![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই জন্মে এবং এরপরের জন্মেও (যদি সত্যি নতুনকরে আবার জন্মানোর সুযোগ দেন করুণাময় আমাকে,) আমি কেবল একজন কবি-ই হতে চাইব
রোযনামা: লেখালেখির হাতেখড়ি
লেখালেখির শুরুটা কীভাবে হয়, কখন হয় এটা নির্ণয় করতে হলে ফিরতে হবে শৈশবে। প্রথম যেদিন ছোট কোমল হাতে চকের কলম ধরেছিলাম কালো রংয়ের শ্লেটের ওপর-সেটাই কিন্তু আসলে লেখালেখির শুরু। তারপর প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে লেখে চলছি আমরা। এবং লিখব যতদিন বাঁচব পৃথিবীতে। লেখা আবিষ্কারের পর থেকে মানুষের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ এই লেখালেখি। এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে সমাজে যে কোনদিন কলম ধরেনি। অনেককে হয়তো লেখতে হয়না, কিংবা লেখতে জানে না এমন মানুষও আছে কিন্তু তাই বলে কোনওদিন লেখার জন্যে কলম স্পর্শ করেনি এমন মানুষ বোধহয় নেই আমাদের সমাজে। মানুষের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ যখন লেখালেখি, তখনও লেখা নিয়ে বিপাকে পড়ে না এমন মানুষেরও অভাব নেই। মূল কথাটা হচ্ছে, সহজভাবে গুছিয়ে লেখাটাই একটা কৌশল। আর এই কৌশলটাকেই আয়ত্ব করা হচ্ছে সাহিত্যিকতা। নতুবা আমরা গল্প করি, সহজ-কঠিন আলোচনা করি, এজন্য আমাদেরকে ভাষাগত বর্ণনাগত বিন্যাস নিয়ে তটস্থ হতে হয় না। কিন্তু এই বলা কথাগুলিই লিখতে বসলে বিন্যাস নিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়। বুঝা যাচ্ছে, বলাটা যত সহজ লেখা ততটা না। বলার জন্যও অনুশীলন যেমন করতে হয়, লেখার জন্যও এর ঢের অনুশীলনের দরকার আছে। লেখালেখির অনুশীলন নিয়ে আমাদের আলোচনা। অনুশীলনের কতগুলি পর্যায় আছে, আমরা একে একে আলোচনা করব। রোযনামা : লেখালেখির হাতেখড়ি লেখা অনুশীলনের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রোযনামার অবস্থান। এজন্যে অনেকেই একে সাহিত্যের ভিন্ন কোন শাখায় বিবেচনায় করেননি। কিন্তু আবার রোযনামা লিখেছেন কিংবা রোযনামা লেখার ধারা অব্যাহত রেখেছেন এমন লেখক সাহিত্যিকেরও অভাব নেই বিশ্বসাহিত্যে। তাই রোযনামাকে অনেকেই একে স্বতন্ত্র মর্যাদা দিতে কুণ্ঠিত হলেও, বিশ্বসাহিত্যে এর মর্যাদা অপরিসীম। উর্দূভাষায় প্রাচ্যের ডাইরি নামে আছে আবুল হাসান আলী নদভি রহ.র অসামান্য গ্রন্থ। বাংলায় রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র, সৈয়দ আলী আহসানের বাংলাদেশ ১৯৭৫, জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি, আহমদ ছফার ডাইরি, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের বিস্রস্ত জর্নাল ইত্যাদি বেশ আলোচিত ও আলোড়িত। এইসব ডাইরি বা রোযনামা কালের মুখপাত্র হয়ে সমকালের কণ্ঠ। সমকালকে তারস্বরে চিত্রিত করে, এবং এই স্বর অনি:শেষ। এই যে বিশেষকরে রোযনামাকে কালের কণ্ঠে চিত্রিত করা হল, এর একটা যৌক্তিক কারণ হচ্ছে, এগুলো একেকটি আসলে ডাইরি বা রোযনামার আদলে সমকালের