নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে নিজের ভিতরের কথাগুলো খুব প্রকাশ করতে ইচ্ছে করে। সেই ইচ্ছে থেকেই ব্লগে লেখার শুরু।

আবদুল্লাহ্-আল-মাহিন

গবেষক, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন

আবদুল্লাহ্-আল-মাহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশার প্রদীপ যে এখনও টিমটিম করে জ্বলছে, এটি যেন নিভে না যায়..................

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০

দিনশেষে কত ঘটনার স্মৃতি নিয়েই না বাসায় ফিরি। শান্তির ঘুম নিয়ে আসতে পারে এমন কোন ঘটনা কি ঘটে? যে ঘটনাগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করে মনে হয়-আহ্, পৃথিবীটা কতই না সুন্দর! কেন জানি না, আমরা প্রতিনিয়ত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারণার মত অসংখ্য অসুন্দর ঘটনারই মুখোমুখি হই। আর এই অসুন্দর ঘটনাগুলো আমাদের ভেতরের সৌন্দর্যকেও আস্তে আস্তে গিলে খায় এবং সবার প্রথমে আঘাত হানে আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তির উপর। আশপাশের মানুষগুলোকে প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করি, ভীত থাকি তাদের দ্বারা প্রতারিত হবার। আশপাশের সবার প্রতি অবিশ্বাস আর অশ্রদ্ধা নিয়ে প্রতিনিয়ত মস্তিস্কের অপব্যবহার করি নিজের সম্মান না হয় সম্পদ রক্ষার জন্য। মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানোর সাথে সাথে প্রথম যে জিনিসটা হারাই তা হচ্ছে মানুষিক স্বস্তি।

অসুন্দর ঘটনা দেখতে দেখতে যা হওয়া উচিত যা মানুষ হিসাবে অপর মানুষের কাছে প্রত্যাশিত তাই যেন আমাদের চমকিত করে, পুলকিত করে। হঠাৎ করেই পৃথিবীটাকে অনেক সুন্দর মনে হতে থাকে। প্রবাস-জীবনে হরহামেশা এমন অনেক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু নিজের দেশেও যে এগুলো দেখতে বড় ইচ্ছে করে! মন চায় এদেশকে নিয়ে, এদেশের মানুষকে নিয়ে বুকে আশার প্রদীপ জ্বালাতে। অনুসন্ধানী চোখ তাই খুঁজে ফিরে সুন্দর ঘটনার যা মানুষ সম্পর্কে বিশ্বাস বাড়ায়, বাড়ায় শ্রদ্ধা। সৌভাগ্যবান আমিও আকস্মিকভাবেই যেন তাই গত কয়েক মাসে মুখোমুখি হলাম মন ভাল করে দেয়ার মত এ রকম কয়েকটি ঘটনার।

ঘটনা একঃ
আপা……আপা………
ক্যান্টিনের ছেলেটি হঠাৎ কেন ডাকছে? আমি আর আমার কলিগ, শম্পা আপা, দুজনই পিছন ফিরে তাকালাম। ছেলেটি দৌড়াতে দৌড়াতে ততক্ষণে পৌঁছে গেছে আমাদের কাছে। হাঁপাতে হাঁপাতে একটা চকচকে ১০০০ টাকার নোট এগিয়ে দিলেন শম্পা আপার দিকে! আপা অবাক! আমার?
“হ, টেকা দেওনের সময় আপনার ব্যাগ থাইকা পইড়া গেছিলো”ছেলেটি কোন মতে জবাব দিল, বলেই আবার দৌড় দিল ক্যান্টিনের দিকে। ক্যান্টিনে এখনো অনেক লোক খাবার খাচ্ছে তাদের দেখভাল করতে হবে তো।
অবাক হয়ে আমরা ওর চলে যাওয়া দেখতে থাকলাম………..অবিশ্বাসী চোখ যেন মেনে নিতে পারছে না……….।

