![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য
*********************************
*******************************
কোনো প্রাণীর-মূর্তি নির্মাণ করা
ইসলামী শরীয়তে কঠিন কবীরা গুনাহ ও
হারাম । মূর্তি সংগ্রহ, মূর্তি সংরক্ষণ এবং
মূর্তির বেচাকেনা ইত্যাদি সকল বিষয়
কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। মূর্তিপূজার কথা তো
বলাই বাহুল্য, মূর্তি নির্মাণেরও কিছু কিছু
পর্যায় এমন রয়েছে যা কুফরী।
কেউ কেউ মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে
বিধানগত পার্থক্য দেখাতে চান। এটা চরম
ভুল। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য
দুটোই পরিত্যাজ্য। কুরআন মজীদ ও হাদীস
শরীফে এ প্রসঙ্গে যে শব্দগুলো ব্যবহৃত
হয়েছে সেগুলো মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোকেই
নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদের
স্পষ্ট নির্দেশ-
‘তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ
মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ -
সূরা হজ্জ : ৩০
এই আয়াতে পরিস্কারভাবে সবধরনের মূর্তি
পরিত্যাগ করার এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সকল
কর্মকান্ড বর্জন করার আদেশ দেওয়া
হয়েছে।
আরো লক্ষণীয় বিষয় এই যে. উপরের আয়াতে
সকল ধরনের মূর্তিকে ‘রিজস’ শব্দে উল্লেখ
করা হয়েছে। ‘রিজ্স’ অর্থ নোংরা ও
অপবিত্র বস্ত্ত। বোঝা যাচ্ছে যে, মূর্তির
সংশ্রব পরিহার করা পরিচ্ছন্ন ও
পরিশীলিত রুচিবোধের পরিচায়ক।
দ্বিতীয় আয়াত
অন্য আয়াতে কাফের সম্প্রদায়ের অবস্থা
তুলে ধরা হয়েছে এভাবে-
‘এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো
পরিত্যাগ করো না তোমাদের
উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো
না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও
নাসরকে।’ -সূরা নূহ : ২৩
এখানে কাফের সম্প্রদায়ের দুটো বৈশিষ্ট্য
উল্লেখিত হয়েছে : ১. মিথ্যা উপাস্যদের
পরিত্যাগ না করা। ২. মূর্তি ও ভাস্কর্য
পরিহার না করা। তাহলে মিথ্যা উপাস্যের
উপাসনার মতো ভাস্কর্যপ্রীতিও কুরআন
মজীদে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে
চিহ্নিত। অতএব এটা যে ইসলামে গর্হিত ও
পরিত্যাজ্য তা তো বলাই বাহুল্য।
উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তিগুলো
সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন,
এগুলো হচ্ছে নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু
পুণ্যবান লোকের নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ
করেছে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই
কুমন্ত্রনা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি
বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা
হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে
নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করল।
ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি
কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে
গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায়
লিপ্ত হল। -সহীহ বুখারী হাদীস : ৪৯২০
তৃতীয় আয়াত
কুরআন মজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে
পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করা
হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে-ۚ
‘ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য
মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে!’ -সূরা ইবরাহীম :
৩৬
অন্য আয়াতে এসেছে-۬
‘আর তারা বলেছিল, তোমরা পরিত্যাগ
করো না তোমাদের উপাস্যদের এবং
পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ সুওয়াকে, ইয়াগূছ,
ইয়াঊক ও নাসরকে। অথচ এগুলো অনেককে
পথভ্রষ্ট করেছে।’ -সূরা নূহ : ২৩-২৪
কুরআন মজীদে একটি বস্ত্তকে ভ্রষ্টতার
কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করা হবে এরপর
ইসলামী শরীয়তে তা বৈধ ও গ্রহণযোগ্য
থাকবে-এর চেয়ে হাস্যকর কথা আর কী হতে
পারে।
চতুর্থ আয়াত
কুরআনের ভাষায় মূর্তি ও ভাস্কর্য হল বহুবিধ
মিথ্যার উৎস। ইরশাদ হয়েছে-
তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা
কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর
‘মিথ্যা’। -সূরা আনকাবুত : ১৭
মূর্তি ও ভাস্কর্য যেহেতু অসংখ্য মিথ্যার
