![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দরিদ্র পরিবারে জন্ম আমার ।ছোট বেলা থেকেই আমার পৃথিবীটা খুবই ছোট ।খুব বেশি বিলাসিতা বা খুব বেশি অভাব কোনটাই সেভাবে উপলব্ধি করিনি কারন ওই যে বললাম, আমার চাহিদা বা ভাবনার আকাশটা খুবই ছোট ।কখনও কোন জিনিস না পেলে বা কোন খাবার খেতে না পারলে কখনও মাকে বলিনি যে, “মা আমি ওই খাবারটা খাব” ।না খেয়ে থেকেছি তবুও মায়ের আদেশ- “খবরদার কারো বারির কোন খাবার খাবিনা”,মেনে চলেছি । কেউ যেন বলতে না পারেন যে, “তুই লোভী” ।পাড়ার কেউ আমাকে কিছু খেতে দিলে আমি তো রীতিমত রোবটের মত জমে জেতাম, আর তারা চেষ্টা করত আমার “খাবোনা” সূচক ধ্যান ভঙ্গ করতে । এ তো গেল বাড়ির কথা আর স্কুলে!এভাবে Consumption Theory (ভোগ তত্ত্ব)বুঝতে না বুঝতেই প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে গেলাম । আশ্চর্য আমি এখন ক্লাস সিক্সে পড়ি । ওমা!এই পিচ্ছি ছেলেটা আবার পড়ে ক্লাস সিক্সে” এ রকম হাজারও কথা হজম করে আমাকে স্কুলে (হাই স্কুলে) যেতে হত । ভাবতাম এই বুঝি বন্দি জীবনের শুরু হল ।স্কুলে সহপাঠীরা সবাই যখন ফুলপ্যান্ট পরিধান করে স্কুলে আসত আমি তখনও স্ব-মহিমাই ভাস্বর,মানে যথারিতি হাফপ্যান্ট পরে ।তাতে কি!! আমি কি এতই বড় হয়েছি যে,আমাকে অত বড় বড় প্যান্ট পরতে হবে । যাহক এবার আসি ক্লাস রুমে ।প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়াছি,এখন বইও বেশি ।তাই বলে তো আর স্কুল পালানো জায় না,যত কষ্টই হোক পড়াশোনা আমাকে করতেই হবে।এতটা সিরিয়াস হবার পরেও শুধু আমিরুল স্যার ইংরেজি ক্লাস ছাড়া অন্য ক্লাস ভাল লাগেনা ।আর অবাক হলাম নতুন একটা বিষয়ের সাথে পরিচিত হয়ে সেটা হল এখানে তিনটা ক্লাস পরে বিরতি দেওয়া হয়, যার নামটাও সুন্দর “টিফিন” ।ইতোমধ্যে সহপাঠী দের কাছ থেকে ব্রেকিং নিউজ পেয়েও গেলাম যে, এই সময়টাতে নাকি স্কুল পালানোও যায় আবার নাকি পেটে ব্যথার কথা বলে ছুটিও নেওয়া যাই । হুররে ... এমন গোপনীয় তথ্য পেয়ে আমি তো মহাখুশি !!!একদম বাক বাকুম পায়রার মত ।আমার আজও মনে আছে আমিরুল স্যার যখন ইংরেজি ক্লাস নিত ,উনার উপস্থাপনা এতই চমৎকার যে,কোনোদিনেই বাড়িতে স্যার এর সাবজেক্ট পড়তে হয়নি।ক্লাস বাদে হাই স্কুলে আর একটা বিষয় উপভোগ করতাম,সেটা হল পিটি (এক ধরনের শারিরিক কসরত অনুশীলন)।প্রতি বৃহস্পতি বার পিটি করা হত । পিটি দেখতে খুবই ভাল লাগত, যদিও টা অনুশিলন করা খুবই বিরক্তিকর লাগত ।অবশ্য, আমার একটা সুবিধা ছিল ।পিটি করাতো আমাদের স্পোর্টস টিচার মোঃ শওকত আলি, যিনি আবার সম্পর্কে আমার কাকা হত ।এক পাড়াতে বাড়ি হলেও তখন তার সামনে গিয়ে কথা বলতে খুবই ভয় করত।একদিন পিটি করার সময় আমি হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে,শওকত স্যার এর কাছে জানালাম,তিনি অবলিলায় আমাকে ছুটি দিলেন,আর আমিও আবিস্কার করলাম একটা থিওরি ।প্রতি বৃহস্পতিবার আমি মুখটা শুকনো করে,অবনত মস্তকে তার কাছে গিয়ে বলতাম, “স্যার,আমি অসুস্থ” ।ব্যাস,কিল্লা ফতে!!! সরাসরি ক্লাস রুমে,পুরোপুরি বিশ্রাম।সত্যি বলতে এর পর কখনও পিটিকে আমি ভয় পাইনি কারন,এর মধ্যে আমি ভয়কে জয় করার থিওরি আবিস্কার করে ফেলেছি।(চলবে......)
পুনশ্চঃ আমিরুল স্যার- আমার ছাত্র জীবনের সেরা শিক্ষক,যিনি হয়ত কখনও এটা উপলব্দি করেননি ।আর, মোঃ শওকত আলি-যিনি শিক্ষকতা ছেড়ে আয়ারল্যান্ড প্রবাসী,যাকে অনুসরন করব বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই হারিয়েছি।
:#> :#> :#> :#> :#> :#> :#>
©somewhere in net ltd.