ঘটনা দুই:
ব্রেক!!! তীব্র চিৎকার করে হেল্পার ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলল। ড্রাইভারের হার্ড ব্রেক এর শব্দ পেয়ে আমরা সামনের দিকে তাকালাম কি হয়েছে দেখার জন্য। একটা ছেলে দৌড়ে রাস্তা পার হবার সময় প্রায় গাড়ির নিচে পড়ে যাচ্ছিল, হেল্পারের কল্যাণে এ যাত্রায় প্রাণটা রক্ষা পেল।
ড্রাইভার কিছুটা বিরক্ত, হেল্পারের উদ্দেশ্যে বলল, “এমন কইরা রাস্তা পার হয় কেন? এমন করলে তো মরবই”।
হেল্পার ড্রাইভারকে রেগে উত্তর দিল, “হেরা দেখব না দেইখা কি আমরা দেখমু না, সবাই ভুল করলে চলব?”
হেল্পারের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম……………………ঘাতক ট্রাক বা বাসের ড্রাইভার-হেল্পারের ভিড়ে এ কি অন্য এক মানুষ নয়!!!

ঘটনা তিনঃ
প্রথম দুইটি ঘটনার পর কিছুতেই তৃতীয় এমন কোন ঘটনার কাছাকাছি হতে পারছিলাম না। দিন, সপ্তাহ, মাস পার হয়ে গেল………আশায় বুক বাঁধার মত তৃতীয় কোন ঘটনার দেখা পেলাম না।
আশার প্রদীপ তখন নিভু নিভু আর আমি আমার জাপান-জীবনে ঘটে যাওয়া মন ভাল করে দেয়ার মত অসংখ্য ঘটনা মনে করে নিজ দেশের মানুষগুলোর উপর আশা হারাতে বসেছি। হিসাব মেলাবার চেষ্টা করছি আমরা অনুন্নত বলেই কি অসৎ, অসভ্য, অভদ্র নাকি আমাদের চরিত্রে এই উপাদান আছে বলেই আমরা অনুন্নত!!! হঠাৎ করেই যেন আমাকে ঝাঁকুনি দিয়ে জানান দেবার জন্য এই তৃতীয় ঘটনা আবির্ভাব!

ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে আজিমপুর কবরস্থানে যাবার পথে সিএনজি তে রেখে আসলাম আমার অতি প্রিয় আইফোন। ঘটনাটা বুঝতে পারার সাথে সাথে আমার স্ত্রীর মোবাইল থেকে ফোন দিতে থাকলাম আমার নম্বর এ। কিন্তু ওপাশ থেকে রিং হবার কোন শব্দ নেই……, যার অর্থ হলো বাজে টাইপের কারো হাতে ফোন-সেটটা পড়েছে এবং সেটটা পাবার সাথে সাথে সে ওটা বন্ধ করে দিয়েছে।
ঈদের শুরুটা যে এত বাজে ভাবে হবে তা হয়তো কল্পনাও করিনি। প্রথমে কিছুক্ষণ মন খারাপ করে থাকলাম। এরপর এদেশের বাস্তবতার কথা চিন্তা করে ওটা পাবার আর কোন আশা নেই এটা মেনে নিয়ে মেয়ে আর বউকে নিয়ে ঈদের আনন্দে মনোনিবেশ করলাম। ও হ্যাঁ, তার আগে জাপানে দুবার হারিয়ে যাবার পরও ফিরে পাওয়া সেটটা এদেশে পাবার যে কোন আশাই করছিনা সেটা ঘটা করে লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে ভুললাম না।

