নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে এখনো প্রশ্ন করি, কিকরে হলাম আমি কবি

মাহদী আব্দুল হালিম

এই জন্মে এবং এরপরের জন্মেও (যদি সত্যি নতুনকরে আবার জন্মানোর সুযোগ দেন করুণাময় আমাকে,) আমি কেবল একজন কবি-ই হতে চাইব

মাহদী আব্দুল হালিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ লিটল ম্যাগ নতুন ভাবনা

২৭ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২৪

প্রসঙ্গ: লিটল ম্যাগ নতুন ভাবনা





ছোটদের ছোট স্বপ্ন, আবেগ, চেতনা, চর্চাকে কেন্দ্র করে স্বল্প পরিসরে, সংক্ষিপ্ত আয়তনে, অনিয়মিত লেখালেখির বিশ্বস্ত বিকাশ সংস্থান। লিটল ম্যাগাজিনের নির্ভরতাই স্বপ্ন কেন্দ্রিক, উচাটন তারূণ্যের প্রকাশ। তরুণ রক্তে উন্মাদনা, প্রতিবাদ, উন্মুখরতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। প্রথাবিরোধিতা ও নতুনত্বই তাদের অন্বিষ্ট হবে। একরোখা মনোভাবে সমাজ সামাজিকতা, প্রয়োজন ও প্রাপ্তিকে সবার চাইতে তির্যক দেখবে, এবং মহলবিরুদ্ধ আন্দোলনে যূথবদ্ধ হবে, বর্তমানে রাজনীতির উত্তপ্ত পরিবেশে তরূণদের এমনি পরিচয় আমরা পেয়ে এসেছি। যেন তরূণ বয়সে এগুলোই দায় হয়ে পড়ে। যে কারণে কোন তরূণ রাজনীতিতে টাইম এন্ড কোম্পানি ইনভেস্ট না করলে তাকে পড়াশোনার পরবর্তী সময়গুলো দৌড়ের উপর থাকতে হয়। এটা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবধারিত চিত্র নয়। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিত্যছবি। সেখানে রাজনীতি-অপনীতির বিরোধিতায় আন্দোলনের প্রকাশপত্র হয়ে উঠেছে লিটল ম্যাগ। আবার ঐতিহ্যকে ধরে রেখে লিটল ম্যাগাজিন এখনও শতাব্দিউত্তর ভাষাব্যবহার প্রয়োগের সংস্কার, ও অভিনবত্বের মুখপত্র হিশেবেও রয়ে গেছে। মোট কথা সময়ে, লিটল ম্যাগাজিনের গতি পরিবর্তিত হয়েছে, এবং এটা হতে পারে তাতে কারো সন্দিহান থাকার কথা নয়। একটা সময় ছিল, যখন বাংলাভাষাকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করে তুলতে, বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে উপযুক্ত করে তুলতে আমাদের ভাষা নিয়ে তুলনামূলক লড়াই করতে হয়েছে। সেসময় বাংলাচর্চার প্রকৃতি প্রকৌশল এক রকম ছিল। কিন্তু সেই আন্দোলনে বাংলাভাষী চর্চাকারীরা সফলতার সূর্যোদয়ের পথকে সুগম করেছে। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে নোবেলপ্রাপ্তি ও ৫২ সালে বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি তার ফসল। কিন্তু পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলা ভাষার সাহিত্যিকচর্চা ষাটের দশকের পর থেকে যেন হঠাত করেই থেমে গেছে। এরপর আর আগের মত ফলদান করেনি। তবে কি এ কথা আজ বলা চলে, বাংলাভাষার চর্চা ও উন্নতি ষাটের দশকের আগে নিজের মুক্তির পথে ধাবিত ছিল, পরে যখন তা অর্জন হয়ে গেল তখন এর উন্নতির ধারাও অবসিত হয়েছে?

