![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মোঃ মাকছুদুর রহমান। একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান। লেখা পড়ার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যম গুলোতে সামান্য লেখালেখি করি। স্টুডেন্ট, অনলাইন একটিভেট এবং ব্লগার!
নারীর প্রিয় পোশাক শাড়ি, অন্তত বাঙ্গালী
নারী হলে তো কথাই নেই। দৈনন্দিন
জীবনে না হলেও পালা পার্বনে শাড়ী তো
পরতেই হবে। তো এই ডেকোরেটিভ
পোশাকটি মূলত ৩টি অত্যাবশ্যক অংশে বিভক্ত।
শাড়ির ১২হাত কাপড় ছাড়াও চাই ব্লাউজ এবং
পেটিকোট। তো ১৮ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত
পরিধেয় পোশাক হিসেবে শাড়ির কথা পাওয়া
গেলেও তাতে ব্লাউজের সংযোজন ঘটে
আরো বেশ পরে। যতদূর জানা যায়, শাড়ীর
সাথে পেটিকোট পরার প্রথা আসে সাওতাল
নারীদের কাছ থেকে।
আঠারো শতকেও শাড়ীর সাথে যে ব্লাউজ
পরার রীতি ছিলো না তা প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা
যায়। তেমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বিভিন্ন
বইপত্র ঘেটেও। ফ্যানি পার্কস ১৮৫১ সালে তাঁর
বইয়ে লিখেছেন— ‘ধনী মহিলারাও শাড়ি পরত।
আর শীতের সময় ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচার
জন্য বাড়তি হিসেবে ব্যবহার করত চাদর।’ তবে
তখনও পেটিকোট বা সায়ার প্রচলন হয়নি অন্তত
সাধারণ ঘরের নারীদের জন্য তো অবশ্যই।
“দেখে শুনে আক্কেল গুড়ুম” গ্রন্থটি
প্রকাশিত হয় ১৮৬৩-৬৪ সালে। এই গ্রন্থে
রাজকুমার চন্দ্র লিখেছেন, মেয়েরা যে কাপড়
পড়ে তাকে কাপড় না-বলাই ভালো।দশ হাত
কাপড়েও স্ত্রীলোক ন্যাংটো”। ঠিক অনুরূপ
একটি মন্তব্য আমরা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের
লেখাতেও পায়। তিনি বলেছিলেন, আমাদের
স্ত্রীলোক যেরূপ কাপড় পড়েন, তা না
পড়িলেই হয়”। তাহলে? তৎকালীন সময়ে
নারীরা কিভাবে শাড়ি পরতেন?
শুধু একখন্ড বস্ত্রে, দশ হাত কাপড়ে, শরীর
আবৃত করে রাখার প্রথা নারীদের ঘরের
ভেতর অন্তরীন করে রেখেছিল। বিশেষ
করে বনেদী পরিবারের মেয়েরা যেহেতু
মিহি কাপড় পরতেন তাই ধনী এবং সম্ভ্রান্ত
পরিবারের মেয়েদের একখন্ড কাপড়ে লজ্জা
নিবারন ও ভদ্রতা রক্ষা প্রায় অ সম্ভব হয়ে
দাড়িয়েছিল। দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের
মোটা কাপড় পরতে হতো বলে তারা তুলনামূলক
ভাল অবস্থানে ছিলো। কেননা অন্তপূরে
দিনযাপনের বিলাসিতা তাদের মানাতো না।
শাড়ির সাথে ব্লাউজ পরার জন্য যার অবদানের কথা
শুরুতেই স্মরণ করা যায় তিনি জ্ঞানদাননন্দিনী।
রবীদ্রনাথের বড় বৌদি এবং সত্যেনন্দ্রনাথের
স্ত্রী। উনিশ শতকের শেষের দিকে বাঙালি
মেয়েদের পোষাকে ঘটে বৈপ্লবিক
পরিবর্তন । এই বিপ্লবের মূলে ছিলেন ঠাকুর
