নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে নিজের ভিতরের কথাগুলো খুব প্রকাশ করতে ইচ্ছে করে। সেই ইচ্ছে থেকেই ব্লগে লেখার শুরু।

আবদুল্লাহ্-আল-মাহিন

গবেষক, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন

আবদুল্লাহ্-আল-মাহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টি এবং বাবা

১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:০২

বৃষ্টি এবং বাবা
ট্রেনের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরার চেষ্টা করছে নায়লা। তার হাতের চুড়িতে ছোট্ট ঝুনঝুনির মত কি যেন ঝুলছে। হাতের নাড়াচাড়ার সাথে সাথে একটা মিষ্টি শব্দ যোগ হচ্ছে। নায়লার সুন্দর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে তন্ময়। বৃষ্টিতে ভিজে হাতটা যেন আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে। মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে বলেই হয়তো তার চোখ এড়িয়ে গেল যে নায়লার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জলের ধাঁরা.........


ছোট বেলা থেকেই বৃষ্টিকে ভীষণ ভয় পেত নায়লা। বাইরে বৃষ্টি শুরু হলেই ভয়ে কুকরে যেত। বৃষ্টি আর বজ্রপাতের শব্দ থেকে বাঁচার জন্য দুকান চেপে ধরে বাবা বা মায়ের কোলে লুকিয়ে থাকত।


নায়লার সেই ভয় কিছুটা কাটিয়েছিল তার বাবা। বাবা প্রথম যেদিন ওকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে হাত-দুটোকে বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাইরে বের করে দিয়ে বলল, “আজ আমরা বৃষ্টি ধরব মা, বৃষ্টি ধরতে কত মজা দেখ।” বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটাগুলো যখন হাতে পড়ছিল তখন কেমন জানি ভাল লাগছিল, আবার ভয়-ও হচ্ছিল, তাই বাবাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল নায়লা।


বাবার কিন্তু ছিল বৃষ্টি সাথে প্রেম। অফিস থেকে ফেরার পথে যদি কখনো বৃষ্টি হতো তাহলে বাবাকে কখনোই শুকনো অবস্থায় বাসায় ফিরতে দেখেনি নায়লা। মা একদিকে বকা দিচ্ছে আর বাবা বলে যাচ্ছে, “ছাতাটা আসলে বড্ড ছোট, এটাতে বৃষ্টি কিছুতেই মানতে চায় না। একটা বড় ছাতা কিনতে হবে।” সেই বড় ছাতা আর কোন দিনই কেনা হয়নি। কারণ বাবাতো গাড়ী থেকে নেমে বাসায় আসত ছাতা মাথায় না দিয়েই।


একদিন বৃষ্টি জন্য স্কুল ছুটি হয়ে গেল অনেক আগে। গাড়ি নিয়ে মা গেছে শপিং-এ, তার সাথে কিছুতেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কিভাবে এই বৃষ্টিতে একা একা বাসায় যাবে-এটা ভেবে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল নায়লার। স্কুলের গেট থেকে বেড়িয়েই নায়লা দেখল বাবা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। বাবার সাথে রিক্সায় বসেও ওর খুব ভয় হচ্ছিল।একটু পর পর কেঁপে উঠছিল। বাবা নায়লার হাতটা ধরে বলল, “নায়লা মামনি দেখ, বাবা তোমার হাত ধরে আছে, বাবা থাকলে কোন ভয় থাকে না, কোন বিপদ আসতে পারে না।” সেই কথাটা যেন মন্ত্রের মত কাজ করেছিল। ভয়টা যেন মুহূর্তেই কোথায় উবে গেল। সেদিন সারা-রাস্তা বাবার হাত ধরে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরেছিল ওরা কিন্তু বাবার হাত এক মুহূর্তের জন্য ও ছাড়েনি নায়লা। ভাগ্যিস মা সেদিন বাড়িতে ছিল না, বাড়িতে থাকলে কি যে হতো তা আল্লাহ্-ই জানে। তবে বিপত্তি বাঁধল রাতের বেলা। শরীর কাঁপিয়ে যখন জ্বর আসল তখন বাবা-ও ভয় পেয়ে গেল। মা তো বুঝতেই পারছিল না হঠাৎ করে জ্বর কেন আসল! বাবার দিকে মা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতেই নায়লা বলে উঠল, “মা আজকে স্কুলে আইস-ক্রিম খেয়েছিলাম। এই জন্য-ই মনে হয় জ্বর এসেছে।” সেদিন রাতের বেলা বিছানার পাশে এসে বাবা মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, “মা, ভুল হয়ে গেল মনে হয়, আর কোনদিন তোকে বৃষ্টিতে ভিজতে বলব না।” নায়লা একটু হাসল, বাবার হাতটা ধরে বলল, “বাবা তুমি আমার হাত ধরে থাক, তাহলে আমার কোন বিপদ-ই হতে পারবে না।” নায়লা দেখল বাবার চোখের কোনে পানি ছলছল করছে।


এরপর বৃষ্টি-ভয় কমলেও পুরোপুরি কাটেনি নায়লার। বিয়ের পর তন্ময় বেশ সাহস দেবার চেষ্টা করত বৃষ্টি হলে, কিন্তু সে সময়টা যেন বাবাকেই শুধু খুঁজত নায়লা। মনে হতো বাবা থাকলে ওর একটুও ভয় লাগত না।


বাবা চলে গেলেন বাবার প্রিয় বর্ষাকালেই । মার ফোন থেকে যখন বাবার হার্ট এ্যাটাক এর খবর পেল তখন তন্ময় বাসায় নেই। খবরটা শুনে নায়লার পৃথিবীটা কেমন দুলছিল। বাইরে তখন প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ি নিয়ে গেছে তন্ময়। নায়লা দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। কতক্ষণ রাস্তায় ভিজতে ভিজতে দৌড়েছিল আর কখন রিক্সা পেয়েছিল তা এখন আর মনে নেই। সেই প্রথম বৃষ্টিকে একেবারেই ভয় পায়নি নায়লা......


বাবাকে যখন এম্বুলেন্স এ করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছিল এম্বুলেন্স এর কাচ ঘেঁষে। নায়লার কেন জানি মনে হচ্ছিল বাবা যদি একটু বৃষ্টি ছুঁতে পারত তাহলে এখনি ভাল হয়ে যেত।


বাবার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী গ্রামের বাড়িতেই বাবাকে কবর দেয়া হল দাদা-দাদীর পাশে। দোতালা বাংলো বাড়ীর বারান্দা থেকে বাবার কবরটা দেখা যায়। বৃষ্টিতে বাবার কবরটা ভিজতে দেখে নায়লার মনে হয়েছিল বাবাকে আর ভেজার জন্য এখন ছাতার দোহাই দিতে হচ্ছে না।


বাবার মৃত্যু নায়লার বৃষ্টি-ভয় একেবারেই দূর করে দিয়েছে। এখন বৃষ্টি এলেই সে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি কে ছুঁয়ে দেখে.................., মনে হয় বাবাও যেন ওর হাতটি ধরে আছে। আর বাবা থাকলে কি আর কোন ভয় থাকে.....................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.