নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লতার যতো কথা

কেউ বুঝে না এই আমাকে...তাই আমিও কাউকে আর বুঝতে চাই না।

লতিফা লতা

কেউ বুঝে না এই আমাকে ... তাই আমিও কাউকে বুঝতে চাই না ।

লতিফা লতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্তর জানা নেই

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫৬







''.... কিন্তু তাকে যেতে হবে জীবনের অনেক ওপরের তলায়। যেখানে পৌঁছে মেয়ে হিসেবে কারও অনুকম্পা পাওয়ার বদলে মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারবে।



না ; ভেবে কোন লাভ নেই। তাকে যেতে হবে সেই বালকের মত যে, পাহাড়ি রাস্তায় চলার সময় আগে থেকেই দ্বিতীয় অদেখা বাঁকটির কথা চিন্তা করে না। উপরে ওঠার সেটাই সবচেয়ে বুদ্ধিগ্রাহ্য উপায়। সমস্যা যা আসবে তাই নিয়ে ভাবা, তারই মোকাবেলা করা। সূদুরের কথা আগাম চিন্তা করা বোকামী। জীবন মানেই সুখের স্মৃতি বয়ে বেড়ানো। বেঁচে থাকা মানেই দু:খের সঙ্গে অজান্তেই সহবাস করা।''



-- ঠিক এক নি:শ্বাসে সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন উপন্যাসের এই লাইন কয়েকটি আওরাচ্ছে মোনা।



নিজের জীবনের সঙ্গে মিলে যাওয়া উপন্যাসটির বিভিন্ন শব্দমালা বারবারই সে আওড়ায় আর নিজেকে তৈরি করে সামনের জন্য। নিজেকে সাতকাহনের দীপাবলী ভাবতেই কেন জানি আজকাল তার বেশি ভালো লাগে। সময় কম তাই উপন্যাসটি শেষ করতে পারলনা সে। কারন আজই তাকে ছুটতে হবে গ্রামের বাড়ি ।



ওখানে অপেক্ষা করছেন মা। তাই সকাল সাতটার বাসের টিকিট কেটেছিল সে। উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব মায়ের মুখ দর্শণ আর কী।

কিন্তু সাভারের পর্যটন রেস্টুরেন্টটির দিকে চোখ পড়তেই আতঁকে উঠল মোনা । কল্পনার ভাবাবেগ, নাকি অতীতের স্মৃতি কিভাবে সে বরণ করবে এ রেস্টুরেন্টটিকে?



না, আজ সে রেস্টুরেন্টে কারও সাথে সময় কাটানোর জন্য আসেনি। সুদূর বরিশাল যাচ্ছে নিজের গ্রামের বাড়িতে। সাভার স্মৃতি সৌধের কাছে আসতেই গাড়ীর যান্ত্রীক ক্রটির কারণে থামাতে হলো। ডানদিকে জানালার কাছেই ছিল মোনার জন্য নির্ধরিত আসনটি। ঠিক নির্ধারিত নয়, নগদ অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়েছিল সে।



একটা সময় ঢাকা থেকে সাভার যাওয়াটা তার কাছে ছিল ডাল-ভাতের মত বিষয়। অতীতের সেই স্মৃতিকে সে মেনে নিতেও পারছে না আবার ভুলেও যেতে পারছে না। হঠাৎ সুপারভাইজারের হাকডাকে সম্বিৎ ফিরে পেল সে “আপা এখানে ১ ঘণ্টা সময় দেরী অইব। আপনারে কি অন্য গাড়িতে তুইলা দিব না দেরী করবেন ?” কিন্তু ক্যাথির ভিতরে যে ঝড় উঠেছে সেটা থেমে যেতে সে এক ঘণ্টা সময় নেহাতই কম সেটা তো আর সুপারভাইজার বুঝেনি।



অতীত কখনো মজার কখনো কল্পনার। মোনার কাছে এখন তাই মনে হয়। তবে তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে অনেক বেশি ট্রাজেডী মনে হয় কেন সে জানে না। গাড়ী যেহেতু ঘণ্টা খানেক থাকবে তাই সে নেমে যায় এবং অজান্তেই ঢুকে পড়ে পর্যটন মোটেলে। এককাপ কফির অর্ডার দিয়েই ফিরে যায় ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে।