উদ্ভব ও বিকাশের উৎস তাই উপরের আয়াতে
একে ‘মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই আয়াতগুলো থেকে পরিষ্কার জানা
যাচ্ছে যে, মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই
সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য।
হাদীস শরীফেও নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূর্তি ও ভাস্কর্য
সম্পর্কে পরিষ্কার বিধান দান করেছেন।
১. হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে
বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন ‘আল্লাহ তাআলা
আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার
সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে
ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও
তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না
করার বিধান দিয়ে। -সহীহ মুসলিম হা. ৮৩২
২. আবুল হাইয়াজ আসাদী বলেন, আলী ইবনে
আবী তালেব রা. আমাকে বললেন, ‘আমি
কি তোমাকে ওই কাজের দায়িত্ব দিয়ে
প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা এই যে,
তুমি সকল প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং
সকল সমাধি-সৌধ ভূমিসাৎ করে দিবে।’
অন্য বর্ণনায় এসেছে,... এবং সকল চিত্র মুছে
ফেলবে।’ -সহীহ মুসলিম হা. ৯৬৯
৩. আলী ইবনে আবী তালেব রা. বলেন, নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। তখন
তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছে,
যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোনো
প্রাণীর মূর্তি পাবে তা ভেঙ্গে ফেলবে,
যেখানেই কোনো সমাধি-সৌধ পাবে তা
ভূমিসাৎ করে দিবে এবং যেখানেই কোনো
চিত্র পাবে তা মুছে দিবে?’ আলী রা. এই
দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্ত্তত হলেন। এরপর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘যে কেউ পুনরায় উপরোক্ত কোনো
কিছু তৈরী করতে প্রবৃত্ত হবে সে
মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) প্রতি নাযিলকৃত দ্বীনকে
অস্বীকারকারী।’ -মুসনাদে আহমাদ হা.
৬৫৭
এই হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট জানা যাচ্ছে
যে, যে কোনো প্রাণী মূর্তিই ইসলামে
পরিত্যাজ্য এবং তা বিলুপ্ত করাই হল
ইসলামের বিধান। আর এগুলো নির্মাণ করা
ইসলামকে অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের
বৈশিষ্ট্য।
৪. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেনَ .
প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর)
শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত
যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন
শাস্তি প্রদান করা হবে।’ -সহীহ বুখারী
হা. ৫৯৫০
৫. আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-
ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে
আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে।
তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন
করুক একটি কণা এবং একটি শষ্য কিংবা
একটি যব! -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৩
এই হাদীসটি বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত
প্রাসঙ্গিক, যখন ভাস্কর-চিত্রকর, এমনকি
গল্পকার ও ঔপন্যাসিকদেরকে পর্যন্ত
‘স্রষ্টা’ বলতে এবং তাদের কর্মকান্ডকে
‘সৃষ্টি’ বলতে সামান্যতমও দ্বিধাবোধ করা
হয় না। কোনো কোনো আলোচকের
আলোচনা থেকে এতটা ঔদ্ধত্যও প্রকাশিত
হয় যে, যেন তারা সত্যি সত্যিই স্রষ্টার
আসনে আসীন হয়ে গিয়েছেন!
সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেয
ইবনে হাজার আসকানী রাহ. লেখেন- এই
ভাস্কর ও চিত্রকর সর্বাবস্থাতেই হারাম
কাজের মধ্যে লিপ্ত। আর যে এমন কিছু
নির্মাণ করে যার পূজা করা হয় তার
পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আর যে স্রষ্টার
সামঞ্জস্য গ্রহণের মানসিকতা পোষণ করে
সে কাফের ।’ -ফতহুল বারী ১০/৩৯৭
৬. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. ও আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন-
এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর,
চিত্রকরদের) কিয়ামত-দিবসে আযাবে
নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বোধন
করে বলা হবে, যা তোমরা ‘সৃষ্টি’
করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর!’
