![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১।
ঢাকা শহর থেকে ২১৪ কিলোমিটার দক্ষিন –পশ্চিমে, জেলা শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে ছোট্ট একটা গ্রাম ।সেই গ্রামেরই দরিদ্র একটা পরিবারে জন্ম ছেলেটির ।ছোটবেলা থেকেই খুবই নিরীহ প্রকৃতির ছেলেটির ছিলনা ভাল পোশাক , পেতনা ঠিকমত খেতে, শারীরিক গঠনেও ছেলেটি ছিল পাড়ার অন্য ছেলেদের থেকেও হ্যাংলা- পাতলা ধরনের । অন্য ছেলেদের যা ছিল ছেলেটির তাঁর কিছুই ছিলনা, তবে ছেলেটির মার্জিত ব্যবহারের পাশাপাশি যেটা ছিল সেটা হচ্ছে ছেলেটির মেধা ।মেধার কারনেই খুব ছোট বেলা থেকেই পাড়ার সবার কাছে ছেলেটি অতি প্রিয় হয়ে উঠল । আর বাবা-মার কাছে, আচ্ছা বলুন তো- কোন বাবা-মার কাছে তাঁর সন্তান অপ্রিয় হয় ।ছেলেটির বাবা-মায়ের কাছে প্রায়ই পাড়া প্রতিবেশিরা বলত-“দেখবেন ওর যে মাথা (মেধা), ও একদিন অনেক বড় হবে” । কিন্তু এ কথাই বাবা-মা কারোরই মন গলত না । গলবে কি করে? যেখানে ঠিকমত সংসার চলেনা সেখানে ওর পিছনে পড়াশোনার জন্য এতো টাকা কে দিবে? “পড়াশোনা করছে করুক, এস এস সি পাস করলে ঢাকাতে ওর মামার কাছে গিয়ে কাজ করবে”- ছেলেটির সম্পর্কে কেউ আশাব্যঞ্জক কিছু বললে এটাই ছিল তাঁর বাবা মায়ের জবাব ।ছেলেটি ইতোমধ্যে স্যার দের কাছ থেকেও ভাল ছাত্রের উপাধি পেয়ে গেছে ।সে নিজেকে অনেক উপরে নিয়ে যাবে বলে ভাবতে শুরু করেছে । যাহোক , সময়ের পরিক্রমায় ছেলেটি এবার দশম শ্রেণীতে ।কৃতিত্বের সাথে ১ম হয়ে নির্বাচনী পরিক্ষায় পাশ করল । কিন্তু যেদিন রেজাল্ট দেয়, সবার চোখে মুখে উৎফুল্লতা আর ছেলেটির চোখে মুখে রাজ্যের আধার, ফর্ম পূরণের এতো টাকা সে কোথাই পাবে? আর ফর্ম পূরণ না করলে সে তো পরিক্ষা দিতে পারবে না, আর পরিক্ষা না দিলে তো...? সে কিছুই ভাবতে পারছেনা । এতো টাকা পাবে কোথায় ?অবশেষে ধার করে সেই টাকা সংগ্রহ করলো । ছেলেটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করল- সে কলেজে পড়বে, ভার্সিটিতে পড়বে, জীবনে অনেক বড় কিছু হবে । অবদান রাখবে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে ।
২।
হঠাৎ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস –ছেলেটির পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা গাছ থেকে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে গেল । আর ছেলেটির আজন্ম লালিত স্বপ্ন- বাসনা ধূলিসাৎ হয়ে গেল । ঘটনাটা এমন একটা সময়ে যখন ছেলেটির এস এস সি পরীক্ষা মাত্র ২ মাস পর আরম্ভ হবে । বাবা হাসপাতালে চিকিৎসারত আর ছেলেটির চোখে অনেক বড় হবার স্বপ্ন- গরিবের ঘোড়া রোগ আর কি!
ছেলেটির সব আশা ভরসা যখন শেষ হবার পথে ঠিক তখনই, ছেলেটির উপর ছায়া হয়ে দাঁড়াল ফেরেশতা তুল্য একজন মানুষ । ছেলেটির লেখাপড়ার খরছসহ সব দায়িত্ব লোকটি নিল,আর ছেলেটি পেল একজন অভিভাবক ।শুধু অভিভাবকই বলব কেন ? একজন বন্ধুও তো!যে ভালবাসবে আবার তাগিদ দিবে ভাল করে পড়াশোনার জন্য। দেখতে দেখতে এস এস সি পরিক্ষা চলে এলো ।সবাই যখন দুইটা তিনটা পোশাক পরে পরিক্ষা দিতে জেত তখন ছেলেটি ঐ লোকটির দেয়া একমাত্র পোশাক পরেই সব পরিক্ষা শেষ করল ।
পুনশ্চঃ লোকটির সাহস ও অনুপ্রেরনায় ছেলেটি স্কুলের দ্বিতীয় হয়ে এস এস সি পাস করে ।তারই ধারাবাহিকতাই এইচ এস সি পাশ করে ছেলেটি(আমি) দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের গর্বিত ছাত্র ।লোকটি ছেলেটির জন্য কততুকু করতে পেরেছে তাঁর ভার পাঠকের উপর, তবে, যেখানে ছেলেটির পড়াশোনা বন্ধের পথে সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা ছেলেটির কাছে এভারেস্ট জয়ের মতোই । তাঁর মত রজব আলি আছে বলেই হইত আমার মত ছেলেরা দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও স্বপ্ন দেখে মানুষ হবার, সমাজ ও দেশের জন্য অবদান রাখার ।ধন্য হে মানব সত্যিই দুলাভাই, আমি আপনাকে অনেক মিস করি!!!
©somewhere in net ltd.