথা জানতে চাইছে, মৃত মায়ের হয়ে ক্ষমা চাইছে। আমার ঠিক মনে আছে হুমায়ূন আহমেদের জানাজার ঠিক আগে নুহাশ হুমায়ূন ঠিক একই ভাবে তার বাবার ঋণের কথা বলেছিল আর তার বাবার আচরণে কেউ কষ্ট পেলে তার হয়ে ক্ষমা চেয়েছিল। আমার নানার জানাজার সময় আমার বড় মামাও ঠিক একই কথা বলেছিল।
জানাজা শেষে আমি হাঁটতে হাঁটতেই বাসায় ফিরে এলাম।
আমি যখন স্কুলে পড়ি সেই সময়ে একবার বেগম খালেদা জিয়া একবার রাজনৈতিক জনসভায় চুয়াডাঙ্গায় এসেছিলেন। ঠিক কত সাল সেটা আমার মনে নেই তবে আমি তখন স্কুলে পড়তাম। রাজনীতির কিছুই বুঝতাম না বা বোঝার চেষ্টাও ছিল না তখন। তবে তখন আমি খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। বড়বাজার চৌরাস্তায় মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। আমি সেইবার তাকে সরাসরি দেখেছিলাম। সেই সময়ের কোনো মহিলা যে এত সুন্দরী হতে পারে সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। তিনি টিভিতে বা ছবিতে যতটা সুন্দরী ছিলেন বাস্তবে তার থেকেও অনেক অনেক বেশি সুন্দরী ছিলেন। ছোটবেলায় এই স্মৃতি আমার মনে আছে এখনও।
আজকে পুরো ঢাকা শহরই যেন তার জন্য শোক করেছে। জানাজার লাইন সেই বাংলামোটর পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। মেট্রো স্টেশনে আজকের মতো ভিড় আর কখনো হয়নি। বাধ্য হয়ে কয়েকটা স্টেশনে টিকিট গেট চেকিং ছাড়া ওপেন করে দিতে হয়েছে। মানুষ মেট্রো স্টেশনে জানাজা পড়েছে, বাসার রাস্তার ছাদে ছাদে কয়েকজন মিলে জানাজাতে অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন আর কারো বেলায় হয়েছে কিনা আমার জানা নেই আর এমন আর কারো বেলায় হবে কিনা সেটাও আমার জানা নেই।
উপরওয়ালা তাকে জান্নাত দান করুক এই দোয়া করি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৬ রাত ১২:০৪

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: আমিন ! আল্লাহ্‌ তাঁকে জান্নাত বাসি করুন ।

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৬ রাত ১২:২২

আরোগ্য বলেছেন: শহীদ হাদি ও বেগম জিয়ার জানাজা জুলাই অভ্যুত্থানকে ভিন্নভাবে দেখতে আমাকে বাধ্য করছে। সম্মান দেওয়ার মালিক যে আল্লাহ তা আরো বৃহদাকারে প্রমাণিত হলো। এখন যদি স্বৈরাচার থাকতো তাহলে এ দুজন মানুষকে অপমান করার সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র করতো কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা বান্দার চিন্তার বাইরে। আল্লাহ তায়ালা হাদি ভাই ও আপোষহীন জননেত্রীকে পরজগতেও সম্মানিত করুক।

আপনার মত আমারও ছোটবেলায় নেত্রীকে দেখার সুযোগ হয়েছিলো, একবার আমার এক আত্মীয়ের মৃত্যুতে আমাদের বাসায় এসেছিলেন, আমার বয়স তখন আট তাই লোকজনের ভিড়ে কাছে যাওয়া বড়দের নিষেধ ছিল। আমার নির্বাচনী প্রচারণায় যখন আমাদের এলাকায় আসলেন তখন স্টেজ একদম বাসার সামনে। যতদুর মনে পড়ছে সে রাত প্রায় একটা বাজে নেত্রীর আগমন ঘটে, আমরা দোতলার বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছিলাম, সম্ভবত সাদা শাড়ি পড়ে এসেছিলেন। এটা আসলেই সত্যি উনার ব্যক্তিত্ব ছিল তাকিয়ে থাকার মতন।

৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৬ রাত ২:৪৪

মিরোরডডল বলেছেন:





It's always sad to say goodbye forever.

রাজনীতিবিদ হিসেবে কেমন সে মন্তব্য না করি, তবে ব্যক্তি খালেদা জিয়াকে পছন্দ করি।
একবার এক ইভেন্টে তার সাথে পরিচয় এবং কথা হয়েছিলো।
তার আলোকিত সৌন্দর্য, স্নিগ্ধতা, তার চোখ এবং হাসি, ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছিলো।

প্রিয় মানুষটা ওপারে ভালো থাকুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.