নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে নিজের ভিতরের কথাগুলো খুব প্রকাশ করতে ইচ্ছে করে। সেই ইচ্ছে থেকেই ব্লগে লেখার শুরু।

আবদুল্লাহ্-আল-মাহিন

গবেষক, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন

আবদুল্লাহ্-আল-মাহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের ব্যস্ত ডাক্তার আর আমরা অভাগা রোগী

২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩১

আমাদের মেয়ে জুনায়রাহ এর হঠাৎ ঠাণ্ডা লেগে গেল, সাথে হাল্কা জ্বর। নাপা খাওয়ানোর পরও দুইদিনে যখন ভাল হচ্ছে না তখন নিয়ে গেলাম মনোয়ারা হাসপাতালের এক প্রফেসর এর কাছে। আমরা এই হাসপাতালের যে প্রফেসরকে নিয়মিত দেখাই তিনি নেই। যাই হোক, ডাক্তার প্রেস্ক্রাইব করলেন:

১।নাপা সিরাপ

২।একটা কফের সিরাপ,

৩।একটা এন্টি-এলার্জির সিরাপ

৪।নরসোল ড্রপ, এটা কাজ না করলে রাইন্যাক্স ড্রপ



আরও দুদিনে বাবুর ঠাণ্ডা কমার কোন লক্ষণ নেই, জ্বর আসতে থাকল সেই সাথে খাওয়া-দাওয়া কমে যেতে থাকল।



এবার নিয়ে গেলাম আমাদের নিয়মিত ডাক্তারের কাছে। উনি বললেল এই সব কফের সিরাপ খেয়ে ঠাণ্ডা আরও বসে যায় আর নরসোল ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা বেড়ে যায়। তাহলে কি আগের ট্রিটম্যান্ট ভুল ছিল???

ডাক্তার প্রেস্ক্রাইব করলেন

১। সেফালোস্পরিন ওরাল এন্টিবায়োটিক

২। নাপা সিরাপ

৩। প্রয়োজনে রাইন্যাক্স ড্রপ, এবং

৪। নিয়মিত নেবুলাইজার



বাবু যেহেতু মাঝে মাঝে কানে হাত দেয় তাই আমার স্ত্রী, মিতি, তার ডাক্তারী অভিজ্ঞতা থেকে উনাকে কানটা একটু চেক করতে বললেল। প্রথম দুই বার উনি শুনেও কিছু বললেল কেনা, তৃতীয়বারের অনুরোধের পর উনি কিছুটা রেগে গিয়ে বললেন, “কান চেক করার দরকার পরে না”। হয়তো তার অত সময় নেই।



এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পর-ও বাবুর কোন ইম্প্রুভ হল না, জ্বর বাড়তে থাকল সেই সাথে খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিল।রাতের বেলা জ্বর মেপে দেখলাম প্রায় ১০২, সেই সাথে প্রচণ্ড কান্না কাটি। বাবু সাধারণত এভাবে কাঁদে না। সারারাত একফোঁটা কিছু খেল না, কোন প্রসাব ও করল না।



বুঝতে পারলাম ট্রিটম্যান্ট এ কোন একটা সমস্যা হচ্ছে এবং বাবুকে স্যালাইন দেয়া দরকার। চলে গেলাম এপ্যোলো হাসপাতালে। আউটডোর এর ডাক্তার বেশ ভাল ভাবেই চেক করলেন, কান চেক করে বললেল, “কানে ইনফেকশন হয়ে গেছে”!! মনে মনে আগের ডাক্তারের চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করে সঠিক জায়গায় এসেছি ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।



ডাক্তার বললেল, যেহেতু এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পরেও কানে ইনফেকশন হয়েছে তাই হাসপাতালে এডমিশন নিয়ে ইন্ট্রাভেনাস এন্টিবায়োটিক এবং স্যালাইন নিলে ভাল হবে।