আনুমানিক রাত ১২ টা হবে। মোনা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এমনিতেই রাত জাগার অভ্যাস তার। এটা সেই ক্লাস নাইনের সময় থেকে। হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। মন শুধু মন ছুঁয়েছে গানটি দেয়া ছিল রিং টোনে। আবার বেজে উঠল, এভাবে কয়েকবার। কিন্তু মোনা ফোনটি রিসিভ করল না। কারন মোনা ছিল খুব আধুনিক, স্বাধীনচেতা, সংস্কৃতিমনা মেয়ে। তারপরেও সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করত নিজের মত করে। হলে থাকত বলে নিজের অভিভাবক মানত নিজেকেই। আর একটি অদ্ভূত অভ্যাস ছিল তার। মায়ের কাছে কখনো মিথ্যা বলতো না সে।



আসলে বলার অভ্যাস করতো না। কারণ সে যাই করুক না কেন মা জিজ্ঞেস করলে তো বলতে হবে। আর অন্যায় কিছু করলেও তো সত্যিই বলতে হবে এ থেকেই আরও সচেতন হয়ে চলত। যেমন রাত ১০ টায়ও যদি বাইরে থাকত মা ফোন করলে বলত এই তো বন্ধুদের সাথে আছি এবং ভাল আছি। হলে ফিরব এখনই। আর মা সেই গ্রামে থাকলেও মানসিকতায় ছিলেন অনন্য এটাই ছিল মোনার তৃপ্তি। যাই হোক ক্যাথি নিজের জন্য নিয়ম করেছিল রাত ১১টার পরে কোন অপরিচিত নাম্বার অ্যাটেন্ড করবে না। একারণেই ফোনটা রিসিভ করা হয়নি। কিন্তু অসময়ে ফোনটা যেভাবে বেজেই যাচ্ছে রিসিভ না করে উপায়ই দেখছে না সে।



অগত্যা খুব কড়া মেজাজে রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে খুব সুন্দর টিউনে একটি ছেলে মোনার পুরো নাম ( রুমানা ইসলাম মোনা ) জিজ্ঞেস করে বলল,

কেমন আছেন ? আমি কি আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি?

মোনা আগের মতই রাগী সুরে বলল,

জি না পারেন না। আমার সাথে কথা বলতে হলে দিনের বেলা ফোন করতে হবে।

ফকিরের মত ২৫ পয়সা মিনিটে আমি কারও সাথে কথা বলি না।

আর এত রাতে অপরিচিত কারও সাথে কথা বলতেও আমি আগ্রহী না।

বলেই মোনা ফোনটা কেটে দিল।

এর পরেও ঐ নাম্বার থেকে মোনাকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হল, কিন্তু মোনা নিশ্চুপ।

যাই হোক সে রাতের সমাপ্তি এখানেই।



এরপর বেশ কয়েকদিন ঐ নাম্বার থেকে ফোন আসতে থাকল। কিন্তু মোনা তেমন পাত্তা দিল না এবং ফোন এটেন্ড ও করল না।

একদিন সকাল ১১ টায় আবার সেই ফোন যদিও নাম্বারটা মোনা রপ্ত করে ফেলেছে সহজেই। কারন বার বার ফোন আসাতে ডিজিটগুলো প্রায় তার মুখস্ত। রিসিভ করে জানতে চাইল,

আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছেন এটা আগে জানাতে হবে।

অতঃপর আমি কথা বলব।

যাই হোক অপর প্রান্তের লোকটি জানাল,

আমার নাম সাহেদ। আপনাকে দেখেছি বার দুয়েক একটি অনুষ্ঠানে।

আপনার উচ্ছ্বলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

তাই কথা বলতে চাই।

আমি আপনাকে ভালবাসি।







মোনা তো অবাক! হঠাৎ করে অকপটেই কেউ ভালবাসার কথা এভাবে বলতে পারে এটা চিন্তাই করতে পারেনি সে। যা হোক কথার ছলে সে এসব উড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ এমন হাজারটা ফোন হরহামেশাই এসে থাকে তার মুঠোফোনে।



পরদিন যথারীতি আবার সেই ফোন, এবার মোনা মহা বিরক্ত কিন্তু সাহেদের জ্বালাতনের কোন বিরাম নেই। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে এত ধৈর্য্য দিয়েছেন এই প্রথম দেখল মোনা।



