নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মামুন তালুকদার

মামুন তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোরআন-হাদীসের আলোকে দাওয়াতের গুরুত্ব

০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫৯

কোরআন- হাদিসের আলোকে দাওয়াত -এর গুরুত্ব

নবী রাসূলগণের মূল দায়িত্ব: সৎকাজে
আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ, প্রচার, নসিহত,
ওয়াজ বা এককথায় আল্লাহর দীন পালনের
পথে আহবান করাই ছিল সকল নবী ও
রাসূলের (আলাইহিমুস সালাম) দায়িত্ব।
সকল নবীই তাঁর উম্মতকে তাওহিদ ও
ইবাদতের আদেশ করেছেন এবং শিরক, কুফর
ও পাপকাজ থেকে নিষেধ করেছেন।

মহান আল্লাহ বলেন:
যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মি
নবীর, যাঁর উল্লেখ তারা তাদের নিকট
রক্ষিত তাওরাত ও ইনজীলে লিপিবদ্ধ পায়,
যিনি তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন
এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন। (সূরা
আরাফ: ১৫৭)

এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্মকে আদেশ ও
নিষেধ নামে অভিহিত করা হয়েছে। অন্যত্র
এ কর্মকে দাওয়াত বা আহবান নামে
অভিহিত করা হয়েছে।
আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলেন:
তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর
প্রতি ঈমান আন না, অথচ রাসূল
তোমাদেরকে আহবান করছেন যে, তোমরা
তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন।
(সূরা হাদীদ: ৮)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর এ দায়িত্বকে দাওয়াত বা
আহবান বলে অভিহিত করে আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
আপনি আপনার প্রতিপালকের দিকে
আহবান করুন হিকমত বা প্রজ্ঞা দ্বারা এবং
সুন্দর ওয়াজ-উপদেশ দ্বারা এবং তাদের
সাথে উৎকৃষ্টতর পদ্ধতিতে আলোচনা-বিতর্ক
করুন। (সূরা নাহল: ১২৫)

অন্যত্র এই দায়িত্বকেই তাবলিগ বা প্রচার
বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ
থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা
আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না
করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা
প্রচার করলেন না। (সূরা মায়েদা : ৬৭)

কোরআনুল কারিমে বারবার বলা হয়েছে
যে, প্রচার বা পোঁছানোই রাসূলগণের
একমাত্র দায়িত্ব। নিচের আয়াতে বলা
হয়েছে:
রাসূলগণের দায়িত্ব তো কেবল
সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা। (সূরা নাহল: ৩৫)

নূহ আ.- এর জবানিতে বলা হয়েছে:
আমি আমার প্রতিপলকের রিসালাতের
দায়িত্ব তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি
এবং আমি তোমাদের নসিহত করছি। (সূরা
আরাফ: ৬২)
সূরা আরাফের ৬৮, ৭৯, ৯৩ নম্বর আয়াত, সূরা
হুদ-এর ৩৪ নম্বর আয়াত ও অন্যান্য স্থানে
দাওয়াতকে নসিহত বলে অভিহিত করা
হয়েছে
সূরা শুরার ১৩ আয়াতে বলেছেন:
তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ
করেছেন দীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন
তিনি নূহকে- আর যা আমি ওহী করেছি
আপনাকে- এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম
ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসাকে, এ বলে যে,
তোমরা দীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে
দলাদলি-বিচ্ছিন্নতা করো না।

আপনি
মুশরিকদের যার প্রতি আহবান করছেন তা
তাদের নিকট দুর্বহ মনে হয়। (সূরা শুরা: ১৩)
তাবারি, ইবনু কাসির ও অন্যান্য মুফাসসির,
সাহাবি-তাবিয়ি মুফাসসিরগণ থেকে
উদ্ধৃত করেছেন যে, দীন প্রতিষ্ঠার অর্থ
হলো দীন পালন করা। আর দীন পরিপূর্ণ
পালনের মধ্যেই রয়েছে আদেশ, নিষেধ ও
দাওয়াত। এ অর্থে কোনো কোনো গবেষক
দীন পালন বা নিজের জীবনে দীন
প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অন্যদের জীবনে
দীন প্রতিষ্ঠার দাওয়াতকেও ইকামতে দীন
বলে গণ্য করেছেন।
উম্মতে মুহাম্মদির অন্যতম দায়িত্ব ও
বৈশিষ্ট্য
দাওয়াত, আদেশ-নিষেধ, দীন প্রতিষ্ঠা বা
নসিহতের এই দায়িত্বই উম্মতে মুহাম্মদির
অন্যতম দায়িত্ব ও বৈশিষ্ট্য।

ইরশাদ হয়েছে:
আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল
হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে,
ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ
থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।
(সূরা আলে ইমরান: ১০৪)