বাংলাচর্চা-ভাষার প্রতি সম্মান দেখানো গোটা বছরে একদিন; ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল প্রদানের নাম নয়। ভাষাচর্চা মানে ভাষার অকুণ্ঠ ব্যবহার। ভাষার প্রতি গভীর মমত্ববোধ। সর্বক্ষেত্রে বাংলাপ্রয়োগ নিয়ে এখন ২১ ফেব্রুয়ারির আগে দৈনিকীগুলো প্রদিবেদন প্রকাশ করতে থাকে। কিন্তু ২১ ফেব্ররুয়ারি চলে গেলে কিংবা পরে বছরের অন্যকোনও দিন এসব প্রবন্ধ নিবন্ধের কোন অস্তিত্ব পত্রিকাপ্রকাশক প্রকাশ করেন না। কারণ, সেখানে তার বেনিফিট শূন্য। তাহলে যে প্রকাশক বাংলাপ্রীতির নমুনাস্বরূপ বাংলায় পত্রিক প্রকাশ করছেন, তিনিও স্বার্থ ছাড়া নন। এখানে লিটল ম্যাগাজিন এইসব স্বার্থান্বেষণের বিরোধী। লিটল ম্যাগাজিন প্রকৃত অর্থে ভাষার গতিপ্রকৃতির ধারক। সময়ে সময়ে ভাষার প্রায়োগিক ব্যবহারে যে পরিবর্তন আসে, তা সর্বাগ্রে লিটল ম্যাগাজিনই সংরক্ষণ করে থাকে নিষ্ঠার সাথে। তার কারণ, ভাষার পরিবর্তনে তরূণদের ভূমিকাই বেশি। আর তরূণরা ব্যপৃত লিটল ম্যাগে। তাই লিটল ম্যাগ সে বহুল প্রচারিত, অসীমিত, সচলায়তন না হলেও এর গণ্ডি পরিব্যপ্ততা তারূণ্যকেন্দ্রিক। নবীন-তরূণরাই প্রধানত এর উৎসুকপাঠক। দু'চার কপি প্রবীণদের হাতে পড়লেও সেটা মূল্যায়নের চাতক চাহনিতে নিবদ্ধ। সত্যি বলতে, লিটল ম্যাগ বা তারূণ্য প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীলতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেখানে প্রবীণরা সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে বুদ্ধির বৃদ্ধমোড়লে পরিণত। তারা নতুন সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ। তবে যেখানে তারা বার্ধক্যের পরও সজীব, সেটা সমালোচান-মূল্যায়ন-পর্যালোচনে। বলা বাহুল্য, লিটল ম্যাগাজিন প্রবীণের কাছে ধর্না দেয় এ প্রসঙ্গেই। নতুবা লিটল ম্যাগাজিন অপ্রতিষ্ঠিত, অনভিজ্ঞ, অনুজ, অপ্রতিষ্ঠিতপ্রবীণ, প্রভৃতি নতুনের মুখপত্র।



এ ধরনের পত্রিকার প্রয়োজন কেন? অনেক কারণ। প্রধান কারণ হচ্ছে, অপ্রতিষ্ঠিত মতামতের বিশ্বস্ত প্রকাশ সংস্থান। লিটল ম্যাগাজিন অপ্রতিষ্ঠিত তারূণ্যের মুখপত্র। যারা বিদ্রোহ-প্রথাবিরোধী তারা সবসময় সঠিক হবে, এ কথা অনিবার্য নয়। তারা ভুলও হতে পারে। তাদের মতামতে ভ্রমও থাকতে পারে। অভিজ্ঞতার সংকটে তারা সংকীর্ণ মানসিকতা লালন করতে পারে। কিন্তু তাদের সাহসের দুরন্ত প্রকাশ তাদেরকে সত্যের কাছে নিয়ে যাবে। এ বিশ্বাস ও আস্থা নিয়েই লিটল ম্যাগের অনিয়মিত প্রকাশনা। ধিকিধিকি কুপি বাতির মত তার অস্তিত্বের নিরব অবস্থান তাকে বড় কাগজের পাশে ম্লান-নমিত করে উপস্থাপন করলেও, তার নিরন্তর সাধনা চর্চাবৃত্তি তাকে বড়কাগজের প্রধান বিরোধী অবস্থানে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখে। লিটল ম্যাগের লড়াই বড় কাগজের বিরুদ্ধে আজন্মের।

