![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই জন্মে এবং এরপরের জন্মেও (যদি সত্যি নতুনকরে আবার জন্মানোর সুযোগ দেন করুণাময় আমাকে,) আমি কেবল একজন কবি-ই হতে চাইব
রোজনামা: লেখালেখির হাতেখড়ি-৩
লেখা ও পড়া:
শিরোনামের তাৎপর্য-লেখালেখিতে পাঠের প্রভাব। লেখালেখিতে পাঠের প্রভাব আছে কিনা, কেমনতরো সে প্রভাব, এ নিয়ে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করার অবকাশ থাকে না। পাঠকমাত্রই উপলদ্ধি করে থাকবেন, নিরবিচ্ছিন্ন পাঠের পর(বই পাঠের কিছু কথা সামনে আলোচিত হবে), সেই পাঠের পেছনে প্রতিক্রিয়া হিশেবে যে অভিব্যক্তির সঞ্চার হয় ব্যক্তিমনে, তা যদি লেখায় জাহির করা হয় তাহলে সেই পাঠের প্রভাব লেখালেখিতে পড়ে, তেমনি বক্তৃতা-বয়ানে। জ্ঞানীমাত্রেরই ভাষ্য-লিখতে হলে পড়ো। লেখার আগে পড়ো। লেখক হতে হলে ভালো পাঠক হও।
নি:সন্দেহে সহীহ কথা, ভালো লেখতে চাইলে ভালো পাঠকও হতে হয়। কিন্তু পাঠকের সাথে ভালোর যে বিশেষণটি যুক্ত করা হলো, এর তাৎপর্য কী? ভালো বলতে তো সতর্ক, সচেতন, বিজ্ঞ পাঠক। মূলত পাঠ ও পাঠচক্রের মাধ্যমে (বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টা) নিয়মিত লেখা অনুশীলন ও লেখালেখির গুণাগুণ যাচাই বাছাই অব্যাহত রেখে প্রাত্যহিক লেখার অভ্যাস গড়ে তোলাই আমাদের মাকসাদ। ভালো পাঠক হতে হলে সতর্কতা ও ধৈর্যের গুণ একইসাথে অর্জন করতে হবে।
পাঠের বেলায় সর্বভুক পাঠকের তুলনায় বাছ-বিচারক পাঠকই অধিক সফল। তাতে সময় ও ধৈর্যের চ্যুতি ঘটে না। বরং বাছাইকৃত লেখা পাঠের সুবাদে মেধার অস্থিরতায় শান্তভাব ফুটে ওঠা, তদুপরি প্রশান্ত মেধার ঠাণ্ডা বুদ্ধিভিত্তিক বিস্তারের অবকাশ থাকে। নিনিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, একটা সময় এমন মনে হত, সামনে যা পাই পড়ে ফেলি, জ্ঞানের তো কোন সীমা-পরিসীমা নেই। পরে সুবুদ্ধি হলে বুঝতে পারলাম, ‘জ্ঞানের যে সীমা-পরিসীমা নেই' কথাটি বলা হয়, সত্যি। কিন্তু বাড়াবাড়ির কারণে অসচেতন পাঠের ফল যা দাঁড়ায় তাতে খাদ্যের চাইতে কুখাদ্যই বেশি গলধকরণ হয়, জ্ঞানের চেয়ে অজ্ঞানতাই বেশি অর্জিত হয়, এ কথা পরীক্ষিত।
তাই পাঠের বিষয় যেমন নির্বাচিত হওয়া চাই তেমনি পাঠের ব্যক্তিত্বও। কাকে পড়ব, কী পড়ব তা নির্বাচন করে নেওয়া জরুরি। অত:পর এ বিষয়টিও তথবৈচ, কেন পড়ব? তাহলে পাঠের বিষয়, লেখক ও উদ্দেশ্য এ তিন যদি নির্বাচিত করা যায় তাহলে একইসাথে পাঠকের জ্ঞান, সময়, ও প্রকাশক্ষমতায় প্রবৃদ্ধি আসে। তখন সুষম খাদ্য অধিকহারে গৃহিত হয়, জ্ঞান ও অজ্ঞানতা সম্পর্কে পাঠকের সচেতনতা বাড়ে। বিষয় নির্বাচন তেমন জটিল বিষয় নয়। সর্বপ্রথম আপনাকে যে কাজটি করতে হবে, তা হচ্ছে আমি কী পড়বো, কেন পড়বো তা পড়ার আগেই ভেবে নিন। তারপর এ বিষয়ে ভালো লেখা ও জ্ঞানী লেখক খুঁজুন। বই হাতে পেলেও আপনার আশেপাশে বয়োজৈষ্ঠ কেউ বইটি পড়ে থাকলে তার থেকে পাঠ সংক্রান্ত পরামর্শ গ্রহণ করতে পােরন। এভাবে নিয়মিত পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ধীরে ধীরে আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার অভিষ্টে।
বই পাঠ:
