নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অচেনা বালক

পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় বস্তু হচ্ছে নিজের মন... সবার আগে নিজের মনকে চিনুন... নিজের মনের কাছে অচেনা থাকবেন না ...

মাহমু৩০৫

www.facebook.com/mahmud305

মাহমু৩০৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুমরে মরা ভালবাসা

০৯ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬

ইংরেজদের নাক বলতে যেরকম খাড়াটাইপ নাক বোঝায়,আমারটা অবশ্য ঠিক তেমন না।তবে বাঙালিদের সাথে তুলনা করলে আমার নাকটাকে যথেষ্টই খাড়া বলা যায়।মুরব্বীরা বলেন আমার জন্মের আগে মা কিছুদিন লন্ডন ছিলেন বলেই এরকম নাক পেয়েছি।তবে তাই বলে ভাববেন না আমার স্বভাবটাও নাক উঁচু টাইপের।তবে নাক নিয়ে এতো কিছু বলছি কারন এই নাকটাই আমার জীবনে একটা গুমরানো বেদনা রেখে গেছে।মানুষের বেদনা কান্নায় পরিনত হয়ে কিংবা স্মৃতির নিউরনগুলো ধ্বংস হয়ে একসময় হারিয়ে যায়।কিন্তু আমার বেদনা গুমরে গিয়ে মনের ঘরের কোনে স্থান নিয়ে আছে,যে ঘরে কান্না প্রবেশ করেনি বেদনাটাকে তরল করে স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলার জন্য।



কানিজের সাথে আমার প্রথম পরিচয় মায়ের বুটিক হাউজে।সেদিন মায়ের সাথে ক্যাশে বসেছিলাম।ক্যাডেট কলেজে পরে বাসায় থাকার সুযোগ খুব কমই হতো।আর যে সময় পেতাম তাতে বিভিন্ন টিচারদের বাসায় প্রাইভেট পড়তেই বেস্ত থাকতাম।নতুন বাসায় উঠে মা তখন আমার জন্য বাসার কাছে টিউটর খুঁজছিলেন।কানিজ যখন বলল সে আমার ক্লাসমেট,তখন মা তার টিউটরদের কথা জিজ্ঞেস করছিলেন।আর মেয়েটা খুব সাদাসিদে হলেও আমার মায়ের খুব পছন্দ হল।সেই সুবাদে কোচিং করতে গিয়ে কানিজের সাথে দেখা হতো।এরপরের গল্প আজ আর বলব না।শুধু এতটুকুই বলব কানিজ অনেক গুলোবছর আমার জীবনের পথ চলার সঙ্গী।এই ব্যাপারটা শুধু আমার প্রাণপ্রিয় মা জানেন,আর কেউ জানেনা।আমার ফ্যামিলি এমনিতে ভয়াবহ রক্ষনশীল।কিন্তু কানিজ মেয়েটাকে মা অসম্ভব পছন্দ করেন বলেই আমি যখন সাহস করে মাকে বলেছি,তিনি আর না বলতে পারেননি।আমার বড়-মামার এই ব্যাপারে বিশেষ অ্যালার্জি আছে।তিনি এটা শুনলে আমাকে ঠিক কাঁচা খেয়ে ফেলবেন।তবুও কানিজের সাথে আমার পথ চলছে মায়ের সমর্থন পেয়েই।প্রেমের পথচলা কখনোই খুব মসৃণ হয়না।হয়তো কানিজের গুনেই এরকম মসৃণ পথে এতোগুলো বছর পার করে দিয়েছি।হয়তো এজন্যই আমি যখন ফাইনাল ইয়ারে কানিজ তখন ১ বছরের জন্য উচ্চতর শিক্ষার জন্য ভিয়েনা যাবার সুযোগ পেলো,তখন আমি কোনরকম দ্বিধাছাড়াই ওকে অনুমতি দিয়ে দিয়েছি।



