নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।

মাকামে মাহমুদ

বাংলাকে ভালোবাসি । তাই বাংলা ভাষা ও বাংলা বানান নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখি। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রজন্মকে শুদ্ধ বানান চর্চায় আগ্রহী করতে আজীবন প্রচেষ্টা চালাব।

মাকামে মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিতা-পুত্রের মাছ শিকারের দুর্ধর্ষ স্মৃতি

২৭ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:০০



আমাদের গাঁয়ের পাশ দিয়ে একটা ছোট্ট নদী বয়ে গিয়ে মিলিত হয়েছে শহরের প্রাণকেন্দ্রের মেঘনা নদীতে । এই নদীতেই আমার দস্যি কালের অনেকগুলো স্মৃতি আছে । তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মাছ শিকার করা, ফুটবল খেলে দলবদ্ধভাবে সাঁতার প্রতিযোগিতা দেওয়া এবং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বাবার সাথে মাছ ধরার সে অমলিন স্মৃতি।

বাবা একদিন আমাকে বলল, রুবেল(ডাকনাম) চলো আজ রাতে আমরা নদীতে মাছ ধরব। হাসি মুখে জবাব দিলাম, জি বাবা, আমি যাব । তখন আমার বয়স দশ চুঁইচুঁই । বয়সে নবীন হলেও দুষ্টুমিতে ছিলাম বরাবরই প্রবীণ । এই দুষ্টুমির জন্য অবশ্য আমার বাবা-মায়ের অনেক কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ইভেন কিছু জায়গায় তাদের জরিমানাও গুনতে হয়েছে । আর এই মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টুমির জন্য এখন অবশ্যই অনেকটা আফসোস করি । যদিও যা গত হয়েছে তা নিয়ে আফসোস করে তেমন একটা লাভ নেই । তবুও...?

যাহোক, বাবা আর আমি রাত ১০টায় মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম । বলে রাখা ভালো, তখন মাছ ধরার উপকরণ ছিল মাত্র দুটি ।
১. নেট(হাতে বানানো জাল) ।
২. কোচ( বাঁশ বা লাঠি দিয়ে বানানো এক ধরনের মাছ শিকারেরর অস্ত্র ) ।
আমরা অবশ্য ১নম্বরটা নিয়েই গিয়েছিলাম ।
বাবা ভারী নেট নিলেন । আমাকে মাছ রাখার ব্যাগ, লাইট এবং হারিকেন দিলেন । প্রথমবার নেট মারাতেই কিছু চিংড়ি, পুটি, টেংরা এবং নদীর নাম না-জানা অনেকগুলো মাছ ওঠল । তা দেখে বাবা এবং আমার দুজনের মনে আনন্দের শিহরণ খেলে গেল । আনন্দ নিয়েই মাছগুলো নেট থেকে খুলে ব্যাগভর্তি করলাম ।

মাছ নেয়া শেষে বাবা আবার নদীতে নেট ছুড়ে মারলেন । এবারও পূর্বের ন্যায় বেশকিছু মাছ ওঠল । এভাবে নেট ছোড়া এবং মাছ ধরাধরি চলল প্রায় ঘণ্টা খানিক ।
হঠাৎ আমাদের নেট নদীতে আটকে গেল !
আমরা অসহায়ভঙ্গিতে দুজন দুজনার দিকে তাকালাম । বাবা কী ভাবল জানি না তবে আমি ভাবলাম আজ না-জানি আল্লাহ আমাদের ললাটে কী রেখেছেন । ভাবনার ভেতরেই বাবা বলে ওঠল রুবেল, তুই নেটের রশিটা ধর ।
সুবোধ বালকের মতো আমি বাবার হুকুম তালিম করলাম। শুধু বললাম, বাবা আপনি কী করতে চান?
বাবা: আমি পানিতে নেমে দেখি সমস্যা কী? তুই রশি হাতে ধরে রাখবি,আমি বললে আস্তে আস্তে টান দিবি ।
আমি: আচ্ছা বাবা ।



"বাবা পানিতে নেমে গেলেন । এক, দুই, তিন...উনিশ এভাবে প্রায় ২০সেকেন্ড হয়ে গেল অথচ বাবার উঠে আসার কোনো নামগন্ধ নেই । কয়েকবার বাবা, ও বাবা বলে ডাক দিলাম । কিন্তু তবুও আমার বাবার কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না ।
এবার আমি আর সহ্য করতে পারলাম না । ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে দিলাম এবং মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহকে বললাম, ও আল্লাহ, আমার বাবাকে তুমি ফিরিয়ে দাও । আমার বাবার যেন কিছু না হয়। যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমাদের সংসারটা কে দেখবে ? আমি তো এখনও অনেক ছোটো !

ও আল্লাহ, তুমি প্রয়োজনে আমাকে নিয়ে যাও। তবুও আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও । এবার জোর করে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলাম । একটু পরেই দেখলাম আমার হাতের রশি কিছুটা ঢিলে হয়ে আসছে । সঙ্গে সঙ্গে নদীর পানিতে তাকালাম । দেখলাম বাবা নেটসহ হাসি মিশ্রিত মুখে কূলে দিকে এগিয়ে আসছে । দেহে নবপ্রাণ সঞ্চারকারী এমন দৃশ্য দেখার পর আল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ফেললাম । যাতে তা বাবার দৃষ্টিগোচর না হয় । কিন্তু বাবার তুলনা তো শুধুই বাবা ! আমার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে বললেন, কীরে বাবা তোর কী হয়েছে; মুখখানা এত মলিন কেন?

কই বাবা, কিছু হয়নি তো আমি ঠিক আছি বলেই বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম । আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলাম । বাবা আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এই বলে যে, আরে পাগল এতে কান্নার কী আছে । বাবা তো ঠিকই আছি । আর কাঁদিস না । আমি কান্না থামিয়ে একবার বাবার মুখের পানে তাকালাম। দেখলাম বাবার দাড়ি বেয়ে অশ্রু ফোটা টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে । পিতা-পুত্রের অশ্রু প্রবাহিত এই অমায়িক, অকৃত্রিম ভালোবাসার দৃশ্য হয়তো পৃথিবীর কোনো বনি আদম সন্তান দেখেনি; কিন্তু আরশে আজিম থেকে মহান রাব্বুল আলামিন ঠিকই অবলোকন করেছেন । আর তিমির রাতের নিস্তব্ধ প্রকৃতিও হয়তো এই দৃশ্য দেখা থেকে নিজেকে সংবরণ করতে পারেনি ।"

এভাবেই সেদিন পিতা-পুত্রের মাছ ধরার পরিসমাপ্তি ঘটল ।
আই লাভ ইউ বাবা !
আই লাভ ইউ মাম্মা !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.