বাড়ির বধূ জ্ঞানদানন্দিনী দেবী
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জনদানন্দিনী
দেবী আজকে যেভাবে ব্লাউজ পরা হয় তার
ধারণা তৈরি করেন, কারণ শাড়ির নিচে নগ্ন বক্ষের
কারণে তাকে ব্রিটিশ রাজের আমলে তাকে
ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শাড়ি, ব্লাউজ এবং
সেই সঙ্গে সায়ার ব্যবহার মেয়েদের
অনেক স্বচ্ছন্দে বাইরে বেরুবার সাহস দেয়
সেই সাথে ভরসা।এই মার্জিত পোশাকে নারীরা
হয়ে ওঠেন আত্মপ্রত্যয়ী। এই নতুন
পোশাক বাঙ্গালী নারীদের অবস্থানে এক
নতুন মাত্র যোগ করে। শালীন ভাবে
শরীরকে পোশাকে মুড়ে জনসম্মুখে
বের হতে পেরে নারী পেশা জীবনে
প্রবেশের পথ খুঁজে নেয়।
জ্ঞানদানন্দিনী নামটা নারী প্রগতির এক মাইল
ফলক। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী যখন বাড়ির
বাইরে স্বামীর সঙ্গে স্বামীর কর্মস্থলে
গেলেন তখন তার এমন একটি পোশাকের
দরকার হলো, যা পরে জনসম্মুখে যাওয়া যায়।
প্রথমে তিনি কলাবন্ধ কিম্ভূতকিমাকার এক পোশাক
পরে বাড়ি থেকে বের হন, যা অন্যের সাহায্য
ছাড়া পরা যেত না। তারপর তিনি নিজে পরীক্ষা-
নিরীক্ষা করে শাড়ি পরার ঢঙ আবিষ্কার
করেছিলেন; এটা হলো সাধারণভাবে দুই প্যাঁচে
শাড়ি পরা এবং শাড়ির সঙ্গে পেটিকোট এবং
ব্লাউজের প্রচলন করেছিলেন। অবশ্য এই
ব্লাউজের হাতা ছিল একেবারে হাতের কবজি
পর্যন্ত। তিনি ১৮৬৭ সালে ব্লাউজ সায়া সহ কুচি
দিয়ে শাড়ি পরে এক গভর্নর জেনারেল এর
বাড়িতে পার্টিতে যান। তার প্রেরণায় ব্লাউজ সায়া
সহ শাড়ি পড়ার আধুনিক রীতি চালু হয়।
কেশবচন্দ্রের কন্যা কোচবিহারের মহারানি
সুনীতি দেবী ‘বোম্বাই দস্তুর’ এর অসুবিধা
গুলি দূর করে একটি নতুন রীতি চালু করেন । কাঁধ
থেকে ঝোলানো অংশটি কুচিয়ে ব্রোচ
আটকানোর ব্যবস্হা করলেন । সুনীতি
দেবীর বোন ময়ুরভন্জ্ঞের রানী সুচারু
দেবী হিন্দুস্হানী রীতির সামনে আঁচল করে
পরার সঙ্গে জ্ঞানদানন্দিনীর রীতির মিশ্রণ
ঘটিয়ে পূর্ণাঙ্গ রুপ দিলেন । জ্ঞানদানন্দিনী
যে বিপ্লব শুরু করেছিলেন সুচারু দেবী তা
পূর্ণ করেন ।
উনিশ শতকের শেষ দিকে বাঙালি শিক্ষিত
সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলাদের মধ্যে জ্যাকেট
পরার প্রথা শুরু হয়ে গিয়েছিল। জ্যাকেট আধুনিক
ব্লাউজের আগের অবস্হান । ১৮৮১
ক্ষ্রীষ্টাব্দে কলকাতার একটি বস্ত্র প্রতিষ্ঠান
চোলির বা ব্লাউজের বিজ্ঞাপণ দিয়েছিল ।
উইকিপিডিয়া বলছে, বিশ্বের অনেক দেশেই
ব্লাউজ বহির্বাস হিসেবে ব্যবহৃত হলেও
ভারতীয় উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার
দেশগুলোতে ব্লাউজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে
অন্তর্বাস হিসেবে পরিধানের রেওয়াজ প্রচলিত।
©somewhere in net ltd.