কারণ, শুরু থেকেই এটি প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক চিন্তা ধারণার বহির্ভূত; ব্যক্তিগত পর্যায়ের একটি অলাভজনক কর্মযজ্ঞ হিশেবেই প্রচল আছে আজ অবধি। যেহেতু বাণিজ্যিকিকরণ এর মুখ্য নয়, যেহেতু প্রতিষ্ঠানের চিরায়ত দালালি তথা বিশেষ দলমতের মতবাদ প্রচার উদ্দেশ্য নয়, তাই এর প্রচার প্রসারও বহুল ব্যাপৃত নয়। সীমিত একটা, কী কিছু মানুষের আগ্রহ-ভালোবাসা-উদ্দীপন পুঁজি করে এর প্রাণপণ বেঁচে থাকার যুদ্ধ । যুদ্ধ এইজন্য যে, সাহিত্যবিষয়টা এর গুটিকয় সংশ্লিষ্ট ছাড়া বাকিদের কাছে বৃথা সময়ক্ষেপণ বৈ কিছু কাজের নয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মী ছাড়া আছে গুণগ্রাহী পাঠক। আবার অনেক সময় লেখকের পরিচিত বিশেষ মহল থেকে আছে ভক্ত ও অনুরক্ত। মূলত এদেরই প্রাণায়নের ভিত্তিতে নানা দুর্যোগ ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে, কিংবা আর একটু কাব্যিকতা করে বললে, দুর্গম সাগর পেরিয়ে সিন্দাবাদের দু:সাহসিক অভিযাত্রার পর ছোটোকাগজ ছাপার অক্ষরে সুন্দরের সভ্য প্রকাশ।

এবং বিশেষ কারণেই একে জীবন্ত রাখতে হয়। লেখালেখি যতটা না প্রতিভাগত, তারচে' ঢের সাধনার। প্রতিভা এখানে দিকদর্শন করে মাত্র। সাধনা ব্যক্তিকে নিয়ে যায় সফলতার শীর্ষ চূড়ায়, কিংবদন্তীর খেতাবে। লেখালেখি ব্যাপারটা হচ্ছে চর্চা নির্ভর। চর্চা নিয়মিত হলে, তাতে প্রাণায়নও সহজভাবে ঘটে। ভাব-বিষয়ে অনন্যতা ফুটে। তাই এই চর্চাকে অব্যাহত রাখতেই লিটল ম্যাগের প্রকাশ জরুরি। নতুবা যে অর্থে লিটল ম্যাগ প্রতিষ্ঠা-প্রতিষ্ঠান বিরোধী সেটা এই নয় যে, এখানকার লেখকগণ আদৌ প্রতিষ্ঠা-পরিচিতি-খ্যাতি চান না। হালে দেখা যাচ্ছে, যে লেখকের নাম যতবেশি প্রচার হচ্ছে, তার পাঠকপ্রিয়তা বেশি হচ্ছে। লেখার গুণগত মান আর যাই হোক। সাহিত্যউপকরণ, মিডিয়া, উন্নত প্রকাশনা এখন জনপ্রিয়তা অর্জনের প্রধান অস্ত্র। গুণী লেখকের মৃত্যু নেই। তবে লেখকের গুণটা একদিনে বোঝার উপায়ও নেই। তাকে গভীর থেকে অনুধাবন করতে হয়, উপলব্ধি করতে হয়। তারপর তার লেখায় জীবনঘনিষ্ঠ উপকরণ থেকে তার স্বভাবকে মিলিয়ে দেখতে হয়, তিনি কতটা পটু এখানে, গল্পের প্লট তৈরি করার চাইতে তাতে বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানো কঠিন। এখানেই একজন লেখকের পূর্ণতা। বলা বাহুল্য, এখান থেকেই একজন লেখক ধীরে ধীরে কাহিনীর বিবরণের সাথে মূল চরিত্র অতিক্রম ক'রে লেখকমনে প্রবেশ করে, আর তার সৃষ্টির মতই ব্যক্তিকে করে তুলে কিংবদন্তি।



