![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখির মাধ্যমে আমি নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল প্রকাশ খুঁজে পাই। আমার লেখার লক্ষ্য পাঠকদের ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা এবং একটি অর্থবহ আলোচনা তৈরি করা।
(একটি নিটোল গল্প, স্মৃতির ভেতর ঘুমিয়ে থাকা এক যামিনীকে নিয়ে)
কিছু গল্প কখনও শেষ হয় না, শুধু সময়ের ভাঁজে ভাঁজে থেকে যায়।
প্রেম সবসময় উচ্চারণ করা যায় না—তবু তার রেশ বয়ে চলে জীবনের শেষ প্রহর পর্যন্ত।
আজ শেয়ার করছি এমনই এক গল্প—যার শুরু হয়েছিল কৈশোরে, আর শেষ হয়নি কখনও।
আমার নাম আজিজুল হক। বয়স অনেক, এতটাই যে এখন পায়ের ব্যথা বলে দেয় ঋতুর পরিবর্তন। আমি লন্ডনে থাকি।
বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি। জানালার কাঁচ বেয়ে বিন্দু বিন্দু জল গড়াচ্ছে—মনে হচ্ছে সময় গলে যাচ্ছে।
এমন রাতগুলোতেই পুরনো স্মৃতি এসে দরজায় কড়া নাড়ে।
প্রথম দেখা
আমার কৈশোর কেটেছিল নোয়াখালীর এক গ্রামে—সবুজে ঢাকা, কুয়াশার চাদরে মোড়া।
সেই গ্রামে এক গ্রীষ্মে এসেছিল এক মেয়ে।
যামিনী সুধা রায়।
কোলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়ে। ছুটিতে ফিরেছিল তাদের পূর্বপুরুষদের বাড়িতে।
তখন সে ছিল এক অলীক দৃশ্য—জলপাই রঙের পালকিতে, হাতে মলাটছেঁড়া রবীন্দ্রনাথের বই, চোখে উদাস দৃষ্টি।
আমি ছিলাম গ্রামের সাধারণ ছেলে, গ্রামের স্কুলে পড়তাম। সাহস ছিল না, কিন্তু কৌতূহল ছিল পাগলের মতো।
প্রতিদিন দুপুরে পালকি যখন যেত, আমি পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকতাম।
একদিন হঠাৎ পালকি থেমে গেল...
মিষ্টির বাক্স
সে জানালার কাপড় সরিয়ে বলল—
“তুই এতদিন ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিস, আজ কিছু বলবি না?”
আমি জবাব দিতে পারিনি। কেবল তাকিয়ে ছিলাম—স্তব্ধ, বোকা হয়ে।
সে নেমে এলো। হাতে ছোট টিনের বাক্স।
বলল, “এটা রাখ। আমার প্রিয় মিষ্টি। ভাগ করে খাস।”
হাত কাঁপছিল আমার। হৃদয় যেন বুক ভেঙে বেড়িয়ে আসবে।
আমি বাক্সটা হাতে নিয়েই দৌড়ে পালালাম।
সেই দৌড়—মনে হয় আজও থামেনি।
জীবনের বাঁক
তারপর? জীবন ছুটলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তারপর বিদেশে উচ্চশিক্ষা, পিএইচডি।
বিয়ে, সন্তান, অধ্যাপনার ব্যস্ততা—সবই ছিল।
তবে মাঝে মাঝে... ঠিক যেন কুয়াশার আড়াল থেকে কেউ ডাকতো।
যামিনী।
কোলকাতায় খোঁজ
বিয়ের অনেক বছর পর, একবার কোলকাতায় গিয়েছিলাম এক সেমিনারে।
হঠাৎ মনে হলো—যদি একবার দেখা যেতো তাকে?
খুঁজতে বেরোলাম পুরনো ঠিকানা নিয়ে।
বাড়িটা ছিল চিৎপুরের এক গলিতে, জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ তখন ঝড়ে ভেঙে পড়ছে।
এক বৃদ্ধ বললেন,
“রায় পরিবারের মেয়েটা অনেক বছর আগে হারিয়ে গেছিল। শুনেছি বাড়ির চিঠিপত্র বিক্রি হয়ে গেছে এক পুরনো বইয়ের দোকানে।”
খুঁজতে খুঁজতে ঢুকে পড়লাম এক বইয়ের দোকানে।
এক পুরনো রবীন্দ্রনাথের বইয়ের ভাঁজে পেয়ে গেলাম হলুদ হয়ে যাওয়া একটা কাগজ।
লিখা ছিল—
“তুই যে পালিয়ে গেছিস, আমি তো তা জানি।
কিন্তু মিষ্টিগুলো খেয়েছিস তো?
জানিস, আমি তখনই বুঝেছিলাম—ভালোবাসা মানে বুক কাঁপা।
আমারও কাঁপছিল।”
— যামিনী সুধা
আজকের আমি
এখন, দূর প্রবাসে আমার বাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি।
মাঝেমাঝে কুয়াশা ভেদ করে দেখি—একটা পালকি যাচ্ছে।
একজোড়া চোখ জানালা থেকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
সে কি যামিনী?
নাকি আমার স্মৃতির তৈরি ছায়া?
আমি জানি না।
তবে এটুকু জানি—সব প্রেম প্রকাশ পায় না।
কিছু প্রেম থেকে যায় অপ্রকাশিত, তবু তারা হারায় না।
তারা রয়ে যায়—একটা বাক্সে রাখা মিষ্টির মতো,
যার স্বাদ আজও মন ছুঁয়ে যায়, রাত্রির শেষ প্রহরে।
গল্পের শেষ নেই।
শুধু আছে অনন্ত প্রতিধ্বনি।
প্রেম যতই অপ্রকাশিত থাকুক—সে থেকেই যায়,
একটা বাক্সে রাখা মিষ্টির মতো,
একটা নামহীন স্মৃতির মতো।
০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২১
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। যখন গল্পের নায়ক নিজেই সেই গল্পের প্রসংশা করেন তখন আনন্দটা অন্য মাত্রায় চলে যায়।
২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
আপনি আমার কোন নিকের পোষ্টে ইহা দেখেছিলেন?
০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৩
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার যামিনী সুধা নিকে এ বিষয়ে কিছু কথা বলেছিলেন।
৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৬
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো লেগেছে পড়ে ।
০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৪
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগলো। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০২
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৮
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
আজিজুল হককে সেমিনারে নিয়ে গেছেন, এটুকু কল্পনা; কিন্তু ৭০ ভাগই জীবনের সাথে মিশে আছে। আজকে এই লেখা না'পড়লে বিশাল কিছু একটা মিস হয়ে যেতো। ধন্যবাদ, সেই কিশোর জীবনের দিনগুলোকে আবারো মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।