না, সাহেদ কথা বলছে তার নিজস্ব গতিতেই এবং প্রতিবারই জানান দিচ্ছে তার ভালোবাসার কথা। র বিরক্তি সবসময়ই। এছাড়াও ভালোবাসা বিষয়টি মোনাকে খুব বেশি এখন আর টানে না। কারণ কয়েকদিন আগেই সে একজনকে ভালোবেসেছিল কিন্তু সেই ছেলেটির কাছে ভালোবাসা ছিল এক ধরণের হিংস্রতা। তাই মোনার কাছে ভালবাসার কোন দাম নেই। ঠিক বেচা কেনা নয়, তবে সে বিশ্বাস করে সত্যিকার ভালোবাসা আছে তবে সেটাকে বাছাই করাটাই কষ্টের। যাই হোক কিন্তু এর মধ্যেও বার কয়েক ফোন দিয়েছে মোনাকে. কিন্তু সে বেশির ভাগ সময়েই থেকেছে নিরব। কারণ ফোনে সে কী করবে এটাই ভেবে পায় না । শুধু সাহেদের কথা শোনে খুব যে মনোযোগ তার প্রতি তাও নয়।





সাহেদের কথার ধরনটা যেন কেমন। সবার চেয়ে একটু আলাদা।

হঠাৎ ফোন করে বলবে একটু বারান্দায় যান তো দেখেন কেমন সুন্দর লাগছে আজকের আকাশটাকে।



আবার কখনো ফোন দিয়ে কোন কথা নেই গান গাইতে শুরু করবে। ওর নাকি নিজস্ব একটা ব্যান্ডের দল আছে, এ জন্যই বোধহয় ও এত সুন্দর করে গাইতে পারে।



মোনা যে সাহেদের গান এত মনোযোগ দিয়ে শোনে, এটা সে তাকে বুঝতে দেয়নি। শুধু বলত আপনি কী গান বন্ধ করবেন ? নয়তো আমি ফোনটা কেটে দিব। ঠিক তখনি বাস্তবে ফিরত সাহেদ আর বিভিন্ন হাসি আড্ডায় মোনাকে ভুলিয়ে রাখত সে।



এভাবে চলছে পনের থেকে বিশ দিন। টুকটাক কথা হয় মোনা এবং শাহেদের। তবে শাহেদ ভালোবাসায় গদগদ হলেও মোনা থেকেছে নিজ সীমারেখায়ই। কারণ কোন ধরণের বিপদে নিজেকে ফেলতে চায়না সে। যাই হোক তবুও দুজনের কথার ভেলা চলছেই।



কথা প্রসঙ্গেই শাহেদ বলে, সে বড় লোক শিল্পপতি বাবার একমাত্র ছেলে। সাত বোন এক ভাই হলেও সৎ মায়ের সংসার। তবে বাবা মার বাধ্য ছেলে। মোনা জানতে চায়, বাবা-মার বাধ্য ছেলেদের তো ভালোবাসা অন্যায়, তাহলে আপনি আমাকে ভালোবাসেন কেন? আপনি তো ইচ্ছে করলেই আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না। শাহেদ নাছোরবান্দা। সে যে কোন কিছুর বিনিময়ে মোনাকে চায়। এরই মধ্যে মোনা মুঠোফোনে কথা বলে শাহেদের বড় বোন, দুলাই ভাই এবং ভাগ্নে ভাগ্নিদের সাথে। সবার সাথে কথা বলাটা যেন একটা রুটিন হয়ে গেছে।



এভাবে চলল এক বছর। ২০০৭ এ রজমানের ঈদের দিন মোনা শাহেদকে বলল, “আই ফল ইন লাভ” । কথাটা শুনেই ধাক্কা খেল শাহেদ। মোনার মুখ থেকে এই কথাটা শোনার জন্যই এতদিন থেকে অপেক্ষা করছিল সে। আনন্দে কেঁদে ফেলার জোগাড়।







