![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন তড়িৎ প্রকৌশলী। ****************** বুকের মাঝে স্বপ্ন আর হতাশার যুগলবন্ধী বসবাস...
আম্মা তখন পিটিআই'তে ক্লাস করতো। আমাকেও মাঝে মাঝে নিয়ে যেত, আমার কাজ ছিল পুরো পিটিআই এর বিশাল মাঠ জুড়ে দৌড়ানো, আর মাঝে মাঝে গিয়ে একটু আম্মাকে দেখে আসা। আমি তখন কোন স্কুলে ভর্তি হয়নি। আমার মত আর একটা ছেলে ছিল, যার আম্মাও পিটিআই'তে ক্লাস করতো- ওর নাম ছিল রবিন। যাকে আমি জীবনে প্রথম বন্ধু ভেবেছিলাম। পিটিআই শেষে ও হারিয়ে যায়, খুব কষ্ট পাই। মনে মনে ওকে এখনো মাঝে মাঝে খুজি।
গ্রামে থাকি, আমাদের তখন একটা বাচ্চাসহ একটা ছাগল ছিল। আমি আমার হারিয়ে যাওয়া বন্ধু'টিকে স্মরণীয় করে রাখতে, ছাগলের বাচ্চা'টির নাম রেখেছিলাম, রবিন। এখন ভেবে হাঁসলেও, তখন আমার কাছে সবথেকে প্রিয় ছিল, ঐ ছাগলের বাচ্চাটি। স্কুল থেকে ফিরে এলেই, ওকে নিয়ে কাটত আমার বিকেল গুলো। ডাক দিলে, যেখানেই থাকুক দৌড়ে আসত।
এক কুরবানী'র ঈদে আব্বা ওটা'কে কুরবানী করে দিলেন। সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
যে হুজুর কুরবানী দিয়েছিল, তাকে দা নিয়ে যে ধাওয়া দিয়েছিলাম, নাগালে পেলে তাকে সেদিন নির্ঘাত জবাই করে ফেলতাম। আল্লাহ-থেকে শুরু করে দুনিয়ার সবাই'কে সেদিন মনের দুঃখে গালি দিতেছিলাম। এখন মনে করলে হাঁসি একা একা...
একটা ডিঙ্গি নৌকা ছিল, খুব প্রিয়, সুযোগ পেলেই ওটা নিয়ে একা একা বেরিয়ে পড়তাম। অথচ আমি সাতার জানতাম না। একবার পড়ে গেলাম। আশে পাশে কেউ নেই। কোন রকম হাত-পা ছুড়েতে ছুড়তে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করতে ছিলাম। নৌকা'টা ভাসতে ভাসতে একসময় ঠিক আমার মাথার উপরে চলে এলো। আমি পানির থেকে উঠতে চেষ্টা করছি আর মাথায় নৌকার তলার আঘাত পাচ্ছি। আমি শিওর হয়ে গিয়েছিলাম, মরে যাচ্ছি। ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। সেদিনও কিভাবে যেনো বেঁচে যাই।
তার কয়েক বছর পর, এক বিকেলে সাপে কাটল। এমন অবস্থা সবাই মিলে কলেমা পড়িয়ে দিতেছিল আমাকে। আমিও ভাবছিলাম মরেই যাচ্ছি। আব্বা-আম্মা'র কাছ থেকে দাবি ছাড়িয়ে নিচ্ছিলাম। আমার সামনে সবাই হাউ-মাউ করে কাঁদতে লাগল। সেই বিষে, কি যে কষ্ট। মৃত্যুর মুখ থেকে সেদিনও ফিরে এসেছিলাম। এখনো আমার হাতের তালু ও পায়ের পাতা সবসময় গরম হয়ে থাকে। অবশ্য এখন এটা অনেক'টা অভ্যাস হয়ে গেছে।
কলেজে থাকতে, একবার হঠাৎ তীব্র বুক-জ্বালা পোড়া হয়েছিল। ডাক্তার এন্ডোসকপি করতে দিল। কয়েকজন মিলে চেপে ধরে, গলার মধ্যে একটা গরম লাইট সহ পাইপ ঢুকিয়ে দিল। ও কি তীব্র কষ্ট। মনে হচ্ছিল মরে যাচ্ছি। এমন সময়, ডাক্তার বলল, আরে ব্যাটা চোখে মেলে ভিতরের জিনিস দেখে নাও, তীব্র কষ্টের মধ্যেও সেদিন চোখ মেলে তাকিয়েছিলাম। একটা মনিটরে আমার বুকের ভিতরের জিনিস গুলো একনজর দেখেছিলাম।