ডাক্তারের চেক-আপে খুশি হয়ে বাবুকে নিয়ে উঠে পরলাম ক্যাবিনে। ক্যানুলা করার সময় হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করা বাবুর চিৎকার ছাড়া সব কিছু ভালই চলছিল। বাবুর স্টুল-স্যাম্পল টেস্ট করে ডিসেন্ট্রি পাওয়া গেল। স্যালাইন, ইন্ট্রাভেনাস সেফালোস্পরিন এন্টিবায়োটিক (??), নরসোল ড্রপ (এখানে বলা হল এতে কোন সমস্যা নেই বরং উপকারী) নিয়মিত নেবুলাইস আর নার্সদের সেবা পেয়ে বাবু ইম্প্রুভ করতে শুরু করল। চারদিন পর ছুটি নেয়ার সময় চলে এলো। ছুটি নেয়ার কিছু আগ মুহূর্তে কালচার রিপোর্ট নিয়ে এলেন ডাক্তার । ইতোমধ্যে আমরা সব কিছু প্যাকও করে ফেলেছি। ডিউটি ডাক্তার কন্সালট্যান্টকে বললেল সব কালচার রিপোর্টে “নো গ্রোথ”। কন্সালট্যান্ট কানের ইনফেকশনের কথা মনে করে এন্টিবায়োটিক চেঞ্জ করে ওরালী “সিপ্রোফ্লক্সাসিন” খেতে বললেল। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সিপ্রোফ্লক্সাসিন অনেক সময় সমস্যা করে দেখে মিতির অনাগ্রহ সত্ত্বেও এটাই প্রেস্ক্রাইব করলেন ডাক্তার। মিতির মন খারাপ হয়ে রইল। আমরা বিল দিয়ে চলে এলাম বাসায়।



বাসায় এসে পরদিন বাবুর আবার ডিসেন্ট্রি এর মত হল। ফাইল ঘেঁটে দেখা গেল- স্টুল এর রিপোর্ট এ “এরোমনাস” এর গ্রোথ-ই শুধু নাই, সেই সাথে এই ব্যাকটিরিয়া আবার কিনা সিপ্রো, সেফালো সহ প্রায় সব এন্টিবায়োটিক্স এর এগেইন্সট-এ রেজিট্যান্ট, শুধু য্যান্টামাইসিন এ সেনসিটিভ। তাহলে ডাক্তার কিভাবে সিপ্রো প্রেস্ক্রাইব করল?? সেফালোস্পরিন এন্টিবায়োটিকে বাবু ইম্প্রুভ-ই বা করল কিভাবে? ডাক্তার ভুল নাকি রিপোর্ট???



আমাদের দেশে ডাক্তারদের সময় নেই ৫/১০ মিনিটের বেশী একজন রোগীর পিছনে ব্যয় করার। নেই নির্দিষ্ট কোন প্রোটকল। যে যার নিজস্ব স্টাইলে রোগী দেখছে, নেই কোন জবাবদিহিতা। রিপোর্ট দেখার মত সময় বড় ডাক্তারের না থাকায় ডিউটি ডাক্তারের কথা মতই ডিসিশন নিয়ে নিচ্ছে। আমি এমন ডাক্তার-ও দেখেছি যে নিজে রোগীর সাথে একটা কথাও বলে না, এসিস্ট্যান্ট এর কাছে পাঠিয়ে দেয়। অথচ এই একেকটা ডিসিশন যে রোগী বিশেষ করে শিশু রোগীদের জন্য কতটা মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে তা এই ব্যস্ত ডাক্তাররা কি কখনো ভেবে দেখেছে??



বাংলাদেশের মেধাবীদের একটা বড় অংশ যায় চিকিৎসাবিদ্যা পড়তে। কি অমানুষিক পরিশ্রম আর মানসিক যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে সমাজ-সংসার বিসর্জন দিয়ে একের পর এক ডিগ্রী নিয়ে ডাক্তার হয়ে উঠতে হয় তা আমি খুব কাছ থেকে দেখছি। সমাজ ব্যবস্থার এই দৈন্যদশায় অন্যসব সেবার মতই সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিতে সমস্যা থাকবে সেটাই হয়তো স্বাভাবিক, কিন্তু অন্য সেবা প্রাপ্তির অভাব আমদেরকে কখনোই এতটা অসহায় করে তোলে না। তাই ডাক্তারদের প্রতি বিনীত অনুরোধ আপনারা রোগীর প্রতি আরও বেশী সময় দিন - এখানে যে জীবন-মরণের প্রশ্ন!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.