-সহীহ বুখারী হা. ৭৫৫৭, ৭৫৫৮;
৭. আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আমি
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে কেউ
দুনিয়াতে কোনো প্রতিকৃতি তৈরি করে
কিয়ামত-দিবসে তাকে আদেশ করা হবে সে
যেন তাতে প্রাণসঞ্চার করে অথচ সে তা
করতে সক্ষম হবে না।’ -সহীহ বুখারী হা.
৫৯৬৩
৮. আউন ইবনে আবু জুহাইফা তার পিতা
থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদ ভক্ষণকারী ও সুদ
প্রদানকারী, উল্কি অঙ্কণকারী ও উল্কি
গ্রহণকারী এবং প্রতিকৃতি
প্রস্ত্ততকারীদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের)
উপর লানত করেছেন। -সহীহ বুখারী হা.
৫৯৬২
এই হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয়
যে,ভাস্কর্য নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন কবীরা
গুনাহ। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা
কুফরীরও পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
মূর্তি ও ভাস্কর্যের বেচাকেনাও হাদীস
শরীফে সম্পূর্ণ হারাম সাব্যস্ত করা
হয়েছে।
৯. হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কা বিজয়ের সময় মক্কায় থাকা অবস্থায়
এই ঘোষণা দিয়েছেন যে, আল্লাহ ও তার
রাসূল মদ ও মূর্তি এবং শুকর ও মৃত প্রাণী
বিক্রি করা হারাম করেছেন।’ -সহীহ
বুখারী হা. ২২৩৬
১০. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
অসুস্থতার সময় তাঁর জনৈকা স্ত্রী একটি
গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। গির্জাটির
নাম ছিল মারিয়া। উম্মে সালামা ও উম্মে
হাবীবা ইতোপূর্বে হাবাশায়
গিয়েছিলেন। তারা গির্জাটির কারুকাজ
ও তাতে বিদ্যমান প্রতিকৃতিসমূহের কথা
আলোচনা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম শয্যা থেকে মাথা
তুলে বললেন, ওই জাতির কোনো পুণ্যবান
লোক যখন মারা যেত তখন তারা তার
কবরের উপর ইবাদতখানা নির্মাণ করত এবং
তাতে প্রতিকৃতি স্থাপন করত। এরা হচ্ছে
আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।’-সহীহ বুখারী
হা. ১৩৪১ সহীহ মুসলিম হা. ৫২৮ নাসায়ী
হা. ৭০৪
১১. আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন,
‘(ফতহে মক্কার সময়) নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
বায়তুল্লাহয় বিভিন্ন প্রতিকৃতি দেখলেন
তখন তা মুছে ফেলার আদেশ দিলেন।
প্রতিকৃতিগুলো মুছে ফেলার আগ পর্যন্ত
তিনি তাতে প্রবেশ করেননি।’ -সহীহ
বুখারী হা. ৩৩৫২
দৃষ্টান্তস্বরূপ এগারোটি হাদীস পেশ করা
হল। আলোচিত প্রসঙ্গে ইসলামী বিধান
বোঝার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। কুরআন মজীদে
যে কোনো ধরনের মূর্তির সংশ্রব ও
সংশ্লিষ্টতা পরিহারের যে আদেশ
মুমিনদেরকে করা হয়েছে সে সম্পর্কে একটা
বিস্তারিত ধারণাও উপরোক্ত হাদীসগুলো
থেকে জানা গেল।
কুরআন ও সুন্নাহর এই সুস্পষ্ট বিধানের
কারণে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ, সংগ্রহ,
সংরক্ষণ ইত্যাদি সকল বিষয়ের অবৈধতার
উপর গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দেখুন : উমদাতুল কারী ১০/৩০৯; ফাতহুল
বারী ১০/৪০১; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম :
৪/১৫৯
©somewhere in net ltd.