ঢাকা ভার্সিটির সামার ভ্যাকেশনে বড় মামার মেজো মেয়ের বিয়ে ঠিক হল।মামা আমাকে অসম্ভব পছন্দ করেন বলেই ওই বিয়ের অনেক কাজের দায়িত্ব আমাকে দিলেন।চারুকলার ফ্রেন্ড আর আমার বাউলা বন্ধুদের দিয়ে ব্যান্ডের আয়োজন করে অনুষ্ঠানের চেহারাই পালটে দিলাম।সবাই অনুষ্ঠানের অনেক প্রশংসা করলো।বিশেষ করে আমাদের কাজিনদের বন্ধু-বান্ধবিদের কাছে তো পুরোই হিরো গেলাম!কাজিনদের যে এতো বন্ধু-বান্ধবীদের আছে তা জানতাম না।যাই হোক হাজারো প্রশংসা আমাকে মনকে পুরোপুরি খুশি করতে পারলো না।কানিজের অনুপস্থিতি সবজায়গায় কেমন যেন বেসুরো হয়ে বাজলো।ভ্যাকেসনের পর আবার একাকীত্ব ভর করল।কিছু ভাল লাগতো না।তখন স্কাইপি,ফেসবুকের প্রচলন হয়নি।কানিজের সাথে সপ্তাহে মাত্র একটা দিন আধঘণ্টা কথা বলতাম।মাঝে মাঝে আমার কাজিনদের ফ্রেন্ডরা ফোন করতো।একটা সময় আমার সাড়া না পেয়ে তারাও সরে গেল।পুজোর ছুটির ঠিক দুদিন আগে আসা ফোনটা আমাকে অবাক না করে পারলো না।বড়মামার ছোট মেয়ের ক্লাস এইটে পড়ুয়া বান্ধবীর ফোন পেয়ে অবাক হওয়ার কথা না,কেননা মেয়েটির সাথে বিয়ের অনুষ্ঠানেই দেখা হয়েছিল।আমিও প্রথমে অবাক হইনি।কিন্তু ২২ মিনিটের ফোনকলের সারমর্মে মেয়েটি যখন আমাকে ভালো লাগার কথা বলল,তখন যেন আকাশ থেকে পড়লাম।মেয়েটির কণ্ঠে এমন কিছু ছিল যা আমাকে বাকরুদ্দ করে দিল।



এরপর ৬ দিন ফোন না পেয়ে ব্যাপারটাকে উঠতি টিনএজ বয়সের উটকো আবেগ ভাবতে শুরু করেছি,সেদিনই মেয়েটা আবার ফোন দিল।আমার অবস্থা কি বুঝল কে জানে,শুধু বলল সে কিছু চায় না শুধু মাঝে মাঝে কথা বলতে চায়।মেয়েটার অভিমানে ভরা কণ্ঠ শুনে না করতে পারলাম না।তাছাড়া এই বয়সের মেয়েদের আমি এমনিতেই ভয় পাই,কখন আবার কি করে বসে।মাসখানেক ফোন করে সে শুধু গল্প করতো,আর আমি বাধ্যগত শ্রোতা হয়ে সব শুনতাম।তার সবগল্পেই থাকতো আমাকে কেন ভালো লেগেছে তার বিশদ ব্যাখ্যা।আমার কি জিনিস তার সবচেয়ে ভাল লাগে তা শুনে হাসি ধরে রাখতে পারলাম না।বিয়ের অনুষ্ঠানে আমার খাড়া নাকটা তার এতোই ভালো লেগেছিল যে তার ইচ্ছা হচ্ছিল যেন একটু ছুঁয়ে দেখে।আমিও মাঝে মাঝে অল্পসল্প রসিকতা করে বলতাম,আমি পড়ি ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারে,আর তুমি ক্লাস এইটে,আমি যদি ঠিক বয়সে বিয়ে করতাম তাহলে তোমার সমান একটা মেয়ে থাকতো।এটা বললে সে ভয়াবহ রকম ক্ষেপে যেতো।আরও খেপত যখন বলতাম,আমার যে নাকটাকে এতো ভালোবাসো সেটায় কিন্তু সর্দি লেগে থাকে(কথাটা ডাহা মিথ্যা :P)।ওর ছেলেমানুষি অভিমান আর খুনসুটি গুলো খুব ভাল লাগতো।কিন্তু কখনই ওকে অন্যভাবে দেখিনি,আমার আর দশটা স্কুলপড়ুয়া কাজিনের মতই ভেবেছি।তাই মেয়েটার কোন কথাই সিরিয়াসলি নেইনি।



