নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন ডায়েরি (পর্ব ৭)

১৯ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:৩৬




বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম


বোন উম্মে আবদুল্লাহ-র উমরাহ ডায়েরী(বই- সেরা হোক এবারের রামাদান) পড়ছিলাম। আল্লাহর সাহায্য চাইলে আল্লাহ কিভাবে, কোথা থেকে যে সবকিছু সহজ করে দেন!!! সুবহানআল্লাহ!!! আলহামদুলিল্লাহ!!! রাব্বানা ইয়াসসির ওয়া লা তুআ'সসির ওয়া তাম্মিম বিল খাইর...

২৯.১০.২০২২
শনিবার ছিল আমাদের রেগুলার ইবাদতের জন্য বরাদ্দ। আর কোনো জিয়ারা বা ঘোরাঘুরির ইচ্ছা নেই। বাচ্চা নিয়ে এতো জিয়ারা করা উচিত হয়নি। খুব ধকল গিয়েছে বাচ্চাদের উপর দিয়ে। আজ শুধু ওদের বিশ্রামের দিন।

৩০.১০.২০২২
এইবারের সফরে, আজকে মক্কায় আমাদের শেষ রাত। আগামীকাল রাতে মদিনায় থাকবো ইনশাআল্লাহ। আগামীকাল তাহাজ্জুদ ওয়াক্তে বিদায়ী তাওয়াফ করা আমার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তাই, আজকে বিকালেই বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করলাম। বিকালে মাতাফের গ্রাউন্ডে তুলনামূলক ভীড় কম ছিল। এই সফরে শেষবারের মতো দোয়া কবুলের জায়গাগুলো ধরে দোয়া করার চেষ্টা করছিলাম। আগেরবার পুলিশের বকা খেয়েছি তাই বাচ্চার বাবা আমাকে খুব নজরে রাখছে যেন হুট করে ভীড়ের মধ্যে ঢুকে না যাই। ভীড় এড়িয়ে একটু দূর থেকেই তাওয়াফ করতে হলো। দোয়া আর দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠা একটি বিকেল!

মাগরিবের সালাত আদায় করতে মাতাফের গ্রাউন্ডে বসলাম। দুই বাচ্চাকে নিজের কাছে রেখে বাচ্চার বাবাকে তার পছন্দমতো জায়গা খুঁজে সালাত আদায় করতে বললাম। জানি কঠিন হবে, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ সহজ করে দিবেন। আমার ট্যাপিকে নিয়ে চিন্তা নেই আলহামদুলিল্লাহ, তিনি সবার সাথে মিশে যান। ট্যাপাকে নিয়ে যতো দু:চিন্তা।

উনারা কোন দেশের, জানি না। মাশাআল্লাহ, সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগে আছে। আমার দুই মেয়ের কাজকর্মে খুব মজা পাচ্ছেন। আগ বাড়িয়ে দেখভাল করছেন। আমিও সুযোগ বুঝে দোয়া করতে বসে গেলাম। আযানের পর ট্যাপিকে ক্যারিয়ারে বসাতে যাবো, ওরা বাধা দিয়ে ইশারায় বলছে "ট্যাপিকে ক্যারিয়ারে নেয়ার দরকার নেই, সবাই খেয়াল রাখবে"। আমি সবসময় সালাত শুরুর আগে বাচ্চাদের খাওয়া দাওয়া করিয়ে দিতাম। সালাতের সময় যেন ওরা ক্ষুধার কষ্ট না পায় আর আমাকে সালাতে বিরক্ত না করে। কাজ হতো না। ট্যাপা শান্ত থাকলেও বেশিরভাগ সালাত ট্যাপিকে কোলে করে, নয়তো ক্যারিয়ারে ঝুলিয়ে আদায় করতে হতো। আমার এই দ্বীনি বোনদের কাছে নতুন জিনিস শিখলাম। তারা ঠিক সালাতে দাঁড়ানোর আগে বাচ্চাদের হাতে স্ন্যাকস দিলো। সালাতের পুরোটা সময় বাচ্চারা স্ন্যাকসের প্যাকেট আর স্ন্যাকসের স্বাদ নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিলো। বিরক্ত করার বা কোলে উঠার বায়না করার সুযোগই পায়নি। আফসোস হলো খুব। এই বুদ্ধিটা আগে জানলে হয়তো বাচ্চা কোলে নিয়ে সালাত আদায় করতে হতো না। আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল। শান্তিপূর্ণভাবে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। মক্কায় এই সফরের শেষ মাগরিবের সালাত। সালাত শেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুমে ফিরে এলাম। বাচ্চারা আর থাকতে চাচ্ছিল না। রুমে ফিরে দুইজনই দিলো ঘুম।