লিটলরম্যাগাজিন প্রকাশের আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, সাহিত্যে প্রচল কোন একটি নিয়ম, গতি, ধারা বা প্যাটার্নকে অস্বীকার করা, কিংবা অতিক্রম করা। মানে হচ্ছে, কেবল নির্দিষ্ট এক নিয়মে সাহিত্যসৃজনীকে আবদ্ধ রাখার প্রতিবাদে লিটল ম্যাগ সরব হতে পারে। এক্ষেত্রে লিটল ম্যাগের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্বাধীন, উদার। বুদ্ধদেব বসুই সম্ভবত প্রথম যিনি বাংলা ভাষায় লিটল ম্যাগাজিন করেছিলেন। ‘কবিতা' নামের লিটল ম্যাগটি মূখ্যত কবিতারই কাগজ ছিলো। তবে তার ধারণা ছিল-কাব্যভাষায় রবীন্দ্রবিরোধিতা। মান্নান সৈয়দের ভাষায়-উত্তর রৈবিক আধুনিক বাংলা কবিতার প্রতিষ্ঠা। কবিতা পত্রিকা তার লক্ষ্যে অটুট থেকে যখন সফলতা দেখতে পেয়েছে, অর্থাত বাংলা কবিতার ভূত ভবিষ্যতে কেবলি রবীন্দ্রবলয়িত না থেকে তা জীবনানন্দেও প্রসারিত হয়েছে, বুঝতে পেরেছেন, তখন এর প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, একটি আন্দোলনের গোড়া পত্তন করে তা সফলতার মুখ দেখাতে পারা পর্যন্তই এর সীমানা। লিটল ম্যাগ একটি কোন শ্লোগান ধারণ করে কর্মীদের মাঝে অবতীর্ণ হবে, এবং এক লক্ষ্য একটি আন্দোলনে সফলতা অর্জন করবে, কীবা ব্যর্থ হবে, এমনি এর চারিত্র্য বলা চলে। কোন কোন লিটল ম্যাগের এমন আন্দোলন-স্বল্পক্ষণী, কোন কোনটার দীর্ঘক্ষণী।



আমার ধারণায় ছোটোকাগজ যেভাবে বিশ্লিষ্ট হয়, তাতে ব্যাখ্যার অন্তরালে বাসস্তবতার অনেক সংঘর্ষ থেকে যায়। প্রথাবিরোধী, প্রতিষ্ঠানবিরোধী, খ্যাতিবিরোধী, প্রতিষ্ঠাবিরোধী, অলাভজনক স্বল্পপুঁজির তারুণ্যের কর্মযজ্ঞ, ইত্যাদিই এখন ছোটোকাগজের মূল সংজ্ঞা না। ঠিক আছে, সংজ্ঞার মূলে এইসবই ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে, প্রতিদিনের ভাষার গতিপরিবর্তনের সাথে প্রজন্মের ভাব ভাবনায়ও পরিবর্তন সাধিত হয়। ছোটোকাগজের প্রতিষ্ঠার পরিব্যাপ্ততার পেছনে ব্যাকরণিক কায়দা কানুন ছাড়াও তারুন্যের কিছু কিছু উন্মাদনাও কাজ করে, যাকে বিবেচনা করলে ছোটোকাগজের প্রকাশনার নেপথ্যও ভাবা যায়। এখন অনেক তরুণ লিটল ম্যাগ প্রকাশিত হয়, যেগুলো তরুণদের ভাষাচর্চার প্রাথমিক আচরণ, অধিকন্তু সাহিত্য মজলিশকেন্দ্রিক, এবং এটা তাদের বিকাশের প্রথম সিঁড়ি বলে পরিগণিত হয়, এবং এর মাধ্যমে নবীন লিখিয়েদের ভাষা ও কথা সাহিত্যে নিয়মিত করার চেষ্টা চালানো হয়, যার লক্ষ্য সবসময়ের জন্য প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতি বিরোধ থাকে না, বা থাকতে পারে না। এখন কারো কারো ধারণা মতে যে যতবেশি প্রচারিত, সে ততবেশি অবধারিত। ভালোর গুণাগুণ সেই প্রচারের প্রপাগান্ডায় অনুপস্থিত হলেও সমস্যা নেই। এখনকার লেখকরা রাতারাতি ফেমাস হয়ে যান, প্রকাশকের ভালো মুদ্রণগুণে, ও টিভি উপস্থাপকের স্তুতিবাক্যের কল্যাণে। সুতরাং নিজের মতামত ছড়াতে, আদর্শিক চেতনাকে মানবমনে ঢালতে হলে প্রচারের দরকার আছে বৈকি। সেখানে লিটল ম্যাগের স্বল্পগণ্ডি থেকে তা আদৌ সম্ভব নয়।