সংবাদ। প্রত্যেকদিনের ব্যক্তিকমূল্যায়ন। ব্যক্তিক মূল্যায়ন হচ্ছে প্রত্যকের ব্যক্তিগত পর্যায়ের মূল্যায়ন। আর এভাবেই সমকালের ধ্বনি অনি:শেষ কালের কণ্ঠে। তাই বলা যাচ্ছে-রোযনামা অনেক ক্ষেত্রে কালের কণ্ঠে অভিষিক্ত। রোযনামা: লেখার কৌশল রোযনামার ভাব বলে কথার আলাদা কিছু নেই। আমাদের প্রতিদিনের সাধারণ কথাবর্তাই রোযনার চিরায়ত ভাষা। এখানে শব্দের চে' মর্মের, ভাবের চে' ভাবনার, বাস্তবতার চে' আবেগের প্রভাব বেশি। একটি রোযনামা মানে তো শুধু ঘটনার পুঙ্খানু বর্ণনা নয়। এতে মর্ম, ভাবনা ও আবেগের সমন্বয় ঘটােত হয়, চুপিসারে। আর সবচে' বড় সত্য কথাটি হল, রোযনামা লেখার সময় এ কথা ভাবতে হয়, আমি আমার জন্য লিখছি। আর কেউ পড়বে না বা জানবে না এ ধরনের মনোভাব নিয়ে লিখতে বসাই রোযনামার অন্য একটি সুবিধা। বর্ণনার প্রশ্নে এখানে উদার, শালীনতায় অমায়িক, এবং সমালোচনায় বিচক্ষণ চৌকষ হওয়া লাগে। রোযনামার ভাষা হবে কথার ভাষা। ঠিক যে ভাষায় আমরা আমাদের পরিচিতদের আড্ডায় বলে থাকি। এতে কৃত্রিমতার বালাই থাকে না। বর্ণনায়-বিবরণে মূল ঘটনার পরিবেশন অতি সহজভাবে হতে হয়। তবে বলা কথাগুলি লিখতে গিয়ে একটু আবেগ, ভাবালুতা এসে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। লেখা আর বলা কোনদিনও সমান্তরাল রেখায় আসতে পারবে না। বলা বলি আর বক্তৃতা বলি দুটোই মেদবহুল, আর লেখা বা রচনা ভাবাবেগের পরিচ্ছন্ন পরিবশেন। তাই অনেক কথাই যেটা আমরা বলতে গিয়ে বলে থাকি, কিন্তু লেখায় আনি না। এ ধরনের পার্থক্য শব্দ ব্যবহার থেকে নিয়ে বাক্যের পুনরাবৃত্তি পর্যন্ত। কিছু লোকাল শব্দ বা সাধারণত কথায় ব্যবহৃত- আসতেছে, যাইতেছে, আসলো ইত্যাদি শব্দ রচনায় লিখতে হয়-আসছে, যাচ্ছে, এলো। এভাবে বক্তৃতার কৌশলগত কারণে কোন বাক্যের পুনরাবৃত্তি প্রয়োজনীয় হলেও লেখায় কোন বাক্যের পুনরাবৃত্তি অনেক ক্ষেত্রেই বাহুল্য। তাই ভাব ও বিষয় ছাড়াও লেখালেখিতে চিন্তার ঢের বিষয় আছে। রোযনামার বিষয় আশয়: রোযনামার বিষয় আশয় আমাদের নির্ধারণ করে দেওয়ার কিছু নেই। আমরা কিছু নমুনাপথ দেখাতে পারি। প্রত্যেকের পছন্দনীয় বিষয়ই হচ্ছে রোযনামার বিষয়। প্রতিদিনের আনন্দস্ফূর্তি, কষ্টবেদনার ঘটনাবলীই হতে পারে প্রতিদিনের দিনলিপি। আবার বহু আগের কোন সুখের স্মৃতিচারণ, কিংবা দু:খের রোমন্থনও হতে পারে রোযনামার বিষয়। প্রথম প্রথম লেখার ভাষা যেমনি হোক, চালিয়ে যেতে হবে। ভাষা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে ভাব ও ভাবনার প্রশস্ত পথকে সংকীর্ণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সেই সাথে লেখার পরিমান বাড়ানোর চে' সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে শব্দের শুদ্ধ বানান, প্রয়োগ ও বাক্যের সুন্দরতম বিন্যাসে।
__________________________________________________________
প্রথম কিস্তি হিশেবে মাসিক অপেক্ষার দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত...
©somewhere in net ltd.