৩১.১০.২০২২
আজ আমরা মক্কা থেকে মদিনাতে যাবো। যোহরের সালাতের আগেই হোটেল থেকে চেকআউট করতে হলো। যাত্রাবিরতি দিয়ে নাম না জানা কোনো এক মসজিদে যোহরের সালাত আদায় ও কাছের রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। মক্কা থেকে মদিনাতে যেতে সাড়ে চার/পাচ ঘন্টা সময় লাগে। মক্কা-মদিনার হোটেলগুলোতে সাধারণত বেলা ১২টা বা দুপুর ২টায় চেক-আউট, দুপুর ৪টার পর থেকে চেক-ইন করার নিয়ম।

মক্কা থেকে চলে যাওয়ার অনুভূতি? এবার আমার আর বাধভাঙ্গা কান্না পাচ্ছিল না। দায়িত্ব, ব্যস্ততা, ইবাদাত। আমার কাছে সবকিছু যেন একটা ঘোরের মতো। হুট করে এসে চমৎকার এই সময়টা যেন পুট করে চলে গেল। ঘোর ভেঙে দেখি আমার মাথা ফাঁকা। ট্যাপাট্যাপি, তাদের খাওয়া-ঘুম-সুস্থতা-অসুস্থতা ছাড়া মাথার ভিতর আর কিছু নেই। গল্প করার মতো, ডায়েরি লিখার মতো স্মৃতিগুলো খুব খুঁজে খুঁজে বের করতে হচ্ছে। কষ্ট হলেও ডায়েরিটা লিখছি নিজের জন্য। ব্যস্ততার এই দিন হয়তো একদিন পার হয়ে যাবে। আমার কাছে থাকবে শুধু এই দামি দামি স্মৃতি!

যাই হোক, গাড়ি চলছে মদিনার উদ্দেশ্যে। হঠাৎ একটি শব্দ আর সামান্য ঝাকুনি। গাড়ি থেমে গেল। ড্রাইভার সাহেব দ্রুত গাড়ি সাইড করে থামিয়ে দেখতে গেলেন কি হয়েছে। গাড়ির পিছনের ডানদিকের চাকা একদম ঝাঝড়া হয়ে গেছে। প্রায় আধাঘন্টা কি একঘন্টা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে হলো। প্রাণের শহর মদিনায় পৌছেছি তখন মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে এসেছে প্রায়। গাড়িতে থাকতেই আজান হয়ে গেল। বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে ঘুরে হোটেলের সামনে আসার পথে মাত্র একবার, একঝলক দেখলাম মসজিদে নববী। কখন যে যাওয়ার নসীব হবে! আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ।


০১.১১.২০২২
দুপুরের রোদে দাড়ানোর কারণে বাচ্চাদের শরীর খারাপ করেছে। এশার সালাতে যেতে পারলাম না। এমনকি ফজরের সালাতেও না। বাচ্চার বাবা-দাদা-দাদি রুমে এসে মদিনা নিয়ে নানান অনুভূতির কথা বলছে। কেউ একবার আমার কথা চিন্তা করছে না। আমি যে মক্কা ছেড়ে এসেছি, মদিনাতে এসেও যে রুমে বসে আছি। কেউ একবার বলছে না যে বাচ্চারা আমার কাছে থাকুক, তুমি দেখে আসো। এবার আমার খুব রাগ হচ্ছে, খুব...

যা ইচ্ছে তা হোক, বাচ্চাদের রেডি করে দাদা-দাদির রুমে রেখে বের হতে যাবো। শ্বাশুড়ি মা বুঝতে পেরেছেন বউ ক্ষেপেছে, তাই অনেক মধু ঢেলে বউয়ের পিছু নিল। রুম থেকে একপ্রকার দৌড়ে হেটে মসজিদে গেলাম। আবেগগুলো সব উপচে পড়তে চাচ্ছে। লাগাম টেনে রেখেছি। বাব-ই-সালাম এর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলাম।

কোনো স্কুল থেকে বাচ্চাদের মসজিদে নববী ভিজিটে নিয়ে এসেছে। লাইন ধরে বাচ্চারা মসজিদের ভিতর সালাম পেশ করতে যাচ্ছে। রুম থেকে অভিমান করে বেরিয়েছি। কোথায় আছি জানার জন্য বাচ্চার বাবা অনেকক্ষণ ধরে ফোন করছিল। রাগ-অভিমান হাওয়া হয়ে গেছে। বাচ্চার বাবাকেই এখন আমার দরকার। কিছুক্ষণ পর ট্যাপাট্যাপিকে কোলে করে ওদের বাবা যাচ্ছে মদিনার বন্ধুর সাথে সাক্ষাতে। আলহামদুলিল্লাহ, বাচ্চাগুলোর মনে ছোট থেকে আল্লাহ ও তার রাসুল সাঃ এর প্রতি ভালোবাসা জন্মানোর জন্যই তো আমার যতো পরিশ্রম। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। আলহামদুলিল্লাহ।



ছবি - নেট



জাজাকুমুল্লাহ খাইরান

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৪৭

বিটপি বলেছেন: কি সুন্দর অন্তর শীতলকারী দৃশ্যগুলো একের পর এক চোখের সামনে ভেসে উঠল। কবে যে সশরীরে এসব দেখতে পাব!

২| ২০ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খাইরন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.