শাহেদকে শান্ত করল মোনা। শুরু হল দুজনের ভালোবাসার তরনীর বেয়ে চলা। দুজনেই তৃপ্ত দুজনকে নিয়ে। কেমন উন্মাতাল ছিল, সেইসব দিনগুলি তা মনে পড়লে আজও শিহরিত হয় মোনার। যাই হোক শাহেদ যেহেতু মোনাকে দেখেছে তাই দেখা করার ইচ্ছেটা তার মধ্যে প্রবল না, তবে মোনা নাছোরবান্দা। যে করেই হোক শাহেদের সাথে দেখা করতে হবে। তাই শাহেদকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানাল মোনা। দিনক্ষণ ঠিক হল। অনেকদিন পর যেহেতু দেখা শাহেদ বলল, তুমি মেরুন কালারের ড্রেস পড়বে, আমি অফ হোয়াইট এর স্ট্রাইপ শার্ট। দেখা হবে বসুন্ধরা সিটির সামনে। শাহেদ দাঁড়িয়ে থাকবে বসুন্ধরা সিটির সামনে অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড চার্টারড ব্যাংক বুথের গা ঘেষে। মোনা এগিয়ে যাবে তার দিকে। তবে এক শর্ত জুড়ে দিয়েছে মোনা । দেখার হবার দিনই দুজন দুজনকে জানাবে পছন্দ হয়েছে কিনা।





যেই ভাবা সেই কাজ। উত্তেজনায় ঘুম হচ্ছে না মোনার। রাতের বেলায়ই রুমমেটকে নিয়ে পরের দিনের কাপড়, গয়না, টিপ গুছিয়ে রাখল। সকালে ক্যান্টিনে গিয়ে নাস্তাটা পর্যন্ত খেতে পারল না। বুকের মধ্যে টিপটিপ করছে কখন সে বলবে আমি এসে গেছি।



তখন প্রায় দুপুর ১.০০ টা। হঠাৎ মোনার ফোন বেজে উঠল। শাহেদ বলল, আমি এসে গেছি তুমি আস। ঠিক এমন অনুভূতি জীবনে প্রথম পেল মোনার। অনেক বসন্তই পার করেছে সে কিন্তু ভালোবাসার অনুভূতি যে মানুষকে অস্থির করে দিতে পারে এই প্রথম বুঝল। দ্রুত রেডি হয়ে একটা সিএনজি নিয়ে বের হয়ে গেল। বসুন্ধরা সিটির সামনে আসতেই দেখল নির্ধারিত জায়গায় দাড়িয়ে আছে কাঙ্খিত মানুষটি।









শাহেদকে সালাম জানাল মোনা, পরিচয় হল। দুজনে উঠল বসুন্ধরার লেভেল ৭-এ। কিছু খাবে বলে। লিফ্টে উঠতে উঠতেই শাহেদকে পর্যালোচনা করল মোনা । উচ্চতা পাঁচ ফুট এগার ইঞ্চি, গায়ের রঙ গৌড়, মুখের আদলটা সুন্দর। সুউচ্চ নাক মুখকে করেছে মহিমান্বিত। তবে বেশ মোটা। শাহেদ সর্বদা মোনার কাছে নিজেকে জাহির করত সুদর্শন হিসেবে কিন্তু মোনা র মতে, টিপু মোটেই তেমন নয় যদিও সে বাদে সবাই টিপুকে সুদর্শন বলত। যাই হোক রিফ্রেশমেন্টের জন্য কিছু খেয়ে নিল।



বসুন্ধরা থেকে বের হবার জন্য শাহেদ বেশ উতলা হল। কিন্তু মোনা নয়। কারণ সে সবার আগে শুনতে চায় আসলে সেই শাহেদের পছন্দের প্রেমিকা কিনা। শাহেদ তো তাকে আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছে তারপরেও মেয়ে মানুষ বলে স্বভাবতই দ্বিতীয়বার শুনতে চায় একই কথা। প্রেমিক পুরুষটি এবারও যথারীতি সম্মতি জানাল। ভালোবাসার দূরন্ত ঘোড়ায় দুজনে ছুটে চলল ধানমন্ডির এ আর এ সেন্টারে। কারণ আর কিছুই নয় শাহেদ চায় মোনাকে একটি ফতুয়া কিনে দিতে। যদিও শাহদে আসবে বলে মোনা রাইফেলস স্কয়ারের রং থেকে একটা ফতুয়া কিনে রেখেছিল। এখনও সেটা দেয়া হয়নি। সারপ্রাইজ হিসেবে রেখে দিয়েছে। ক্যাথি সারপ্রাইজ দিতে যেমন পছন্দ করে পেতেও। যাই হোক টিপুর কিনে দেয়া ফতুয়া সে নিবেনা এটাই ভাবছিল।