মাত্র বছর চারেক আগে, বাড়ি'র পাশে মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে, মৃত্যু বিষাক্ত প্রাণী'র 'মরাবিষ' লাগে। একরাতে'র মধ্যে পায়ের নখে পচন ধরে যায়। অসহ্য কষ্ঠের পর, মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার বলল, পা'য়ের ঐ অংশটুকু কেটে ফেলতে হবে। আর কোন উপায় নাই। অপারেশান থিয়েটারে, চারপাঁচজন বড় বড় মানুষ আমাকে চেপে ধরে ঐঅংশটুকু কেটে ফেলল। কোন রকম অবশ না করে। কি যে কষ্ঠ সেদিন পেয়েছিলাম, কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। এক'টা সময় এমনিতেই অজ্ঞান হয়ে যাই। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে দিয়ে, দশ বছর আগের আমার সেই খাসি'টার কথা মনে পড়েছিল। গলায় সেই লাল রঙ দেয়া দড়ি'টা স্পষ্ট দেখছিলাম। ও বুঝি এমন যন্ত্রণা পেয়েছিল, ওকে যেদিন কুরবানী দিয়েছিল। ঠিক করেছিলাম, জীবনে কোন দিন কোন পশু কুরবানী দিব না। বেহেশতে না গেলেও না। এত কষ্ঠ এত কষ্ঠ !!
এই এক জীবনে কাছের অনেক আপনজন মারা যেতে দেখেছি, ছোটবেলায় বন্ধু হারিয়েছি, সে কষ্ট ভুলে গেছি ছাগল পেয়ে, সে ছাগল হারিয়ে তীব্র কষ্ট পেয়েছি, তাও ভুলে গেছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি, পানিতে পড়ে। সে কষ্ট ভুলে গেছি, সাপের তীব্র বিষে, তাও কম তীব্র মনে হয়েছে, এন্ডোসকপি'র কাছে, আর এ সবকিছু মিলেও অবশ না করে, পায়ের নখ কেটে ফেলা'র কষ্টে সমান হবে না.... আমি জানি, এক'টা জীবিত মানুষের হাত-পা পোঁচায়ে পোঁচায়ে কেটে ফেললে কেমন লাগে।
শুধু জানি না, একদম'ই মরে গেলে কেমন লাগে। মরে যাওয়া'র আগে কেমন লাগে, প্রিয় কাউকে মনে পড়ে কিনা ? মা'য়ের মুখ, বাবা'র মুখ, ভাই কিংবা খুনসুটি করা বোনের মুখ....
আমার এক জীবনে পাওয়া সব কষ্টের চেঁয়ে শতগুণ কষ্ট পেয়ে যে মানুষ গুলো এভাবে মরে গেল।
যখন দেখি, তাদের নিয়ে, এমন মৃত্যু নিয়ে মন্ত্রী থেকে শুরু করে পথে-ঘাটে, পেপারে-মিডিয়ায়, ব্লগে, ফেসবুকে রাজনীতি চলে... তখন সেই ছোটবেলায় প্রিয় ছাগলের কুরবানী দেখে যেমন সারা দুনিয়া'কে বকেছিলাম... আজো বলি, এই মৃত্যু নিয়ে তোরা যারা রাজনীতি করিস, তোরা মানুষ না, হয় পশু নয়ত মাদারচোদ...
ভুলে যাস না... এই মৃত্যুর স্বাদ না পেয়ে কেউ মরবে না.....হাঁসি'স না জানোয়ারের দল... একদিন তোরাও এই মৃত্যুতে কেমন আনন্দ তা টের পাবি....
২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:১৬
শিব্বির আহমেদ বলেছেন: +
৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:৩৬
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: অসাধারন লিখেছেন ++++++++
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:০৩
আকাশ বন্ধু বলেছেন: View this link