ঈদের সব সামাজিকতা শেষে বাড়ী ফিরে রাত ১০ টার দিকে আমার সকাল বেলার স্ট্যাটাসের উপর করা কমেন্টগুলো পড়ছি। আমাদের মানুষগুলো সম্পর্কে আশাব্যঞ্জক মন্তব্য তেমন একটা খুঁজে পাওয়া গেলনা। তখন হঠাৎ করেই আমার ভাই এর করা ফোন থেকে জানতে পারলাম কেও একজন আমার মোবাইল সেট পেয়ে কল লিস্ট থেকে অনেককে ফোন করছে।আমার অবাক হবার পালা তখন শুরু। সেই নাম্বারে ফোন করে জানতে পারলাম, সেটটা পেয়েছে সকালের সেই সিএনজি এর ড্রাইভার। মোবাইল ফোন সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা না থাকায় সারাদিন ফোনটা অফ রেখে সে গাড়ি চালিয়েছে আর সন্ধ্যা হতেই গাড়ি বন্ধ করে অন্য একজনের সহায়তায় ফোন এর মালিক কে খুঁজে পাবার চেষ্টা করছে।

রাত তখন ১১ টা পার হয়ে গেছে। প্রচণ্ড বৃষ্টির ভিতর আমি বাসায় ফিরছি রিক্সা নিয়ে। সঙ্গে আমার হারিয়ে যাওয়া সেটটা। বারবার মনে পড়ছে সেই দরিদ্র ড্রাইভারের কথাটি, “আল্লাহ্ আমারে অনেক দিছে, আর কিছু দরকার নাই। এই সেট দিয়া আমি কি করমু’। সকালে প্রায় নষ্ট হতে যাওয়া ঈদের আনন্দ স্রস্টা যেন ফিরিয়ে দিলেন শতগুণে। এই আনন্দ শুধু হারিয়ে যাওয়া দামী সেট ফিরে পাবার নয়, আমারই দেশের এক দরিদ্র মানুষের সততার সন্ধান পাওয়ার, দেশের মানুষগুলো সম্পর্কে হারিয়ে যাওয়া শ্রদ্ধাবোধ কিছুটা হলেও ফিরে পাওয়ার……………। পৃথিবীটা আসলেই অনেক সুন্দর………………।

ঘটনা চার:
আমার বিয়ের ঘড়িটা হঠাৎ করেই খুঁজে পাচ্ছি না। ঘড়িটার আর্থিক মূল্য নেহাত কম নয় কিন্তু তার থেকে বেশী মূল্যবান এর প্রাপ্তির উপলক্ষ। বাসায় খুঁজলাম, খুঁজলাম অফিসে। কোন খানেই খুঁজে পেলাম না। এই ঘটনার প্রায় মাস ২/৩ পরে আমার অফিসের রুম পরিষ্কার করতে আসা ঝাড়ুদার মহিলাকে এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম টয়লেট এ কোন ঘড়ি পেয়েছে কিনা। হাতমুখ ধোয়ার সময় ঘড়ি খুলে রাখতে পারি এই ভেবে তাকে জিজ্ঞেস করা। সে পায়নি বলে জানিয়ে দিল, আর পেলেই কি আর দিবে-আমার ভাবনাটা তখনো এমন-ই ছিল। আই-ফোন ফিরে পাবার ঘটনা তখনো ঘটেনি তাই আমি তেমন আশাবাদী হতে পারছিলাম না।

এর প্রায় আরও ৩/৪ মাস পর, হঠাৎ একটি ঘড়ি নিয়ে হাজির সেই মহিলা। বলল “স্যার, দেখেন তো এইটা আপনার সেই ঘড়ি কিনা”। যা হারিয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে সেটি ফিরে পেয়ে আমি তো বাকশুন্য। “আপনি আমারে যহন বলছিলেন তহন আমি ভুইলা গেছিলাম যে আমি ঐটা পাইয়া এক স্যার এর কাছে রাখতে দিছিলাম। আইজকা ঐ স্যার কইতাছে তুমি যে আমারে ঘড়িটা রাখতে দিছিলা সেইটাতো আর নিলা না। তখন সাথে সাথে আমার আপনের কথা মনে পড়ল”।