দুজনে বের হয়ে অভিজাত একটি রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সেরে নিল। মোনা যেহেতু হলে থাকে তাই বেশ কিছু দিন থেকে খেয়ে না খেয়ে টাকা জমিয়ে রেখেছিল। সিদ্ধান্ত নিল, কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়। ঢাকায় তেমন কোন জায়গা না থাকায় সিদ্ধান্ত হল ট্যাক্সি নিয়ে সাভার যাওয়ার। সেখানে পর্যটন রেস্টুরেন্টে খেয়ে স্মৃতিসৌধের আশে পাশের জায়গায় ঘুরে বেড়ানো যায় এবং নিজেদের মত সময় দেয়া যাবে।



যেই ভাবা সেই কাজ, ট্যাক্সি আপ ডাউন ভাড়া করা হল। শাহেদের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলে গেল সাভার। দারুন! সময় কাটাল দুজনেই।ভালোবাসার অনুভুতি এত মধুর হতে পারে এর আগে মোনা তা বুঝতে পারেনি।







এক দিনের ছুটি নিয়ে চার দিন থেকে গেল শাহেদ। অফিসের ফোনে অতিষ্ঠ হয়ে চতুর্থ দিন বিকেলেই রওনা হল সে।শাহেদ ঢাকা ছাড়ার সময় প্রতিবারই একটা কাজ করতমোনা তা হল ফকিরাপুল বাসকাউন্টার পর্যন্ত যেত এবং অপেক্ষা করত যতক্ষন পর্যন্ত না গাড়ি আসে। গাড়ী না আসা পর্যন্ত গাড়ীতে খাওয়ার জন্য নাস্তা, মিনারেল ওয়াটার, সুইংগাম ইত্যাদি কিনে দিত।



শাহেদ ঢাকায় আসলে সারাতক্ষণ মোনা তার হাত ধরে থাকত। শাহেদের কাছে বসলে মোনাকে বাচ্চা একটি মেয়েই মনে হত। হাতির কাছে মশা আর কি। এভাবে একবার দুবার, তিনবার করে সাত বার শাহেদ ঢাকায় এসেছে, সময় কাটিয়েছে।



স্মৃতিচারণায় গিয়ে মোনা এমন কোন সময় খুঁজে পায় না, যখন তাদের ঝগড়া হয়েছে। খুব খুবই ভাল সময়। ক্যাথির পরীক্ষা চলছে। অনার্স ফাইনাল ইয়ার। সারাদিনই পড়তে হবে। তিন ঘণ্টা পড়ে ১ ঘণ্টা ঘুমায়। ঠিক এক ঘণ্টা পরেই ডাকবে। মোনা অবাক এ কারণে শাহেদ শিপিং কোম্পানীর মত ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও ঠিক একঘণ্টা পরেই তাকে ডেকে দিত। ভালোবাসা যে একেই বলে সেটা সে বুঝতে পারে। দুজনের ভালোবাসার বল্গা হরিণ এভাবেই চলছে। এরই মধ্যে ঢাকায় মোনার বোনের বাসায় শাহেদ একদিন গিয়েছিল। কারণ মোনা বাসার সবাইকে মোটামুটি নিশ্চিত করেছে তার ভালোবাসার কথা।



শাহেদ আপুর বাসায় গিয়ে তো মহা খুশি। প্রতিদিন রাত এগারটায় শাহেদ ব্যস্ততা ফুরিয়ে ফোন দিত। একদিন মোনা বলল, অনেকদিন ধরেই তো কথা বলছি। প্রেম করছি এবার বাসায় বিয়ের কথা বল। উত্তরে শাহেদ জানাল, গতকাল মেঝ দুলাভাই আমাদের ব্যাপার নিয়ে আব্বার সাথে কথা বলেছে। সে বলেছে, “আই উই্যাল নেভার গো টু ফরিদপুর।”



মুহুর্তেই ধাক্কা খেল মোনা । অবস্থা যদি এই হয় তাহলে এত ভালবাসা কেন? মোনা জানতে চাইল, তুকি কি বল। টিপু বলল জানি না, পরে দেখা যাবে। কিন্তু মোনা একটা সিদ্ধান্তে আসতে চায় বলল আমার মনে হয় সেপারেশনটাই ভাল সমাধান। সময় বাড়িয়ে পয়জন নিয়ে লাভ নেই। আজ থেকে আমাদের যোগযোগ ও কথা বলা বন্ধ।