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির
(কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব
হয়েছে। তোমরা ন্যায়কার্যে আদেশ এবং
অন্যায় কার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহতে
বিশ্বাস কর। (সূরা আলে ইমরান: ১১০)

প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে
আল্লাহ বলেন:
তারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি
ঈমান রাখে এবং তারা ভাল কাজের
আদেশ দেয় ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে।
আর তারা কল্যাণকর কাজে দ্রুত ধাবিত হয়
এবং তারা নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা
আলে ইমরান: ১১৪)

আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা আরও
বলেন:
আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে
অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয়
আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর
তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান
করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য
করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন,
নিশ্চয় আল্লাহ পরক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(সূরা তাওবা: ৭১)

সূরা তাওবার ১১২ আয়াতে, সূরা হজ্জের ৪১
আয়াতে, সূরা লুকমানের ১৭ আয়াতে ও
অন্যান্য স্থানেও উল্লেখ করা হয়েছে যে,
আল্লাহর প্রকৃত মুমিন বান্দাদের অন্যতম
বৈশিষ্ট হলো সৎকাজের আদেশ ও
অসৎকাজের নিষেধ।
এভাবে আমরা দেখছি যে, ঈমান, নামাজ,
রোজা ইত্যাদি ইবাদতের মত সৎকাজের
নির্দেশ ও অসৎকাজের নিষেধ মুমিনের
অন্যতম কর্ম। শুধু তাই নয়, মুমিনদের
পারস্পারিক বন্ধুত্বের দাবি হলো যে,
তারা একে অপরের আন্যায় সমর্থন করেন
না, বরং একে অপরকে ন্যায়কর্মে নির্দেশ
দেন এবং অন্যায় থেকে নিষেধ করেন।
এখানে আরো লক্ষণীয়, এ সকল আয়াতে
ঈমান, নামাজ, জাকাত ইত্যাদির আগে
সৎকার্যে আদেশ ও অসৎকার্যে নিষেধ করার
কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে আমরা
মুমিনের জীবনে এর সবিশেষ গুরুত্ব অনুধাবন
করতে পারি।
এই দায়িত্বপালনকারী মুমিনকেই
সর্বোত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে পবিত্র

কোরআনে।
মহান আল্লাহ বলেন:
ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে
আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে,
সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি তো মুসলিমদের
একজন। ( সূরা ফুসসিলাত: ৩৩)

আমরা দেখেছি যে, আদেশ, নিষেধ বা
দাওয়াত-এর আরেক নাম নসিহত। নসিহত
বর্তমানে সাধারণভাবে উপদেশ অর্থে
ব্যবহৃত হলেও মূল আরবিতে নসিহত অর্থ
আন্তরিকতা ও কল্যাণ কামনা। কারো
প্রতি আন্তিরকতা ও কল্যাণ কামনার
বহি:প্রকাশ হলো তাকে ভাল কাজের
পরামর্শ দেওয়া ও খারাপ কাজ থেকে
নিষেধ করা। এ কাজটি মুমিনদের মধ্যে
পরস্পরের প্রতি অন্যতম দায়িত্ব। বরং এই
কাজটির নামই দীন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
দীন হলো নসিহত।

সাহাবিগণ বললেন,
কার জন্য ? বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর
কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য,
মুসলিমগণের নেতৃবর্গের জন্য এবং সাধারণ
মুসলিমদের জন্য। (মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ নসিহতের জন্য
সাহাবিগণের বাইআত তথা প্রতিজ্ঞা
গ্রহণ করতেন। বিভিন্ন হাদিসে জারির
ইবনু আব্দুল্লাহ রা. মুগিরা ইবনু শুবা রা.
প্রমুখ সাহাবি বলেন:
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বাইয়াত
বা প্রতিজ্ঞা করেছি, সালাত কায়েম,
জাকাত প্রদান ও প্রত্যেক মুসলিমের
নসিহত (কল্যাণ কামনা) করার উপর।
(বোখারি)।
এ অর্থে তিনি সৎকার্যে আদেশ ও
অসৎকার্যে নিষেধের বাইয়াত গ্রহণ
করতেন। উবাদাহ ইবনু সামিত ও অন্যান্য
সাহাবি রা. বলেন:
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বাইয়াত
করি আনুগত্যের… এবং সৎকর্মে আদেশ ও
অসৎকর্মে নিষেধের এবং এ কথার উপর যে,
আমরা মহিমাময় আল্লাহর জন্য কথা বলব
এবং সে বিষয়ে কোন নিন্দুকের নিন্দা বা
গালি গালাজের তোয়াক্কা করব না।
(আহমাদ, বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য সনদে)।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.