ছোটোকাগজ একাই একটি শব্দ। এর প্রতিশব্দে ‘বড়'র কোন অভিধান নেই। ইংরেজি লিটল ম্যাগ' এর সরল তরজমা করলে দাঁড়ায় ছোটোকাগজ। অনেকে এই তরজমা করতেও নারাজ। লিটল ম্যাগ, সে লিটল ম্যাগই, আব্দুল মান্নান সৈয়দ বলেন, লিটল ম্যাগ এখন বাংলায় অঙ্গীভূত একটি শব্দ, যেমন চেয়ার টেবিল। আমার ধারণামতে লিটলম্যাগ যদি একাই একটি শব্দ হয়ে থাকে, তাহলে সত্যিই ‘লিটল' এর তরজমায় তখন ‘ছোট' অর্থের কোন তাৎপর্য নেই। কারণ প্রকৃত লিটল ম্যাগ সে ছোট বা কীর্ণ তো নয়ই, অধিকন্তু তা দু:সাহসিক, দু:সাধ্যে উচাটন, নির্ভীক। তার পরিমণ্ডল কোন কোন ক্ষেত্রে সংকীর্ণ তখন তাকে ‘সীমিত' অর্থে লিটল ম্যাগ বা ছোট বলা হয়ে থাকে। তাই মান্নান সৈয়দের কথানুয়ায়ী বাংলাতে লিটলের তরজমা ছোট না হলে এতে আশ্চর্যের কিছু দেখি না, কারণ-খোদ ইংরেজিতেও এই ‘লিটলে'র বিপরীতে ‘বিগ' শব্দের ব্যবহার নেই। তাই সাধারণভাবেই এ কথা বলা যায়, ছোটোকাগজ সে ছোটোকাগজই। তার কোন বড় কাগজ নেই।

আবার আছেও। অর্থাত অল্প কথায় ব্যাপারটাকে (আমরা যদি আগের নিয়মেই বিচার করি, অর্থাত ব্যাকরণের শৃঙ্খলিত অনুশাসন থেকে বেরিয়ে এসে বিচার করি) তাহলে হয়তো নাই। কিন্তু আজকাল পত্রপত্রিকার বাজার থেকে বলতে হলে এ কথা বলতেই হবে সাহিত্যেও বড় কাগজ আছে। যেগুলো তার প্রকৃতি-আকৃতি-স্বভাবে প্রধানত বড় কাগজের স্বভাব বিশেষণে অভিষিক্ত হয়, এবং তখন সেইবড় কাগজের উদ্দেশ্য যদি প্রতিষ্ঠানের দালালি, কিংবা খ্যাতি অর্জন হয়, তখন? হ্যাঁ, তখন তাকে বড় কাগজ অর্থে লিটল ম্যাগের অভিধা থেকে বের করে কুকাগজ বলা যেত পারে। যে নিজের স্বভাব নষ্ট করেছে। নিজের পাঠকের সাথে প্রতারণা করেছে। এবার খোলাসা করি, লিটল ম্যাগের নেপথ্য যোগানদাতা কেমন হবে, তা সরাসরি আলোচনা না করলেও বুঝার বাকি থাকে না, তার প্রধানতম যোগানদাতা হবে তারুণ্যের উচাটন মনোবৃত্তি। ইদানীং কিছু কিছু কাগজ দেখি, আকারে-প্রকারে যেগুলো ব্যয়বহুল, বিলাসী। সাহিত্যবিষয়ক কর্মযজ্ঞে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা যতটা না মতবাদ প্রচারে বিশ্বাসী, প্রচল প্রথার বিরোধী, তারচে' ঢের বেশি প্রতিষ্ঠানের দালালিপনায় সিদ্ধহস্ত। তারা অবৈধ সিস্টেমের(সরকার)বিরোধিতায় গণ্ডমূর্খ। তারা শুদ্ধতার চর্চার চাইতে এ বিষয়টিকে ’দশহাত দূর থেকে নিরাপদে' পাশ কাটিয়ে চলতে অভ্যস্ত। তারা বস্তুত কোন নতুনের প্রতিনিধিত্ব করতে আসেনি। তারা কোন না কোন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় হায়ার হয়ে এসেছে। অনেকটা ইলেকশানের আগে যেমন ক্যাম্পেইন করার জন্য লোক হায়ার করা হয় সেরকম। সেসব প্রতিষ্ঠান যেমন, লাইব্রেরি, সরকারী গবেষণাগার, বিশেষ কোন সরকারের প্রতিষ্ঠা করা মুখপত্র, এবং সরকারের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে এর প্রকাশনাও বন্ধ হয়ে যায় প্রভৃতি। এখানে মূলত সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ,-এবং বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গি অস্বাধীনভাবে শর্তযুক্ত ক'রে বৃহত পর্যায়ের বিনিয়োগ ব্যবস্থা চালু করা হয়। বছরের সেরা পাণ্ডুিলপিটি তারা নির্বাচন করবেন, কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রথম শর্ত হচ্ছে, লেখকের সর্বোর্ধ পাঁচটি বা দশটি বই বাজারে থাকতে হবে(!) এটা কেমন কথা? সাহিত্যিক বিচার কি কখনো প্রকাশনা দিয়ে হয় নাকি? এমনও হতে পারে একজন খুব ভালো লেখেন, কিন্তু ব্যক্তিগতপর্যায়ে অবস্থাসম্পন্ন না হওয়ায় তার বই প্রকাশ করতে পারেন না। আরেকজন লেখক, যিনি মোটামুটি ধরনের লেখালেখিতে অভ্যস্ত, এবং অবস্থাসম্পন্ন, তার একাধিক বই বাজারে। তাহলে এই দুজনের মধ্যে আপনি ভালো লেখক হিশেবে কাকে মূল্যায়ন করবেন? এই হচ্ছে সমস্যা। নতুবা ছোটকাগজের প্রতিষ্ঠাকালীন ধারণায় বৃহত্তর পুঁজিসংগঠন এর মাকসাদ ছিলো না। শিল্প সাহিত্যের চর্চায়, ভিন্নধর্মী কিছু প্রচারণায় মুক্ত বুদ্ধির উৎসার, সৎসাহসই এর মূল লক্ষ্য। কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষপাতিত্ব এর কাম্য নয়।