শাহেদ বলল, ঠিক আছে। মোনা অবাক এ কারণে যার প্রত্যক্ষ জোড়াজুড়িতে প্রেম হল আজ সে এমন বলছে কেন। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল না কোন ভাবেই এ সম্পর্ককে আর সামনে নিয়ে যাওয়া যাবে না একটা বিহিত করতেই হবে। সেদিনের পর থেকে শাহেদের ফোন এটেন্ড করে না সে। শুরুর দিকে প্রতিদিনই ফোন দিতশাহেদ, এসএমএস লিখত কিন্তু সে নিবর। না এত ভালোবাসার স্বীকৃতি তো বিয়ে সেটা না হলে তো প্রেম করে সময়কে উপভোগ করার মানে হয় না।





এভাবে পার হল এক বছর। শাহেদ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে যোগাযোগ করার কিন্তু মোনা চায় না যোগাযোগ করতে। একদিন মোনার ছোটপা বলল, তুই তো একবারের জন্য ফোনটা রিসিভ করে দেখতে পারিস সে কি বলতে চায়।



বোনের কথানুযায়ী একদিন মধ্যরাতে শাহেদের ফোন এটেন্ড করে সে। তিনঘণ্টার সে কথোকথনের বিষয়বস্তু হল এই যে, শাহেদের বাবা অনেকবার তাকে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখিয়েছে কিন্তু প্রতিবারই সে বলেছে না আমি ঢাকায় বিয়ে করব। এভাবে কিছুদিন পার হবার পর ওর বাবা রাগে ওকে বাসা থেকে বের করে দেয়। উপায় না দেখে সে নিজের বাসারই তিনতলার একটা খালি ফ্লাটে ওঠে। এভাবে একবছর। সেদিন মোনাকে সে ফোন করে জানায়, এই এক বছরে তোমাকে অনেক ফোন দিয়েছি রিসিভ করনি তাহলে হয়ত একটা কিছু হত। একা একা থাকতে গিয়ে আবেগের বশবর্তী হয়েও তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু আমার খানদানে আমি বড় ছেলে। তারা সবাই নাখোশ হত। তুমি ফোন রিসিভ করে যে কাজ করেছো তাতে আমাদের পুরো খানদান সারাজীবন তোমাকে স্যালুট দেবে। আজ বাসায় ফিরে যাচ্ছি। হয়তো ওদের পছন্দমত বিয়েও করব।



সেদিন সারারাত মোনা কেঁদেই কাটিয়েছে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত মোনা কাঁদে। শুধু তার শাহেদের জন্য। এটাও সে জানে শাহেদকে ফিরে পাওয়া অসম্ভব। তবে এই একবছরে মোনার মনে হত, কোনভাবেই শাহেদ বিয়ে করেনি । তবে এখন মনে হয় নিশ্চয়ই সে এতদিনে বিয়ে করেছে।



হয়েছেও তাই, যে একবছর মোনা শাহেদের ফোন এ্যাটেন্ড করেনি সেই একবছর শাহেদ বিয়ে করেনি। তবে এবার মোনা নিশ্চিত শাহেদ বিয়ে করেছে। তবে মোনা চায়না অন্য বাঙালী মেয়েদের মত ভাবতে যে, খোদা আমার ভালোবাসার মানুষটিকে ভালো রেখো।



সে চায়, শাহেদ যেন অনেক খারাপ থাকে এবং বুঝতে পারে মোনাকে তার দরকার ছিল। মোনা ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে যে করেই হোকশাহেদ ও তার বাবাকে সে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ তাকে জিততেই হবে।







ম্যাডাম? কফির বিলটা প্লিজ। আচমকা জেগে ওঠে মোনা । এতক্ষন সে ছিল স্মৃতির আড়ালে। বাস্তবে ফিরেই কফির বিল ও ওয়েটারের বখশিশ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল। কন্ডাকটার বলল, সরি আপা আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম। মোনা মনে মনে হাসল, তুমি তো একটু কষ্ট দেয়ার জন্য সরি বলছ আর আমার হৃদয়ে প্রতিদিন যে কষ্ট পাচ্ছি তার জন্য স্যরি বলবে কে? উত্তরটা এখনও জানা নেই তার।















মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২০

স্বপনবাজ বলেছেন: ++

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:২৯

লতিফা লতা বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯

রোহান খান বলেছেন: "তুমি তো একটু কষ্ট দেয়ার জন্য সরি বলছ আর আমার হৃদয়ে প্রতিদিন যে কষ্ট পাচ্ছি তার জন্য স্যরি বলবে কে" -


:(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.