দেশকে নিয়ে প্রতিনিয়ত খারাপ খবর দেখতে দেখতে দেশের মানুষের উপর বিশ্বাস হারাতে বসা আমাকে ভীষণভাবে লজ্জা দেবার জন্য-ই বোধহয় আজ এমন আরও একটা ঘটনার মুখোমুখি হতে হল। আর্থিকভাবে গরীব হয়েও মানের দিক থেক যে ভীষণ ধনবান এই ঝাড়ুদার মহিলা! তাকে সম্মানিত করার ভাষা যে আমার জানা নাই…………

ভালকে ভাল আর খারাপকে খারাপ বলার শিক্ষা আমরা আমাদের শিশুকাল থেকেই পেয়ে আসছি। কিন্তু সমাজে খারাপরাই যখন ক্ষমতাবান তখন তাদের দিকে আঙ্গুল তোলার সাহস হারানোটা অন্যায় না বাস্তবতা তা হয়তো বিতর্কের বিষয় কিন্তু ভালকে ভাল বলতে তো কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। একটা ভাল কাজের সঠিক মূল্যায়ন যে আরও দশটা ভাল কাজকে উৎসাহিত করবে। যে মানুষটা আমার বিশ্বাসের দাম দিল তাকে যে আমার সম্মান জানাতেই হবে। তার চরিত্রের আলোকিত দিকটাকে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে তা-নাহলে এই আলো যে নিভে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। গ্রাম থেকে আশা সহজ সরল মানুষগুলো শহরের অসৌন্দর্য্যের মুখোমুখি হতে হতে মাস গেলেই বদলে যেতে শুরু করে। আস্তে আস্তে হয়ে ওঠে রুক্ষ, বিবেক-বর্জিত এক ধুরন্ধর মানুষ। তার সহজ সরল বিশ্বাসী মনটাকে অটুট রাখার জন্য আমাদের যে অনেক কিছু করার আছে। দেশের এই সব সহজ সরল মানুষ গুলোই যে এখনো সমাজটাকে বাসযোগ্য করে রেখেছে। দেশটা ভরে যাক এমন আলোকিত মানুষ দিয়ে। তারাই যে আমাদের আশার আলো এখনও নিভু নিভু করে জ্বালিয়ে রেখেছে। এই আলোকে কিছুতেই যে নিভতে দেয়া যাবে না, তাহলে যে ঘোর অন্ধকার।

আমার ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/mahinmicro

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) বলেছেন: নিভতেই হবে

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪

আবদুল্লাহ্-আল-মাহিন বলেছেন: পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতী হয়তো সেই রকমই ইঙ্গিত দেয় তবে, আলো রেখা এখনো যেহেতু দেখা যাচ্ছে আমরা নাহয় আশাবাদী হয়ে উঠি।

২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২২

হতাস৮৮ বলেছেন: সব সময় এরকম ই হয়। একের কারণে দোষগুলো সবাই কে নিতে হয়। হয়ত, আপনি একদিন এমন এক কাজ করে ফেললেন, নিজের অজান্তে হোক আর পরিস্থিতির কারণেই হোক, এর পর হাজার ভালো কাজ করলেও , ছোটখাটো কিছু হলেই সবাই আমাকে/আপনাকে ভুলের কথা দিয়ে খোঁচা দিবে। এইটাই বাস্তবতা। দেশে এখনো অনেক ভালো মনে মানুষ, সত্‌ মানুষ আছেন। যারা নিজেদের সব সময় গুটীয়ে রাখতে ভালোবাসেন।

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮

আবদুল্লাহ্-আল-মাহিন বলেছেন: হ্যাঁ, এই ভাল মানুষগুলোকে সবার সামনে নিয়ে আসতে হবে, সম্মানিত করতে হবে তাদের ভাল কাজকে, তাহলে হয়তো এই ভাল মানুষরাই সংখ্যায় বেশি হবে আমাদের দেশে। আমরা তখন বিশ্বাস আর স্বস্তি নিয়ে ঘুরে বেড়াব সর্বময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.