বই কে না ভালোবাসে। জ্ঞান হওয়ামাত্রই মানুষের জীবনের অন্যতম চিরসঙ্গী ও প্রিয়সঙ্গী বই। বই ছাড়া মানুষ অন্ধ। ভালোবই সবসময়ই সবজায়গায় সমাদৃত। ঘটা করে তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না। বই মানুষকে আলো দেয়, আলোকিত করে। অবশ্যই ভালো বই ভালো লেখক সমাজ সংস্কৃতির পরিবর্তনে সুভূমিকা রাখতে সক্ষম। বই শব্দের উৎপত্তি সন্ধান করে জানা যায়, শব্দটি আরবি অহি শব্দ থেকে ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে বাংলাউচ্চারণে পর্যায়ক্রমে বহি থেকে বই হয়েছে। আর আরবি অহি শব্দের অর্থ-ঐশী জ্ঞান, সৃষ্টিকর্তার ফরমান। তাহলে পৃথবীর বুকে সর্বপ্রথম বই হিশেব মর্যাদা পেয়েছে পবিত্র কুরআন। তথাপি পরম করুণাময়ের কালাম হিশেবে আদি থেকে অনাদি পর্যন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ বই বা কিতাবের মর্যাদায় সমাসীন। বইকে আরবিতে কিতাবও বলা হয়। কিতাব শব্দটি আরবি ধাতুমূল কিতাবাত থেকে উদ্গত। তার অর্থ-লেখা, লিখে রাখা, সংরক্ষণ করা, অাবশ্যকিকরণ। তাহলে যা লিখে সংরক্ষণ করা হয় তারই পরিপাটি চেহারা বা পরিচয় বই। আর বলাবাহুল্য, ভালো ও শীলনধর্মী বিষয়াশয়ই সংরক্ষণ করে রাখে মানুষ। মন্দকথা, কুজাতীয় বিষয়াশয় সংরক্ষিত হওয়া ভদ্ররুচিতে পড়ে না, তাই বই হিশেবে সেগুলো মর্যাদাও পেতে পারে না।
বই পাঠ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশু থেকে বুড়ো, সব বয়সের লোকের বই ছাড়া গত্যান্তর নেই। জ্ঞানের, প্রশিক্ষণের জন্য বইয়ের বিকল্প নেই। আগে বলা হেয়েছে, বই ছাড়া মানুষ অন্ধ। বইয়ের পাতায় পাতায় লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে আসলে মতবিনিময়-ই ঘটে। লেখকের সাথে পাঠকের ভাবের আদান প্রদান। তাই বই পাঠে মনোযোগী হওয়াও কম গুরুত্বের নয়। বই পাঠের কিছু মৌলিক চিন্তার কথা বলব।
ক.বই হাতে পাওয়ার পর বইয়ের বিষয় যাচাই করে নিন।
খ.লেখক পূর্বপরিচিত না হলে, সম্ভাব্য পদ্ধতিতে লেখকের জীবন পরিচিতি জানতে চেষ্টা করুন। অধিকাংশ বইয়ের ফ্ল্যাপে এখন বইপ্রকাশকেরা লেখকের সংক্ষিপ্ত জীবনপরিচিতি দিয়ে থাকেন।
গ.বইয়ের প্রকাশ/মুদ্রণ কাল সম্পর্কে জানুন। কতবার বইটি মুদ্রিত হয়েছে, এবং তাতে বইয়ের মূল্যমানও সহজে বুঝতে পারবেন।
ঘ.বইয়ের বিষয়ের সাথে মিলিয়ে পাঠতালিকা লক্ষ্য করুন। পুরো তালিকাটা (যদি থাকে) একবার পড়ে নিন। এতে পুরো বই না পড়েও বই সম্পর্কে ধারণা নেয়া যায়।
ঙ.এবার সম্ভব হলে পুরো বইই পড়ুন, সম্ভব না হলে গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলিই বেছে বেছে পড়ুন, এ ক্ষেত্রে আপনার পূর্বে কেউ বইটি পড়েছে আপনার জানা থাকলে, তার থেকে উপর্যপুরি সহায়তা আপনি পেতে পারেন।
এই হচ্ছে বইপাঠের কিছু মৌলিক নিয়ম।
এভাবে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রাথমিকভাবে এই বিষয়গুলি বিশেষনজরদারি করলে, একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।
_________________________________________________________
তৃতীয় কিস্তি হিশেবে মাসিক অপেক্ষার চতুর্থ সংখ্যায় প্রকাশিতব্য
©somewhere in net ltd.