ছোটোকাগজের স্বল্পপুঁজি, অলাভজনক প্রকাশনার বিরোধিতা করে যাচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাখ্যারও দুটি দিক বর্তমান। পাঠক বিবেচনায় নাকি উদ্দেশ্যনির্ণয়ে? আবার উদ্দেশ্য বিষয়টা এমনি যে তার যথার্থতা ব্যক্তি ছাড়া সঠিক ঠাহর করা সম্ভব নয়। এমনও হতে পারে তারা কোন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে না বরং সাহিত্যকল্যাণে ব্রতী হয়েই প্রতিষ্ঠানের দালালি করছে। তবে পাঠক বিবেচনায় সেটা যদিও বড়কাগজ, কিন্তু বোধেবিশ্বাসে এরা ছোটোকাগজের সীমানােক অতিক্রম করে না। করতে পারে কি না সেটা এখানে মুখ্য নয়। সাহিত্যকর্মযজ্ঞতায় স্বাধীনচেতা, উদারপন্থী। চেতনার উদ্দীপনে নীতিকথার প্রচার করতে এরা সৎসাসহসী। কিন্তু তাদের নিয়মিত প্রকাশনার নেপথ্য যোগানদাতা কোন দাতাগোষ্ঠী বা প্রচারমুখী প্রতিষ্ঠান। তবে দাতাগোষ্ঠী বা প্রচারমুখী প্রতিষ্ঠান তাদের উদারতায় হস্তক্ষেপ করছে না। তাদের সাহিত্যিককর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধতার দেয়াল তুলে দিচ্ছে না, তখন এগুলো বৃহতপুঁজিতে হলেও লিটল ম্যাগাজিনই।

লিটল ম্যাগ নিয়ে আরো পর্যালোচনার অবকাশ আছে। কিন্তু সব এই স্বল্পপরিসরের রচনায় ঠেলে ভরার সুযোগ নেই। সামনে আরো প্রামাণ্যবিস্তর আলোচনা হোক। এবং এটা হওয়া দরকার। বর্তমানে এর চর্চা অব্যাহত আছে, যদিও সাধ্য ও সামর্থ্যের সহযোগিতা নেই। তাই আলোচনা-পর্যালোচনার এ পথটি আরো প্রশস্ত হলে আশাকরি, লিটল ম্যাগাজিন ভাবনা আরো পরিষ্কার প্লাটফরম পাবে, অধিকন্তু এর বহুল প্রচারণায় নি:স্বার্থ এগিয়ে আসবে প্রতিষ্ঠান বা দাতাগোষ্ঠী। এবং আসা উচিত। লিটল ম্যাগের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতেই এদের আসা উচিত। পাশাপাশি তরুণরাও নতুন করে ভাববে, নতুন ভাবনায় উচাটন হবে এ আশাও করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.