নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধার রাত্রি ভোরের অনেক বাকী স্বপ্ন দেখার সুযোগ এখন তাই

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

মাহিরাহি

বাড়ী আখাউড়া। আখাউড়া রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে পাস করে সোজা ঢাকায় চলে আসি। কিছুদিন সিটি কলেজে ছিলাম। ছিলাম জগন্নাথেও। তারপর টোকিওতে কাটিয়েছি সাড়ে ছয়টি বছর। দেশে ফিরে এসে চাকুরি আর সংসার নিয়ে আছি। দুটো ছেলে, মাহি আর রাহি। একজনের সাড়ে ছয় আর আরেকজনে সদ্য চার পেরিয়েছে। ওদের নামদুটো জুড়ে দিয়েই আমার নিকের জন্ম। বেশিরভাগ সময়কাটে সন্তানের সান্নিধ্য। ঘরকুনো মানুষ আমি। লেখালেখিতে হাতেখড়ি এই সা ইন বল্গে এসেই। কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল ফিরিয়ে দেয়ার মত উদ্ধত্য আমার নেই। সবারই বন্ধু হতে চাই।

মাহিরাহি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাফনের কাপড়

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৫৭

রহিমা খালার মৃত্যু সংবাদ এল দেশের বাড়ী থেকে। মরার আগে খালার অনুরোধ ছিল ভাগ্নের কাছে সে যেন নিজে এসে তার গায়ে কাফনের কাপড় চড়ায়।
সেলিম সাহেব আর দ্বিধা না করে দীর্ঘ ১৫ বছর পর গায়ের পথ ধরলেন। সস্ত্রীক।
ঢাকা থেকে বেরিয়ে আসার ঠিক আগে গাড়ী থামল বিদায় ষ্টোরে। কাফনের কাপড় ছাড়া দাফনের জন্য অন্য সব কিছু কেনা হল।
গাড়ি চালিয়ে গায়ে যখন পৌছলেন সেলিম সাহেব তখন তার জন্য বড় একটা বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। লাঠিতে ভর করে রহিমা খালা বেরিয়ে এলেন উঠোনে তাদেরকে বরন করে নিতে।
মত্যুর আগে শেষ বারের মত ভাগ্নেকে কাছে পাওয়ার জন্য এই ফন্দি আটা। বুড়ির এই এই ভাগ্নেটা ছাড়া নিকট আত্মীয়দের আর কেউ জীবিত নেই। যা একটু ক্ষোভ ছিল ঢাকার এই দম্পত্তির, রহিমা খালার আতিথ্যে তা নিমেষেই দূর হয়ে গেল। সেলিম সাহেব একটু একটু করে নিজেকে আবিস্কার করতে লাগলেন অনেক বছর আগে হারিয়ে যাওয়া গায়ের জীবনটিকে। পুকুরে সাতরাতে গিয়ে বাচ্চা ছেলেদের মত হাতপা ছুড়লেন। নদীতে নামলেন হাতিয়ে মাছ ধরতে। এমনকি ফুটবলে লাথি মারতেও মাঠে নেমে গেলেন।
দ্বিতীয়বারের মত নাড়ী ছেড়ার কষ্ট অনুভব করলেন সেলিম সাহেব, দুদিন পর আবার যখন গ্রাম ছেড়ে আসতে হল। বিদায় নেওয়ার সময় রহিমা খালাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে পড়লেন।
ভগ্ন শরীর আর মনে গা ছাড়তে হল তাকে। কেননা খাওয়া দাওয়া ছাড়াও দুদিনের অন্যসব অনিয়মে শরীরটাও কিছুটা কাহিল হয়ে পড়ছিল। স্ত্রী জাহানারা গায়ে হাত দিয়ে উদ্বীগ্ন হয়ে পড়লেন। সামান্য একটু জ্বর আছে মনে হল। এর আগে দুবার মৃদু হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল সেলিম সাহেবের।

গাড়ী ঢাকার দোড়গোড়ায় পৌছলে স্বস্তির নি:স্বাস ফেললেন জাহানারা।
হঠাৎ করেই চেচিয়ে গাড়ী থামাতে বললেন সেলিম সাহেবকে।
গাড়ীর গতি মন্হর হল।
কেন? জানতে চাইলেন সেলিম সাহেব।
কাফনের কাপড়টা ফেরতে দেব।
সামনেই বিদায় ষ্টোর।
ওটা আমার জন্য রেখে দাও, স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন তিনি।
বাক্যটি শুনে আচমকা ধাক্কা খেলেন জাহানারা বেগম।
বাকশক্তি হারিয়ে ফেললেন।
গাড়ীর গতি আবার বেড়ে গেল।
অভিমান আর দু:খের মিশেল এক অনুভূতিতে চোখ দুটি ভিজে এল তার। বাইরের দিকে মুখ ফেরালেন।
ঢাকার উপকন্ঠের রাস্তাগুলোতেও মানুষজন গিজগিজ করছে।
দালানকোঠার ঘনত্ব ক্রমশ: বেড়েই চলেছে।
এতসবকিছুর মাঝেও সবকিছু ফাকা মনে হল তার।
দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে এল তার।
দুহাত দিয়ে তিনি কাফনের কাপড়টিকে খামচে ধরে থাকলেন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


জীবনের কোন কথা নেই, আছে কাপন, দাপন, মরন, আজরাইল, জঘন্য সব ভাবনাচিন্তা।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩০

মাহিরাহি বলেছেন: Life is the illusion Death is ultimate truth

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: কষ্টের গল্প।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:২৮

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:২০

পদ্মপুকুর বলেছেন: থিমটা যদি ভাগ্নেকে কাছে পাওয়ার আনন্দ পর্যন্ত থেমে যেতো, ভালো লাগতো, গল্প পড়ে মানুষ এখন আর বিষণ্ন হতে চায় না, তবুও শেষ পর্যন্ত বিষণ্নতায় এসে ঠেকেছে। আপনাকে ইদানিং নিয়মিতই দেখি, ভালো লাগে।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:২৮

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.