![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আহসান ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে পরাজিত সৈনিকেরে মত মেয়ে দুটির ফ্ল্যাটের দিকে রওনা দিল। হাটতে হাটতে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল শুধুমাত্র রাতটিই কাটানোর একটা ব্যবস্থা করবে অন্য কোন সওদা করার চেষ্টা করবে না, তবে একটা প্রশ্ন উকি দিল দুটি মেয়ের সাথে এক ফ্লাটে তাও অন্য জগতের মেয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তো?
ফ্ল্যাটের সামনে এসে দেখে দরজা সামান্য খোলা।
আহসান কোন চিন্তা না করে দরজা সরিয়ে আপন মনে প্রবেশ করতেই দেখল দুটি মেয়ে মেঝেতে একজন অন্যজনের গায়ের সাথে গা মিলেয়ে বসে মোবাইলে বাংলা সিনেমার গানের ভিডিও দেখছে। একজনকে আগেই বাহিরে দেখে গেছে আর অন্য জন নতুন মুখ।
হঠাৎ আহসানের আগমনে মেয়ে দুটোরে একজন দাড়িয়ে বলল- ভাই বসেন, অন্যজন নিজেকে একটু নিরাপদ করার চেষ্ট করল শুধুমাত্র কিন্ত বসেই রইল।
আহসান এক নজরে চারিদিকে তাকিয়ে দেখল তিন রুমের ফ্ল্যাটের ড্রইং কাম ডাইনিং রুমটিতে বসার মত একটি প্লাষ্টিকের চেয়ার ব্যতীত তেমন আর কিছু নেই। আহসান চেয়ার টান দিয়ে চেয়ারের উপর পুরো দেহটাকে ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ল।
দাড়ানো মেয়েটির চোখে চোখ পড়লেও তেমন কোন কথা না থাকায় জিজ্ঞাস করল-
-তোমাদের নাম কি?
-আমার নাম মমতা, আর ও শিউলি।
-তোমাদের গ্রামের বাড়ী কোথায়?
জিজ্ঞেস করতেই মমতা বলল-
-ভাই, আইছেন সব শুনামু, আগে কন কি খাওন দিমু, মুহে কয়তাছে এহনো রাতের খাওনে
হাত দেওন হয় নাই। মাছ-মাংস যা খাওনের ইচ্ছা শুধু কন ফিরিজেত সব আছে, আপনি শিউলির লগে বিশ মিনিট বয়া থাহেন আমি এর মধ্যে খাওন হাজির করুমনে।
-না, আমি রাতে তেমন কিছু খাই না।
-না খাইলে চলব মিয়া, পুরুষ মানুষ শুধু খাইবেন, কামাইবেন আর ফুর্তি করবেন, মন ভাল থাকব। কিরে শিউল হাছা কইছি না?
শিউলি তেমন কোন জবাব না দিয়ে উঠে অন্য ঘরে চলে গেল।
আহসানের পরিষ্কার ধারণা হয়ে গেল মেয়ে দুটির মধ্যে বিস্তর তফাৎ আছে। আর চিন্তা করতে লাগল, আজকের সিদ্ধান্তটি কি তার সঠিক হয়েছে?
মমতা আহসানকে চিন্তিত দেখে একেবারে তার সামনে এসে দাড়াল-
-কি মিয়া, কি চিন্তা করেন, ও এমনই, আমার কাছে নয়া আইছে তো তাই।
কথা বলতে বলতেই মমতা আহসানের হাত ধরে শিউলির সামনে হাজির করল।
-নে কথা ক, আমি দেহি খাওনের কোন ব্যবস্থা করন যায় কি না?
মমতা আহসানকে রেখে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল, শিউলির তাতে কোন প্রতিক্রিয়া নেই সে খাটের এক প্রান্তে বসে নিজেকে ও মোবইল নিয়েই ব্যস্ত রইল।
আহসান মিনিট পাঁচেক দাড়িয়ে থেকে খাটের অপর প্রান্তে বসে পকেটে থাকা মোবইল বের করে আনোয়ারকে ফোন দিল, কিন্তু তখনও আনোয়ারের ফোন বন্ধ। আনোয়ারকে না পেয়ে মলির ফোনে ফোন দিতে গিয়ে চিন্তা করল মলিকে কি ফোন দেওয়া ঠিক হবে? মলি’তো জানে আমি আনোয়ারের ম্যাসে, সে তো আর জানেনা আমি এক নতুন জগতে, এখানে কোন ভাল মানুষ আগমন করে না।
আনোয়ার আপনমনে ঘরের চারদিক পর্যবেক্ষণ করতে লাগল কিন্তু তার সময় কাটছে না, মনের মধ্যে অজানা এক ভয় কাজ করছে। এসব জায়গায় আসলে সবারই একটু ভয় করে। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে আহসান শিউলিকে জিজ্ঞাসা করল-
-তোমরা এখানে কয়জন থাক, বাইরে মমতার সাথে আরও একটা মেয়কে দেখলাম যে? সে কোথায়?
শিউলি তবুও চুপ করেই রইল।
-তুমি আমার কথা বুঝতে পারছ না? আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি।
-আমি কি ভাবে বলব, আপনি তার সাথে কাকে দেখেছেন? আর কয়জন থাকি, সেটা আপনার কি জানা খুব জরুরী? আপনি কি আমাদের মাসিক বাজারের দায়িত্ত্ব নিতে চান নাকি? নাকি আদম-শুমারী করতে এসেছেন?
শিউলির জবাবে আহসানের মনের মধ্যে জানার আগ্রহ জন্মালো শিউলি কিভাবে এ জগতের বাসিন্দা কথাবার্তায় মনে হয় সে শিক্ষিত ও বংশীয় একটি মেয়ে, সেতো প্রথম জবাবেই তার পূর্ব পরিচয়ের জানান দিয়ে দিল।
আহসান নতুন করে ভাবতে লাগল যাই হোক নিজেকে নিরাপদ রেখে একটা রহস্য যদি জানা যায়, না হয় মলির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হবে, সেটাতো আর স্ব-ইচ্ছায় না। আবার মলিও তো জানছে না। আহসান নিজেকে রহস্য উন্মোচনকারী ভেবে কৌতুহলী মন নিয়ে আজকের রাতটির জন্য মনে মনে প্রস্তুত হতে লাগল।
[চলবে]
এম আলম তারেক
১৬-০৭-২০১৪
©somewhere in net ltd.