ব্যাপারটা ওই পর্যন্ত থাকলে সমস্যা ছিল না।একদিন সকালে দেখি আমার জন্য কুরিয়ার করে একটা বডি স্প্রে আর একটা নকিয়া১১১২ ফোন পাঠিয়েছে।সেদিন খুব করে বকলাম।প্রথম থেকেই ওকে কানিজের কথা বলেছি।কিন্তু সে বিশ্বাস করেনি।সেদিন পুরো ব্যাপারটা খুলে বললাম।পরদিন সে তার বান্ধবী মানে আমার কাজিনকে জিজ্ঞেস করাতে সে দৃঢ়কণ্ঠে বলল আমি সিঙ্গেল।আগেই বলেছি আমার প্রেমের কথা আমার মা ছাড়া কেউ জানেনা।নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই ফেঁসে গেলাম।ও এবারো বিশ্বাস করল না।মেয়েটা তখন ঘন ঘন ফোন দিতে শুরু করল।ফোন দিতে না করলেই এমনভাবে কান্নাকাটি করতো যে পরে আমারই মায়া ধরে যেতো।কানিজকে ফোনে ব্যাপারটা বললেও সে মোটেও গা করল না।পড়াশুনার চাপেই বোধহয় এবারো ব্যাপারটাকে গুরুত্ত দিল না।শুধু বলল,সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু গভীর রাতে মাকে ফাঁকি দিয়ে ফিস ফিস করে যখন কথা বলতো তখন মনে হতো এইবার আমাকে থামতেই হবে,এইবার কঠোর হতেই হবে।



কিন্তু যখন আমি থেমেছি,তখন বড্ড দেরী হয়ে গেছে।এমনিতে সে আমাকে খুব একটা বিরক্ত করতো না,শুধু তার অনুভুতিগুলোর বর্ণনা আর দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাগুলোই শেয়ার করতো।কিন্তু ১৩ই মার্চ রাতে সে যে কাণ্ড করলো,তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।কথা নেই,বার্তা নেই ঠাস করে বলে বসল যে সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।আমার রুমমেটের ১৩ বছরের চাচাতো বোনটা কিছুদিন আগেই সুইসাইড করেছিল।সেই ভয়েই ওকে সরাসরি উত্তর দিলাম না।আমি তাকে শান্ত করার জন্য বললাম,আমাকে বিয়ে করলে তোমাকে কে খাওয়াবে,থাকবেই বা কোথায়,আমিতো এখনো ভার্সিটিতেই পড়ি।সে বলল,সে টিউশনি করবে আর আমার মেসেই থাকবে।যতদিন আমার সিঙ্গেল চকির পায়া ঠিক হচ্ছে না,ততদিন সে চকিতে থাকবে আমি কাঁথা নিয়ে ফ্লোরে থাকব।মেয়েটার পাগলামি দেখে আমি হাসবো না কাঁদবো কিছু বুঝছিলাম না।আমি ওকে পরে জানাবো বলে ফোন রাখলাম।আমার কি করবো মাথায় ঢুকছিল না।কানিজকে সব শুনে বলল,২৫ দিন পর সে ভ্যাকেসনে এসে সমাধান করবে।কিছুটা নিশ্চিত হয়ে ঘুমাতে গেলাম।কিন্তু সকাল বেলা যে আমার জন্য আজাব অপেক্ষা করছে তা জানতাম না।সকাল ঘুম ভাঙল মেয়েটার ফোনে।সে কান্না কান্না কণ্ঠে বলল,সে শ্যামলী বাসস্ট্যান্ডে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমার মাথায় বাজ পরলেও বোধহয় এতো অবাক হতাম না।মেয়েটা পিকনিকে যাবে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে একাই রাতের বাসে সিলেট থেকে ঢাকা চলে এসেছে। শ্যামলীতে যেয়ে দেখি মেয়েটা কাদছে।এরপরের ১১ ঘণ্টা ২৭ মিনিটের কথা সারা জীবনেও ভুলবো না।ওকে শ্যামলী থেকে নাস্তা খাইয়ে ধানমণ্ডি লেকে নিয়ে গেলাম।হাজারো যুক্তিতেও তাকে মানাতে পারলাম না।মোবাইলে কানিজের ছবি দেখালাম তাও বিশ্বাস করল না।আমার কাজিন বলেছে আমি সিঙ্গেল,সেই বিশ্বাস আর ভাঙ্গাতে পারলাম না।অগত্যা উপায় না দেখে ওকে শান্ত করার জন্য ১৫ দিন সময় চাওয়াতে রাজি হল।ফেরার পথে সে একটা কথাও বলল না।

কানিজের হাতে পায়ে ধরে ওকে ভ্যাকেসনের ১৩ দিন আগে দেশে নিয়ে আসলাম।ওর কথামতো দুজন মিলে সিলেটে মেয়েটার সাথে দেখা করতে গেলাম।কানিজ ওর স্কুলের সিঁড়ির গোঁড়ায় আমার হাত ধরে দাঁড়িয়েছিল।তিন তালা থেকে সিঁড়ি ভেঙ্গে নামার পথে আমাদের দেখে মেয়েটা থমকে দাড়িয়ে গেলো।এতো দূর থেকেও ওর বিস্ফোরিত চোখদুটো আমার চোখ এড়াল না।পরের দৃশ্য দেখার সাহস আমার ছিল না।শুধু দেখলাম কানিজ ওকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে।আরও তিন দিন সিলেটে ছিলাম আমার কাজিনের বাসায়।আরও দুবার মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছে।তার চোখদুটো অদ্ভুত শান্ত আর স্থির হয়ে গেছে।একটা বারের জন্যও আমার চোখের দিকে তাকায়নি।শুধু ট্রেন ছাড়ার সময় তার ছলছল চোখ দুটোর সাথে আমার চোখাচোখি হয়েছিল।সেই চোখ দুটোয় আর কেউ না দেখুক আমি দেখেছি কিছু অতৃপ্তি,আক্ষেপ আর অভিমান মেশানো বেদনাটা।ওর চোখে কি ছিল জানিনা,সেদিন থেকেই কেমন একটা অপরাধবোধ গ্রাস করেছে আমায়।



এইযে গল্পটা বললাম,সেটা আজ থেকে সাড়ে ৫ বছর আগের ঘটনা।কানিজ আমার জীবনসঙ্গী হয়েছে ২ বছর হল।মেয়েটার নাম বলার ইচ্ছা ছিল না,তারপরও বলি ওর নাম রিয়া।রিয়া এখন ঢাকা ভার্সিটিতে কোন একটা বিষয়ে অনার্স করছে।কানিজকে নিয়ে টিএসসিতে গিয়ে ওর দেখা পেয়েছিলাম।অদ্ভুত চুপচাপ হয়ে গেছে মেয়েটা,কারো সাথেই তেমন মিশে বলে মনে হয় না।রিয়া যখন আমার জন্য ঢাকা চলে এসেছিল তখন পার্পল কালারের একটা জামা পরেছিল।মাঝে মাঝে কানিজ যখন এই রঙের জামা পরে আমার সামনে হাজির হয়,তখন আমি চমকে উঠি।কানিজের অভ্যাস হচ্ছে কোন কারনে আমি আনমনা হলে আমার নাক চেপে ধরে ঝাঁকি দেয়া।কেন যেন তখন রিয়ার কথা খুব মনে হয়।হয়তো আমার নাকটা পছন্দ করতো বলেই।মাঝে মাঝে ভাবি,এইযে রিয়া আমার মনে প্রায়ই উকি দেয়,তার মানে কি রিয়ার প্রতি আমার মনে ভালবাসা জন্মেছিল?কিন্তু অনেক ভেবে দেখলাম,ওটা ভালবাসা না বরং মনের গভীর থেকে উঠে আসা সত্যিকার একটা ভালবাসাকে স্বীকৃত না দেয়ার অপরাধবোধ।হতে পারে ওটা ছিল ওর টিনেজ বয়সের বাধভাঙ্গা আবেগ,কিন্তু স্বয়ং বিধাতা আর আমি জানি ওর চোখে কি দেখেছিলাম।কানিজের প্রতি আমি ভয়াবহ কৃতজ্ঞ এই কারনে যে আমাকে কখনই ভুল না বুঝে সবসময় পাশে থাকার জন্য।কানিজের মন উজাড় করা ভালোবাসা না পেলে সত্যিকার ভালবাসা ফিরিয়ে দেয়া আক্ষেপে সারাজীবন পুড়তে হতো।রিয়া...অনেক ভালো থাকিস,যদিও জানি তুই ভালো নেই...তোর ভালবাসাকে হয়তো স্বীকৃতি দিতে পারিনি,বিশ্বাস কর...মন থেকে তোর গুমরে কষ্টটা অনুভব করি... যতদিন বেচে থাকবো তোর ভালবাসাকে রেসপ্যাক্ট করে যাবো...তবুও তুই ক্ষমা করিস আমায়...



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৪৪

আর.হক বলেছেন: বেচে থাকুক সত্যিকারের ভালবাসা।

২| ১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

সত্যিকারের ভালবাসা কখনো মরে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.